লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন চলে গেছেন গত শনিবার রাতে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে লালনের নানা ধরনের গান গেয়ে খ্যাতি পেয়েছেন দেশে–বিদেশে। তবে শিল্পী নিজের পছন্দের গান কোনগুলো? লালনের কোন গানগুলো তাঁকে সবচেয়ে বেশি নাড়িয়ে দিত। শুরুতে গাইতেন নজরুলসংগীত। তবে এক নাটকীয় ঘটনা তাঁকে নিয়ে আসে লালনের গানে।
দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরিদা পারভীন বলেছিলেন, ‘কুষ্টিয়ায় স্থানীয় এক হোমিও চিকিৎসক আমার গানের বেশ মুগ্ধ শ্রোতা ছিলেন। কিন্তু কেন জানি তিনি আমার কণ্ঠে লালনগীতি শুনতে চাইতেন! তাঁর মনে হতো, লালনের গান আমার কণ্ঠে বেশি ভালো লাগবে। তাই হঠাৎ করেই আমাকে একদিন লালন ফকিরের গান শেখার পরামর্শ দেন। কিন্তু শুরুতে লালনের গান গাইতে চাইনি। আমার এই অনীহা দেখে বাবা আমাকে অনেক বুঝিয়ে গান শেখার জন্য রাজি করান। বলেন, “ভালো না লাগলে গাইবি না।” এই শর্তে রাজি হই এবং লালনসংগীতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করি। “সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন” লালনের বিখ্যাত গানটি শিখি। একই বছর দোলপূর্ণিমা উৎসবে গানটি গাইলে শ্রোতারা আমাকে লালনের আরও একটি গান গাইতে অনুরোধ করেন। তখন আমি গান গাইতে অসম্মতি জানাই। শ্রোতাদের বলি, “আমি একটি গান গাইতে শিখেছি। এটাই ভালোভাবে গাইতে চাই।” এ গানই আমার নতুন পথের দিশা হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে বুঝতে শিখি, কী আছে লালনের গানে। তাঁর গানে মিশে থাকা আধ্যাত্মিক কথা ও দর্শন আমাকে ভাবিয়ে তোলে। এ পর্যায়ে অনুভব করি, লালন তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অনবদ্য এক স্রষ্টা হয়ে উঠেছেন। এটা বোঝার পর লালনের গান ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না।’
লালনের কোন গানগুলো সবচেয়ে পছন্দ—একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরিদা পারভীন বলেছিলেন, ‘সাঁইজির সব গান কিন্তু আমি করিনি আজ পর্যন্ত। কিছু গান যেগুলো করেছি, সেগুলো একেবারে ভাববাদী গান, যেগুলো আমাকে নাড়া দেয়।’ সবেচেয়ে বেশি কোন গানটি নাড়া দেয়—এমন প্রশ্নের উত্তরে শিল্পী বলেছিলেন, ‘মায়ের কাছে কিন্তু সব সন্তানই সমান। হাতের পাঁচ আঙুলের মধ্যে যেটিতে আমি কামড় দেব সেটিতে কিন্তু ব্যথ্যা পাব। “সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন” গানটির সঙ্গে অন্য রকম আবেগ জড়িয়ে আছে, প্রথম গান তো।’
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। দেশে–বিদেশে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সন্মাননা।