কাতার চ্যারিটি (কিউসি) বাংলাদেশে তাদের অগ্রগামী কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্প চালু করেছে, যা পড়তে অসুবিধার সম্মুখীন শিশুদের কোরআন তিলাওয়াত, হিফজ এবং এর অর্থ বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ প্রকল্প কিউসির বৃহত্তর আল-ফুরকান কোরআনিক সাক্ষরতা প্রোগ্রামের অংশ, যা কেবল কোরআন শিক্ষার ওপরই কেন্দ্রীভূত নয়; বরং এর সুবিধাভোগীদের নৈতিক, মানসিক ও সামাজিক উন্নয়নের ওপরও জোর দেয়।
কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্পটি বাংলাদেশের সেই শিশুদের লক্ষ করে যারা পড়তে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এটি তাদের কোরআন তিলাওয়াত ও হিফজ এবং কোরআনের অর্থ বোঝার মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিকাশেও সহায়তা করে।
ড. মোহাম্মদ আমিন হাফেজ ওমর, কিউসির বাংলাদেশ শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেছেন, ‘এ উদ্যোগ কেবল একটি সাক্ষরতা প্রচারণা নয়, এটি একটি রূপান্তরকারী যাত্রা। পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেওয়া শুধু শব্দ ও নিয়ম শেখানো নয়, এটি এমন ব্যক্তি গড়ে তোলা, যারা মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ও উদ্দেশ্যে সমৃদ্ধ। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের ঐশী বাণীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে এবং জীবনে নতুন পরিচয়, মর্যাদা ও দিকনির্দেশনার দ্বার উন্মোচন করতে সাহায্য করি।’ প্রকল্পটি কিউসির দুটি ফ্ল্যাগশিপ সামাজিক কল্যাণ কেন্দ্র—মারকাজ মুহাম্মদ বিন আজাজ আল-কুবাইসি সেন্টার এবং শাখা সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে, যেখানে ৬০০ জনের বেশি স্পনসর করা শিশু অংশগ্রহণ করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত এবং অংশগ্রহণমূলক, যেখানে কোরআন তিলাওয়াত, নাট্য প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
কোরআন শিক্ষক মনজুরুল হক শিক্ষণপদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক আরবি ভাষা দিয়ে শুরু করি। শিক্ষার্থীদের অক্ষর ও শব্দ চিনতে সাহায্য করি। তারপর ধীরে ধীরে কোরআনের আয়াত ও তাদের অর্থের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আমাদের লক্ষ্য কেবল কোরআন পড়ে যাওয়া নয়; বরং গভীরভাবে বোঝা এবং কোরআনের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগ ঘটানো।’ এ পদ্ধতি শিশুদের জন্য শিক্ষাকে আকর্ষণীয় ও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
কাতার চ্যারিটি বাংলাদেশে ১৯৮৮ সাল থেকে তাদের জনহিতকর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যখন দেশটি প্রলয়ংকরী বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ঢাকায় তাদের কার্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিউসি বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল সরবরাহ ও জীবিকা উন্নয়নের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৪ সালে কিউসি ২ হাজার ২৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা ৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৭ জনকে উপকৃত করেছে (গালফ টাইমস, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। এ ছাড়া কিউসি বাংলাদেশে ৫ হাজার ৮২ শিক্ষার্থীকে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে, যা তাদের উজ্জ্বল ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্পটি কিউসির শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের একটি অংশ। এটি ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ২০টি কোরআন মুখস্থকরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা দুই হাজার শিক্ষার্থীকে উপকৃত করবে। এ ছাড়া কিউসি গত পাঁচ বছরে ৫০টি স্কুল নির্মাণ করেছে, যা ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে উপকৃত করেছে এবং ৩ হাজার ৩১২ জন এতিম শিশুকে স্পনসর করছে।
কিউসি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এনজিও, যা ১৯৯২ সাল থেকে ৫০টির বেশি দেশে ১৭৮ মিলিয়নের বেশি মানুষকে সহায়তা করেছে। এটি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করে (কাতার চ্যারিটি ওয়েবসাইট, ২০২৫)।
কাতার চ্যারিটির কোরআন সাক্ষরতা প্রকল্প শিশুদের মধ্যে মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ও জীবনের উদ্দেশ্য জাগ্রত করে। প্রকল্পটির সাফল্য শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও কিউসির দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে স্পষ্ট। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এ উদ্যোগ একটি আশার আলো, যা শিক্ষা ও ইমানের মাধ্যমে তাদের জীবনকে রূপান্তরিত করছে।