ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, আজনিউজ২৪:বেশির ভাগ মানুষের প্রিয় ঋতু শীত। একেক জনের ক্ষেত্রে এর কারণ একেকটা হবে। তবে মুমিনের কাছে শীতকাল প্রিয় হওয়ার কারণ হলো, এ সময় বিভিন্ন ইবাদত সহজ হয়ে যায়। এ কারণেই রাসুল (সা.)-ও এই ঋতুটি পছন্দ করতেন। সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬৫৬) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ (শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকি : ৩৯৪০)
তাই আমাদের উচিত শীতকালের মতো মহা নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা। ইবাদতের মাধ্যমে শীতের অফুরন্ত নিয়ামতের ভাগীদার হওয়া। বিশেষ করে কারো কোনো রোজা কাজা থাকলে তা আদায়ের মোক্ষম সময় হলো এই ঋতু। এর মাধ্যমে যেমন মহান আল্লাহর একটি মহা হুকুম পালন হবে, তেমনি তাকওয়া অর্জন হবে। যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষ যেসব ইবাদত করে থাকে, তার অন্যতম হলো সিয়াম বা রোজা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আগের উম্মতদের মতো তোমাদের ওপরও রোজা ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
এ ছাড়া শীতকালে বেশি নফল রোজাও রাখা যেতে পারে। বিশেষ করে প্রতি মাসের যে দিনগুলোতে প্রিয় নবী (সা.) রোজা রাখতে ভালোবাসতেন। এতে একদিকে যেমন রাসুল (সা.)-এর একটি সুন্নত আদায় হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জিত হবে। নিম্নে এমন কিছু নফল রোজা তুলে ধরা হলো—
চান্দ্র মাসের তিন দিন রোজা : চান্দ্র মাসের এই তিনটি দিনকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘আইয়ামুল বিদ’ বলা হয়। বিদ অর্থ সাদা বা আলোকিত। যেহেতু এই তিন দিনের রজনীগুলো ফুটফুটে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত থাকে, তাই এগুলোকে ‘আইয়ামুল বিদ’ বলা হয়। হজরত আবু জর গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) তাঁকে এভাবে বলেছেন : ‘হে আবু জর, যদি তুমি প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করতে চাও, তাহলে (প্রতি চাঁদের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তা পালন করো।’ (তিরমিজি : ৭৬১)
সাপ্তাহিক রোজা : সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার এ দুই দিন রোজা পালন করা সুন্নত। কেননা প্রিয় নবী (সা.) এই দুই দিন রোজা রাখতে পছন্দ করতেন। আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রাসুল (সা.)-কে সোমবার রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, ‘এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এই দিনে আমাকে নবুয়ত দেওয়া হয়েছে বা আমার ওপর কোরআন নাজিল হওয়া শুরু হয়েছে।’ (মুসলিম : ১১৬২)
অন্য হাদিসে এসেছে : ‘(প্রতি সপ্তাহে) সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়ে থাকে। কাজেই রোজাদার অবস্থায় আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করা হোক, এমনটি আমি পছন্দ করছি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭)
দাউদ (আ.)-এর রোজা : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে (নফল রোজার মধ্যে) সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন আর এক দিন রোজা ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি : ৩৪২০)
বিবাহে অসমর্থ ব্যক্তিদের রোজা : একবার রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বলেছেন, ‘হে যুবকরা, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি যৌনমিলন ও পরিবারের ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখে সে যেন বিবাহ করে, কেননা এতে দৃষ্টি অবনমিত হয় এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত হয়। আর যে যুবক (স্ত্রীর ব্যয়ভার বহনের) ক্ষমতা রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা যৌনস্পৃহা দমিয়ে রাখে।’ (বুখারি : ৫০৬৫)