যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে কানসাস পর্যন্ত ৮৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বজ্রপাতের তথ্য সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই বজ্রপাতকে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বজ্রপাত হিসেবে রেকর্ড হিসেবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা গোস ইস্ট নামের আবহাওয়া উপগ্রহ থেকে তথ্য ব্যবহার করে এই বিশাল বজ্রপাত শনাক্ত করেছেন। উপগ্রহটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ২২ হাজার ২৩৬ মাইল ওপরে কক্ষপথে ঘুরছে। ৮৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ বজ্রপাত আগের রেকর্ডকে ৬১ কিলোমিটার বজ্রকে ছাড়িয়ে গেছে। এমন বজ্রকে বিজ্ঞানীরা মেগাফ্ল্যাশ হিসেবে আখ্যা দেন।
প্রায় ৮৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বজ্র ২০১৭ সালের অক্টোবরে টেক্সাস থেকে কানসাস পর্যন্ত আকাশ আলোকিত করেছিল। বিশ্বের দীর্ঘতম এই বজ্রপাত উত্তর আমেরিকার গ্রেট প্লেইন নামের দীর্ঘ সবুজ এলাকার পুরো ৮২৯ কিলোমিটার বা ৫১৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা দীর্ঘ বজ্রপাত আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও প্রায় আট বছর আগের ঘটনার স্বীকৃতি মিলেছে সম্প্রতি। গবেষকেরা বিশাল বজ্রপাত শনাক্ত করতে আবহাওয়া উপগ্রহ থেকে তথ্য ব্যবহার করেন। উপগ্রহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেগাফ্ল্যাশ ট্র্যাক করা হয়। প্রচলিত ভূমিভিত্তিক বজ্রপাত শনাক্তকরণ নেটওয়ার্ক থেকে এই তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ভৌগোলিক বিজ্ঞানী র্যান্ডি সার্ভেনি বলেন, ‘আমরা এই বজ্রপাতকে মেগাফ্ল্যাশ বজ্রপাত বলি। এখন কীভাবে ও কেন এমন ঘটনা ঘটে, তার মেকানিকস বের করছি। সম্ভবত আরও বড় ও চরম বজ্রপাত আছে। ভবিষ্যতে আমরা হয়তো উচ্চমাত্রার বজ্রপাত পরিমাপ করতে সক্ষম হব।’ ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল একটি মেগাফ্ল্যাশ টেক্সাস, লুইজিয়ানা ও মিসিসিপিজুড়ে দেখা যায়। সেটির তীব্রতা ছিল ৭৬৮ কিলোমিটার। দীর্ঘতম অনুভূমিক দূরত্বের রেকর্ড ছিল সেই বজ্রপাতের। বিজ্ঞানী সার্ভেনি বলেন, নতুন রেকর্ড প্রাকৃতিক পরিবেশের অবিশ্বাস্য শক্তিকে স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করে। বজ্রপাতের দূরত্বের রেকর্ড পরিবেশগত চরম অবস্থাকে মূল্যায়নের গুরুত্ব প্রকাশ করছে।
সাধারণভাবে বজ্রপাত একটি দর্শনীয় কিংবা তীব্র প্রাকৃতিক ঘটনা। বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতার কারণে কণার সংঘর্ষ হলে বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি হয়। চার্জ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে। তখন আকাশজুড়ে লক্ষ মাত্রার ভোল্ট তৈরি হয়। যদিও বেশির ভাগ বজ্রপাত ছোট হয়। সাধারণত ১০ মাইলের কম লম্বা হয়। প্রায়ই উল্লম্বভাবে আঘাত করে। কিছু বজ্রপাত মেঘের মধ্য দিয়ে অনুভূমিকভাবে ভ্রমণ করলে বিশাল বজ্রপাত হয়। যখন একটি বজ্রপাত ১০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের হয়, তখন তাকে একটি মেগাফ্ল্যাশ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। মেগাফ্ল্যাশ বেশ বিরল ও অসাধারণ ঘটনা। মেঘের ওপরে মেগাফ্ল্যাশের উপস্থিতি থাকে বলে ভূমি থেকে পুরোপুরি ট্র্যাক করা কঠিন।
সূত্র: এনডিটিভি