দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র শৈত্য প্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের মৃদু শৈত্য প্রবাহে হাড় কাঁপানো শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ এবং ছিন্নমূলরা। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে।
শুক্রবার হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের ৫ জেলাতে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বইছে। এতে
জেঁকে বসা শীতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিন্ম আয়ের দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, হতদরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ। ঠিকমতো সূর্যের দেখা মিলছে না চারদিন ধরে। সূর্য উঠলেও লুকোচুরি খেলছে।
কমছে তাপমাত্রা
এদিন উত্তরের পাঁচটি জেলা পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম এবং রংপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকার তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।
উত্তরাঞ্চলে মানুষের পাশাপাশি দুর্ভোগে অন্যান্য প্রাণীরাও
শীতবস্ত্রের চাহিদা
দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে ৬০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে, তবে শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, তারা এখনও শীতবস্ত্র পায়নি। তারা গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শীতের তীব্রতা বাড়লে, বিশেষ করে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সমাজকর্মীরা। শীতবস্ত্র বিতরণে সরকারের পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া, দিনাজপুরে শীতবস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হকার্স মার্কেট ও বিপণন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে অবস্থিত হকার্স মার্কেটে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা মূল্যের পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে
ছিন্নমূল মানুষ এবং খেটে খাওয়া শ্রমিকরা শীত নিবারণের জন্য খড়কুটো জ্বালিয়ে অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। শীতের তীব্রতার সঙ্গে বেড়েছে ঘন কুয়াশা, যার ফলে সড়ক ও রেলপথে দুর্ঘটনার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনের বেলাতেও যানবাহন চলাচল করতে হেডলাইট ব্যবহার করতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার খবর প্রতিনিয়ত আসছে।
দিনের বেলাতেও যানবাহন চলাচল করতে হেডলাইট ব্যবহার করতে হচ্ছে।
কাজের সন্ধান নেই
শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে দিনাজপুরের ষষ্টিতলা এলাকার শ্রম বাজারে কাজের সন্ধানে আসা মানুষরা কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন। ৬০ বছরের মনসুর আলী বলেন, এটা এত ঠান্ডা যে, শরীরটা শিহিরি হয়ে ওঠে, তারপরও কাজের জন্য সকালে বের হই। কিন্তু কোথাও কাজ পাচ্ছি না, গরম কাপড় কেনার মতো টাকাও নেই।
কৃষকদের বিপর্যয়
উত্তরের কৃষকদেরও শীতের প্রভাবে বিপর্যয় ঘটেছে। শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা ও আলুর ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিরল উপজেলার কৃষক মো. মতিউর রহমান।
আরও কমবে তাপমাত্রা
দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, আগামী ৩ থেকে ৪ দিন পর তাপমাত্রা আরও কমে যাবে এবং শৈত্য প্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে শীতের সমস্যায় আরও গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।