তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রক্রিয়াটি অবৈধ ছিল মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যে প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছিল, সেটি ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ডিজাইনের (নকশার) আলোকে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ বৃহস্পতিবার শুনানিতে এ কথাগুলো বলেন আইনজীবী শিশির মনির। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর গতকাল তৃতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন রাখা হয়েছে। আপিলের ওপর গত মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়।
মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, এ–সংক্রান্ত তৎকালীন সংসদীয় কমিটিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিতে চায়নি। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কারণে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতি—সব ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ১৪ বছর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪: ৩) রায় দিয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। ২১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। মঙ্গলবার ও বুধবার আপিলের ওপর শুনানি করেন পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির আইনজীবী।
এ মামলায় আপিলে ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনটির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সাংবিধানিক রীতি
শুরুতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সাংবিধানিক রীতি হিসেবে গণ্য হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো গ্রহণযোগ্য হয়েছে। গণতন্ত্র সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করার উদ্দশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আনা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা সরিয়ে ফেলার কারণে মৌলিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রায়ে এসেছে যে মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করা যাবে না। যে কারণে এই ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে।
ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আনা হলেও এটি সাধারণ সংশোধনী নয় বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। তিনি বলেন, এর আগে এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল, ঐকমত্য হয়েছিল। এমনটি যখন হয়, তখন তা সাধারণ সংশোধনী হিসেবে বিবেচিত হয় না। সাধারণ সংশোধনীর ওপরে অর্থাৎ জনগণের অভিপ্রায় ও ক্ষমতার বলে আনা একটা সংশোধনী এটি। মূল সংবিধানের যে স্ট্যাটাস, ত্রয়োদশ সংশোধনীর একই স্ট্যাটাস থাকা উচিত। সব দিক বিবেচনায় ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ।