সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন এ দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা। কিন্তু স্বাধীন দেশের কোনো সরকারই শিল্পীসমাজের পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টো প্রায়শই শিল্পীদের অপমান ও অবহেলার মাধ্যমে অধিকার হরণ করা হয়। চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নিয়ে সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোকে অত্যন্ত দুভার্গ্যজনক। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে শিল্পীসমাজের প্রতি অন্যায় আচরণ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে নাট্যব্যক্তিরা এসব দাবি জানান।
‘শিল্পীর পাশে’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম এই সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে শিল্পীর প্রতি অন্যায় আচরণ বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন প্রতিবাদী গান, কবিতা, আবৃত্তি, পথনাটক ও ছবি এঁকে প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সমাবেশে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, লেখক স্বকৃত নোমান, মঞ্চ নির্দেশক রিতু সাত্তার, নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশের শুরুতে ‘একটি সাহসী ফুল দেখা যায়’ শীর্ষক নাটক পরিবেশ করেন ‘থিয়েটার ৫২’ সংগঠন । ‘মোরাল পুলিশিং’ নাটক পরিবেশন করেন প্রাচ্য নাট্য সংগঠন। এরপর বাংলাদেশ আবৃত্তি শিল্পী সংসদের চার সদস্য ‘পুরুষতন্ত্রের দড়ি ও একজন পরী’ শীর্ষক কোরাস পরিবেশন করেন। ‘আমি সেই মেয়ে’ শীর্ষক গান পরিবেশন করেন শারমীন ইতি ।
সমাবেশ থেকে শিল্পীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছয়টি দাবি জানানো হয়। লিখিত দাবি পাঠ করেন লেখক মোস্তফা মনন। দাবিগুলো হলো, ‘সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিধিনিষেধ আরোপ ও হয়রানি বন্ধ করা’, ‘অনিয়মতান্ত্রিক আইনি প্রক্রিয়ায় শিল্পীদের হেয় না করা’, ‘কোনো শিল্পীকে মোরাল পুলিশিং, সাইবার বুলিং, মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার না করা’, ‘সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করা’, ‘বিকৃতির বিরুদ্ধে বিটিআরসির সক্রিয় ভূমিকা রাখা’, ‘তল্লালি, গ্রেপ্তার ও রিমান্ড বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকনির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন’।
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে এদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম যেহেতু বাংলাদেশের জন্ম ও সব স্বাধিকার আন্দোলনে সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পীরা মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে শিল্পীরা তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার পাবেন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখ, বেদনা, ক্ষোভের সঙ্গে দেখছি শিল্পীদের সেই অধিকার মাঝেমধ্যেই হরণ ও অবহেলা করা হচ্ছে। আমাদের কোনো সরকারই প্রকৃত অর্থে শিল্পীদের সেভাবে মূল্যায়ন করেনি। সম্প্রতি নানা কালাকানুনের কারণে আমাদের লেখকরা মৃত্যুবরণ করছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।‘
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নিয়ে সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোকে অত্যন্ত দুভার্গ্যজনক। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে এ ধরনের ঘটনা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের অধীনে এটি ঘটলে বিস্ময়ের কারণ ছিল না। পরীমনির ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। এসবের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ হওয়া দরকার।’