রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনের সড়কে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তাঁর পরিবার। একই সঙ্গে তারা বলছে, এই মামলার এজাহারে চার আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের নাম এজাহারের যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে স্বজনেরা এ দাবি জানান। মানববন্ধনে মামলার বাদী লাল চাঁদের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম, স্ত্রী লাকি আক্তার, ভাগনি বীথি আক্তার, মেয়ে সোহানা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।
মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যার ঘটনায় সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অবিলম্বে সব আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, ‘এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি সারোয়ার হোসেন টিটুকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি একজন ভয়ংকর মানুষ। সব আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাইরে যেতে পারছি না। তাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি না। সব সময় একটা ভয় কাজ করছে। আমি এই হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কঠিনতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে চারজনের নাম যুক্ত করার দাবি জানান লাকি আক্তার। তিনি বলেন, পরিবার থেকে প্রথমে ২৩ আসামির নাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ২৩ জনের মধ্যে থেকে আনারুল হক রনি ওরফে ভাইয়া রনি, কাইয়ুম মোল্লা, রাকেস ও মোজাফফর হোসেন বাবলুর নাম বাদ দেওয়া হয়। এই চারজনের নাম এজাহারে যুক্ত করা হয়নি। তাঁদের নাম এজাহারে যুক্ত করতে হবে। তাঁদের পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
লাকি আক্তারের এই দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
অবশ্য ১৬ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, মামলার এজাহারের জন্য প্রথমে লাল চাঁদের সাবেক স্ত্রী লাকি আক্তার থানায় এসেছিলেন। তিনি ২৩ জনকে আসামি করে একটি খসড়া এজাহার প্রস্তুত করেন। একই সময়ে লাল চাঁদের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম থানায় এসে এজাহার দাখিলের আগ্রহ দেখান। মঞ্জুয়ারা খসড়া এজাহার থেকে পাঁচজনের নাম বাদ দিয়ে নতুন একজনের নাম সংযোজন করে মোট ১৯ জনকে আসামি করেন। তাঁর লিখিত এজাহারের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। এজাহার একটি প্রাথমিক তথ্যবিবরণী মাত্র। এজাহারে উল্লেখিত ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এই নারকীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। লাল চাঁদের ভাগনি বীথি আক্তার বলেন, তাঁর মামাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যাঁরা আসল মাস্টারমাইন্ড, তাঁদের আসামি করা হয়নি। তাঁদের নাম যুক্ত করতে হবে। আবার এজাহারভুক্ত সব আসামিকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। ঘটনার সময় লাল চাঁদের সঙ্গে দুটি মুঠোফোন ছিল, যা এখনো উদ্ধার করা হয়নি। তাঁরা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।
৯ জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে লাল চাঁদকে হত্যা করে একদল লোক। পিটিয়ে, ইট-পাথরের খণ্ড দিয়ে আঘাত করে তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। তাঁর শরীরের ওপর উঠে হত্যাকারীদের লাফাতে দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজে।
লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় ১০ জুলাই রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। আলোচিত এই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৮ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।