রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কী?
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বলতে মূলত বিদেশে ব্যবহৃত, সেই দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম চালিত ও ভালো অবস্থার গাড়িকে বোঝায়, যা দেশে এনে আবার নতুনের মতো করে বিক্রি করা হয়। গাড়ির কোনো যন্ত্রাংশ বিকল থাকলে জাপান থেকে অথবা দেশে মেরামতের মাধ্যমে ঠিক করে গাড়িগুলোকে নতুনের মতো করে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি জাপান থেকেই আসে। জাপানের রোড রেজিস্ট্রেশন নিয়মের কারণে গাড়িগুলো অল্প ব্যবহারের পরই বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। গ্রাহকদের চাহিদা থাকার কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এখনো দেশের গাড়ির বাজারে রাজত্ব করছে।
আশির দশকের শেষ দিকে সরকারের উদার নীতিমালা গ্রহণের পর থেকে জেডিএম গাড়ি দেশের বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করে, যদিও তখন আমদানি ছিল সীমিত। ১৯৯৬ সালের পর থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারের বাণিজ্যিক উত্থান হয়। তৎকালীন সরকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে কর সুবিধা এবং নির্দিষ্ট বয়সসীমার শর্ত নির্ধারণ করে। হু হু করে বাড়তে থাকে দেশের বাজারে জেডিএম গাড়ির সংখ্যা। ঠিক এক দশক পর গাড়িগুলোর নিরবচ্ছিন্ন সেবা, দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রাংশ, স্বল্প রক্ষণাবেক্ষণ খরচ গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়ে দেয়। বছরের পর বছর ব্যবহার করেও আবার বিক্রির সময় প্রায় একই মূল্যে গাড়িগুলোকে বিক্রিও করা যায়। ২০০৬-এর পর থেকে জাপানিজ গাড়িগুলোর চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। নতুন নিবন্ধিত গাড়ির প্রায় ৮২ শতাংশ রিকন্ডিশন্ড বা গ্রে মার্কেট আমদানি করা গাড়ি, যা মূলত জাপান থেকে আসে। এ ছাড়া রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মধ্যে জাপান থেকেই ৯৫ শতাংশ গাড়ি আসে। জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা, হোন্ডা, মিতসুবিশি, মাজডা, নিশান এবং সুজুকি দেশের বাজারে বেশ জনপ্রিয়। কমপ্যাক্ট সেডান, হ্যাচবেক, ক্রসওভার, এসইউভি, এমপিভি এবং লাক্সারি সব বিভাগেই রয়েছে জাপানি গাড়ির বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মডেল।
অ্যাকুয়া
স্বচালিত গাড়ির সারিতে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছে টয়োটা অ্যাকুয়া। কমপ্যাক্ট সেডান ক্যাটাগরিতে গাড়িটি আকারে ছোট হলেও এতে ১ দশমিক ৫ লিটারের ডিওএইচসি ভিভিটি-আই হাইব্রিড ইঞ্জিন রয়েছে। ‘মাইলেজ কিং’ খ্যাত গাড়িটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাবে কম। সহজেই যেখানে-সেখানে পার্ক করা যায়। শহরের ছোটখাটো কাজ বা সারা দিন ব্যবহারের জন্য গাড়িটি বেশ নান্দনিক। জ্বালানিসাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্যতা এবং শহুরে ড্রাইভিংয়ের জন্য উপযোগী ডিজাইনের কারণে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ২০২১-এর পর থেকে গাড়িটিতে নতুন ফেস লিফট আসছে, যা দেখতে আগের চেয়েও আকর্ষণীয়। ছোটখাটো গাড়ি হলেও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা মিলবে অ্যাকুয়াতে। দ্বিতীয় প্রজন্মের এক্সপি২১০ হিসেবে গাড়িটি জাপানের বাজারে আসে। আগের মডেলের তুলনায় ২০২১-এর মডেলে প্রযুক্তি ও ডিজাইনের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের প্রথম গাড়ি হিসেবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইপোলার নিকেল-মেটাল হাইড্রাইড ব্যাটারি ব্যবহার করে, যা আগের প্রজন্মের তুলনায় দ্বিগুণ কার্যক্ষমতা প্রদান করে। এই ব্যাটারি উন্নত গতিবেগ প্রতিক্রিয়া এবং মসৃণ গতি বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। হুইলবেস এর আকার ৫০ মিমি বাড়ানো হয়েছে ফলে পেছনের যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত পা রাখার জায়গা এবং লাগেজ স্পেস বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমবারের মতো টয়োটা এর কমপ্যাক্ট গাড়িতে ১০ দশমিক ৫ ইঞ্চি অডিও ডিসপ্লে যুক্ত করা হয়েছে। টয়োটা সেফটি সেন্স প্যাকেজের আওতায় প্রি-কলিশন সিস্টেম, লেন ট্রেসিং অ্যাসিস্ট এবং ফুল স্পিড রেঞ্জ রাডার ক্রুজ কন্ট্রোল অন্তর্ভুক্ত। কমফোর্ট প্যাডেল ফিচারের কারণে চালানোর সময় ব্রেক ও থ্রটল প্যাডেলের ব্যবহার কমিয়ে চালানোকে আরও আরামদায়ক করে তোলে। স্মার্ট ও ইমোশনাল ডিজাইনের সঙ্গে এতে নতুন রঙের সংযোজন করা হয়েছে (ক্লিয়ার বেইজ), যা গাড়ির নান্দনিক দর্শনের সঙ্গে মানানসই। পুশ স্টার্ট, রিয়ার ভিউ মিরর ওয়ার্নিং, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরাসহ হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়িটিকে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। চালকসহ ৫ আসনের এই গাড়িটিতে মালামাল রাখার জন্য ২৬০ লিটার বুট স্পেস রয়েছে। অ্যাকুয়ার উচ্চতর প্যাকেজে এলইডি হেডল্যাম্প, প্রজেকশন ফগ লাইট এবং অটোমেটিক ক্লাইমেট কন্ট্রোল মিলবে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গাড়িগুলো প্যাকেজ এবং অকশন গ্রেড অনুসারে ১৮ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১ দশমিক ৫ লিটারে রয়েছে টয়োটা ভিটজ এবং ইয়ারিস।
এই ক্যাটাগরিতে অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় গাড়ি হলো হোন্ডা ফিট। ২০১৭ মডেলে এল প্যাকেজ, ১৮-তে এফ, ২০ মডেলে ই:এইচইভি প্যাকেজে গাড়িগুলো দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ১৮ লাখ থেকে শুরু হয়ে ব্র্যান্ডনিউ গাড়ি হিসেবে অ্যাকুয়া কিনতে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। ১৫০০ সিসির এই গাড়িটিতে ডিওএইচসি ভিটেক হাইব্রিড ইঞ্জিন এবং সিভিটি ট্রান্সমিশন ব্যবহার করা হয়েছে। শহরের রাস্তায় প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে গাড়িটি ১৫ থেকে ২০ কিমি এবং মহাসড়কে ২৫ থেকে ৩৫ কিমি পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। ৪ জন যাত্রী ধারণক্ষমতাসহ গাড়িটিতে প্রায় ৩৫৪ লিটার মালামাল বহন করা যায়। হোন্ডা সেন্সিং সেফটি প্যাকেজসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধায় ফিটে পাওয়া যায়।
প্রিমিও/এলিয়ন/এক্সিও
রিকন্ডিশন্ড বাজারে টয়োটার রয়েছে একক আধিপত্য। টয়োটার দখলে গাড়ির বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ। ২০০১ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত সেডান গাড়িতে এলিয়ন এবং প্রিমিওর একচ্ছত্র রাজত্ব ছিল। এখনো ২০২১ মডেলের অকশন শিটের ৫ গ্রেডের গাড়ি প্রায় ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এই গাড়িগুলো বিশ্বস্ততা ও ঝামেলাবিহীন পথচলায় মধ্যবিত্ত মানুষের প্রথম পছন্দের সারিতে থাকে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও এর চাহিদা ব্যাপক। মধ্যম সারির বাজেটে এক্স করোলা মডেলের পর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে টয়োটা এক্সিও। ২০১৫ মডেলের নতুন ফেস লিফটে গাড়িগুলো ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৫০০ সিসি হওয়ায় গাড়িগুলোর অগ্রিম আয়করও কম হয়। হাইব্রিড এবং নন-হাইব্রিড দুই শ্রেণিতেই গাড়িগুলো দেশের বাজারে পাওয়া যায়। ২০০৮ সাল থেকে গাড়িপ্রেমীদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে শুরু করে এক্সিও। ২০১২তে হাইব্রিড ভেরিয়েন্ট এনকেই১৬৫ ইঞ্জিনে গাড়িটি জ্বালানিসাশ্রয়ী সেডান হিসেবে সমাদৃত হয়। এক্সিওতে সেডানের পাশাপাশি ফিল্ডার নামকরণে একই ইঞ্জিনে হ্যাচবেক গাড়িও পাওয়া যায়। ফিল্ডার গাড়িগুলোতে মালামাল রাখার জায়গা প্রশস্ত হয়। নিত্যনতুন মডেল এবং উচ্চতর প্যাকেজে এক্সিওতে আধুনিক সব ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। গ্রাহকদের উচ্চ চাহিদার কারণে এক্সিওর পুনর্বিক্রয়মূল্যও পাওয়া যায় বেশ। দেশের বাজারে ২২ লাখ থেকে ৩০ লাখের মধ্যে এক্সিও গাড়ি পাওয়া যায়।
হোন্ডার গ্রেস মডেলটি সেডান বিভাগে ক্রেতাদের মন জুগিয়েছে। এক্সিওর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফিচারের দিক থেকে গাড়িটিতে হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। দামের দিক থেকেও এক্সিওর সঙ্গে উনিশ-বিশ। হোন্ডাপ্রেমীরা এক্সিওর চেয়ে গ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে। ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনের জন্য যদিও গ্রাহকদের মনে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। হোন্ডা গ্রেসের অশ্বশক্তি ১১০ এইচপি এবং বৈদ্যুতিক মোটরে ২৯ এইচপি। স্মার্ট কি, পুশ স্টার্ট, টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট, হোন্ডা সেন্সিং, অটো ব্রেক হোল্ড, বৈদ্যুতিক পার্কিং ব্রেক, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা এবং ডুয়াল জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল সুবিধা এই দামের মধ্যে গাড়িটিকে ক্রেতাবান্ধব করেছে। এলএক্স, ইএক্স, হাইব্রিড এবং ফোরডব্লিউডি ট্রিমে গাড়িগুলো দেশের বাজারে মেলে।
টয়োটা প্রিয়াস
হাইব্রিড গাড়িতে টয়োটার সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেলের নাম টয়োটা প্রিয়াস। সেডান, ৭ আসন, প্লাগ ইন হাইব্রিড—এই তিন ক্যাটাগরিতে প্রিয়াস দেশের বাজারে মেলে। প্রিয়াসের সর্বশেষ সংস্করণটিকে স্পোর্টস ঘরানার করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বস্ত ইঞ্জিন, বৈচিত্র্যময় দর্শন, গাড়ির অভ্যন্তরে নান্দনিক ও আরামদায়ক সুপ্রশস্ত আসন গাড়িপ্রেমীদের চাহিদা পূরণ করেছে। পারিবারিক গাড়ি হিসেবে ৭ আসনের জন্য প্রিয়াস আলফা হতে পারে অন্যতম পছন্দ। প্রিয়াসে ১ দশমিক ৮ লিটারের হাইব্রিড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। মালামাল বহন করার জন্য প্রিয়াসে পর্যাপ্ত বুট স্পেস রয়েছে। ২০২৫ মডেলের প্রিয়াস যেকোনো জার্মানির গাড়িকেও দর্শনের দিক থেকে পেছনে ফেলতে পারে। অর্ধকোটি টাকার বেশি টাকায় গাড়িগুলো দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ১৭ ইঞ্চি অ্যালয় চাকা, ব্লাইন্ড স্পট মনিটরিং, রিয়ার ক্রস ট্রাফিক অ্যালার্টসহ দারুণ দারুণ ফিচার রয়েছে গাড়িটিতে। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তদের মধ্যে সেডানপ্রেমীরা প্রিয়াসকে পছন্দের সারিতে প্রথম দিকেই রেখেছেন।
হোন্ডা ভেজেল/টয়োটা সিএইচআর
সাধ্যের মধ্যে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেলের কাছাকাছি এবং মাটি থেকে ভালো উচ্চতার (গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স) গাড়ির কথা এলে হোন্ডা ভেজেলের কথা মনে হবে। হোন্ডার এই গাড়িটি ক্রসওভার ক্যাটাগরিতে বেশ জনপ্রিয়। চালক এবং সামনের যাত্রীর আসনে আরামে বসা গেলেও পেছনের আসন নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এই গাড়ি ব্যবহারকারীদের। তবে দামের সঙ্গে মিলিয়ে নিলে এই গাড়িটিও নিজের সেগমেন্টে জায়গা করে নিয়েছে। ১ দশমিক ৮ লিটারের হাইব্রিড এই গাড়িটির অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যও নজরকাড়া। সঙ্গে রয়েছে কম তেলে বেশি পথ চলার নিশ্চয়তা। এক্স, জেড এবং আরএস সেন্সিং প্যাকেজে গাড়িটি দেশের বাজারে সহজলভ্য। হোন্ডা সেন্সিং, অটো হোল্ড ফিচার, লেন কিপিং অ্যাসিস্ট, অ্যাডাপটিভ ক্রুইস কন্ট্রোলসহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা হোন্ডা ভেজেলে মিলবে। ২০১৩ সালে প্রথম প্রজন্মের এই গাড়িটি হোন্ডা ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত করে। ২০২১ সাল থেকে হোন্ডা ভেজেলের দ্বিতীয় প্রজন্মের গাড়িগুলো পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৪-এ এসে গাড়িটি একটি নান্দনিক দর্শন পায়। যদিও দামটা চড়া। ২০২১ পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮ লাখে গাড়িগুলো পাওয়া গেছে। ২০২৪ মডেলে গাড়িটির মূল্য ৪০ লাখ টাকারও বেশি।
এই বিভাগে টয়োটার অন্যতম জনপ্রিয় গাড়ি সিএইচআর। সুপ্রশস্ত চাকা, ডায়নামিক লুক, পাওয়ারফুল এলইডি এবং বৈচিত্র্যময় ইন্টেরিয়রের সৌন্দর্যে যে কেউ এই গাড়ির প্রেমে পড়তে পারে। ৩৩ থকে ৪০ লাখের মধ্যে মিলবে টয়োটা সিএইচআর। ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রেও এই গাড়ি সমান জনপ্রিয়। সিএইচআরের পূর্ণ রূপ হলো কুপ হাই রাইডার। দেশে তরুণ ও শহুরে ব্যবহারকারীদের কাছে এর ফিউচারিস্টিক ডিজাইন এবং হাইব্রিড প্রযুক্তির জন্য এটি একটি পছন্দনীয় গাড়ি। টয়োটা নিউ গ্লোবাল আর্কিটেকচার প্ল্যাটফর্মে গাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। ১৮০০ সিসিতে হাইব্রিড এবং ১২০০ সিসিতে নন হাইব্রিড ভেরিয়েন্টে গাড়িটি পাওয়া যায়। ২০২৩-এর পর গাড়িটিতে ২ লিটার হাইব্রিড ইঞ্জিন এবং নতুন ইলেকট্রিক আর্কিটেকচার ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা গাড়িটিকে আরও শক্তিশালী করেছে। রয়েছে ই-ফোর (অল হুইল ড্রাইভ) সিস্টেম। এসজিজি এলইডি, জিআর স্পোর্ট প্যাকেজে সর্বনিম্ন ২৫ লাখ থেকে ৪০ লাখের মধ্যে গাড়িটির মূল্য নির্ধারিত হয়।
টয়োটা করোলা ক্রস
২০২০ সালে জাপানের গাড়ির বাজারে যে গাড়িটি সাড়া ফেলেছিল, সেই গাড়িটির নাম করোলা ক্রস। সদ্য উৎপাদিত হওয়া এই গাড়িটি মধ্যম ঘরানার এসইউভি বিভাগে জনপ্রিয় এক আধুনিক মুখ। জ্বালানিসাশ্রয়ী, টেকসই, বৈচিত্র্য এবং হাইব্রিড প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি গাড়িটি দেশের ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যাঁরা সাশ্রয়ী মূল্যে হাইব্রিড সংস্করণে এসইউভি গাড়ির স্বাদ নিতে চান, তাঁদের জন্য করোলা ক্রস প্রথম পছন্দ। ২০২১ থেকেই করোলা ক্রস রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ৫ আসনবিশিষ্ট এই গাড়িটিতে টয়োটার আধুনিক প্রযুক্তি এবং উন্নতমানের চামড়ায় মোড়ানো আসন ব্যবহার করা হয়েছে। জি, এক্স, জেড প্যাকেজের মধ্যে জেড প্যাকেজের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। সানরুফ, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, ক্লাইমেট কন্ট্রোল, অ্যালয় হুইল, টয়োটা সেফটি সেন্সসহ কী নেই এই গাড়িতে? ক্রসওভার মাটি থেকে উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে যেকোনো রাস্তায় দাপটের সঙ্গে এই গাড়ি চালানো যায়। টয়োটা টিএনজিএ প্ল্যাটফর্মে তৈরি বলে গাড়িটিতে আরামদায়ক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মালামাল বহন করার জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় বুট স্পেস। তারবিহীন স্মার্টফোন চার্জ, ক্রুইজ কন্ট্রোল, লেন কিপিং অ্যাসিস্ট, ব্লাইন্ড স্পট মনিটরসহ আধুনিক ফিচার যুক্ত করার কারণে গাড়িটি মধ্যম বাজেটে গাড়িপ্রেমীদের সঙ্গী হচ্ছে। রিকন্ডিশন্ড ব্র্যান্ড নিউ অবস্থায়ও গাড়িগুলো আমদানি হচ্ছে। প্যাকেজ এবং গাড়ির অবস্থা অনুসারে ৪০ লাখ থেকে ৫৫ লাখ টাকার মধ্যে গাড়িটি কিনতে পাওয়া যায়।
টয়োটা নোয়াহ/ভক্সি/এসকোয়ার/আলফ্রাড/ভেলফায়ার
মাল্টিপারপাস ভেহিকেল বা এমপিভি বিভাগে দেশে সবচেয়ে ব্যবহৃত গাড়ির নাম টয়োটা নোয়াহ/ভক্সি। দেশে এই গাড়িগুলো মাইক্রোবাস নামে পরিচিত। নোয়াহ/ভক্সির ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজে পার্থক্য থাকলেও দুটি গাড়িতে একই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। হাইব্রিড এবং নন হাইব্রিড দুই ক্যাটাগরিতে গাড়িগুলো দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সাত বা আট আসনে গাড়িগুলো পারিবারিক এবং অফিশিয়াল ও ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণে বেশি ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোবাস ক্যাটাগরিতে গাড়িগুলোর অগ্রিম আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। নোয়াহতে জি, এক্স, এসআই এবং ভক্সিতে জেডএস, জেডএস কিরামেকি এবং হাইব্রিড জেডএস প্যাকেজে গাড়িগুলোর মূল্য ৩৭ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। রিমোট বা সুইচের সাহায্যে কোনো শক্তি খরচ না করে প্যাকেজভেদে এই গাড়িগুলোর উভয় দরজা খোলা যায়।
২০২৫ মডেলের ভক্সিতে রয়েছে ক্যাপ্টেন সিট, স্বয়ংক্রিয় পার্কিং সিস্টেম, অটোমেটিক টেইলগেট এবং পাদানি। এই ফিচারগুলো গাড়িটিকে ৭ আসন ক্যাটাগরিতে বিলাসবহুল অনুভব প্রদান করে। টয়োটা এসকোয়ার হচ্ছে নোয়াহ এবং ভক্সির তুলনায় নতুন আসা আরেকটি জনপ্রিয় গাড়ি। সাধারণ প্যাকেজে নোয়াহ ও ভক্সির চেয়ে এসকোয়ারের দাম বেশি। এ ছাড়া আটজনের অধিক যাত্রী বহন করার জন্য টয়োটা হাইয়েস দেশের বাজারে বেশ বিক্রি হয়। বাণিজ্যিক ব্যবহারে শক্তপোক্ত বডি, যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা এবং সব ওয়ার্কশপে গাড়ির কাজ করানো যায় বলে রেন্ট-এ-কার থেকে শুরু করে করপোরেট অফিস, দূরের যাত্রাতেও গাড়িগুলো সমানতালে ব্যবহার হয়। ৩০ থেকে ৪০ লাখের মধ্যে গাড়িগুলো দেশের বাজারে কেনা যায়।
বিলাসবহুল এমপিভিতে টয়োটার রয়েছে আলফার্ড/ভেলফায়ার। বিশাল আকার, প্রিমিয়াম ফিচার এবং চমৎকার আরামদায়ক অভিজ্ঞতার জন্য এটি করপোরেট ব্যক্তিত্ব, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং অভিজাত ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়। ২ দশমিক ৫ লিটারে হাইব্রিড, পেট্রল এবং ৩ দশমিক ৫ লিটারে ভিসিক্স ইঞ্জিনেও আলফার্ড বা ভেলফায়ার পাওয়া যায়। এককথায় বলা যায়, এই গাড়িগুলো হলো এমপিভি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি। ক্যাপ্টেন সিট, তিনটি জোনে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, জেবিএল অডিও, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, অ্যাডাপটিভ ক্রুইজ কন্ট্রোল, টয়োটা সেফটি সেন্সসহ গাড়িগুলো ফিচারে ভরপুর। আলফার্ডে জনপ্রিয় প্যাকেজ হলো এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ। এই গাড়িগুলোর মূল্য কোটি টাকা ছাড়িয়ে ১ কোটি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
টয়োটা হ্যারিয়ার/মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার/নিশান এক্সট্রেইল/হোন্ডা সিআরভি
মধ্যম ঘরানার এসইউভির মধ্যে টয়োটার হ্যারিয়ার, মিতশুবিশি আউটল্যান্ডার এবং নিশানের এক্সট্রেইল বেশ জনপ্রিয়। এই গাড়িগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে হ্যারিয়ারের দাম বেশি। শিকারি পাখি থেকে হ্যারিয়ার শব্দের উৎপত্তি। গাড়িটি দেখতে বেশ প্রিমিয়াম। টয়োটার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধায় মিলবে এই গাড়িতে। ২০২০-এর পরে যে মডেলগুলো এসেছে সে গাড়িগুলোতে সানরুফ উন্মুক্ত করা যায় না। এটাকে মূলত মুনরুফ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেশের বাজারে অনেক দিন ধরেই রিকন্ডিশন্ড এসইউভি বিলাসিতার প্রতীক, যা শহুরে চালকদের পাশাপাশি মহাসড়কেও অভিজাত ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়। তৃতীয় প্রজন্ম থেকে গাড়িটির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ২ লিটার ইঞ্জিনে নন হাইব্রিড এবং ২ দশমিক ৫ লিটার ইঞ্জিনে হাইব্রিড গাড়িতে হ্যারিয়ার এলিগেন্স, প্রিমিয়াম, প্রগ্রেস এবং জিআর স্পোর্টস প্যাকেজে পাওয়া যায়। গাড়িটির দাম প্যাকেজভেদে ৬৫ লাখ থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই মূল্যে টয়োটা র্যাভ ফোরও পাওয়া যায়।
মধ্যম ঘরানার এসইউভি এর মধ্যে মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার দেশের বাজারে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার সুন্দর ডিজাইন, অল-হুইল ড্রাইভ প্রযুক্তি এবং পিএইচইভি (প্লাগ ইন হাইব্রিড) সংস্করণের জন্য। টয়োটা হ্যারিয়ার বা র্যাভ ফোরের বিকল্প হিসেবে অনেকের পছন্দের সারিতে শীর্ষে রয়েছে আউটল্যান্ডার। গাড়িটি একটি বাস্তবসম্মত ও চমৎকার পছন্দ। ৫ এবং ৭ আসনে গাড়িটি ২০০০ সিসি অথবা ২৪০০ সিসি হয়ে থাকে। ২০১৬ সালে গাড়িটির হেডলাইট এবং গ্রিলের ডিজাইন পরিবর্তন করে নতুন ফেসলিফট করা হয়। জি, জি প্লাস প্যাকেজ এবং পিএইচইভি এডিশন এই গাড়ির অন্যতম ট্রিম। ডিজিটাল ক্লাস্টার, হিড-আপ ডিসপ্লে, মিতসুবিশি এমআই-পাইলট অ্যাসিস্ট এবং ১২ দশমিক ৩ ইঞ্চির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে বোসের স্পিকার গাড়িটির ভেতরকে সমৃদ্ধ করেছে। প্লাগ ইন হাইব্রিড প্যাকেজের গাড়িটি বৈদ্যুতিক মোটরে ৭০-৮০ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে। গাড়িটির মূল্য ৭০ লাখ থেকে ৯০ লাখের মধ্যে হয়ে থাকে।
জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিশানের তৈরি এক্সট্রেইল মধ্যম ঘরানার এসইউভির মধ্যে দেশের বাজারে জনপ্রিয়। সবদিকেই পারদর্শী গাড়িটি হাইব্রিড এবং নন হাইব্রিড দুই ভেরিয়েন্টেই হয়ে থাকে। ৫ বা ৭ আসনে গাড়িটি ২০০০ এবং ২৫০০ সিসির হয়ে থাকে। ফোরডব্লিউডি লক, হিল ডিসেন্ট কন্ট্রোল, ইন্টেলিজেন্ট অ্যারাউন্ড ভিউ মনিটর, নিশান সেফটি শিলড অপশনসহ গাড়িটির ভেতর এবং বাহির সমান রাঙা। এক্স, জি, ২০এক্স, ২০এক্সআই, ২০এক্স হাইব্রিড, মড প্রিমিয়ার এবং ইমার্জেন্সি ব্রেক প্যাকেজে দেশের বাজারে পাওয়া যায়। ২০২১-এর পর থেকে চতুর্থ প্রজন্মে টি৩৩ ইঞ্জিনে গাড়িটি ১৫০০ সিসির ভিসি-টার্বো ই-পাওয়ার হাইব্রিড সিস্টেম সমৃদ্ধ। ডিজিটাল ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার, প্রো পাইলট ফিচার, হিড আপ ডিসপ্লে এবং বোস প্রিমিয়াম সাউন্ড সিস্টেমসহ গাড়িটিতে হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। নিশান এক্সট্রেইলের মূল্য প্যাকেজ এবং বছরভেদে ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
মধ্যম ঘরানার এসইউভির মধ্যে হোন্ডা সিআরভি বিশ্বস্ততা এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য গ্রাহকদের মন জয় করেছে। ১৯৯৫ সালে হোন্ডা এই মডেলটি বিক্রির জন্য অবমুক্ত করে। বেশির ভাগ সিআরভি ৫ আসনেরও হলেও কিছু কিছু প্যাকেজে ৭ আসনের গাড়িরও দেখা মেলে। ২০০০ সালের পর থেকে গাড়িটি দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। জাপান মার্কেটে ষষ্ঠ প্রজন্মের গাড়ি পাওয়া গেলেও দেশের বাজারে পঞ্চম প্রজন্মের গাড়ি বেশ জনপ্রিয়। ২০১৭ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের এই গাড়িটিতে এলইডি হেডল্যাম্প, বৃহৎ আকারের গ্রিল, হোন্ডা সেন্সিং স্যুটসহ অনেক ফিচার রয়েছে। হাইব্রিড মডেলের গাড়িটি প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে ১৮ থেকে ২২ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে। অন্যদিকে টার্বো ইঞ্জিনে এই গাড়িটির মাইলেজ ১২ থেকে ১৪ কিমি। ৪০ লাখ থেকে ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে গাড়িটি দেশের বাজারে সহজলভ্য।
টয়োটা প্রাডো/লেক্সাস/পাজেরো
বিলাসবহুল গাড়ির সারিতে যে গাড়িটি দেশের ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ সেটি হলো ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো। গাড়িটির রোড অ্যাপিয়ারেন্স উল্লেখ করার মতো। প্রিমিয়াম এসইউভি বাজারে প্রতিপত্তি, টেকসই ও যেকোনো উঁচু-নিচু পথে দাপটের সঙ্গে পাড়ি দেওয়ার জন্য গাড়িটি অবিসংবাদিত প্রতীক। দীর্ঘমেয়াদি, শক্তিশালী ও ঝামেলামুক্ত এসইউভি মানেই ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো। পরিবার, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে প্রাডো সব সময় শীর্ষ পছন্দ। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে প্রাডো ব্যাপকভাবে দেশের গাড়িবাজারে আসতে শুরু করে। তৃতীয় প্রজন্মের জে১২০ মডেলের ইঞ্জিনগুলোতে প্রাডো ২০০২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত একচেটিয়া রাজত্ব করে। চতুর্থ প্রজন্মের জে১৫০ ইঞ্জিনে ২ দশমিক ৭ লিটার পেট্রল, ২ দশমিক ৮ লিটার টার্বো ডিজেল এবং ৪ লিটারে ভিসিক্স পেট্রল ইঞ্জিনে প্রাডো দেশে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন ফেস লিফটে গাড়িটি দেখতে আরও চমৎকার। আগ্রাসী দর্শনের সঙ্গে হালনাগাদ সব ফিচার সংযুক্ত থাকায় গাড়িটি নিয়ে কাছে এবং দূরের যাত্রাতে স্বাচ্ছন্দ্য মেলে। ক্রল কন্ট্রোল, কেডিএসএস (সাসপেনশন সিস্টেম), মাল্টি-টেরেইন সিলেক্ট, জেবিএল সাউন্ড, ব্লাইন্ড স্পট মনিটর এবং 0 রিয়ার ডিপ লক গাড়িটিকে সমৃদ্ধ করেছে। ২০১৩ এবং ২০১৭তে ফেস লিফটে পরিবর্তন এসেছে। টিএক্স, টিএক্স-এল, টিজেড, টিজেড-জি এবং ভিএক্স প্যাকেজে গাড়িটি পাওয়া যায়। পঞ্চম প্রজন্মে সম্পূর্ণ নতুন রেট্রো-মডার্ন ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে জিএ-এফ প্ল্যাটফর্ম, যা অনেকটা ল্যান্ড ক্রুজার ৩০০ এর মতো। ২ দশমিক ৮ লিটার ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়েছে মাইল্ড হাইব্রিড। ১২ দশমিক ৩ ইঞ্চির ডিজিটাল ক্লাস্টার, অ্যাডভান্সড সেফটি এবং ৮ গতির গিয়ার বক্স ব্যবহার করার কারণে গাড়িটি দর্শনের পাশাপাশি গতিতেও অতুলনীয়। বর্তমান বাজারে ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে শুরু করে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডোর মূল্য।
বিলাসবহুল গাড়ির সারিতে টয়োটার প্রিমিয়াম গাড়িগুলো লেক্সাস নামে আসে। লেক্সাসের মধ্যে এলএক্স৩০০, ৩০০এইচ, ৫০০ আরএক্স, এনএক্সসহ বেশ কয়েকটি মডেল বেশ জনপ্রিয়। এই গাড়িগুলোর মূল্য কোটি টাকার ওপর থেকে শুরু হয়।
বাংলাদেশের ব্যক্তিগত গাড়ির বাজারে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আধিপত্য সুস্পষ্ট। টয়োটার গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি হলেও হোন্ডা, নিশান, মিতসুবিশি এবং মাজডার গাড়িও ক্রেতারা ব্যবহার করছেন। জাপান বা জার্মানির একটি নতুন গাড়ির তুলনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ কম হয়। ফলে তুলনামূলক কম বাজেটে ভালো মানের গাড়ি কেনার সুযোগ পান ক্রেতারা। পাশাপাশি কিছু বিক্রেতা সীমিত সময়ের জন্য ওয়ারেন্টিও দিয়ে থাকেন, যা ক্রেতাদের আস্থা বাড়ায়। তবে এই বাজারে ঝুঁকিও রয়েছে। অনেক সময় গাড়ির মিটার টেম্পারিং (চালনাকৃত দূরত্ব কমিয়ে দেখানো) করা হয়, অথবা প্রয়োজনীয় রিকন্ডিশনিং না করে বিক্রি করা হয়। আবার কিছু গাড়ির প্রকৃত ইতিহাস জানা যায় না, যা ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই যাচাই-বাছাই করে, অভিজ্ঞ মেকানিক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এবং নির্ভরযোগ্য ডিলারের কাছ থেকে গাড়ি কেনা অত্যন্ত জরুরি।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জাপান থেকে আসা ৫ বছরের মধ্যে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির অনুমতি রয়েছে, এবং আমদানি শুল্কের হার গড়পড়তায় মডেল ও ইঞ্জিন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ১২০-৩০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে কিছু করছাড় ও প্রণোদনা রয়েছে, তবে তা এখনো অনেকাংশে সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, হাইব্রিড গাড়ির জন্য আমদানি শুল্ক কিছুটা কম, আর সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য ভ্যাট এবং অগ্রিম আয়করে ছাড় থাকলেও মূল গাড়ির দাম বেশি হওয়ায় তা সবার নাগালে আসছে না। বর্তমানে প্রস্তাবিত ‘ইভি নীতিমালা ২০২১’ বাস্তবায়ন হলে ইলেকট্রনিক ভেহিকেল-শিল্পে বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এই নীতিমালা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের যানবাহনের ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকার বর্তমানে গাড়ি আমদানির ওপর কিছু শুল্ক ও কর আরোপ করে রেখেছে, যার কারণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে। তবুও নতুন গাড়ির তুলনায় এর চাহিদা এখনো অনেক বেশি। পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি আগ্রহ বাড়ায় ভবিষ্যতে এই সেগমেন্টে বৈচিত্র্য আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বাংলাদেশের গাড়ি বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে কেনা হলে এগুলো হতে পারে একটি দারুণ বিনিয়োগ। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও মধ্যবিত্তের আয় বৃদ্ধির ফলে এই খাতের সম্ভাবনা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এত দিন মধ্যবিত্তের স্বপ্নপূরণের মাধ্যম হিসেবে কাজ করলেও এখন এটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তনেরও বাহক হয়ে উঠছে। হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির সঙ্গে প্রণোদনামূলক নীতিমালার সমন্বয় ঘটলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার আরও পরিবেশবান্ধব, প্রযুক্তিনির্ভর ও টেকসই হবে—এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।