জান্নাত কেমন হবে, তা আমরা কেউই পুরোপুরি বুঝতে পারব না, যতক্ষণ না সেখানে প্রবেশ করি। তবে আল্লাহ কোরআনের মাধ্যমে আমাদের জান্নাত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। তিনি একে এমন একটি স্থান হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা এই দুনিয়ার জীবন থেকে একেবারেই ভিন্ন। কোরআনে জান্নাতের সুখস্বাচ্ছন্দ্য, নিয়ামত ও সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, জান্নাত হচ্ছে আখিরাতে মানুষের জন্য নির্ধারিত দুটি জীবনের একটি, যেখানে সব ভালো জিনিস এমন মাত্রায় থাকবে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
জান্নাত এমন এক জায়গা, যেখানে সব নিয়ামত পরিপূর্ণভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ সেখানে যা চাইবে, তা–ই পাবে, মন ও প্রাণ যা কিছু কামনা করে। সেখানে কোনো অভাব, চিন্তা, দুঃখবোধ বা অনুশোচনা থাকবে না। সব সৌন্দর্য ও শান্তি জান্নাতে এমন পূর্ণতায় প্রকাশ পাবে, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি বা জানেনি। এসব নিয়ামত আল্লাহ উপহার হিসেবে প্রস্তুত রেখেছেন কেবল তাদের জন্য, যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।
তাদের জন্য সেখানে থাকবে যা মন চাইবে এবং যা চোখ দেখে আনন্দিত হবে।
সুরা জুখরুফ, আয়াত: ৭১
এই জান্নাতের সুখ কেমন? প্রকৃতপক্ষে দুনিয়াতে কিছু আনন্দ থাকলেও মানুষকে অনেক কষ্টও সইতে হয়। যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে দেখব, এই দুনিয়ার জীবনে কষ্টই যেন বেশি। কিন্তু আখিরাতের জীবনে কোনো কষ্ট থাকবে না। সেখানে শুধু আনন্দ আর স্বস্তি। এই দুনিয়ার দুঃখ-দুর্দশার সব কারণ সেখান থেকে মুছে যাবে। জান্নাতের আনন্দ, শান্তি ও সুখ হবে সব ধরনের দুশ্চিন্তামুক্ত, হারানোর ভয়হীন। কী কী থাকবে সেখানে?১. ধনসম্পদ
এই দুনিয়ায় মানুষ মনে করে বড় বাড়ি, দামি গহনা বা গাড়ি থাকলেই সুখ আসে। তাই সবাই ধনসম্পদের পেছনে ছোটে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ধনী মানুষকেও আমরা দেখি খুব কষ্টে থাকতে, এমনকি কেউ কেউ আত্মহত্যাও করে। জান্নাতে ধনসম্পদের অভাব থাকবে না। যাদের এই দুনিয়ায় কিছুই ছিল না, এমনকি খেতেও পেত না, তারাও জান্নাতে যা চাইবে, তা–ই পাবে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের জন্য সেখানে থাকবে যা মন চাইবে এবং যা চোখ দেখে আনন্দিত হবে।’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত: ৭১)
‘তোমরা আরাম করে খাও এবং পান কর, অতীতে তোমরা যা ভালো কাজ করেছ তার বদলে।’ (সুরা হাক্কাহ, আয়াত: ২৪)
এই দুনিয়ার দুঃখ-দুর্দশার সব কারণ সেখান থেকে মুছে যাবে। জান্নাতের আনন্দ, শান্তি ও সুখ হবে সব ধরনের দুশ্চিন্তামুক্ত, হারানোর ভয়হীন।
‘তারা সেখানে সোনার বালা পরিধান করবে, সবুজ রেশমি ও গাঢ় সুতি কাপড় পরবে, উঁচু আসনে হেলান দিয়ে বসবে—কী চমৎকার পুরস্কার! কী সুন্দর বিশ্রামস্থল!’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৩১)
২. রোগ-জরাহীন অমরতা
এই দুনিয়ায় একটি বড় কষ্টের উৎস হলো রোগ ও প্রিয়জনের মৃত্যু। কিন্তু জান্নাতে কেউ কখনো অসুস্থ হবে না বা মৃত্যুবরণ করবে না। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তারা আর কখনো অসুস্থ হবে না, নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝাড়বে না, থুতু ফেলবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩২৪৩)
নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা চিরকাল সুস্থ থাকবে, আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা চিরকাল জীবিত থাকবে, আর কখনো মরবে না। তোমরা চিরকাল যুবক থাকবে, আর কখনো বুড়ো হবে না। তোমরা শুধু আনন্দই পাবে, আর কখনো দুঃখ পাবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৮৩৭)৩. মানসিক প্রশান্তি
এই দুনিয়ায় সম্পর্কের জটিলতা ও মানুষের কটু কথা অনেক কষ্টের কারণ হয়। কিন্তু জান্নাতে কেউ কাউকে কষ্টদায়ক কিছু বলবে না। কেবল সালাম ও সুন্দর কথা শোনা যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা সেখানে কোনো বাজে কথা বা পাপের কথা শুনবে না। শুধুই শুনবে—সালাম! সালাম!’ (সুরা ওয়াকিয়া, ৫৬: ২৫-২৬)
তোমরা চিরকাল সুস্থ থাকবে, আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা চিরকাল জীবিত থাকবে, আর কখনো মরবে না। তোমরা চিরকাল যুবক থাকবে, আর কখনো বুড়ো হবে না।
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৮৩৭
‘তাদের অন্তর থেকে আমরা সব বিদ্বেষ দূর করে দেব।’ (সুরা আরাফ, ৭:৪৩)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘তাদের মধ্যে কারও মনে হিংসা থাকবে না। হৃদ্যতায় তারা একে অপরের ভাইয়ের মতো হবে। সকলে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর তাসবিহ করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩২৪৫)
জান্নাতে সবাই সেরা মানুষের সঙ্গী হবে, যেমন নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও সৎ লোকেরা। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুসরণ করবে, তারা থাকবে নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও সৎ মানুষদের সঙ্গে এবং তাঁদের সঙ্গ কতই না উত্তম!’ (সুরা নিসা, ৪: ৬৯)
সুতরাং এই দুনিয়ার সব কষ্টের বিপরীতটাই জান্নাতে থাকবে।
তাহলে জান্নাত এমন এক চিরস্থায়ী শান্তির জায়গা, যেখানে থাকবে না কোনো দুঃখ, কষ্ট বা অভাব। নিজের শ্রেষ্ঠ বান্দাদের জন্য আল্লাহ জান্নাতকে সাজিয়ে রেখেছেন শুধুই ভালোবাসা, শান্তি আর পরিপূর্ণতা দিয়ে।