সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :– সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন হাসানকে তার বাবা, চাচা ও এক চাচাতো ভাই মিলে হত্যা করেছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশুটিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর তাকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয় তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে বাবা আব্দুল বাছির তুহিনকে কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে যান। পরে চাচা নাছির উদ্দিন, চাচাতো ভাই শাহরিয়ার ও বাবা আব্দুল বাছির তুহিনকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে।’ তুহিনের ময়নাতদন্তের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আগে তুহিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার দুই কান ও লিঙ্গ কাটা হয়েছে। ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিনের পরিবারের লোকজনই এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। রিমান্ডের পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যাবে,’ বলেন তিনি। এদিকে সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল খালেকের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন শিশু তুহিনের চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার। তাদের জবানবন্দিতেও তুহিন হত্যায় তার বাবা জড়িত থাকার কথা উঠে এসেছে।
এদিকে মঙ্গলবার তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মুছাব্বির ও জমশেদ আলীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুহিনের বাবা বাছির, চাচা, চাচি ও এক চাচাতো বোনকে থানায় আনা হয়। এরপর টানা কয়েকঘণ্টা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার ভোরে তুহিনের মা বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
জানা যায়, রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বাছিরের পুরনো বিরোধ রয়েছে। গ্রামের ছালাতুল ও সোলেমানের সঙ্গেও বিরোধ রয়েছে তুহিনের পরিবারের। যে ছুরি দুটি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেই ছুরিতে ছালাতুল ও সোলেমানের নাম লেখা রয়েছে। তাদের ফাঁসাতেই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিতে নাম লিখে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে দিরাইয়ে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা তার লাশ রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। শিশু তুহিনের শরীর জুরে ছিল ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। পেটে দুটি ছুরি ঢোকানো অবস্থায় ছিল, দুটি কান কাটা ছিল এমনকি গোপনাঙ্গও কেটে ফেলা ছিল। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।