ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: নাব্যতা সংকটের কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ-রুটে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর আগে রবিবার দুপুর ২টা থেকে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ছোট ফেরি দিয়ে লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার পারাপার করা হচ্ছে। এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে কোনো যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেটকার না দেখা গেলেও পারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে ২ শতাধিক ট্রাক। এই রুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করে। আগামী শুক্রবারের আগে এই চ্যানেল খুলে দেবার সম্ভবনা খুব কম থাকার কারণে নৌ রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে।
সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিয়ের উচ্ছেদ অভিযানের ফলে ঘাটে কোনো প্রকার দোকানপাট না থাকায় খাবার না পেয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে আটকে পড়া যানবাহন চালকরা। এসব আটকে পরা শ্রমিকরা গেল কদিন ধরেই অলস সময় পার করছে। ঠিক কবে নাগাদ তারা পদ্মা পার হয়ে গন্তব্যে ফিরবে এ প্রশ্নের জবাব নেই কারো কাছেই। বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ-রুটে পূর্বে ১৭টি ফেরি চলাচল করতো। বর্তমানে রোরো, ডাম্প, কেটাইপ ও মিডিয়াম ফেরিগুলো নাব্যতা সংকটের কারণে শিমুলিয়া ও কাঠালবাড়ী ঘাটে নোঙ্গর করে রেখেছে। এর মধ্যে কেটাইপ কপোতী ও ক্যামিলিয়া ফেরী চাঁদপুরের উদ্দ্যেশে চলে গেছে। তবে লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, গুরুত্বপূর্ণ প্রাইভেটকার বহনের জন্য কর্নফুলী, ফরিদপুর ও কুমিল্লাসহ তিনটি ছোট আকারের ফেরি চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসির মেরিন অফিসার একেএম শাহজাহান জানান, জরুরি যানবাহনের জন্য ছোট তিনটি ফেরি চলাচল করছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী নৌ-রুটের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের সোজা চ্যানেলটি চালু হবে। আর এ চ্যানেলটি চালু হলে এ নৌ রুটে ফেরি চলাচলে কম সময় লাগবে, তখন ঘাটের সবগুলো ফেরিই চলাচল করতে পারবে। এ নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও লঞ্চ ও সি-বোট চলাচল করছে। নাব্যতা সংকটের কারণে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সতর্কতার সাথে চলাচল করতে বলেছে বিআইডব্লিউটির নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যাবস্থপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহদাৎ হোসেন। শিমুলিয়াঘাট ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক মাস ধরে নাব্যতা সঙ্কট ও স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। প্রায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি ফেরি। গত রবিবার সকাল থেকে নৌ-চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। একই সঙ্গে মূল নদীতে ছিল তীব্র স্রোত। ফলে ফেরি চ্যানেল মুখ দিয়ে ঢুকতে পারছিল না। রবিবার ২টায় নাব্যতা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করায় বন্ধ রাখা হয় ফেরি চলাচল। শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল উদ্দিন বলেন, ঘাটে প্রায় ২ শতাধিক ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আছে। এক সপ্তাহ ধরে ঘাটে আটকে আছে এমন অনেক ট্রাকও রয়েছে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম জানান, একটি ফেরি চলতে কমপক্ষে ৭ ফুট পানি দরকার। সেখানে পানি আছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট। তিনি বলেন, ‘লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়ায় গত কোরবানির ঈদের আগে ওই চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। লৌহজংয়ের সোজা চ্যানেল দিয়েই চলছিল ফেরি। নাব্যতা-সঙ্কটের জন্য প্রায় প্রতিদিনই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। রবিবার সকাল থেকে ফেরি চালাতে গেলেই মাটির সাথে আটকে যাচ্ছিল। তাই ওই দিন দুপুর থেকে জান-মালের নিরাপত্তার জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে দুটি ছোট ফেরি শুধু লাশ পরিবহনের জন্য মাঝে মধ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ চ্যানেল মুখে বিআইডব্লিউটি ড্রেজিং বিভাগ খননযন্ত্র বসিয়েছে। গত একমাস ধরে আমাদেরকে জানানো হচ্ছে। খুব শিগগিরই তাদের খনন কাজ সম্পন্ন হবে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আগামী শুক্রবার ড্রেজিং শেষে ফেরি সার্ভিস সচল হতে পারে, বলেন তিনি।