ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযান গড়িয়েছে তৃতীয় সপ্তাহে। রুশ সেনাদের চালানো হামলায় পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির সামরিক-বেসামরিক বহু অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। উঠছে বেসামরিক প্রাণহানির অভিযোগও।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বুধবার (১৬ মার্চ) রাতে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় তিনি এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ভিডিওবার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি দিতে হবে।’
প্রতিবারের মতো এবারও তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে রাশিয়াকে মোকাবিলায় ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণারও দাবি জানান জেলেনস্কি।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে বেসামরিক আশ্রয়কেন্দ্রে হামলার অভিযোগ
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি থিয়েটারে হামলার অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। রুশ সেনাদের হাতে অবরুদ্ধ মারিউপোল শহরের ওই থিয়েটারে শত শত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছে দেশটি। তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্য হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। রাশিয়া অবশ্য এই হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে।
মারিউপোল সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, বুধবার শহরের একটি থিয়েটারে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে থিয়েটারটি বেসামরিক মানুষের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং শত শত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলার পর অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো তথ্য জানাতে পারেনি সিটি কউন্সিল।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার পর মারিউপোল শহরের ওই থিয়েটার ভবনে বহু মানুষ আটকা পড়েছেন। একইসঙ্গে রাশিয়াকে যুদ্ধাপরাধের জন্যও অভিযুক্ত করেছে তারা।
ইউক্রেনকে আরও ৮০ কোটি ডলারের সহায়তার ঘোষণা বাইডেনের
রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যেই ইউক্রেনকে আরও ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্যের আবেদন জানানোর পর সহায়তার নতুন এই ঘোষণা দিলেন তিনি।
সর্বশেষ ঘোষণা করা এই সহায়তার মধ্যে বিভিন্ন রকমের অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এই সহযোগিতার মধ্যে ‘নো ফ্লাই জোন’ বা বিমান উড়ানো নিষিদ্ধ এলাকা অন্তর্ভুক্ত নয়। যদিও ‘নো ফ্লাই জোন’ আরোপের বিষয়ে ইউক্রেন বার বার আবেদন জানিয়ে আসছে।
বাইডেন জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনকে ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার মূল্যের সামরিক সাহায্য করা হবে। নিরাপত্তা প্যাকেজে ইউক্রেনকে বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থাসহ প্রাণঘাতী অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বাইডেন। পাশাপাশি ড্রোনও দেওয়া হবে পূর্ব ইউরেপের এই দেশটিকে।
পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বললেন বাইডেন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করার কারণে বুধবার (১৬ মার্চ) রুশ প্রেসিডেন্টকে এই তকমা দেন তিনি।
এর আগে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সর্বসম্মতিক্রমে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (পুতিন) একজন যুদ্ধাপরাধী।’ যদিও প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ভাবে ‘না’ উত্তর দিয়েছিলেন বাইডেন।
অবশ্য হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি পরে বলেন, (পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করার বিষয়ে) প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার মন থেকে কথা বলছেন। তিনি আরও বলেন, পুতিন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ করেছেন কি না তা নির্ধারণের জন্য একটি পৃথক আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়াটি বর্তমানে পররাষ্ট্র দপ্তরে চলছে।
আমরা এক সেকেন্ডের জন্যও হাল ছাড়িনি: জেলেনস্কি
অনলাইনে যুক্ত হয়ে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের জনগণ এবং সৈন্যদের সাহসী লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে বলেছেন, আমরা এক সেকেন্ডের জন্যও হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবিনি। তিনি বলেন, রাজধানী কিয়েভে প্রত্যেকদিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ান দখলদাররা। কিন্তু তারপরও আমরা হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারিনি।
তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে ইউক্রেন এবং গত আট বছর ধরে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করা হয়েছে। বুধবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের ব্যাপারে কথা বলেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি আবারও ইউক্রেনে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।
ভাষণের শুরুতে কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আইনপ্রণেতাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। একইসঙ্গে তিনি জেলেনস্কির উদ্দেশে বলেন, ‘‘সাহসী নেতৃত্বের জন্য আপনার প্রতি কংগ্রেসের সহকর্মী সদস্যদের ‘মহান শ্রদ্ধা, এবং প্রশংসা’ রয়েছে।’’
রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমেরিকান আইন প্রণেতাদের আরও কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিশ্বের ‘শান্তির নেতা’ হওয়ার অনুরোধ করেন।
রুশ অভিযানে খারকিভে নিহত অন্তত ৫০০
ইউক্রেনে রুশ অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে অন্তত ৫০০ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
শহরটির জরুরি সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সর্বশেষ বুধবার খারকিভের নেমিয়াশলিনস্ক জেলায় একটি বহুতল ভবনে রুশ বাহিনীর ছোড়া গোলার আঘাতে দুই জন বেসামরিক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জরুরি সেবা বিভাগ।
তবে তাদের এই দাবি যথাযথ কিনা তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হবে আগামী দিনে: রুশ গোয়েন্দাপ্রধান

বিদেশি রাষ্ট্রসমূহে গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনাকরী রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআরের প্রধান নির্বাহী সের্গেই নারিসকিন বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে বর্তমানে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে উপস্থিত হয়েছে রাশিয়া।
ভবিষ্যতে বিশ্ববাসীর সামনে রাশিয়ার ভাবমূর্তি কেমন হবে, তা এই অভিযানের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রাশিয়ার প্রধান দুই গোয়েন্দা সংস্থার নাম এফএসবি ও এসভিআর। এই দু’টি সংস্থার মধ্যে এফএসবি দেশের অভ্যন্তরে এবং এসভিআর বহির্বিশ্বে গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনা করে। বুধবার রাজধানী মস্কোতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এক অনুষ্ঠানে এসভিআর প্রধান সের্গেই নারিসকিন বলেন, ‘রাশিয়া বর্তমানে বাস্তবিক অর্থেই ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সামনে উপস্থিত হয়েছে। (ইউক্রেনে অভিযানকে কেন্দ্র করে) আমাদের ভাগ্যে যা ঘটবে, তা ই ভবিষ্যত পৃথিবীতে রাশিয়ার স্থান নির্ধারণ করবে।’
তবে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে রাশিয়া কখনও, কোনো অবস্থাতেই আপস করবে না উল্লেখ করে এই রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রুশ নগারিকদের সম্মান, তাদের নিশ্চয়তা। এটি আমাদের শিশুদের ভবিষ্যত।’
‘তাই এই প্রশ্নে কখনও রাশিয়া পিছু হটেনি, ভবিষ্যতেও কোনো পরিস্থিতিতে পিছু হটবে না। কারণ, যদি এক্ষেত্রে আপস করা হয়, তাহলে রাশিয়া আর প্রকৃত রাশিয়া থাকবে না।’
যুদ্ধ অবসানে চুক্তির কাছাকাছি ইউক্রেন-রাশিয়া
ইউক্রেনের সাথে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির কিছু অংশ নিয়ে মস্কো-কিয়েভ ঐকমত্যে পৌঁছানোর কাছাকাছি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়া। কিয়েভ নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হওয়ার পর তারা ওই চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম যুদ্ধ অবসান নিয়ে আশা তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আরবিসি নিউজকে বলেছেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে এখন গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘এখন অত্যন্ত জরুরি এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি একেবারে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে রয়েছে; যা আমার দৃষ্টিতে চুক্তির কাছাকাছি।’
রুশ এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণ ছাড়াই ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চিয়তার পাশাপাশি সম্ভাব্য একটি বিকল্প এবং নিরপেক্ষতার ব্যাপারে ফেব্রুয়ারিতে কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে চুক্তির ব্যাপারে আশার বাণী লাভরভের কাছ থেকে আসার পর ইউরোর মূল্য ০ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে লাভরভ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আলোচনা সহজ নয়। কিন্তু ‘সমঝোতায় পৌঁছানোর কিছু আশা’ দেখা যাচ্ছে।
কিয়েভজুড়ে বিস্ফোরণের মাঝেই জেলেনস্কির সঙ্গে ৩ প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
দীর্ঘ এবং বিপজ্জনক পথে ট্রেনযোগে পোল্যান্ড হয়ে কিয়েভ সফর করায় ইউরোপের তিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার প্রশংসা করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার ইউরাপের ওই তিন প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার কিয়েভ সফরে যান। সেখানে পৌঁছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যখন তাদের বৈঠক চলছিল, সেই সময় কিয়েভজুড়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
বিবিসি বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে কিয়েভে যখন কারফিউ শুরু হয়, সেই সময় সেখানে পৌঁছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতিউজ মোরাউইকি, স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানেজ জানসা এবং চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা। পরে চেক প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনীয়দের বলেন, ‘আপনারা একা নন।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পশ্চিমা কোনো নেতাদের মধ্যে প্রথম ওই তিন প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন সফর করেছেন। চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পিত্র ফিয়ালা বলেন, আপনাদের সাহসী লড়াইয়ের প্রশংসা করছি আমরা। আমরা জানি, আপনারা আমাদের জন্যও লড়াই করছেন। আপনারা একা নন। আমাদের দেশ আপনাদের পাশে রয়েছে।
রাশিয়ার আরও এক জেনারেলকে হত্যার দাবি ইউক্রেনের
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আরও এক জেনারেল নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দেশটি। নিহত ওই রুশ সেনা কর্মকর্তার নাম মেজর জেনারেল ওলেগ মিতিয়ায়েভ।
ইউক্রেনের মারিউপোল শহরে হামলার সময় পাল্টা হামলায় তিনি নিহত হন। এছাড়া ওলেগ মিতিয়ায়েভকে ইউক্রেনের হামলায় নিহত চতুর্থ রুশ জেনারেল বলেও দাবি করেছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান্টন গেরাশচেঙ্কো বলেছেন, ৪৬ বছর বয়সী জেনারেল মিতায়েভ মঙ্গলবার নিহত হয়েছেন। তিনি টেলিগ্রামে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন, যেটাকে তিনি নিহত ওই সেনা কর্মকর্তার ছবি বলে দাবি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, জেনারেল মিতায়েভ রুশ সামরিক বাহিনীর ১৫০তম মোটরচালিত রাইফেল ডিভিশনের নেতৃত্বে ছিলেন এবং সিরিয়ায় যুদ্ধ করেছিলেন।
তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাতের ভাষণে আরেক রুশ জেনারেলের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ভাষণে ওই রুশ সেনা কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেননি জেলেনস্কি।
প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের
ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিচালনা করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সামরিক অভিযানের তিন সপ্তাহের মাথায় এসে অনেকটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে পূর্ব ইউরোপের ছবির মতো সুন্দর এই দেশটি। এমনকি অভিযোগ উঠেছে বেসামরিক প্রাণহানিরও।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) হওয়া ভোটাভুটিতে সর্বসম্মতিক্রমে মার্কিন সিনেট পুতিনকে নিন্দা জানিয়ে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে।
বিবিসি জানিয়েছে, বিরল এই ক্রস-পার্টি ভোটের মাধ্যমে পুতিনকে যুদ্ধপরাধী আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্টর সিদ্ধান্তের তদন্ত করতে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে।
এদিকে ভোটাভুটির আগে মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শুমার মঙ্গলবার সেখানে বক্তৃতা করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ইউক্রেনে ‘নৃশংসতার’ জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জবাবদিহি করতে হবে।
ইউক্রেন টিকে থাকবে, পুতিন থাকবে না : ব্লিংকেন
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউক্রেন ‘ভ্লাদিমির পুতিনের চেয়ে অনেক বেশি দিন’ টিকে থাকবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ব্লিংকেন এই মন্তব্য করেন বলে বুধবার (১৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মঙ্গলবার সিএনএনকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, স্বাধীন (দেশ হিসেবে) ইউক্রেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি দিন টিকে থাকবে। তার ভাষায়, ‘প্রথমত, এমন একটি স্বাধীন ইউক্রেন হতে চলেছে, যেটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চেয়ে অনেক বেশি স্থায়ী হবে।’
সিএনএন’র উপস্থাপক ওলফ ব্লিটজারকে অ্যান্টনি ব্লিংকেন আরও বলেন, ‘যেভাবেই হোক, (পৃথিবীতে) ইউক্রেন টিকে থাকবে এবং একপর্যায়ে পুতিন থাকবে না।’
কিয়েভে হামলায় আরও ২ সাংবাদিক নিহত
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অভিযানের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আরও দুই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত ওই দুই সাংবাদিকের নাম পিয়েরে জাকরজেউস্কি এবং ওলেক্সান্দ্রা কুভশিনোভা।
তারা উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের হয়ে কাজ করতেন। বুধবার (১৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে হোরেঙ্কা নামক স্থানে সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়িতে গোলা আঘাত হানলে ৫৫ বছর বয়সী ক্যামেরাম্যান পিয়েরে জাকরজেউস্কি এবং ২৪ বছর বয়সী ওলেক্সান্দ্রা কুভশিনোভা নিহত হন।
এছাড়া এই ঘটনায় নিহত দুই সাংবাদিকের সহকর্মী ৩৯ বছর বয়সী বেঞ্জামিন হল আহত হন। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে ফক্স নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুজান স্কট সংবাদকর্মীর মৃত্যুকে সংস্থার জন্য একটি ‘হৃদয়বিদারক দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। একইসঙ্গে ‘সাংবাদিক হিসাবে জাকরজেউস্কির আবেগ এবং প্রতিভা তুলনাহীন’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
কিয়েভের পতন সহজ নয় কেন?
কীভাবে ইউক্রেনের সৈন্যরা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে কিয়েভের সীমার বাইরে রাখার জন্য কঠোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, সেই গল্প সোমবার বিবিসিকে জানিয়েছেন রাজধানীর প্রতিরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত দু’জন সেনা জেনারেল। কেন তারা বিশ্বাস করেন যে, শহরের সেই সক্ষমতা রয়েছে, যা রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে সব ধরনের পার্থক্য তৈরি করবে, সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
রাশিয়ার ধ্বংসাত্মক গোলাবারুদের পাশাপাশি যুদ্ধের তীক্ষ্ণ স্পর্শ আরও তীব্রভাবে অনুভব করছে কিয়েভ। সোমবার সকালের দিকে কিয়েভের ৯ তলা একটি ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হানে। এতে অন্তত একজনের প্রাণহানি ঘটে। ধ্বংস হয়ে যায় ভবনটি। ওই ভবনের কয়েক ডজন বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে পড়েন। ভবনের অনেক বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে না নেওয়া হলে সেখানকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো। কিন্তু কিয়েভের উপকণ্ঠের অনেক শহরে এখনও রাশিয়ার অস্ত্রের ছোয়া লাগেনি
অন্যদিকে, দেশটির অন্যান্য শহরে অত্যন্ত ভারি গোলাবর্ষণ চলছে এবং অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিয়েভের বাসিন্দাদের প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যে পশ্চিম ইউক্রেনে চলে গেছেন অথবা দেশ ছেড়েছেন। বাকি যারা শহরটিতে রয়েছেন সামনে তাদেরও একই নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ইউক্রেনের খেরসন শহর দখল করেছে রুশ বাহিনী
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন দখল করেছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কোনাশেনকভ বলেন, সোমবার খেরসন শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনারা। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল, তবে কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে বিবিসিকে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এক প্রতিবেদনে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা রিয়া নভোস্তি জানিয়েছে, গত ২ মার্চ খেরসনের মূল কেন্দ্র দখল করেছিল রুশ বাহিনী। তবে সেখানকার জনগণের নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও নাগরিকরা যেন তাদের ন্যূনতম প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পান সেজন্য নগরপ্রশাসনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলছিলেন রুশ বাহিনীর কর্মকর্তারা।
ঠিক কী কারণে এই বোঝাপড়া শেষ হয়ে গেল, সে বিষয়ে অবশ্য রিয়া নভোস্তির প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি, তবে খেরসনে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর পথসমূহ রুশে সেনারা বন্ধ করেনি বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম।
রুশ সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জেলেনস্কির
অভিযানরত রুশ সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি। সোমবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে চেচনিয়ার বিদ্রোহীদের দমন অভিযানে যত সংখ্যক রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছিল, ইউক্রেন অভিযানের গত ২০ দিনে তার চেয়েও অধিক রুশ সেনা মৃত্যু বরণ করেছেন— উল্লেখ করে ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা বেঁচে থাকতে চান।’
রুশ সেনাদের উদ্দেশে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি আপনারা আমাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন, ভদ্র-মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়, আপনাদের সঙ্গেও তা ই করা হবে…এমন আচরণ, যা কখনও আপনাদের সেনা কর্মকর্তারা আপনাদের সঙ্গে, কিংবা কারোর সঙ্গেই কখনও করেনি।’
হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া, কিয়েভে কারফিউ ঘোষণা
রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অন্তত দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগ্রাসী বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী দখলে মরণ কামড় দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কিয়েভের মেয়র রাজধানীতে ৩৫ ঘণ্টার জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছেন; যা শুরু হবে স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে।
মঙ্গলবার ভোরের কিছু আগে শহরের কেন্দ্রস্থলে দু’টি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সোমবার শেষ রাতের দিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী শত্রুপক্ষের একটি ড্রোনকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর পর রাজধানীজুড়ে বুলেটের ঝলকানি দেখা গেছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎচকো বলেছেন, ‘আজকের দিনটি কঠিন এবং বিপজ্জনক এক মুহূর্ত।’
‘রাজধানী হল ইউক্রেনের প্রাণ এবং এটি রক্ষা করা হবে। বর্তমানে ইউরোপের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার প্রতীক এবং সম্মুখ লড়াইয়ের অন্যতম ঘাঁটি হয়ে ওঠা কিয়েভকে আমরা কখনই ছেড়ে দেব না।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা কামানের গোলার আঘাতের পর একটি উঁচু ভবনে আগুন দেখতে পেয়েছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন এবং উদ্ধারকারী কর্মীরা ভবনে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে সহায়তা করছেন। এ সময় ব্যাগে ভর্তি একটি মরদেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে কিয়েভ। কিন্তু রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তুলনামূলক ধীরগতিতে এই শহর অভিমুখে এগিয়ে চলছে এবং চলতি সপ্তাহে সেখানে গোলাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে।
পোল্যান্ডেও রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কা
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রতিবেশি পোল্যান্ডের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। ইউক্রেনে এই যুদ্ধ পোল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। দেশটি মূলত দুই দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। একদিকে, রুশ আগ্রাসনে দেশ ছেড়ে পালানো ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অন্যদিকে, নিজ সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের একটি সামরিক ঘাঁটি আক্রান্ত হয়েছে।
বিবিসি বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটে প্রথম সাড়া দিয়েছে পোল্যান্ড। গত ২০ দিনের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি। সাংস্কৃতিক, ভাষাগত অথবা পারিবারিক বন্ধনের কারণে অনেক ইউক্রেনীয় পোল্যান্ডে যাওয়ার পর সেখানেই থেকে যাচ্ছেন। তবে কেউ কেউ পোল্যান্ড থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পাড়ি জমিয়েছেন।
গত দুই সপ্তাহে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশে জনসংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপত্তার দিক থেকে দেশটিতে বিপদের ঘণ্টাও বাজছে। চলতি সপ্তাহেই পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরের ইউক্রেনের ইয়াভরিভ সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
গত কয়েক বছর ধরে পোল্যান্ড পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়ে আসছে যে, রাশিয়া ইউরোপে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার পরিকল্পনা করছে। তবে সেই সময় সতর্কবাদীদের সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন পোল্যান্ডের নেতারা। কিন্তু সীমান্তের কাছে গোলযোগ তৈরি হওয়ায় সেই শঙ্কাই জোরাল হয়েছে।
একসঙ্গে কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন ইউরোপের ৩ দেশের প্রধানমন্ত্রী
রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দেশটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে তাদের। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা সোশ্যাল নেওটওয়ার্কে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কিয়েভ সফরে যাবেন চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কিয়েভে যাচ্ছেন তারা।
অবশ্য ইউরোপের তিনটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর একসঙ্গে কিয়েভ সফরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও ঠিক কখন তারা সেখানে পৌঁছাবেন সে বিষয়ে চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা বা সংবাদমাধ্যমগুলো কিছু জানায়নি।
কিয়েভের আবাসিক ভবনে হামলা, বিস্ফোরণে বন্ধ মেট্রো স্টেশন
টানা তিন সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ হামলা জোরদার হয়েছে রাজধানী কিয়েভ অঞ্চলেও। অন্যান্য স্থাপনার পাশাপাশি কিয়েভের আবাসিক ভবনগুলোও এখন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এমনকি রাশিয়ার হামলার মধ্যে কিয়েভের মেট্রো স্টেশনেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার নতুন করে রুশ সামরিক বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু আবাসিক ভবনের ছবি প্রকাশ করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। সেসব ছবিতে কিয়েভ অঞ্চলের সভিয়াতোশিনস্কি জেলায় দু’টি পৃথক ভবনে রুশ আক্রমণের পর আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার পর সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অবশ্য রুশ এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না সেটি এখনও জানায়নি ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাজুড়ে রাশিয়ার হামলার মধ্যেই কিয়েভের একটি মেট্রো স্টেশনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে স্টেশনটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে রাশিয়ার হামলা নাকি অন্য কোনো কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটি পরিষ্কার করা হয়নি।
মে মাসে যুদ্ধ সমাপ্তির আশা করছে ইউক্রেন
আগামী মে মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযান ও যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির সরকারের এক উপদেষ্টা বলছেন, এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আগামী মে মাসের শুরুতে ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সরঞ্জাম শেষ হয়ে যাবে এবং এতে করে সেসময় যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে।
ইউক্রেন সরকারের ওই উপদেষ্টার নাম অলেকসি অ্যারেস্টোভিচ। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।
সোমবার রাতে অলেকসি অ্যারেস্টোভিচ বলেন, আমি মনে করি মে মাসের পরে নয়, মে মাসের শুরুতেই আমরা একটি শান্তি চুক্তি পাবো। এসময় তিনি সামনের মাসগুলোতে দু’টি সম্ভাব্য ফলাফলের রূপরেখা দেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে (ইউক্রেন থেকে) সৈন্য প্রত্যাহার এবং সবকিছু-সহ খুব দ্রুত একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হবে, অথবা তারা আরও কিছু সময় ইউক্রেনে সিরিয়ান যোদ্ধাদের মতো যোদ্ধাদের রাখার চেষ্টা করবে। তবে যখন আমরা তাদেরও পিষে ফেলব, এরপর এপ্রিলের মাঝামাঝি বা এপ্রিলের শেষের দিকে একটি চুক্তি হতে পারে।
টিভি টাওয়ারে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৯
ইউক্রেনের একটি টেলিভিশন টাওয়ারে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর চালানো হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। সোমবার (১৪ মার্চ) পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রিভনে শহরের বাইরে রুশ হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও এএফপি।
রিভনের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ভিতালি কোভাল জানিয়েছেন, হামলায় ৯ জন নিহত এবং আরও ৯ জন আহত হয়েছেন। শহরের বাইরে আন্তোপিল গ্রামে হওয়া এই হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া জীবিতদের উদ্ধারের কাজ চলছে।
এদিকে বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স-ইউক্রেন জানিয়েছে, হামলার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে কোভাল বলেন, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে ভবনটিতে দু’টি রকেট আঘাত হানে।
এছাড়া তিনি যে ছবি পোস্ট করেছেন সেখানে ধ্বংসস্তুপ সরাতে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের ক্রেন ব্যবহার করতে এবং হতাহতদের জন্য স্ট্রেচার বহন করতে দেখা যায়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে খবর পড়ার মধ্যেই যুদ্ধের প্রতিবাদ
টানা প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। মস্কোর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিক্ষোভ করছেন রুশ নাগরিকরাও। বিপুল সংখ্যক রুশ বিক্ষোভকারীকে আটক করেও যে প্রতিবাদ দমানো যায়নি তার চিত্র উঠে এলো রাশিয়ার একটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে।
চ্যানেল ওয়ান নামে ওই রুশ টিভি চ্যানেলে খবর পড়ার মধ্যেই ক্যামেরার সামনে যুদ্ধের প্রতিবাদ করেন এক নারী। চ্যানেলটিতে সেসময় সংবাদ পাঠের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। সোমবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় ইভিনিং নিউজ প্রোগ্রামের সময় রাশিয়ার ওই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেলে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সংবাদ পাঠের সময় উপস্থাপকের পেছনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ান এক নারী সংবাদকর্মী। সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, ‘কোনো যুদ্ধ নয়, যুদ্ধ বন্ধ করুন, প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাস করবেন না, তারা এখানে আপনাকে মিথ্যা বলছে।’
নারী ওই সংবাদকর্মীর নাম মারিনা ওভসায়ানিকোভা বলে জানা গেছে। তিনি ওই চ্যানেলের একজন সম্পাদক বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি। লাইভ খবর পড়ার মধ্যেই উপস্থাপকের পেছন থেকে প্রতিবাদ করার সময় মারিনা ওভসায়ানিকোভা বলেন, ‘যুদ্ধকে না বলুন! যুদ্ধ বন্ধ করুন!’
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২০, একে-অপরকে দুষছে রাশিয়া-ইউক্রেন
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া। হামলায় আরও ২৮ জন আহত হয়েছেন জানিয়ে মস্কোর দাবি, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এই হামলা করেছে।
অবশ্য দোনেতস্কে হামলা বা হতাহতের বিষয়ে ইউক্রেনকে দোষারোপ করলেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো প্রমাণ সামনে আনেনি। তবে ইউক্রেন ওই হামলার দায় অস্বীকার করে দাবি করেছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রে এসব মানুষ নিহত হয়েছেন। রয়টার্স স্বাধীনভাবে উভয় পক্ষের বিবৃতি যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।
সোমবার রুশ গণমাধ্যম জানায়, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র দোনেতস্কের কেন্দ্রে আঘাত হানে এবং এতে ২০ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হন। এই ঘটনার জন্য কিয়েভকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করে দেশটি।
অপরদিকে রাশিয়ার এই অভিযোগের জবাবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, হামলায় ব্যবহৃত মিসাইলটি ‘নিঃসন্দেহে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র’ ছিল। টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লিওনিদ মাতিউখিন বলেন, এটি নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ নেই।
একইসঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই হামলাকে ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগও সামনে আনে তিনি।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পে হামলার ঘোষণা রাশিয়ার
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কারাখানা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। সোমবার (১৪ মার্চ) দোনেতস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক অনলাইন পোস্টে জানিয়েছে, ‘দোনেতস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের একটি টচকা-ইউ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনের কট্টর জাতীয়তাবাদীরা যাতে এসব প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে সুবিধা নিতে না পারে সেজন্য এগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হবে।’
রাশিয়ার অনলাইন পোস্টে আরও বলা হয়, ‘আমরা এসব শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিদের পাশাপাশি নিকটস্থ ঘরবাড়িতে বসবাসকারী নাগরিকদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ করছি।’
গত মাসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক ও দোনেতস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।
যুদ্ধ অবসানে ফের আলোচনায় বসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন
ইউক্রেনে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও ইউক্রেন চতুর্থ দফায় নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। রাজধানী কিয়েভ ও মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী পূর্বাঞ্চলীয় দনেৎস্কে প্রাণঘাতী হামলা সত্ত্বেও সোমবার এই আলোচনা শুরু হয়েছে।
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের অবসানে চতুর্থ দফায় আলোচনা শুরু হলেও রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলেছেন, সোমবার দনেৎস্কের কেন্দ্রস্থলে ইউক্রেনের তোচকা ক্ষেপণাস্ত্র গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে। এ সময় ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে দনেৎস্কে শিশুসহ অন্তত ১৭ বেসামরিক নিহত হয়েছেন।
ইউক্রেন বলেছে, চতুর্থ দফার আলোচনায় তারা ‘শান্তি, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং রাশিয়ান সেনা প্রত্যাহারের’ দাবি জানাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের শান্তি আলোচক দলের প্রধান মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, কেবল এসবের পরই আমরা আঞ্চলিক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক মতবিরোধ নিয়ে আলোচনা করতে পারি।
রাশিয়া ইউক্রেনের বড় বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে : ক্রেমলিন
রাশিয়া ইউক্রেনের প্রধান প্রধান সব শহর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। একই সঙ্গে চীনের সহায়তা ছাড়াই ইউক্রেনে রাশিয়ার সব লক্ষ্য পূরণের জন্য যথেষ্ট সামরিক শক্তি মস্কোর আছে বলেও পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়েছে। সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বেসামরিক জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রুশ ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের প্রধান প্রধান জনবহুল শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছে না।
পেশকভ বলেন, ইউক্রেনের প্রধান কিছু শহর ইতোমধ্যে রুশ বাহিনী ঘিরে ফেলেছে। চীনের কাছে রাশিয়া সামরিক সরঞ্জামের সহায়তা চেয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের এই মুখপাত্র বলেন, রাশিয়া কারও কাছে সামরিক সহায়তা চায়নি।
‘অভিযান চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার স্বতন্ত্র সম্ভাবনাময় সক্ষমতা রয়েছে। আমরা বলেছি, অভিযান পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে এবং যথাসময়ে ও সম্পূর্ণরূপে এটি সম্পন্ন করা হবে।’
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সহয়তা চাওয়ার খবর ভিত্তিহীন: চীন

ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে রাশিয়া চীনের কাছ থেকে অস্ত্র সহায়তা চাওয়ার যে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র করেছে, তাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো আহ্বান কিংবা অনুরোধ এখন পর্যন্ত আসেনি বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিয়্যু পেংগ্যিউ।
রয়টার্সকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। আমরা এখনও এ ধরনের কোনো সহায়তার অনুরোধ (রাশিয়ার কাছ থেকে) পাইনি।’
খাদ্য যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব?
‘ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানো না গেলে বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেবে। কারণ সারের দাম এত দ্রুত বাড়ছে যে অনেক কৃষক আর মাটির পুষ্টি জোগাতে পারছেন না।’ সোমবার রাশিয়ার কয়লা এবং সারের রাজাখ্যাত আন্দ্রেই মেলনিচেঙ্কো বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের ব্যাপারে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে মিখাইল ফ্রাইডম্যান, পিইয়োত্র অ্যাভেন এবং ওলেগ দেরিপাসকাসহ রাশিয়ার কয়েকজন ধনকুবের ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে শান্তির আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ইউরোপীয় মিত্ররা পুতিনের আগ্রাসনকে সাম্রাজ্য-ধাঁচের ভূমি দখলের পদক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করেছে। যা এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা যায়নি। কারণ ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে পশ্চিমাদের পদক্ষেপের ব্যাপারে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি মস্কো।
মেলনিচেঙ্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাসহ রুশ ব্যবসায়ীদের ওপর পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে রাশিয়ার করপোরেট খাতকে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপক প্রচেষ্টা দেখা গেছে। আর এসবের উদ্দেশ্য পুতিনকে যুদ্ধের পথ পরিবর্তনে বাধ্য করা।
যদিও পুতিন পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি চলমান যুদ্ধকে বিপজ্জনক জাতীয়তাবাদী ও নাৎসিদের হাত থেকে ইউক্রেনকে মুক্ত করার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করেছেন।
রুশ নাগরিক ৫০ বছর বয়সী মেলনিচেঙ্কোর জন্ম বেলারুশে এবং তার মা একজন ইউক্রেনীয়। রয়টার্সের কাছে ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে মেলনিচেঙ্কোর মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইউক্রেনের ঘটনায় সত্যিই মর্মান্তিক। আমাদের অবিলম্বে শান্তি দরকার।’
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের উৎপাদক ইউরোচেম প্রতিষ্ঠা করেছেন মেলনিচেঙ্কো। তার এই প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের জুগ শহরে অবস্থিত। এছাড়াও রাশিয়ার শীর্ষ কয়লা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সুয়েকের (এসইউইকে) প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
রাশিয়ার এই ধনকুবের বলেন, ‘এই সংকটে অন্যতম ভোগান্তির শিকার হবে কৃষি এবং খাদ্য।’
ইউক্রেনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজন দেখছে না রাশিয়া
জাতিসংঘের অধীনে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর কোনো কারণ দেখছে না মস্কো। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম এই তথ্য সামনে এনেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
রুশ বার্তাসংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভাগের পরিচালক পিয়োটর ইলিয়েচেভ বলেছেন, (ইউক্রেন) রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকায় সেখানে শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজন নেই।
এদিকে চলমান সংকট সমাধানে নতুন রাউন্ড আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। সোমবার ভিডিওলিংকের মাধ্যমে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। কিয়েভের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
মারিউপোলে রুশ হামলায় নিহত প্রায় ২২০০
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে প্রায় ২ হাজার ২০০ বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই রুশ আক্রমণেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করেছে শহর কর্তৃপক্ষ।
রোববার টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় মারিউপোল শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর চালানো হামলায় রোববার পর্যন্ত মারিউপোলের ২ হাজার ১৮৭ জন বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরটিতে প্রায় ১০০টি বোমা ফেলা হয়েছে। এছাড়া গত বুধবার শহরের শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে রুশ সেনাদের চালানো বোমা হামলায় ১৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় অবশ্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়েছে মস্কো।
প্রায় ৫ লাখ বাসিন্দার মারিউপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।
কিয়েভে আবাসিক ভবনে গোলাবর্ষণ, হতাহত ৪
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি আবাসিক ভবনে গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এতে একজন নিহত এবং আরও ৩ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় টিভির বরাত দিয়ে সোমবার (১৪ মার্চ) এক প্রতিদেনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তবে ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস বলছে, সোমবার সকালে স্থানীয় সময় ৭টা ৪০ মিনিটে চালানো হামলার পর দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে কিয়েভের ওই আবাসিক ভবনে রুশ হামলার পরের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস। এসব ছবিতে ৯তলা বিশিষ্ট ভবনের ওই ব্লক থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। এছাড়া ভবনে আটকে পড়াদের উদ্ধারে জরুরি সেবা কর্মীদের মই ব্যবহার করতেও দেখা যায়।
পুতিনের সমর্থনে ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায় র্যালি
রুশপন্থি বহুসংখ্যক বিক্ষোভকারী দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে বিক্ষোভ করেছেন। মস্কো ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থনে অনুষ্ঠিত রোববারের (১৩ মার্চ) এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
সোমবার (১৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের হাতে সার্বিয়া ও রাশিয়ার পতাকা ছিল। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের বেশ কিছু যানবাহনে জেড অক্ষর আঁকা ছিল। যা ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া রুশ সামরিক যানবাহনে দেখা গেছে এবং এরপরই এই প্রতীক ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
রাশিয়াপন্থি এই বিক্ষোভটি সার্বিয়ার একটি কট্টর-ডানপন্থি গ্রুপ আয়োজন করেছিল বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে গত ৪ মার্চ হাজার হাজার সার্বিয়ান নাগরিক রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং রাশিয়ার সমর্থনে প্রকাশ্যে বেলগ্রেডের রাস্তায় নেমেছিলেন। এর দু’দিন পর সেখানে একটি বড় যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ হয়।
রাশিয়ার পাশে দাঁড়ালে চীনকে অবশ্যই পরিণতি ভোগ করতে হবে, হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়াতে মস্কোকে সহায়তা করলে চীনকে ‘অবশ্যই’ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে চলমান হামলার মধ্যেই মস্কো চীনের কাছে অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা চেয়েছে বলে খবর সামনে আসার পর এই মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।
রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে জ্যাক সুলিভান বলেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর আগে থেকে মস্কোর পরিকল্পনার বিষয়ে চীন সচেতন ছিল বলে বিশ্বাস করে ওয়াশিংটন। যদিও বেইজিং হয়তো রাশিয়ার পুরো পরিকল্পনাটি হয়তো বুঝতে পারেনি।
সুলিভান আরও বলেন, বেইজিং রাশিয়াকে ঠিক কতটা অর্থনৈতিক বা অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে কি না সেটি ওয়াশিংটন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তেন কিছু ঘটলে (চীনের বিরুদ্ধে) পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভাষায়, ‘আমরা বেইজিংয়ের সাথে সরাসরি এবং ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখছি, বৃহৎ আকারের নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়ার প্রচেষ্টা বা রাশিয়াকে সহায়তার জন্য বেইজিংকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা এমনটি হতে দেব না এবং এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়াতে বিশ্বের কোনো দেশ থেকেই রাশিয়াকে সহায়তা পেতে দেওয়া হবে না।’
ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য চীনের কাছে অস্ত্র চায় রাশিয়া
ইউক্রেনে টানা প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির অন্য অনেক শহরে রুশ সামরিক বাহিনী সফলতা পেলেও রাজধানী কিয়েভ অঞ্চলে এখনও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি তারা। এই পরিস্থিতিতে মস্কো চীনের কাছে অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা চেয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের কাছে রাশিয়ার সামরিক ও আর্থিক সহায়তা চাওয়ার এই খবরটি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, রাশিয়া চায় ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করুক চীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের শুরু থেকেই চীনা সরঞ্জামের জন্য বেইজিংকে অনুরোধ করে আসছে রাশিয়া। অবশ্য রুশ কর্মকর্তারা চীনের কাছে ঠিক কী ধরনের সরঞ্জাম চাইছেন তা উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মস্কোর অনুরোধের পর চীন সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি পৃথক প্রতিবেদনে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রশমিত করার জন্য বেইজিংয়ের কাছে অর্থনৈতিক সহায়তাও চাইছে মস্কো।
ইউক্রেনে সেনা ঘাঁটিতে হামলায় ১৮০ বিদেশি যোদ্ধা হত্যার দাবি রাশিয়ার
পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের লভিভের ইয়াভোরিভ সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলার দায় স্বীকার করেছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, রোববারের এই হামলায় সেখানে ১৮০ জনের বেশি বিদেশি ভারাটে সৈন্য নিহত হয়েছে। এছাড়া বিদেশিদের সরবরাহ করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কোনাশেনকোভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া বিদেশি যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রাখবে রাশিয়া।
যদিও এর আগে কিয়েভের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছে ইয়াভোরিভ সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৫ সৈন্য নিহত হয়েছে। ঘাঁটিতে রাশিয়ার এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন।
ইউক্রেনে মার্কিন সাংবাদিককে গুলি করে মারল রুশ সৈন্যরা
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠের শহর ইরপিনে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করেছে রুশ সৈন্যরা। এছাড়া রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে আরও এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। রোববার স্থানীয় মেডিক্যাল কর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী শল্য-চিকিৎসক ড্যানিলো শাপোভালভ বলেছেন, রুশ সৈন্যদের গুলিতে আমেরিকান এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আহত অপর একজনকে তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ইরপিনে এএফপির প্রতিনিধিরা নিহত সাংবাদিকের মরদেহ দেখেছেন। এই ঘটনায় তৃতীয় একজন, যিনি ইউক্রেনের নাগরিক; তিনিও একই গাড়িতে ছিলেন এবং গুলিতে আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের আরেক মেয়র অপহৃত
আগ্রাসন চালিয়ে দখলে নেওয়া ইউক্রেনের একটি শহরের আরেকজন মেয়রকে অপহরণ করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। প্রথম একজন মেয়রকে অপহরণের তিন দিনের মধ্যে রোববার তাকে রুশ সৈন্যরা অপহরণ করেছেন বলে ইউক্রেনের সরকার অভিযোগ করেছে।
রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদী কৌশলে অভিযুক্ত করে এক টুইট বার্তায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলেছেন, মেয়র ইয়েভেন মাৎভিয়েভকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ডিনিপ্রোরুডনে থেকে অপহরণ করেছে রুশ সৈন্যরা।
এর আগে, ইউক্রেনের মেলিতোপোল শহরের মেয়রকে অপহরণের পর তার স্থলাভিত্তিক হিসাবে মস্কোপন্থি এক মেয়রকে ক্ষমতায় বসিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনকে টুকরো টুকরো করে ‘ছদ্ম-প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ইউক্রেন সংকট ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে, শঙ্কা ট্রাম্পের
গত কয়েক মাস ধরে চলমান ইউক্রেন সংকট তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনার ফ্লোরেন্সে রিপাবলিকান দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে। শ্রদ্ধাবোধের অভাবের কারণে ইউক্রেন আক্রমণ করেছেন পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিক্রিয়ারও সমালোচনা করেছেন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে যেতে পারে। আমি দেখছি কী ঘটছে। কারণ আপনি যদি মনে করেন পুতিন থেমে যাবেন, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে যাচ্ছে। পুতিন থামবেন না। আর তার সাথে কথা বলার মতো আমাদের কেউ নেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমার মতো কেউ কঠোর হয়নি।
পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে সামরিক ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৩৫
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। রোববার ইউক্রেনের লভিভ অঞ্চলের ইয়াভোরিভ ঘাঁটিতে রাশিয়ার এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইয়াভোরিভের সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। লভিভ অঞ্চলের গভর্নর বলেছে, পশ্চিম ইউক্রেনের এই সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত ও আরও ১৩৪ জন আহত হয়েছেন।
এক বিবৃতিতে লভিভের সামরিক প্রশাসন বলেছে, দখলদাররা আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রুশ সামরিক বাহিনী ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
আক্রান্ত সামরিক প্রশিক্ষণ স্থাপনাটি ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহ্যগতভাবে ন্যাটোর সাথে যৌথ মহড়ার স্থান; যা পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত।
ন্যাটো সীমান্তবর্তী সামরিক ঘাঁটিতে রুশ হামলা, নিহত ৯
সামরিক জোট ন্যাটো তথা পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৫৭ জন। লভিভ অঞ্চলের গভর্নরের বরাত দিয়ে রোববার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এছাড়া আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কেন্দ্রে (আইপিএসসি) নামের এই সামরিক ঘাঁটিতে রুশ সেনারা ৩০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে বলেও জানিয়েছেন লভিভের গভর্নর। এর আগে রোববার রুশ সেনারা সেখানে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল বলে জানা গিয়েছিল।
এদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কেন্দ্রে (আইপিএসসি) বিদেশি সামরিক প্রশিক্ষকরা কাজ করছেন। কেন্দ্রটি লভিভ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ইয়াভোরিভ জেলায় অবস্থিত এবং এটি একটি সামরিক প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র।
লভিভের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাশিয়ার হামলা
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভ অঞ্চলে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। লভিভের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও রুশ সামরিক বাহিনী বিমান থেকে মিসাইল হামলা চালিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে আরও বেশ কিছু এলাকা থেকেও। রোববার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি ইউক্রেনিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, লভিভের সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, রুশ বাহিনী যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে সেখানকার আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কেন্দ্রে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। কেন্দ্রটি লভিভ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ইয়াভোরিভ জেলায় অবস্থিত এবং এটি একটি সামরিক প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র।
হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর আগে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে লভিভ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছিল বিবিসি ইউক্রেন।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তাসংস্থা ইউএনআইএএন জানিয়েছে, লভিভ শহরে দু’টি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লভিভ এবং ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে সারা রাত ধরে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়।
ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে মানবিক পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’
ইউক্রেনের মানবিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে এবং ইতোমধ্যেই দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে এটি বিপর্যয়কর হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। রাশিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান মিখাইল মিজিনতসেভ বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত ইউক্রেনের মানবিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে এবং বেশ কিছু শহরে তা ইতোমধ্যেই বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে।’
অবশ্য পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির মানবিক পরিস্থিতির অবনতির পেছনে রাশিয়ার দোষ দেখছেন না মিখাইল মিজিনতসেভ। ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরের আবাসিক এলাকায় মাইন স্থাপনের মাধ্যমে রাস্তা ও সেতুসহ বহু অবকাঠামো ধ্বংস এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য ও ওষুধের সংকটে রাখার জন্য তিনি দেশটির ‘জাতীয়তাবাদীদের’ অভিযুক্ত করেন।
মিজিনতসেভ আরও বলেছেন, রুশ সেনাদের হাতে অবরুদ্ধ ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে ‘জাতীয়তাবাদীরা’ কয়েক হাজার মানুষকে আটকে রাখায় শহরটির মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। তার ভাষায়, ‘বিদেশি নাগরিকসহ কয়েক হাজার মানুষকে জোরপূর্বক বন্দি করে রেখেছে জাতীয়তাবাদীরা।’
ইউক্রেনকে পশ্চিমা অস্ত্র নিতে দেবে না রাশিয়া?
টানা তিন সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ হামলা মোকাবিলায় সরাসরি সেনা না পাঠালেও মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো।
ই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে রুশ সেনারা। শনিবার (১২ মার্চ) মস্কো এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
শনিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে রুশ উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছি যে, বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র ঢোকানো কেবল একটি বিপজ্জনক কাজই নয়, এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা এই (অস্ত্র বহনকারী) কনভয়গুলোকে হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে।’
তিনি বলেন, মানুষ বহনযোগ্য বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ইত্যাদির মতো অস্ত্র কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই ইউক্রেনে স্থানান্তরের পরিণতি সম্পর্কে (পশ্চিমা দেশগুলোকে) সতর্ক করেছে মস্কো।
আগের মেয়রকে গুম করে মেলিতোপোলে নতুন মেয়র নিয়োগ রাশিয়ার
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মোলিতোপোলের মেয়রকে আগেই গুম করার অভিযোগ উঠেছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে। আর এবার আগের মেয়রের স্থলে নতুন মেয়রকে দায়িত্বে বসানোর কথা শোনা যাচ্ছে। আগের মেয়রকে গুমের একদিনের মাথায় নতুন মেয়রকে দায়িত্বে বসানোর খবর সামনে এলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে মেলিতোপোল শহরের মেয়র ইভান ফেদোরভকে গুমের পর শনিবার স্থানীয় টিভি পর্দায় হাজির হন সিটি কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি গ্যালিনা ড্যানিলচেঙ্কো। এসময় ‘নতুন বাস্তবতার অধীনে মৌলিক প্রক্রিয়া’ গড়ে তোলার বিষয়টি তার প্রধান কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ড্যানিলচেঙ্কো বলেন, শহরের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি ‘জনগণের ডেপুটিদের একটি কমিটি’ গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একইসঙ্গে শহরের বাসিন্দাদের ‘চরমপন্থি কর্মকাণ্ডে’ অংশ না নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
রুশ আগ্রাসন আমাদের সবার জন্য হুমকি : কমলা
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আমাদের সবার জন্য হুমকি। তার দাবি, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন ‘ইউরোপের গণতন্ত্র ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে’ এবং ‘যখন গণতন্ত্র কোনো জায়গায় হুমকির মুখে পড়ে, তখন তা আমাদের সবাইকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়’।
পোল্যান্ড ও রোমানিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর স্থানীয় সময় শনিবার (১২ মার্চ) ডেমোক্র্যাটদের একথা বলেন তিনি। রোববার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার আগাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দিতে চাপের মুখে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। তবে ওয়াশিংটন জোর দিয়ে বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র একমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না যা রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর এ কারণেই ইউক্রেনের ওপর ‘নো-ফ্লাই জোন’ আরোপে রাজি নয় বাইডেন প্রশাসন।
যুদ্ধ অবসানে প্রস্তুত নন পুতিন: ফ্রান্স
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের কোনো ইঙ্গিত দেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার তিন রাষ্ট্রনেতা প্রায় ৭৫ মিনিট ধরে টেলিফোনে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করলেও পুতিন নমনীয়তা দেখাননি বলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এলিসি প্রাসাদের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
টেলিফোনে আলাপকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান। এলিসি প্রাসাদের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধ অবসানে প্রস্তুত নন বলে মনে হয়েছে।’
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, পশ্চিম ইউরোপের দুই নেতা এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, চ্যান্সেলর ওলাফ পূর্ণ আলোচনার শর্তে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মন্তব্য করায় ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করেছে।
গত কয়েক দিন ধরে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে খাদ্য, পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। রুশ হামলার কারণে শহরের হাজার হাজার মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই শহর থেকে অবরোধ তুলে নিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট তার এই আহ্বানের ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেননি।
যুদ্ধের ১৭ দিনে ১৩০০ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত: জেলেনস্কি
রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের প্রথম ১৭ দিনে ইউক্রেনের অন্তত এক হাজার ৩০০ সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের সৈন্যদের প্রাণহানির এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
তবে রাশিয়ার সৈন্য হতাহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাননি তিনি। জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন।
জেলেনস্কির এই তথ্য নিরপক্ষেভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলেছে, পশ্চিমা সূত্রগুলোর ধারণা— একই সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ৬ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছেন।
পুতিনের সাথে আলোচনায় বসতে চান জেলেনস্কি
কিয়েভ এবং মস্কোর সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিরতি ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনা নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘কিয়েভ এবং মস্কোর বাহিনীগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কূটনীতিকরা কাজ করছেন। তারা আমাদের এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে সম্ভাব্য একটি এজেন্ডার কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। আমি এটির বাস্তবায়ন চাই। শতভাগ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যুদ্ধ অবসানের প্রক্রিয়া, শান্তির প্রক্রিয়া শুরু হোক।’
তবে ইউক্রেনের এই নেতা বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুত তিনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সাথে আলোচনায় পুতিনকে নিয়ে জেরুজালেমেও বসা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিস্তারিত…
কিয়েভকে ধ্বংসস্তুপে করতে চান পুতিন?
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে রুশ সামরিক বাহিনী পুরোমাত্রার আক্রমণ শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ধারণা জোরাল হয়েছে, কিয়েভের আশপাশের এলাকায় শনিবার রুশ সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর লড়াইয়ের তীব্রতা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায়।
রাশিয়ার সৈন্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই এখন রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে রয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। গত ১৭ দিন ধরে কিয়েভের কাছের যুদ্ধ পরিমাপ করা হচ্ছে মাইলের হিসাবে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য এখন কিয়েভের কেন্দ্র থেকে ১৫ মাইল দূরে রয়েছেন। তবে রুশ সৈন্যরা কিয়েভের উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে অগ্রসর হওয়ার সময় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে।
ইউক্রেনের পদাতিক বাহিনী ড্রোনের মাধ্যমে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ট্যাঙ্ক-বিরোধী অস্ত্র ব্যবহার করছে। দেশপ্রেমিক স্থানীয় জনগণের কাছে থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা।
কিয়েভ অভিমুখে অগ্রসর হতে গিয়ে রাশিয়ার সৈন্যরা ট্যাংকের জ্বালানি এবং অন্যান্য সরঞ্জামের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপরও রুশ সৈন্যরা কিয়েভের কেন্দ্র থেকে মাত্র ১৫ মাইল দূরে রয়েছে, কিছু কিছু এলাকায় আরও অগ্রসর হয়েছে তারা। কিয়েভ থেকে মাত্র ৮ মাইল দূরের শহর ব্রোভারিতে ইউক্রেনের সৈন্যদের সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে রুশ সৈন্যদের।
রাশিয়ার সাঁজোয়া যানের বহর শহরে ঢুকে পড়া ঠেকাতে সেখানে ভারী গোলাবারুদ ব্যবহার করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা। রাজধানীর চারপাশে, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বের একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। কিয়েভের আশপাশের ছোট ছোট শহর এবং রাজধানীর প্রবেশদ্বারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষের তীব্র লড়াই চলছে। বিস্তারিত
মারিউপোলের মসজিদে রাশিয়ার গোলাবর্ষণ
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলের একটি মসজিদে গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এই মসজিদে তুর্কি নাগরিকসহ ৮০ জনের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিল।
শনিবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে মসজিদে রুশ হামলার এই তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে, মারিউপোল থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিতে রাশিয়া অস্বীকার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন।
রুশ সৈন্যরা চারদিক থেকে শহরটি ঘিরে ফেলায় সেখানে কয়েক হাজার মানুষ আটকা পড়েছেন। তবে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় ইউক্রেনের ওপর চাপিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক টুইটে বলা হয়েছে, মারিউপোলে সুলতান সুলেমান এবং তার স্ত্রী হুররাম সুলতানের নামে নির্মিত জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদটি রাশিয়ান হানাদারদের গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের নাগরিকসহ ৮০ জনের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এবং শিশু সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল।
তবে মসজিদে আশ্রয় নেওয়াদের কেউ আহত অথবা নিহত হয়েছেন কি না তা জানানো হয়নি।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার জবাবে এবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। রুশ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান দিমিত্রি রোগোজিন শনিবার এক বিবৃতিতে এই সতর্কবার্তা দেন।
বিবৃতিতে রোগোজিন বলেন, ‘পশ্চিম যদি শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞাসমূহ প্রত্যাহার না করে, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সরাসরি সেসবের প্রভাব পড়বে।’
১৯৯৮ সালে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা ও ইউরোপের ১১টি দেশের যৌথ প্রকল্প।
মহাকাশ স্টেশনের যে অংশটির দায়িত্বে রাশিয়া রয়েছে, সেটি স্টেশনটির পৃথিবীর কক্ষপথে থাকার ব্যাপারটি দেখভাল করে। যদি হঠাৎ রাশিয়া তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, সেক্ষেত্রে ৫০০ টন ওজনের এই স্টেশনটির ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা হারাচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে রাশিয়া। পশ্চিমা বহু দেশ এবং তাদের মিত্রদেশগুলোর কাছ থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় পড়ছে মস্কো। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যু ছাড়াও চাপ বাড়ছে বাণিজ্যিক ভাবেও।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্ভবত ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের’ মর্যাদা হারাতে যাচ্ছে রাশিয়া। শুক্রবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও গ্রুপ অব সেভেন বা জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ হিসেবে বাণিজ্য সুবিধা পেত রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর কারণে সেসব সুবিধা এখন প্রত্যাহার করা হতে পারে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১৫) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেবেন।
ইভানো-ফ্রাংকিভস্ক শহরেও চলছে হামলা, ভলনোভাখা শহর রুশপন্থিদের দখলে
ইউক্রেনের দুই প্রান্তের দু’টি পৃথক শহরে হামলার পাশাপাশি দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ইভানো-ফ্রাংকিভস্ক শহরেও আক্রমণ শুরু করেছে রুশ সামরিক বাহিনী। শহরটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সেখানকার দক্ষিণ-পশ্চিমে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছে।
এদিকে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভলনোভাখা শহর দখল করে নিয়েছে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। শুক্রবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় ইভানো-ফ্রাংকিভস্ক শহরে হামলা শুরু করে রুশ সামরিক বাহিনী। হামলার সময় শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
এদিকে মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ বার্তাসংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, রাশিয়ার অবরোধ করে রাখা বন্দরনগরী মারিউপোলের উত্তরে অবস্থিত ভলনোভাখা শহর দখল করে নিয়েছে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। মারিউপোলের উত্তরে অবস্থিত এই শহরটি কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুদ্ধবন্দিদের লড়াইয়ে নামাতে চাচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে আটক যুদ্ধবন্দিদের মস্কোর পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার (১১ মার্চ) এক হালনাগাদ তথ্যে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই দাবি করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দিদের রুশ সামরিক বাহিনীর পক্ষে লড়াই করার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। মূলত রুশ শহর রোস্তভের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত সামরিক ইউনিটগুলোতে পুনরায় সৈন্য সংখ্যা পূরণ করার জরুরি প্রয়োজনে যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
এমনকি সামরিক অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যক্তিদেরও রাশিয়া তালিকাভুক্ত করছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
দিনিপরো শহরে রুশ হামলায় নিহত ১
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দিনিপরো শহরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১১ মার্চ) এই অঞ্চলটিতে প্রথমবারের মতো হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। হামলা শুরুর পর সেখানে একজনের মৃত্যুর তথ্য সামনে এলো।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার দিনিপরো অঞ্চলের নোভোকোদাতস্কি জেলায় একজন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস (এসইএস) জানিয়েছে, ‘সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে… শহরে তিনবার বিমান হামলা হয়। হামলার সময় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র একটি কিন্ডারগার্টেন এবং একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে আঘাত হানে।’
এছাড়া শহরের একটি জুতার কারখানায়ও হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা। হামলার পর দুইতলা ওই কারখানায় আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনের দুই প্রান্তের ২ শহরে রুশ হামলা শুরু
ইউক্রেনের দুই প্রান্তের দু’টি পৃথক শহরে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম শহর দু’টিতে হামলা শুরু করল রুশ সামরিক বাহিনী।
এদিকে হামলা শুরুর পর ওই শহর দু’টি থেকে দফায় দফায় বিস্ফোরণের খবর পওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনীয় টিভি ও সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় লুতস্ক এবং পূর্বাঞ্চলীয় দিনিপরো শহরে কিছুক্ষণ আগে হামলা শুরু করেছে রুশ সামরিক বাহিনী। দিনাইপার নদীর তীরে অবস্থিত দিনিপরো শহরটি মধ্য-পূর্ব ইউক্রেনের একটি প্রধান দুর্গ বলে পরিচিত।
কিয়েভ থেকে মাত্র ৯ মাইল দূরে রুশ সেনারা
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ অভিমুখী রাশিয়ার সামরিক বহর গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে কিয়েভের দিকে অগ্রসরমান রুশ সেনাবহরটি বর্তমানে কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে আর মাত্র ৯ দশমিক ৩ মাইল (১৫ কিলোমিটার) দূরে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে শুক্রবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও স্কাই নিউজ।
ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, কিয়েভের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আরেকটি রুশ সেনাবহর ইউক্রেনের রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসছে এবং সেটি বর্তমানে কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) দূরে রয়েছে।
স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো ছবিতেও কিয়েভের কাছে একটি রুশ সেনাবহর দেখা গেছে। সেখানে কিয়েভের আশেপাশের অঞ্চলে রুশ বাহিনীকে পুনরায় মোতায়েন হতে দেখা গেছে। এটি ইউক্রেনের রাজধানীর দিকে রুশ বাহিনীর নতুন করে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক সন্ত্রাসের অভিযোগ ইউক্রেনের
চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যেই রুশ সেনারা ফের একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। একইসঙ্গে মস্কো পারমাণবিক সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে দেশটি। শুক্রবার (১১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক পরিদর্শক সংস্থা জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে অবস্থিত ওই পারমাণবিক স্থাপনায় বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী। রুশ সেনাদের কামানের গোলাবর্ষণের কারণে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রটির বিদুৎ চলে যায় এবং এতে করে সেটি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
বিবিসি বলছে, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে সর্বশেষ এই হামলার ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর এখনও পাওয়া যায়নি এবং রাশিয়াও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে এই ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করেনি।
মারিউপোলের সড়কে সড়কে মরদেহ, খাবার-ওষুধের হাহাকার
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিউপোলের ডেপুটি মেয়র বলেছেন, রাশিয়ার হামলায় শহরে ঠিক কত মানুষ মারা গেছেন, তা তিনি জানেন না। তবে মারিউপোলের সড়কে সড়কে পড়ে আছে শত শত মরদেহ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সড়ক থেকে এক হাজার ২০৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলোভ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এসব কেবল মরদেহ; যা আমরা সড়ক থেকে উদ্ধার করেছি।’ তিনি বলেন, শহরের বাইরে কবরস্থানে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় ৪৭ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে। তাদের সবার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
ওরলোভ বলেন, শহর থেকে লোকজনকে সরানো অথবা সহায়তার আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। বুধবার অন্তত ১০০ মানুষ ব্যক্তিগত যানবাহনে করে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা যেতে পারেননি। রাশিয়ার সৈন্যরা শহরের তল্লাশি চৌকিতে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করায় তাদের গাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছে। রুশ সৈন্যরা সরাসরি তাদের গাড়িতে নয়, গাড়ির চারপাশে গুলি চালানো শুরু করায় তারা ফিরেছে।
ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিউপোলের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে। শহরটিতে রেড ক্রসের প্রতিনিধি দলের প্রধান সাশা ভলকোভ বলেছেন, খাদ্য ও পানির সরবরাহ বিপজ্জনক মাত্রায় ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, হুঁশিয়ার করলেন পুতিন
পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ালে তা বৈশ্বিক খাদ্যের দাম আরও বৃদ্ধি করবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সার উৎপাদনকারী দেশটির এই প্রেসিডেন্ট।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কৃষিমন্ত্রী দিমিত্রি পাত্রুশেভ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি এক বৈঠকে বলেন, রাশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মস্কো বৈশ্বিক কৃষি বাজারে রপ্তানির বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পশ্চিমা সব নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং রাশিয়া পশ্চিমাদের সৃষ্ট এই সংকটের সমাধান শান্তভাবে করবে। বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি শক্তির উৎপাদনকারী মস্কো। ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ করে তারা। ওই বৈঠকে পুতিন বলেছেন, বৈশ্বিক বাজারে চুক্তিভিত্তিক বাধ্যবাধকতা পালন করবে তার দেশ।
ক্রেমলিনের এই নেতা ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ায় এখন অনুভূত হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, এমন মুহূর্তে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের জন্য মানুষের চাহিদা সর্বদা বৃদ্ধি পায়। তবে আমরা শান্তভাবে কাজ করে এসব সমস্যার সমাধান করব; যা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’
ইউক্রেন সংঘাত কি পারমাণবিক যুদ্ধে মোড় নেবে?
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে, এমন বিশ্বাস অন্তত তার নেই। তবে মস্কো আর কখনও পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীল হতে চায় না বলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার তুরস্কের আনতালিয়ায় ইউক্রেন-রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন লাভরভ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ মস্কোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি ১৯৯১ সালের সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সবচেয়ে গুরুতর সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। রাশিয়ার সংবাদপত্র কমারস্যান্টের এক প্রতিনিধি লাভরভের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কি মনে করেন পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে? জবাবে লাভরভ বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই না এবং আমি এটা বিশ্বাস করি না।’
রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ নয়, হুংকার ইউক্রেনের
রাশিয়ান আগ্রাসনের পর তুরস্কে উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর বিষয়ে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার কোনো অগ্রগতি হয়নি। বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে এক বৈঠকের পর এই তথ্য জানিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা।
তুরস্কের আনতালিয়ায় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেনীয় এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতির বিষয়েও কথা বলেছি, ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি। কিন্তু এতে কোনো অগ্রগতি মেলেনি।’
ক্রেমলিনের কথা উল্লেখ করে কুলেবা বলেন, মনে হচ্ছে রাশিয়ায় এই বিষয়টির জন্য অন্য সিদ্ধান্তগ্রহণকারী আছে। ইউক্রেনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার অঙ্গীকারের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘তার দেশ ছাড় দেবে না। আমি আবারও বলতে চাই, ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করেনি। আত্মসমর্পণ করছে না এবং আত্মসমর্পণ করবে না।’
আনতালিয়ার এই বৈঠককে ‘কঠিন’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন কুলেবা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বিরুদ্ধে ইউক্রেন সম্পর্কে ‘প্রথাগত আখ্যান’ আলোচনার টেবিলে আনার অভিযোগ করেছেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শুরু
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বৈঠকে বসেছেন। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) তুরস্কে এই বৈঠক শুরু হয়েছে এবং ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর হামলা শুরুর পর উভয় নেতার মধ্যে এটিই প্রথম কোনো বৈঠক।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এর আগে ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে বুধবারই তুরস্কে পৌঁছান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা তুরস্কের আনাতলিয়া শহরে রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনার জন্য পৌঁছান। বিবিসি জানিয়েছে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর আহ্বানে বৃহস্পতিবার শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে তুরস্কের ওই শহরে পৌঁছান কুলেবা।
রক্তপাত এখনই বন্ধ করুন : গুতেরেস
ইউক্রেনের একটি শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। এই ঘটনাকে তিনি ‘ভয়ঙ্কর’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, ‘বেসামরিক মানুষ এমন একটি যুদ্ধের জন্য চড়া মূল্য দিচ্ছে যার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এই অর্থহীন সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এখনই রক্তপাত বন্ধ করুন।’
ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, রাশিয়া ওই হাসপাতালে এমন এক সময়ে হামলা করেছে যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। হামলায় কমপক্ষে ১৭ জন আহত হন এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে শিশু ও অন্যরা আটকা পড়েন।
ইউক্রেনে রুশ রাসায়নিক হামলার আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের
চলমান সামরিক অভিযানে ইউক্রেনে রাসায়নিক বা জৈব অস্ত্র ব্যবহার করে হামলার পরিকল্পনা করতে পারে রাশিয়া এবং আমাদের সবার সেদিকে নজর রাখা উচিত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে মার্কিন জৈব অস্ত্রের ল্যাব এবং ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্রের উন্নয়ন সম্পর্কে রাশিয়ার দাবি অযৌক্তিক বলেও জানিয়েছে দেশটি।
বুধবার (৯ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি একথা জানান বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনে মার্কিন জৈব অস্ত্রের ল্যাব এবং রাসায়নিক অস্ত্রের উন্নয়ন সম্পর্কে রাশিয়ার এই মিথ্যা দাবিগুলোকে আরও পূর্বপরিকল্পিত, বিনা উস্কানিতে আক্রমণ চালানোর ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টার একটি ‘স্পষ্ট চাল’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন জেন সাকি।
এর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তারা ইউক্রেনে নতুন হামলার বিষয়ে একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, এরপরই বুধবার একই আশঙ্কার কথা জানাল যুক্তরাষ্ট্র।
শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে বোমা হামলা যুদ্ধাপরাধ : জেলেনস্কি
ইউক্রেনের একটি শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়া বোমা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব ইউরোপের ওই দেশটির মারিউপোল শহরে অবস্থিত ওই হাসপাতালে হামলায় ১৭ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
বুধবার মারিউপোল শহর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে, রুশ দখলদার বাহিনী শহরের একটি শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে বোমা হামলা করেছে। কর্মকর্তারা জানান, হামলায় শিশু ও প্রসূতি বিভাগসহ হাসপাতালটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।
রাজধানী কিয়েভ থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশন আসলে কি ধরনের দেশ যে তারা হাসপাতাল এবং প্রসূতি হাসপাতালগুলোকেও ভয় পায় এবং সেগুলো ধ্বংস করে?’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রসূতি হাসপাতালে কেউ কি রাশিয়ার সমালোচনা করেছে? যদি না করে থাকে তাহলে এটি (হামলা) কি ছিল? হাসপাতালে নাৎসীবাদ দূর করার কি আছে?’
জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি ইতোমধ্যেই নৃশংসতার বাইরে। হানাদার সেনারা মারিউপোল শহরে যা করছে তা ইতোমধ্যেই নৃশংসতার থেকেও বেশি। রাশিয়ার এই যুদ্ধাপরাধের নিন্দা জানাতে আজ আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
ঠান্ডা জেঁকে বসেছে ইউক্রেনে, বরফে জমে মৃত্যুর শঙ্কা রুশ সৈন্যদের
আগামী কয়েক দিন ইউক্রেনে তাপমাত্রার পারদ নেমে যাওয়ার সাথে সাথে দেশটিতে ঢুকে পড়া রাশিয়ার ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্যাংকের বহরে থাকা সৈন্যরা ঠান্ডায় মারা যেতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পথে রাশিয়ার সৈন্যদের এই বহর এখন থমকে যাওয়ায় এই শঙ্কা আরও জোরাল হয়েছে।
বাল্টিক সিকিউরিটি ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্লেন গ্রান্ট মার্কিন সাময়িকী নিউজ উইককে বলেছেন, ইঞ্জিন সচল না থাকলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো বিশাল রেফ্রিজারেটরে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, ট্যাংক বহরে থাকা রুশ সৈন্যরা অপেক্ষা করবেন না। তারা বহর থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের দিকে হাঁটতে শুরু করবেন। ঠান্ডায় জমে মৃত্যু এড়াতে তারা জঙ্গলে হাঁটবেন। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট বলছে, তীব্র যুদ্ধের মাঝে রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে যাত্রা করা রুশ সৈন্যদের বহরের গতি ইতোমধ্যে ধীর হয়ে গেছে। বর্তমানে কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে ১৯ মাইল দূরে অবস্থান করছে এই বহর।
রাশিয়ার তেল-গ্যাস ছাড়া বাঁচবে বিশ্ব?
রাশিয়ার তেল আমদানি সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইইউ। অন্যদিকে, তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেন নিষেধাজ্ঞার আওতা আরো বৃদ্ধির আহ্বান জানানোর পর রাশিয়ার তেল, গ্যাস এবং কয়লা আমদানির ওপর পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, পর্যায়ক্রমে রাশিয়ার তেল নির্ভরতা থেকে চলতি বছরের শেষের দিকেই বেরিয়ে আসবে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার গ্যাস আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনছে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ইউরোপকে ‘সর্বোচ্চ সংযমের’ আহ্বান জিনপিংয়ের
ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপকে ‘সর্বোচ্চ সংযমের’ আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে জিনপিং বলেন, ‘ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযানের জেরে ইউরোপে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার যে আকাঙ্ক্ষা ছড়িয়ে পড়েছে— তা দেখে চীন ব্যাথিত। ইউক্রেনের পরিস্থিতি দিনকে দিন উদ্বেগজনক হচ্ছে এবং এই পরিস্থিতিতে ইউরোপ যদি সর্বোচ্চ সংযমের পরিচয় না দেয়, সেক্ষেত্রে খুব দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদসংস্থা সিজিটিএনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যকার সংকট যেন কূটনৈতিক পন্থায় সমাধান হয়, সেজন্য বৈঠকে জার্মানি ও ফ্রান্সকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। পাশাপশি অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপ, এসবের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি, জ্বালানি সরবরাহ, পরিবহন ও পণ্য সরবরাহ বিষয়ক যেসব সমস্যার মুখে বিশ্বকে পড়তে হবে— সেসব নিয়েও উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি।
৮ বছরের এলিসও সড়কে মারা গেল: খোলা চিঠিতে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি
শিশুসহ বেসামরিকদের গণহত্যার দায়ে ক্রেমলিনের নিন্দা জানিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমের কাছে রাশিয়ার আগ্রাসনের ব্যাপারে এক খোলা চিঠি লিখেছেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা। আবেগঘন সেই চিঠিতে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন তার জন্য বিশ্বাস করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ওলেনা লিখেছেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি আমরা রাশিয়ার আগ্রাসনের ঘোষণায় জেগে উঠলাম। ট্যাংকগুলো ইউক্রেনীয় সীমান্ত পার হলো, আমাদের আকাশসীমায় বিমানগুলো ঢুকলো, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকারী যানগুলো আমাদের শহর ঘিরে ফেলল।’
‘‘ক্রেমলিন সমর্থিত প্রোপাগান্ডা চালানো গণমাধ্যমের— ‘যারা এটিকে বিশেষ অভিযান’ অভিহিত করেছিল, আশ্বাস সত্ত্বেও এখন ইউক্রেনীয়দের গণহত্যা করা হচ্ছে।’’
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনীয় শিশুদের প্রাণহানির ঘটনায় হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে ফার্স্ট লেডি ওলেনার। বিশ্ব গণমাধ্যমের কাছে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি নিহত কয়েকজন ইউক্রেনীয় শিশুর নাম উল্লেখ করেছেন।
ফার্স্ট লেডি লিখেছেন, ‘৮ বছরের এলিস…সড়কেই মারা গেল। তার দাদা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। কিয়েভের পলিনা…. গোলার আঘাতে বাবা-মার সাথেই মারা গেল।’
তিনি বলেছেন, ‘১৪ বছর বয়সী আর্সেনির মাথায় ধ্বংসাবশেষ আঘাত করেছিল। তাকেও বাঁচানো যায়নি। তীব্র গোলাবর্ষণের কারণে অ্যাম্বুলেন্স সময় মতো তার কাছে পৌঁছাতে পারেনি।’
‘রাশিয়া যখন বলছে যে, তারা বেসামরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না, তখন আমি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া এই শিশুদের নাম বলছি।’ বলেন তিনি।
ইউক্রেনের সেভেরোদোনেতস্ক শহরে রুশ হামলায় নিহত আরও ১০
ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর হামলায় আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় সেভেরোদোনেতস্ক শহরে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) চালানো ওই হামলায় তারা প্রাণ হারান।
লুহানস্ক অঞ্চলের স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বুধবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুশ সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার সেভেরোদোনেতস্ক শহরের আবাসিক ও অন্যান্য ভবন লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। তবে রুশ সেনারা কামানের গোলাবর্ষণ করেছিল কি না, তাৎক্ষণিকভাবে সেটি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় নিহত ২২
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যে দেশটির সুমি শহরে চালানো বিমান হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।
বুধবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
নাগালে পেলে রুশ বিমান আটকের হুমকি যুক্তরাজ্যের
টানা দুই সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞাও যেন রাশিয়াকে পিছু হটাতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন করে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য।
ইউরোপের এই দেশটির আরোপিত নতুন এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার বিমান এবং মহাকাশ ও বিমান প্রযুক্তির রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একইসঙ্গে যেকোনো রুশ বিমান আটকও করতে পারবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ দেশটির সরকারকে রাশিয়ার বিমান আটক করার ক্ষমতা দেবে এবং যেকোনো ধরনের রুশ বিমানের ব্রিটিশ আকাশসীমায় উড্ডয়ন বা অবতরণ করাকে ফৌজদারি অপরাধে পরিণত করবে।
বৈঠকে বসছেন রাশিয়া-ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যেই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তুরস্কে উভয় নেতার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে এবং এ লক্ষ্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যেই দেশটিতে পৌঁছেছেন।
সম্ভাব্য এই বৈঠকটির কথা নিশ্চিত করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ তুরস্ক সফর করছেন, যেখানে তিনি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার সাথে আলোচনা করবেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এই প্রথম দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু এই বৈঠকের প্রস্তাব করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে কোনো শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা দূরূহ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ কোনো সমঝোতায় এখনও দুই পক্ষ পৌঁছাতে পারেনি।
তৃতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা রাশিয়ার
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ রুশ হামলার অধীনে থাকা দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে আবারও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। মূলত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রবল হামলার মুখে থাকা এসব শহর থেকে বেসামরিক মানুষকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে তৃতীয় দফায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলো মস্কো। রাশিয়ার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বুধবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, চেরনিহিভ, সুমি, খারকিভ এবং মারিউপোলে ফের মানবিক করিডোর চালুর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।
মস্কোর স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১০টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) থেকে এই করিডোর খুলে দেওয়া হবে। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর এ নিয়ে তৃতীয় দফায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলো। অবশ্য মস্কোর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়ার আগের দুই দফার যুদ্ধবিরতি অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে।
ইউক্রেন ছেড়ে পালানো ২০ লাখ মানুষের মধ্যে ৮ লাখই শিশু
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ২০ লাখ ইউক্রেনীয়। সর্বাত্মক হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হওয়া এসব মানুষের মধ্যে প্রায় ৮ লাখই শিশু বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।
বুধবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংস্থাটি বলছে, দেশ ছেড়ে শরণার্থী হওয়া বিপুল সংখ্যক এই শিশুদের অনেকেই কোনো সঙ্গী ছাড়াই একা ভ্রমণ করছেন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে পৌঁছেছেন।
সেভ দ্য চিলড্রেনের ইরিনা সাগোইয়ান বলছেন, ‘(রুশ হামলার মুখে) পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে মরিয়া। এমনকি সন্তানদের রক্ষা করতে তাদের অনেকে হৃদয়বিদারক নানা পন্থা অবলম্বন করছেন। এর মধ্যে নিরাপত্তা ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সঙ্গে সন্তানদেরকে ইউক্রেনের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে এবং নিজের বাড়ি রক্ষার জন্য তারা সেখানেই অবস্থান করছেন।’
কিয়েভে ফের দফায় দফায় বিস্ফোরণ
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফের দফায় দফায় বিস্ফোরণের খবর শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় সময় বুধবার (৯ মার্চ) সকালে কিছু সময় আগে এই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করা সাংবাদিকরা সেখানে সিরিজ বিস্ফোরণের কথা নিশ্চিত করেছেন।
কিয়েভের স্থানীয় সময় এখন প্রায় সকাল পৌনে ৭টা এবং এর মধ্যেই শহরজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছেন জর্জিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন জর্জিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরাকলি ওক্রুয়াশভিলি। রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিদেশি স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আহ্বান জানানোর পর তার যুদ্ধে অংশ নেওয়ার খবর সামনে এলো।
বুধবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। অবশ্য জর্জিয়ার ওই সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কতদিন আগে ইউক্রেনে পৌঁছেছেন বা কবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সেটি উল্লেখ করা হয়নি।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, জর্জিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরাকলি ওক্রুয়াশভিলি অন্যান্য জর্জিয়ান স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে ইউক্রেনে এসেছেন। মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, ‘ওক্রুয়াশভিলি রুশ দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের সাহায্য করার জন্য জর্জিয়ান স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে ইউক্রেনে আছেন।’
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে জেলেনস্কির আবেগঘন ভাষণ
‘আমরা হাল ছেড়ে দেব না। আমরা কিছুতেই হারব না। দেশের জন্য যেকোনো মূল্যে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। যুদ্ধ চালিয়ে যাব বনে-জঙ্গলে, ক্ষেতে-খামারে, পথে-প্রান্তরে, জলে-স্থলে, আকাশে-বাতাসে, নদীর তীর থেকে তীরে। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে তীব্র আবেগঘন ভাষণে এসব কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং ইউক্রেনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ভার্চুয়ালি তিনি এই ভাষণ দেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ।
রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস-কয়লা আমদানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস থেকে এই ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুতিন যে যুদ্ধে জড়িয়েছেন তাতে আমরা সহায়তা করব না।’ খবর বিবিসির।
বাইডেন বলেন, ‘আমদানি বন্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্র সমস্যায় পড়বে। তবে আমার দেশের আইনপ্রণেতারা রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধের ব্যাপারে একমত।’
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র ১০০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে বলেও ঘোষণা করেছেন বাইডেন।
জীবন বাঁচাতে পালিয়েছেন ২০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়
দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেন ছেড়েছেন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এক টুইট বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজ ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছেছে। ইউএনএইচসিআর বলছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারির পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ২০ লাখ ১১ হাজার ৩১২ জন মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়েছেন।
ইউক্রেনের শরণার্থীদের গ্রহণে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে পোলান্ড। দেশটিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ১৩ দিনে ১২ লাখের বেশি মানুষ পাড়ি জমিয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক এই সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হাঙ্গেরিতে প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৩৫০ জন, স্লোভাকিয়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৫ জন এবং রাশিয়ায় ৯৯ লাখ ৩০০ জন ইউক্রেনীয় ঢুকে পড়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোববার পর্যন্ত মলদোভা ও রোমানিয়া ৮২ হাজারের বেশি করে শরণার্থী গ্রহণ করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে আসা ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে গেছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধের রক্তমাখা শরীর, মরার ভান করা ‘ভুয়া ভিডিও’ ভাইরাল
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসমূহ সরগরম হয়ে উঠেছে এ সম্পর্কিত অসংখ্য ভিডিও, ছবি ও পোস্টে। তবে এসবের পাশাপাশি অনেক ভুয়া ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফরমগুলোতে।
এসব ভুয়া ভিডিও ও ছবির মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাজধানী কিয়েভ, পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ, উপকূলীয় শহর মারিওপোলসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে রুশ বাহিনীর। যুদ্ধের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
ইন্টারনেটের সুবাদে প্রাপ্ত এই যুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন নেটিজেনরা। তবে এসবের পাশপাশি কিছু ভুয়া ভিডিও ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন— কয়েকটি ছবিতে দেখা দু’জন তরুণ-তরুণী নিজেদের মুখে রক্তের দাগ এঁকে ছবি তোলার জন্য পোজ দিয়েছেন, তাদের পেছনে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দালানের ছবি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর ইউক্রেনের নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তাদের বক্তব্য, বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ইউক্রেনের যুদ্ধকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমের নেটিজেনরা।
অবশ্য পরে জানা গেছে ইউক্রেনের টিভি সিরিজ কন্টামিনের ছবি এগুলো। ২০২০ সালে ইউক্রেনের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছিল এই সিরিজটি।
যেসব দেশকে আর বন্ধু মনে করে না রাশিয়া
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে পশ্চিমা দেশ ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞার জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে রাশিয়া। বিশ্বের যেসব দেশ ও অঞ্চল রাশিয়ার প্রতি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ নয়’— সেসবের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার এই তালিকা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে থাকা দেশ ও অঞ্চলসমূহ হলো— সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আলবেনিয়া, অ্যান্ডোরা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্সি, অ্যাঙ্গুইলা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, জিব্রাল্টার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ২৮টি দেশ, আইসল্যান্ড, কানাডা, লিশটেনস্টেইন, মাইক্রোনেশিয়া, মনাকো, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, স্যান মারিনো, উত্তর মেসিডোনিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ইউক্রেন, মন্টিনিগ্রো ও জাপান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন থেকে জারি করা ডিক্রি অনুযায়ী, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ নয়’— তালিকায় থাকা দেশ ও অঞ্চলসমূহের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এখন থেকে রুশ মুদ্রা রুবল ব্যবহার করা হবে। এছাড়া, এই দেশ ও অঞ্চলসমূহের কোনো কোম্পানির সঙ্গে যদি রুশ কোনো কোম্পানি বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চায়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রুশ কোম্পনিকে অবশ্যই সরকারের অনুমোদন নিতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ডিক্রিতে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে নিত্য নতুন নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত রাশিয়া নিজেদের ডলারের রিজার্ভের ওপর চাপ এড়াতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
ইউক্রেনের দুই শহরে মানবিক করিডোর চালু
রাশিয়ার সঙ্গে মানবিক করিডোর চালু করার চুক্তিতে পৌঁছানোর পর প্রথমবারের মতো স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের একটি দল ইউক্রেনের সুমি শহর ছেড়েছে। করিডোর চালুর সিদ্ধান্ত রুশ সৈন্যদের অনবরত গোলাবর্ষণের মুখে ভেস্তে যাওয়ার পর নতুন চুক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চেরিহিভ, সুমি, খারকিভ, মারিউপোল এবং রাজধানী কিয়েভ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর চালু করা হয়েছে। সুমি ছাড়াও রাজধানী কিয়েভের পশ্চিমের শহর ইরপিন থেকেও একদল বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই অঞ্চলের প্রধান ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, রোমানভিকা গ্রামের ভেতর দিয়ে শহরের জনসংখ্যাকে কিয়েভ শহরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানকার ১৫০ জনের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে রুশ সৈন্যদের গোলাবর্ষণের কারণে এ ধরনের করিডোর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। রাশিয়ার সংবাদসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, মঙ্গলবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে গোলাবর্ষণ বন্ধ রেখেছে রুশ সামরিক বাহিনী।
অপেশাদার সেনাদের ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হবে না : পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধে তিনি অপেশাদার বা সংরক্ষিত যোদ্ধাদের জড়াবেন না। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার (৭ মার্চ) দেওয়া একটি ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট পুতিন একথা বলেন।
ভিডিও বার্তায় রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলছি, যারা সামরিক বাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত নন, তাদের এই যুদ্ধে ডাকা হয়নি বা ডাকা হবেও না। ….এখানে শুধু পেশাদার সামরিক সদস্যরাই কাজ করছেন।’
অন্যদিকে ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করতে বিপুল সংখ্যায় বেসামরিক মানুষ তালিকাভুক্ত হচ্ছে। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষসহ বিদেশি নাগরিকদেরও এই লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে যে সৈনিক এবং কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন, তাদের মা, স্ত্রী, বোন, স্ত্রী এবং বান্ধবীদের প্রতি ভিডিও বার্তায় সহমর্মিতা জানান ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ‘প্রিয়জনদের জন্য আপনারা কতটা উদ্বেগে আছেন, সেটি আমি অনুভব করতে পারছি।’
বিশ্বের সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞাপীড়িত দেশ রাশিয়া
ইরান ও সিরিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে রাশিয়া। নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষক ওয়েবসাইট ক্যাস্টেলুম ডট এআই এর তথ্য অনুযায়ী, ২২ ফেব্রুয়ারির আগে থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ২ হাজার ৭৫৪টি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
আর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও ২ হাজার ৭৭৮টি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৩২টি।
এর ফলে ইরানকেও ছাড়িয়ে গেছে রাশিয়া। ইরানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬১৬টি নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞার প্রায় ২১ শতাংশই জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলে বাকি ১৮ শতাংশ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ইউক্রেনের ৩০০ নাগরিককে ঢুকতে দিল না যুক্তরাজ্য
ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযান গড়িয়েছে ১৩তম দিনে। সর্বাত্মক হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে ইউক্রেন ছেড়েছেন দেশটির লাখ লাখ নাগরিক। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। তবে এই বিপদের দিনেও যুক্তরাজ্য সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০০ ইউক্রেনীয়কে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের ক্যালাইস থেকে স্থল সীমান্তপথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টার সময় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ফ্রান্সের ক্যালাইসের সাব-প্রিফেক্ট ভেরোনিক ডেপ্রেজ-বউদিয়ারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৫৮৯ জন ইউক্রেনীয় এই সীমান্তে এসেছেন। তাদের মধ্য থেকে ২৮৬ জনকে যুক্তরাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনীয় ফ্যামিলি স্কিমের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার ৭০০ জন যুক্তরাজ্যে আসার জন্য আবেদন করেছেন এবং তাদের মধ্যে ৩০০ জনকে ভিসা দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনজুড়ে রুশ হামলা শুরুর পর দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
ইউক্রেনের বেকারিতে রাশিয়ার হামলা, নিহত অন্তত ১৩
ইউক্রেনের একটি বেকারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর চালানো হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির রাজধানী কিয়েভ থেকে ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) পশ্চিমে অবস্থিত মাকারিভ শহরের একটি শিল্প বেকারিতে চালানো হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সোমবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
ইউক্রেনের মাকারিভ শহরের স্থানীয় জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, সোমবার রাশিয়ার চালানো এই হামলার সময় বেকারিতে ৩০ জন অবস্থান করছিলেন বলে শনে করা হচ্ছে। হামলার পর ধ্বংসস্তুপের নিচে থেকে ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়।
আলজাজিরা অবশ্য এই হামলার তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
ইউক্রেনকে ৭২৩ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
ইউক্রেন সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালনা, বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানে সহায়তা করতে দেশটির জন্য ৭২৩ মিলিয়ন বা ৭২ দশমিক ৩ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, জাপান, ডেনমার্ক, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং আইসল্যান্ড এই প্যাকেজে অর্থ যোগান দিচ্ছে। এছাড়া আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেন ও প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ৩০০ কোটি ডলারের একটি তহবিল ছাড় করার ব্যাপারেও তারা কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন ১৭ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়। রুশ আক্রমণের কারণে শরণার্থীতে পরিণত হওয়া এসব মানুষের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক নাগরিক।
ইউক্রেনের জন্য অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও অতিরিক্ত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি।
ইউক্রেনের হামলায় আরও এক রুশ জেনারেল নিহত
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আরও এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। নিহত ওই রুশ সেনা কর্মকর্তার নাম মেজর জেনারেল ভিতালি গেরাসিমভ। ইউক্রেনের খারকিভ শহরে দেশটির সামরিক বাহিনীর হামলায় তিনি নিহত হন বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দারা জানিয়েছেন- দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে লড়াইয়ের সময় রুশ সামরিক বাহিনীর মেজর জেনারেল ভিতালি গেরাসিমভ নিহত হন। রুশ সেনার শহরটি দখলের চেষ্টা করার সময় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার একপর্যায়ে প্রাণ হারান তিনি। অবশ্য ইউক্রেনের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি ও এপি।
৪৫ বছর বয়সী মেজর জেনারেল ভিতালি গেরাসিমভ রুশ সেনাদের সঙ্গে সিরিয়া ও চেচনিয়াতে সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন এবং ২০১৪ সালে রাশিয়া কতৃক ক্রিমিয়া দখলেও ছিলেন অগ্রভাগে। ক্রিমিয়া দখলে অবদান রাখায় তিনি পুরস্কার হিসেবে একটি মেডেলও পেয়েছিলেন।
রাশিয়া অবশ্য জেনারেল ভিতালির মৃত্যুর বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
তেলে নিষেধাজ্ঞা আসলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করবে রাশিয়া
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার কারণে রাশিয়ার তেলের ওপর পশ্চিমা বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে জার্মানি তথা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে মস্কো। রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক সোমবার (৭ মার্চ) এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সোমবার রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, রাশিয়ার তেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বিশ্ববাজারে বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে। এমনকি বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৩০০ মার্কিন ডলারেরও দ্বিগুণ হতে পারে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র মিত্র দেশগুলোর সাথে আলোচনা করলেও প্রথমেই এই ধরনের যেকোনো পরিকল্পনার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। সোমবারই তাদের এই মনোভাব জানিয়ে দেশ দু’টি।
বিবিসি বলছে, ইউরোপেীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং মোট তেলের ৩০ শতাংশ রাশিয়া থেকে পেয়ে থাকে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোনো কারণে এই তেল-গ্যাসের সরবরাহ ব্যাহত হলে ইউরোপীয় দেশগুলোর সামনে এর কোনো সহজ বিকল্প নেই।
ইউক্রেন-রাশিয়ার তৃতীয় বৈঠকে কিছুটা অগ্রগতি
যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে বেলারুশে তৃতীয় দফা বৈঠক শেষ করেছে ইউক্রেন-রাশিয়া। বৈঠকে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দপ্তরের এক উপদেষ্টার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, মানবিক করিডোরের বিষয়ে ‘নগণ্য ইতিবাচক’ অগ্রগতি হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের এক সদস্যের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতির তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতিতে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি।
ক্রেমলিনের এক সহযোগী রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলে বলেন, বেলারুশের সংলাপ ‘আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে’।
উভয়পক্ষ বলছে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
রুটি ওষুধ বিতরণের সময় গুলিতে ইউক্রেনের হোস্তোমেল শহরের মেয়র নিহত
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছের উত্তরপশ্চিমের শহর গোস্তোমেল শহরের মেয়রকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে রুশ সৈন্যরা। সোমবার নগর কর্তৃপক্ষ বলেছে, রুশ সৈন্যরা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরের শহর গোস্তোমেলের মেয়র ইউরি ইলিচ প্রিলিপকোকে হত্যা করেছে।
গোস্তোমেল শহর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, গোস্তোমেল প্রধান ইউরি ইলিচ প্রিলিপকো ক্ষুধার্তদের রুটি এবং অসুস্থদের মাঝে ওষুধ বিতরণ করার সময় মারা গেছেন।
কখন তাকে হত্যা করা হয় সেবিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে, মেয়র ইউরি ইলিচ প্রিলিপকোসহ আরো দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ফেসবুকে পোস্টে বলা হয়েছে, মেয়রকে কেউই দখলদারদের বুলেটের নিচে যেতে বাধ্য করেনি। তিনি জনগণের জন্য, গোস্তোমেলের জীবন দিয়েছেন। তিনি বীরের মতো মারা গেছেন।
জাতিসংঘ আদালতের শুনানিতে অংশ নেয়নি রাশিয়া
সামরিক অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের শীর্ষ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) ইউক্রেনের দায়ের করা মামলার শুনানিতে অংশ নেয়নি রাশিয়া। অবিলম্বে সংঘাত বন্ধে আইসিজের প্রতি অস্থায়ী আদেশের অনুরোধ জানিয়ে ইউক্রেনের করা এই মামলার শুনানিতে সোমবার রুশ প্রতিনিধিরা হাজির হননি।
আইসিজের প্রেসিডেন্ট জোয়ান জোয়ান ডনহিউ বলেছেন, মামলার শুনানি কার্যক্রমে রাশিয়ান ফেডারেশনের অনুপস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন আদালত।
ডনহিউ বলেন, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার শুলগিন আদালতের কাছে চিঠি দিয়েছেন এবং তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তার দেশের সরকার এই মামলার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে চায় না।
আইসিজের শান্তি প্রাসাদ সদরদফতরে উপস্থিত না হওয়ার জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করেছেন হেগের আদালতে ইউক্রেনের নিযুক্ত প্রতিনিধি অ্যান্টন কোরিনেভিচ। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার আসন শূন্য থাকার বিষয়টি উচ্চস্বরে কথা বলছে। আইনের এই আদালতে তারা আসেননি। তারা রণক্ষেত্রে আছেন। আমার দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ চালাচ্ছেন।’
ইউক্রেনের এই প্রতিনিধি বলেছেন, ‘এভাবেই রাশিয়া বিবাদের সমাধান করে।’
ইউক্রেন: রণক্ষেত্রে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন দুই সৈন্য
ইউক্রেন যুদ্ধ হাজারও মানুষের প্রাণ কাড়ছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থীর জীবন বেছে নিচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। রাশিয়ার আগ্রাসনে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইউক্রেনজুড়ে এখন চলছে ধ্বংসযজ্ঞ আর প্রাণহানি। এমন ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে দাঁড়িয়ে সম্মুখসারিতে লড়াইরত ইউক্রেনের এক দম্পতির বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ঘটনা ইন্টারনেট দুনিয়ায় জয় করেছে নেটিজেনদের মন।
যুদ্ধের ময়দানে সামরিক সাজে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তীব্র গোলযোগের মাঝে এক দম্পতি পরিণয়ের সম্পর্কে বাঁধা পড়ছেন। তাদের পরনে সামরিক ইউনিফর্ম, চারপাশে দাঁড়িয়েছেন সহযোদ্ধা ইউক্রেনীয় সৈন্যরা।
লেসা এবং ভ্যালেরি নামের এই নবদম্পতি ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠের এক এলাকায় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। ভিডিওতে লেসাকে ফুলের তোড়া হাতে দেখা যায়। উভয়ের হাতে রয়েছে শ্যাম্পেনের গ্লাস। চারদিক থেকে লেসা এবং ভ্যালেরিকে ঘিরে সহযোদ্ধা ইউক্রেনীয় সৈন্যরা স্থানীয় একটি গান পরিবেশন করেন।
এ সময় এক সৈন্যকে ইউক্রেনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রে সুর চড়াতে দেখা যায়। মাথায় সামরিক বাহিনীর হেলমেটের পরিবর্তে সাদা রঙের ঘোমটা পরে বর ভ্যালেরির হাত ধরে আছেন কনে লেসা। রণক্ষেত্রে এই দম্পতির বিয়ের ভিডিওটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন জার্মান দৈনিক বিল্ডের প্রতিনিধি পল রনঝেইমার।
পরে অন্যান্য আরও অনেক গণমাধ্যমে সেই ভিডিওটি প্রকাশিত হয়; যা ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ দেখেছেন। ইন্টারনেটে নেটিজেনদের মন জয় করেছে এই ভিডিও, অনেকেই কমেন্টে এই সামরিক দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
চীন-রাশিয়া সম্পর্ক পাথরের মতো শক্ত: বেইজিং
ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও বেইজিং এবং মস্কোর মধ্যে বন্ধুত্ব এখনও ‘খুব শক্তিশালী’ বলে মন্তব্য করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে শান্তির জন্য মধ্যস্থতায় সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে চীন।
গত কয়েক মাস ধেরে পূর্ব ইউরোপের প্রতিবেশী দুই দেশের মাঝে চলমান এই সংকটে বেইজিং অত্যন্ত কৌশলী কূটনৈতিক পথে হেঁটেছে। গত মাসে দুই দেশের ‘সীমাহীন’ কৌশলগত অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করে ঘনিষ্ঠ মিত্র মস্কোর নিন্দা জানাতে অস্বীকার করে বেইজিং। এমনকি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে ‘আগ্রাসন’ হিসাবে বলতেও নারাজ চীন।
সোমবার এক বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াং ই বলেছেন, দুই দেশের মাঝে বন্ধুত্ব একেবারে ‘পাথরের মতো শক্ত’ এবং উভয়পক্ষের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে তিনি বলেছেন, চীন প্রয়োজনীয় মধ্যস্থতা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।
রুশ হামলা : ইউক্রেন ছেড়ে রোমানিয়ায় ২ লাখ ৬১ হাজার মানুষ
ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামারিক অভিযান গড়িয়েছে দ্বাদশ দিনে। সামরিক অভিযানের প্রথম থেকে রুশ সেনাদের হামলার তীব্রতায় ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। জাতিসংঘের হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে শরণার্থী হয়েছেন।
রুশ হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়া এসব মানুষের বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছেন পোল্যান্ডে। তবে আরেক প্রতিবেশী দেশ রোমানিয়ায় আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনীয়দের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ।
সোমবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনের বর্ডার পুলিশের তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৬১ হাজার ৪৪৫ জন ইউক্রেনীয় রোমানিয়ায় পালিয়ে গেছেন। এর মধ্যে রোববার দেশটিতে প্রবেশ করেছেন ৩৩ হাজার ৯৬৯ জন ইউক্রেনীয়।
কিয়েভসহ ৪ শহরে ফের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রাশিয়ার
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির চারটি শহরে ফের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে মস্কোভিত্তিক বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স এই তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ চারটি শহরে হামলা বন্ধ করে মানবিক করিডোর খুলে দেবে রুশ সামরিক বাহিনী। মস্কোর স্থানীয় সময় সোমবার (৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
মূলত শহরগুলোত আটকে পড়া নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষকে নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিয়েভ ছাড়াও অন্য তিনটি শহর হচ্ছে খারকিভ, মারিউপোল এবং সুমি।
ইউক্রেনে অন্তত ৩৬৪ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অন্তত ৩৬৪ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২৫ শিশুও রয়েছে।
এছাড়া হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ৭৫৯ জন। তবে জাতিসংঘ বলছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ ভারী গোলাবর্ষণ, বিস্ফোরণ বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাশিয়াজুড়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, একদিনে আটক প্রায় ৪৫০০
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যে রাশিয়াজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। এর মধ্যে রোববার (৬ মার্চ) একদিনেই দেশটিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণ করে এমন স্বাধীন একটি গ্রুপের বরাত দিয়ে সোমবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার রাশিয়াজুড়ে মোট ৫৬টি শহর থেকে ৪ হাজার ৩৬৬ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৭০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে শুধু রাজধানী মস্কো থেকেই। এছাড়া সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ৭৫০ জন এবং অন্যান্য শহর থেকে আরও ১ হাজার ৬১ জনকে আটক করা হয়েছে।
রুশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার ৫ হাজার ২০০ মানুষ যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন এবং এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে ওভিডি-ইনফো নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা বলছে, রাশিয়ার মোট ৫৬টি শহর থেকে কমপক্ষে ৪ হাজার ৩৬৬ জন বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয়েছে।
সিরিয়ার ভাড়াটে সৈন্যদের ইউক্রেনে নিয়োগ করছে রাশিয়া
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযান গড়িয়েছে দ্বাদশ দিনে। রুশ সামরিক বাহিনীর ব্যাপক হামলার মুখে অনেকটাই বিপর্যস্ত পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি। এর ওপর বেশ কিছু শহরে হামলা আরও জোরদার করেছে রুশ সেনারা। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির অভিযোগ, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে দেশটিতে সিরিয়ার ভাড়াটে সেনাদের নিয়োগ করছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এই তথ্য জানিয়েছেন বলে সোমবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানে অংশ নিতে সিরিয়ার ভাড়াটে সেনাদের নিয়োগ করছে রাশিয়া। এসব সেনারা শহর এলাকায় যুদ্ধ করতে পারদর্শী।
আর এসব যোদ্ধাকে নিয়োগের মাধ্যমে বড় বড় ইউক্রেনীয় শহরগুলো দখল করার জন্য মস্কো প্রস্তুত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
১১ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আগের দিন শনিবারের বিবৃতিতে ১০ হাজারের অধিক রুশ সেনা নিহতের খবর জানিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, গত ১১ দিনের অভিযানে কত সংখ্যক ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে, সে বিষয়ে বিবৃতিতে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
এদিকে, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ জানান, ইউক্রেনে চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২শ’রও বেশি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেনে ২ হাজার ২ শতাধিক সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে রাশিয়া
ইউক্রেনে চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২শ’রও বেশি সামরিক স্থাপণা ধ্বংস করেছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন।
কোনাশেনকভ বলেন, ‘ইউক্রেনে সর্বমোট ২ হাজার ২০৩টি সামরিক স্থাপণা ধ্বংস করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ৭৬ টি কমান্ড পোস্ট ও কমিউনিকেশন সেন্টার, ১১১টি অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল সিস্টেম ও ৭১ টি রাডার সিস্টেম, ৯৩ টি যুদ্ধ বিমান, ৭৭৮টি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান, ৭৭টি মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার, ২৭৯টি মর্টার, ৫৫৩টি বিশেষ সামরিক যান ও ৬২টি ড্রোন উল্লেখযোগ্য।’
এছাড়া ইউক্রেনের প্রিইউৎনয়, জাভিত্নে-বাঝান্নে, স্তারোমলিয়ানোভকা, অক্তায়াব্রসকোয়ি, নোভোমায়াস্কয়ি শহরের সেনা নিবাস ও সেনা ছাউনি থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের হটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই মুখপাত্র।
জেলেনস্কির নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান মার্কিন প্রশাসনের
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির যে প্রস্তাব জেলেনস্কি দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এএফপিকে ওই কর্মকর্তা বলেন, করোনা মহামারির কারণে দুই বছর প্রায় স্থবির অবস্থায় ছিল দেশের অর্থনীতি। এর ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফিতীতে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন জনগণ। তাই এখন তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তা মার্কিন জনগণের ওপর সীমাহীন চাপ সৃষ্টি করবে।
শনিবার টেলিফোনে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি। এই ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন আইন প্রণেতাদের উদ্দেশে একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছিলেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে আইন প্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
মারিউপলে ফের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারিউপলে নতুন করে আবারও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথমটির মতো সর্বশেষ এই যুদ্ধবিরতিও খণ্ডকালীন।
শহরের সিটি কাউন্সিলের বরাত দিয়ে রোববার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খণ্ডকালীন এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় এই বন্দরনগরী থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিতেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে।
পুতিনকে পরাজিত করতে জনসনের ৬ দফা পরিকল্পনা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পরাজিত করতে ছয় দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একইসঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয় নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘ভয়াবহ আক্রমণ’ ব্যর্থ করার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতেই এই ছয় দফা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন বরিস জনসন। এই ছয় দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-
ইউক্রেনে সোভিয়েত আমলের যুদ্ধবিমান পাঠানোর কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র-পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তির বিষয়ে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা , যার মাধ্যমে সোভিয়েত জমানার কিছু বিমান ইউক্রেনকে দেবে পোল্যান্ড। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০ জনের বেশি সিনেটরের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কির বেঠকে তিনি জানিয়েছেন, তার দেশের জরুরি ভিত্তিতে এখন অনেক বিমানের দরকার।
পুতিনকে গুপ্তহত্যার আহ্বান মার্কিন সিনেটরের, চটেছে রাশিয়া
মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে গুপ্তহত্যার আহ্বান জানানোয় চটেছে মস্কো। গ্রাহামের আহ্বান দুই দেশের ভঙ্গুর প্রায় সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রাশিয়া। শনিবার মস্কোতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে গ্রাহামের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, শনিবার মস্কোতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন সুলিভানকে তলব করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে গুপ্তহত্যায় মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের মন্তব্যের দ্ব্যর্থহীন নিন্দা এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ওয়াশিংটন ব্যর্থ হলে তা ‘রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্কের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে।’
সিনেটর গ্রাহামের ওই মন্তব্যের কারণে ইউক্রেনে আগ্রাসনের দায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়া রুশ-মার্কিন সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়ার শান্তি আলোচক দলের সদস্য খুন
গত সপ্তাহে বেলারুশে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের সদস্য ডেনিশ কিরিভ খুন হয়েছেন। শনিবার ইউক্রেনের একাধিক গণমাধ্যম ওই সদস্য খুন হয়েছেন বলে দাবি করেছে। ইউক্রেন প্রতিনিধি দলের সদস্য কিরিভের মৃত্যুর তথ্য প্রথম প্রকাশ করেছেন দেশটির সংসদ সদস্য আলেকজান্ডার ডুবিনস্কি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, গ্রেফতারের চেষ্টার সময় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউয়ের অ্যাজেন্টরা তাকে হত্যা করেছে। পরবর্তীতে ইউক্রেনের দুই গণমাধ্যম ইউক্রেনিয়া ডট ইউএ এবং অবজরেভাটেল অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে কিরিভের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে। আংশিক অস্পষ্ট একটি ছবি প্রকাশ করে সেটি তার মরদেহ বলে দাবি করা হয়েছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ফুটপাতে মুখ থুবড়ে পড়েন আছেন এক ব্যক্তি। তার মুখ এবং মাথা রক্তাক্ত। স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত কিরিভের মৃত্যুর বিষয়ে ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক আনাতোলি শারিজ এ বিষয়ে নাটকীয় বর্ণনা প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাজধানী কিয়েভের একটি আদালতের কাছে মাথায় গুলি চালিয়ে কিরিভকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
রাশিয়া কি মার্শাল ল জারি করছে?
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় জরুরি অবস্থা অথবা মার্শাল ল জারির গুঞ্জন অস্বীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের দ্বিতীয় সপ্তাহে শনিবার তিনি বলেছেন, দেশে মার্শাল ল জারির কোনো ইচ্ছা তার নেই।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নারী সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে পুতিন বলেন, বহিশত্রুর আক্রমণ ঘটছে কেবলমাত্র এমন ক্ষেত্রেই দেশে মার্শাল ল জারি করা হয়। এ ধরনের কোনো ঘটনা আমাদের দেশে ঘটেনি। এই মুহূর্তে আমি আশা করছি, আমরা মার্শাল ল ঘোষণা করবো না।
তিনি বলেন, রাশিয়ার আইনে গুরুতর অভ্যন্তরীণ হুমকি অথবা বিপর্যয়ের কারণে দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ পরিস্থিতি অথবা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার অনুমতি রয়েছে। সেই পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। পুতিন বলেন, ‘আমরা রুশ ফেডারেশনের ভূখণ্ডে কোনো বিশেষ পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি না। আজ পর্যন্ত এটির কোনো প্রয়োজন নেই।’
পশ্চিমারা ডাকাত, রাশিয়া এত বড় যে একঘরে করা যাবে না: মস্কো
ইউক্রেন সংঘাতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার মাধ্যমে পশ্চিমারা দস্যুদের মতো আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছে ক্রেমলিন। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের চেয়েও বিশ্ব অনেক বড় এবং রাশিয়া এত বড় দেশ যে তাকে কখনই বিচ্ছিন্ন করে রাখা যাবে না।
শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ এসব মন্তব্য করেছেন। ক্রেমলিনের এই মুখপাত্র বলেছেন, পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক দস্যুতায়’ লিপ্ত হয়েছে এবং মস্কো এর জবাব দেবে। কী ধরনের জবাব দেওয়া হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। তবে রাশিয়ার স্বার্থ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পেশকভ বলেছেন, এর মানে এই নয় যে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অনেক বড়, একটি দেশকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইউরোপ এবং আমেরিকার চেয়েও বড়। এমনকি রাশিয়াও একটি বড় দেশ। বিশ্বে আরো অনেক দেশ আছে।
মারিউপোল থেকে বেসামরিক সরিয়ে নেওয়ার কাজ স্থগিত
ইউক্রেনের দুই শহর মারিউপোল ও ভোলনোভখার থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পরও গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় মারিউপোলের বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। মারিউপোল নগর কাউন্সিল বলেছে, রাশিয়ান পক্ষ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি মানছে না। যে কারণে সাধারণ লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, বাসিন্দাদের শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নগর কাউন্সিল। মারিউপোলের ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলভ বলেছেন, মারিউপোলে এখনও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পথের শেষের দিকে লড়াই চলছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা, এশিয়ায় তেলের দাম বাড়াল সৌদি
ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে এশিয়ার বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি আরামকো আগামী এপ্রিল মাসের জন্য ক্রুড গ্রেডের সব তেলের দাম নতুন করে নির্ধারণ করেছে বলে শনিবার খবর দিয়েছে রয়টার্স।
এশিয়ায় বিক্রি করা সব ধরনের অপরিশোধিত গ্রেডের অফিসিয়াল বিক্রয় মূল্য (ওএসপি) এপ্রিলের জন্য বাড়ানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আরামকো। বিশ্বের শীর্ষ এই রফতানিকারক দেশটি গত মার্চের তুলনায় আরব লাইট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ৪ দশমিক ৯৫ ডলার বৃদ্ধি করেছে।
যুদ্ধবিরতি মানছে না রুশ সৈন্যরা, অনবরত গোলাবর্ষণ চলছে
ইউক্রেনের সমুদ্র-তীরবর্তী শহর মারিউপোল ও ভোলনোভখার বেসামরিক লোকজনকে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও রুশ সৈন্যরা তা পুরোপুরি মানছে না। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা শনিবার মারিউপোলে এখনও গোলাবর্ষণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন শহরটির ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলভ।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় মারিউপোলের সিটি কাউন্সিল বলেছে, জাপোরিজিয়া অঞ্চলেও লড়াই চলছে। অথচ মারিউপোল থেকে মানবিক করিডোর ব্যবহার করে বেসামরিক লোকজনকে এই শহরে সরিয়ে নেওয়া হবে।
লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পথ বরাবর ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ নিশ্চিত করতে রাশিয়ান পক্ষের সাথে আলোচনা চলছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মেয়র সেরহি ওরলভ বিবিসিকে বলেছেন, ‘রাশিয়ানরা আমাদের লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ এবং গোলাবারুদ নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। এটি একেবারে পাগলামি।
তিনি বলেন, মারিউপোলে কোনো যুদ্ধবিরতি নেই। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পথজুড়েও যুদ্ধবিরতি দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বেসামরিক লোকজনও চলে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু গোলাগুলির মুখে তারা পালাতে পারছে না। মারিউপোলের একজন বাসিন্দা যিনি এই নগরীর কেন্দ্রে বসবাস করেন; তিনি বিবিসিকে বলেছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শহরে এখনও গোলাগুলির শব্দ অব্যাহত রয়েছে।
লিথুয়ানিয়ায় সৈন্য মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি নেদারল্যান্ডস
পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের মাঝে লিথুয়ানিয়ায় সেনা মোতায়েন করছে জার্মানি। রোববার লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, লিথুয়ানিয়ায় বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা মোতায়েন করবে জার্মানি। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ট্যাঙ্কে সজ্জিত একটি সেনা ব্যাটালিয়ন পাঠাবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরভিডাস আনুসাসকাস বলেছেন, নেদারল্যান্ডস থেকেও আরও অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হচ্ছে। চলতি মাসে লিথুয়ানিয়ায় যে সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র এবং নেদারল্যান্ডসের এই সৈন্য সেই মহড়ার অংশ হিসাবে মোতায়েন করা হচ্ছে না।
আনুসাসকাস বলেছেন, এখন পর্যন্ত লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটো জোটের প্রায় ৩ হাজার সৈন্য রয়েছে। চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত দেশটিতে বিদেশি সৈন্য সংখ্যা ৪ হাজারে পৌঁছাবে।
আইন পাসের পর রাশিয়া নিয়ে সতর্ক পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম
‘ভুয়া সংবাদ’ নিয়ে সাম্প্রতিক আইন পাসের পর রাশিয়া প্রসঙ্গে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে পশ্চিমের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। ইতোমধ্যে পশ্চিমা প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম রাশিয়ায় সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
শনিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি, কানাডাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিসি ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের রুশ কার্যালয়ের সাংবাদিকরা তাদের পেশাদার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।
মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন ও সিবিএস তাদের সম্প্রচার স্থগিত করেছে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের রুশ শাখা তাদের প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো রোধে নতুন আইন করছে রাশিয়া। শুক্রবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমায় এই আইন পাস হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, কোনো রুশ নাগরিক যদি ইউক্রেন অভিযান নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ান, সেক্ষেত্রে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাগারে কাটাতে হতে পারে।
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-ওলাফের
ফোনালাপ জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার টেলিফোনে দুই দেশের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে আলাপ হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, শুলজের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে দেশটির রাজধানী কিয়েভ বা অন্য কোনো শহরের বেসামরিক এলাকায় রুশ বাহিনীর বোমা বর্ষণের সংবাদকে ‘ভুয়া খবর’ বলে উল্লেখ করেছেন পুতিন।
তিনি বলেছেন, রুশ সেনারা কিয়েভ বা অন্য কোনো শহরে বোমা বর্ষণ করেনি। এছাড়া বেলারুশে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে যে বৈঠক শুরু হয়েছে, সেটি ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও জার্মান চ্যান্সেলরকে জানিয়েছেন পুতিন।
তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো— কিয়েভকে অবশ্যই মস্কোর শর্তসমূহ পূরণের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। টেলিফোনে শুলজকে পুতিন বলেন, কিয়েভ বরাবর মস্কোর শর্ত মূলত চারটি। এগুলো হলো—একটি নিরপেক্ষ ও পরমাণু অস্ত্রমুক্ত দেশ হিসেবে ইউক্রেনের অবস্থান স্পষ্ট করা, দেশটি থেকে নাৎসীবাদ নির্মূল, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া এবং দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
ফেসবুক-টুইটার নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া
নিজ দেশে ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউব নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে রাশিয়া। শুক্রবার রাশিয়ার যোগাযোগ তদারকি সংস্থা রোসকোমনাডজোর দেশটিতে এই পরিষেবাগুলো নিষিদ্ধ করে দেয়।
রাশিয়ার যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, মার্চেই রাশিয়ান ফেডারেশনে ফেসবুক নেটওয়ার্কের (মেটা প্ল্যাটফর্মের মালিকানাধীন) ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে মেটা প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাশিয়ান ব্যবহারকারীদের নির্ভরযোগ্য তথ্য উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।’ হোয়াইট হাউসও এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ‘এটি গভীরভাবে উদ্বেগজনক।’
ফেসবুকের মূল সংস্থা মেটা জানিয়েছে, তবে দেশটিতে ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ এখনও কাজ করছে।
পশ্চিমকে আর নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার আহ্বান পুতিনের
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে নিষেধাজ্ঞা জারি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিত্যনতুন নিষেধাজ্ঞা আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব নেই, এবং আমার পরামর্শ হলো— নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর আরোপ করবেন না; কারণ এই পরিস্থিতিতে নিত্য নতুন নিষেধাজ্ঞা আরও বেশি উত্তেজনা তৈরী করবে।’ পশ্চিম যদি নিষেধাজ্ঞা জারি অব্যাহত রাখে, সেক্ষেত্রে রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ নেবে বলে সতর্কবার্তা দেন পুতিন।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না। আমরা কেবল সেই পরিস্থিতেই বৈরী পদক্ষেপ নেব, যখন প্রতিবেশীরা রাশিয়ান ফেডারেশনের ক্ষতি হয়— এমন পদক্ষেপ নেবেন।’
‘আমার মনে হয়, কীভাবে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতাকে স্বাভাবিক করা যায়—তা নিয়ে আমাদের সবারই এখন চিন্তাভাবনা শুরু করা উচিত।’
ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর ঘোষণা জাতিসংঘের
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে রুশ বাহিনী মানবাধিকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে কিনা- তা তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি)।
শুক্রবার কাউন্সিলের সাধারণ অধিবেশনে ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের দল গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে ইউএনএইচআরসির ৪৭ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ৩২টি রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, ১৩টি রাষ্ট্র ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র দু’টি রাষ্ট্র- রাশিয়া ও ইরিত্রিয়া।
রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই চাই না, তবে আমরা প্রস্তুত: ব্লিনকেন
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না; কিন্তু রাশিয়া যদি ন্যাটোর কোনো সদস্যরাষ্ট্রে হামলা করে, সেক্ষেত্রে মস্কোকে যথাযথ জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের আছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
শুক্রবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে এক বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেন বলেন, ‘ন্যাটো একটি আত্মরক্ষামূলক জোট। আমরা কোনো সংঘাত চাই না। কিন্তু যদি কোনো প্রকার হামলা হয়, সেক্ষেত্রে ন্যাটোর সদস্যভূক্ত প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
প্রায় দিনভর ইউক্রেন বাহিনীর সঙ্গে তীব্র যুদ্ধের পর ইউক্রেনের জেপোরোজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখল নেয় রুশ বাহিনী। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউক্রেনের জন্য অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রও এটি।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি তুলে রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন ব্লিনকেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও দেখলাম, কীভাবে টানা হামলা করে একদিনের মধ্যে জোপোরোজিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করল রাশিয়া। এটা হচ্ছে তাদের বেপরোয়া মনোভাবের আর একটি উদাহারণ।’
যে তিনভাবে শেষ হতে পারে রাশিয়ার
এই যুদ্ধ ইউক্রেনে যে যুদ্ধটা চলছে সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে শক্তিশালী ঘটনা। আর কিউবার মিসাইল সংকটের পর এ ঘটনাতেই সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে পড়ল পৃথিবী। হামলা-পাল্টা হামলা দিয়ে গেল কয়েকদিনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তিনরকম ঘটনাক্রমের মধ্যে দিয়ে তার সমাপ্তি আসতে পারে। এর একটি হলো- ধ্বংসযজ্ঞ।
দ্বিতীয়টি নোংরা সমঝোতা আর তৃতীয়টি হলো পরিত্রাণ। সম্পূর্ণ বিপর্যয়কর বা ধংসযজ্ঞের যে পরিস্থিতির কথা চিন্তা করা হচ্ছে তা ইতোমধ্যে চলমান। এ অবস্থা চলতে থাকবে যতদিন না ভ্লাদিমির পুতিনের ইচ্ছার কোনো পরিবর্তন হয় অথবা পশ্চিমারা তাকে নিবৃত্ত করে।
এখনও পর্যন্ত পুতিনকে দেখে মনে হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে মানচিত্র থেকে ইউক্রেনের নামগন্ধ মুছে ফেলতে যত রক্ত ঝরানো লাগে পুতিন ঝরাবেন। যত ধ্বংস করা লাগবে তিনি করবেন।
আর এ ধরনের পরিস্থিতি হলে নাৎসিরা যে ধরনের যুদ্ধাপরাধ করেছিল পুতিনও হয়তো সে ধরনের যুদ্ধাপরাধ করে বসবেন। আর তেমনটা হলে ভ্লাদিমির পুতিন, তার মিত্রদেশ ও গোটা রাশিয়া একেবারেই একঘরে হয়ে যাবে।
ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমাচ্ছে রাশিয়া
ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। যে পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপের মোট চাহিদার অধিকাংশ গ্যাস পাঠানো হয়, সেই ওয়েস্টবাউন্ড গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে আগের তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ যাচ্ছে অর্ধেকেরও কম। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ওয়েস্টবাউন্ড পাইপলাইন দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ কমানো হয়েছে বলে রুশ বার্তাসংস্থা আরটিকে নিশ্চিত করেছে পাইপলাইনের রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাসকেড।
ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্যাস সরবহার করা হত, তার অধিকাংশই যেত ওয়েস্টবাউন্ড পাইপলাইন দিয়ে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে ইউরোপে প্রতি ঘণ্টায় ১৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট গ্যাস সরবরাহ করা হতো।
কিন্তু শুক্রবার থেকে এই ওয়েস্টবাউন্ড পাইপলাইন দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন গ্যাস ইউরোপে যাচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের সময় রুশ জেনারেল নিহত
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এক শীর্ষ জেনারেল নিহত হয়েছেন। নিহত ওই রুশ সেনা কর্মকর্তার নাম মেজর জেনারেল আন্দ্রেই সুখভেতস্কি। গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হামলায় তিনি নিহত হন।ফক্স নিউজ বলছে, ৪৭ বছর বয়সী মেজর জেনারেল আন্দ্রেই সুখভেতস্কির মৃত্যুর কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে ক্রেমলিন সমর্থিত রুশ সংবাদমাধ্যম প্রাভদা জানিয়েছে, তিনি ‘ইউক্রেনে একটি বিশেষ অভিযানের সময়’ নিহত হয়েছেন।
এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা তাস জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছর রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের ৪১তম কম্বাইন্ড আর্মস আর্মির ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল আন্দ্রেই সুখভেতস্কিকে নিয়োগ করেছিলেন। এছাড়াও জেনারেল সুখভেতস্কি ৭ম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্বপালন করছিলেন।
অবশ্য রাশিয়ার বাইরে জেনারেল সুখভেতস্কির এটিই প্রথম কোনো অভিযান ছিল না। তাস বলছে, মেজর জেনারেল আন্দ্রেই সুখভেতস্কি সিরিয়ায় কাজ করেছেন এবং সাহসিকতার জন্য রুশ প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে দুই দফায় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
ইউরোপের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ার দখলে
ইউক্রেনের জেপোরোজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলে নিয়েছে রাশিয়া। তীব্র লড়াইয়ের পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দখলে নেয় রুশ সেনারা। ইউক্রেনের এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরো ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শুক্রবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ভবনে রাশিয়ার বোমা হামলায় সেখানে আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপল অবরুদ্ধ, বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় মারিউপল শহর অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে শহরটিতে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ সেনারা। এছাড়া শহরটিতে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পাশাপাশি খাবার সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মারিউপল শহরের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো বলেছেন, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী মারিউপল অবরুদ্ধ করে রেখেছে রুশ সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি, খাবার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তারা।
তিনি আরও বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শহরটি অবরুদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি অব্যাহত ভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাতে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লেনিনগ্রাদ অবরোধের কথা উল্লেখ করে ভাদিম বয়চেঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘লেনিনগ্রাদের মতো করে এখানে তারা অবরোধ আরোপের চেষ্টা করছে।’
নাৎসিদের হাতে রুশ শহর লেনিনগ্রাদ অবরোধের কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
মারিউপল শহরের মেয়র আরও বলেন, ‘(বিচ্ছিন্ন করার পর) তারা আমাদের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ মেরামত করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। রুশ সৈন্যরা আমাদের রেল সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যেন আমরা নারী, শিশু এবং বয়স্ক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে না পারি।’
ইউক্রেনের বন্দরে ফের জাহাজে বিস্ফোরণ
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার মধ্যে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির একটি বন্দরে ফের কার্গো জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহাজটি সমুদ্রের পানিতে ডুবে গেছে। কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ইউক্রেনের অন্যতম বৃহত্তম বন্দর ওডিসায় এই ঘটনা ঘটে।
ওডিসা বন্দরে বিস্ফোরণের পর ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটি এস্তোনিয়ার মালিকানাধীন এবং এর নাম হেল্ট। বিবিসি বলছে, বিস্ফোরণের সময় জাহাজটিতে ছয় জন ক্রু অবস্থান করছিলেন এবং ডুবে যাওয়ার আগে তারা সবাই জাহাজটি থেকে বেরিয়ে আসেন।
অবশ্য হেল্ট জাহাজটি ডুবে গেলেও ক্রুদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। হেল্ট নামের এস্তোনিয়ার এই জাহাজটি বেশ কিছু দিন আগে ওডিসা বন্দর ছাড়ার পর উপকূলে নোঙর করা অবস্থায় ছিল।
তবে তালিন-ভিত্তিক ভিস্তা শিপিং এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইগোর ইলভেস বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী এবং এস্তোনিয়ার মালিকানাধীন হেল্ট নামের এই কার্গো জাহাজের দুই ক্রুকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় এবং অন্য চারজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘জাহাজটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। এছাড়া দু’জন ক্রুকে পানির ওপরে একটি ভেলায় ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় এবং চারজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। আমি জানি না তারা এখন কোথায় আছেন।’
ইউক্রেনে স্কুল ও আবাসিক ভবনে রুশ হামলা, নিহত ৩৩
ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৮ জন।
পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ শহরে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রুশ বাহিনী স্কুলসহ বহুতল আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালালে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
চেরনিহিভ শহরটি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। উত্তর দিক থেকে এই শহরটিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে রুশ সামরিক বাহিনী।
ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন
রাশিয়ান সৈন্যদের আক্রমণের পর ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লেগেছে। আলজাজিরা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এর আগে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে হামলার আশংকার কথা জানিয়েছিলেন এনারগোদারের মেয়র দিমিত্রো। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাশিয়ান সেনাদের একটি বিশাল দল নিকটবর্তী জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
ইউক্রেনিয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাশিয়ান সৈন্যরা দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখলের জোর চেষ্টা করছে। তারা ট্যাঙ্ক নিয়ে এনারগোদারে প্রবেশ করেছে।
‘মানবিক করিডোর’ খুলতে সম্মত কিয়েভ-মস্কো
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। উভয়পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে বৃহস্পতিবার উদ্ভূত পরিস্থিতির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষ করেছেন। প্রতিবেশী বেলারুশের গোমেল অঞ্চলের অজ্ঞাত এক স্থানে তিন ঘণ্টা ধরে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে যুদ্ধবিরতির কোনো ঘোষণা না এলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলো থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য যৌথভাবে মানবিক করিডোর খুলে দিতে সম্মত হয়েছে উভয়পক্ষ। একই সঙ্গে ওই সব এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের জন্য জরুরি ওষুধ ও খাবার সরবরাহের বিষয়টিও নিশ্চিত করবে দুই দেশ। পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে আগামীতে উভয়পক্ষ আবারও বসবে বলে সম্মত হয়েছে।
ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে রুশ হামলায় নিহত ১, সরানো হলো নাবিকদের
ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলার কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র জীবিত ২৮ নাবিককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের লাশও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাবিকদের জাহাজ থেকে নামিয়ে টাগ বোটে করে জেটিতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের ইউক্রেনের একটি বাংকারে নেওয়া হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে পোল্যান্ড সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর তাদের দেশে পাঠানো হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়ানোর সাথে সাথে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী বেলারুশের গোমেল অঞ্চলের অজ্ঞাত এক স্থানে এই বৈঠক শুরু হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বৈঠক শুরুর ছোট একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা একটি সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করছেন; যেখানে আগে থেকেই বসে আছেন রুশ প্রতিনিধিরা। বৈঠক শুরুর আগে দুই দেশের কর্মকর্তারা করমর্দন করেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘রাশিয়ান প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক শুরু হয়েছে। আজকের আলোচনার মূল বিষয়: ১. অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ২. অস্ত্রবিরতি ৩. অবিরাম গোলাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর এবং গ্রাম থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডর চালু।
ইউক্রেনে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সামনে আসছে : ম্যাক্রোঁ
ইউক্রেনে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সামনে আসছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিটের ফোনালাপের পর তিনি বলেছেন, রাশিয়া পুরো ইউক্রেন দখলে নিতে পারে বলে তার মনে হচ্ছে।
হামলার পরিকল্পনা এক বছর আগের, দাবি রুশ এমপির
রাশিয়ার একজন এমপি বলেছেন, মস্কো ১২ মাস আগেই ইউক্রেন আক্রমণের পরিকল্পনা শুরু করেছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার দ্বিতীয় সপ্তাহে বুধবার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ান টিভিকে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার সদস্য রিফাত শায়খুৎদিনভ বলেন, আমরা এই হামলা প্রস্তুত করিনি। এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছে। চ্যানেল ওয়ানের দৈনিক টকশো ‘টাইম উইল টেল’ এ অংশ নিয়ে তিনি বলেন, এই হামলার ব্যাপারে এক বছর ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। হয়তো আরও বেশি সময় আগে থেকে। ইউক্রেনে কী ঘটছে আমরা সেটি বোঝার চেষ্টা করেছি। তাদেরকে আগাম সতর্কও করে দেওয়া হয়েছিল।
দুমার এই সদস্য বলেছেন, আক্রমণ না চালালে হামলার মুখে পড়তো রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, আমরা আক্রমণের দু’দিনের মধ্যে তাদের পরাজিত করতে পারবো। অবশ্যই আমরা সেখানে আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করছি।
আরেকটি ভাইরাস আমাদের আক্রমণ করেছে: জেলেনস্কি
রাশিয়ার হামলাকে ভাইরাস হিসাবে অভিহিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দেশে এক সপ্তাহ হয়েছে আরেকটি ভাইরাস আক্রমণ করেছে। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় রুশ হামলা নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ভ্লাদিমির পুতিনকে সরাসরি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘বাড়ি ফিরে যাও। তোমার বাড়িতে ফিরে যাও।’ তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে রুশ-ভাষী জনগণকে নয়, রাশিয়ায় থাকা রুশ-ভাষীদের রক্ষা করা উচিত পুতিনের। সেখানে তাদের কিছু মানুষ আছে। প্রায় ১৫ কোটি।
মস্কো ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে রুশ-ভাষী জনগণকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে যে দাবি করেছে, সেটির উল্লেখ করে এসব কথা বলেছেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার হামলাকে ভাইরাস হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউক্রেন দুই বছর আগে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করেছিল। এখন এক সপ্তাহ হয়ে গেছে, আরেকটি ভাইরাস আক্রমণ করেছে।
ইউক্রেনীয়দের রক্তপাতের দায় ন্যাটোরও: ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী
রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনে ইউক্রেনে ‘নো ফ্লাই জোন’ কার্যকর করতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতি কিয়েভ আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া মেলেনি। নো-ফ্লাই জোন কার্যকরে অস্বীকৃতি জানানোয় দেশটিতে রাশিয়ার হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির জন্য ন্যাটোকেও আংশিকভাবে দায়ী করেছে কিয়েভ।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলফা স্টেফানিশিনা বিবিসি রেডিও ৪’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ন্যাটোর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, নো-ফ্লাই জোন কার্যকরের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে বেসামরিক জনগণ এবং শিশুদের হত্যা করা হবে, এটি অমানবিক।
ইউক্রেনের এই উপপ্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গতকাল জন্ম নেওয়া দুই শিশু, যারা গোলার আঘাতে তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছেন; তারাসহ সেসব বেসামরিক নাগরিকদের রক্ত কেবলমাত্র রাশিয়ার হাতে নয়, ন্যাটোর হাতেও আছে।
সিবিএসের ক্যামেরায় ধরা পড়লো কিয়েভের বিস্ফোরণ
মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস নিউজের টিভি ক্রুদের ক্যামেরায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিস্ফোরণের একটি দৃশ্য ধরা পড়েছে। সিবিএসের প্রতিনিধি চার্লি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে লাইভে যুক্ত ছিলেন; সেই সময় তার পেছনের দিকে দূরে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি বলেন, মনে হয়েছিল, হঠাৎ করে বজ্রপাত হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে রাশিয়া
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, কিছু বিদেশী নেতা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তবে মস্কো একেবারে ‘শেষ’ পর্যন্ত ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাবে। বৃহস্পতিবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, পারমাণবিক যুদ্ধের কোনো চিন্তা নেই রাশিয়ার। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের এক সপ্তাহ পর রাষ্ট্রায়ত্ত এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে একজন ‘জাতিগত ইহুদি’ এবং ‘তিনি এমন একটি সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেখানে নাৎসিবাদ লালন করা হয়’ বলে অভিযোগ করেছিলেন। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রমাণ দেখাতে পারেননি রাশিয়ার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেন সংকটের একটি সমাধান পাওয়া যাবে এবং এ বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। ইউক্রেনীয় এবং রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন লাভরভ।
কিয়েভ থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার সেই সেনাবহর
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে রাশিয়ার ৬০ মাইল দীর্ঘ সেই সেনা বহর। কিয়েভ অভিমুখে যাত্রা করা রাশিয়ার এই সামরিক বহর গত তিন দিনেও শহরটিতে পৌঁছাতে পারেনি। কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে ইউক্রেনীয় সৈন্য এবং সাধারণ জনগণের প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে তাদের অগ্রযাত্রা কিছুটা থমকে গেছে বলে ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
মস্কো কৃষ্ণ সাগরের বন্দরনগরী খেরসন দখলে নেওয়ার পরদিন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা বলেছেন, কিয়েভের দিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অগ্রযাত্রার গতি অনেক কমে গেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও খারকিভ এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি শহরে রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
রাশিয়ান ধনকুবেরের প্রমোদতরী জব্দ
রাশিয়ার এক ধনকুবেরের বিলাশবহুল প্রমোদতরী জব্দ করেছে জার্মানি। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে রাশিয়ার ধনকুবের আলিশের উসমানোভের প্রমোদতরীটি জব্দ করা হয়। জার্মান সরকারের জব্দ করা দিলবার নামের প্রমোদতরীটি ২০১৬ সালে তৈরি। এটি ধনকুবের আলিশের উসমানোভ তার মায়ের নামে নামকরণ করেছিলেন।
এ তথ্য জানিয়ে ফোর্বস বলছে, প্রমোদতরীটির দৈর্ঘ্য ৫১২ ফুট। ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী এর দাম ৫৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা ৯৫ পয়সা)। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার ছয় ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাদের মধ্যে একজন আলিশের উসমানোভ। তিনি নিষেধাজ্ঞাকে অযৌক্তিক ও মানহানিকর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
রাশিয়ায় বিদেশি মুদ্রা ক্রয়ে দিতে হবে ৩০ শতাংশ কমিশন
রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দরপতন ঠেকাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রেখেছে। রুশ নাগরিকরা যাতে রুবল বিক্রি করে বিদেশি মুদ্রা কিনতে না পারে সেজন্য ৩০ শতাংশ কমিশন আরোপ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, বিদেশি মুদ্রা কিনতে গেলে রাশিয়ায় ৩০ শতাংশ কমিশন দিতে হবে। এর ফলে বিদেশি মুদ্রা ক্রয় ব্যয়বহুল হবে এবং অনেকে বিদেশি মুদ্রা ক্রয় করতে নিরুৎসাহিত হবেন।
এছাড়া রুবলের দরপতন ঠেকাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে রাশিয়া থেকে বিদেশে অর্থ পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
ভোরের আলো ফোটার আগেই কিয়েভে দফায় দফায় বিস্ফোরণ
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) ভোরের আলো ফোটার আগেই ইউক্রেনের রাজধানীতে দফায় দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। মধ্যরাতে হওয়া এসব বিস্ফোরণের একটি ভিডিও সামনে এসেছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে কমপক্ষে চারটি বিস্ফোরণ হয়েছে। এরমধ্যে কিয়েভ শহরের কেন্দ্রে দু’টি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে। এরপরে একটি মেট্রো স্টেশনের কাছে আরও দু’টি বিস্ফোরণ হয়। এসময় বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দও শোনা যায়।
এছাড়া কিয়েভে শক্তিশালী বিস্ফোরণের একটি ভিডিও সামনে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এতে রাতের আধারে কিয়েভে বিস্ফোরণের দৃশ্য উঠে এসেছে। তবে ভিডিওটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি।
ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর খেরসনের পতন
ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান শহর এবং বন্দরনগরী খেরসনের পতন হয়েছে। ব্যাপক হামলার পর রাশিয়ার সামরিক বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরটির দখল নিয়েছে বলে শহরের মেয়রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রথম কোনো বড় শহর হিসেবে খেরসনের দখল নিলো রাশিয়া। এক সপ্তাহ আগে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি জুড়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সর্বাত্মক হামলা শুরু করে এবং ব্যাপক সংঘর্ষের পর বুধবার (২ মার্চ) শহরটির পতন হয়।
ইউক্রেনে কত সৈন্য নিহত, প্রথমবারের মতো জানাল রাশিয়া
ইউক্রেনে গত এক সপ্তাহের তীব্র যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ৫০০ সৈন্য মারা গেছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে মস্কো। বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে আক্রমণে প্রায় ৫০০ রুশ সৈন্য মারা গেছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও কয়েকশ’।
তবে রাশিয়ার সাত দিনের এই অভিযানে হতাহতের সংখ্যা এখনও পরিষ্কার নয়। কারণ বুধবার ইউক্রেনের সরকার বলেছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ৫ হাজার ৪৮০ সৈন্য নিহত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা বেশ কিছু ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সৈন্যরা ব্যাপক হতাহতের শিকার হয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, ইউক্রেনে চলমান সংঘাতে ৪৯৮ রুশ সৈন্য নিহত এবং আরও এক হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার এই হতাহতের সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, রুশ সৈন্যদের অসংখ্য হতাহত হয়েছে।
আগ্রাসনের কৌশল পাল্টেছে রাশিয়া?
ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়ার অত্যন্ত বিপজ্জনক সামরিক উপস্থিতির চিত্র দেখা গেছে স্যাটেলাইটে। ৪০ মাইলের দীর্ঘ একটি সামরিক বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তর দিক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই ছবিতে এই সামরিক বহরের পথের আশপাশের বাড়িঘর, ভবন জ্বলতে দেখা গেছে।
যে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে রাশিয়া তড়িৎগতিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছে, সেটি এখন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তার মাঝে নতুন করে শত শত সামরিক যান নিয়ে কিয়েভের দিকে রুশ সৈন্যদের এই বহর নিয়েও নানা ধরনের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, রাশিয়া হয়তো তার আগ্রাসনের কৌশল পাল্টে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যে সামরিক বহর কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে, তাতে সামরিক রসদ সরবরাহ ও সাঁজোয়া যান রয়েছে। রাজধানী ঘেরাও এবং পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা অথবা পুরোমাত্রার আক্রমণ চালানোর জন্য এই সামরিক বহর ব্যবহার করা হতে পারে।
লন্ডনের শীর্ষস্থানীয় পলিসি ইনস্টিটিউট চ্যাথাম হাউসের রুশ যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ বুলেগু নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, আমরা যা দেখছি তা মূলত দ্বিতীয় ধাপের কৌশল। এটি অত্যন্ত নৃশংস এবং অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধের দিকে গতি বদল। যা ইউক্রেনে পুরো পরিস্থিতিকে অনেক বেসামরিক হতাহত এবং রক্তাক্ত যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে।
রাশিয়ার আগ্রাসনে ২ হাজারের বেশি বেসামরিক নিহত: ইউক্রেন
গত এক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার চালানো আগ্রাসনে ইউক্রেনে ২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ইউক্রেনজুড়ে অনবরত গোলাবর্ষণ, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এই প্রাণহানি ঘটেছে।
বুধবার ইউক্রেনের ইমারজেন্সি সার্ভিস এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ১০ উদ্ধারকর্মীও রয়েছেন। ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার অব্যাহত গোলাবর্ষণে ৪ শতাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া উদ্ধারকর্মীরা অন্তত ৪১৬টি বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করেছেন।
ইমারজেন্সি সার্ভিস বলছে, সাত দিনের এই যুদ্ধে রাশিয়া শত শত পরিবহন কেন্দ্র, আবাসিক ভবন, হাসপাতাল এবং কিন্ডারগার্টেন ধ্বংস করেছে।
এদিকে, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মারিউপোলের কর্মকর্তারা বলেছেন, রুশ সীমান্তের কাছে এই শহরে কয়েক ঘণ্টা ধরে টানা গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়া। এতে শহরটিতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
মারিউপোলের ডেপুটি মেয়র সার্জি ওরলোভ বলেছেন, ‘নদী তীরবর্তী এই জেলা; যেখানে তার বাবাসহ এক লাখ ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। রাশিয়ার হামলায় শহরটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।’
মুক্ত নাগরিক থেকে শরণার্থী জীবন: ইউক্রেন ছাড়ার কঠিন যাত্রা
মা। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। কোলে তুলে নিয়েছেন শিশু সন্তানকে। কে জানত ইউক্রেনে যে মুক্ত জীবন যাপন করছিলেন, সেই জীবনে ছেদ ঘটাবে রাশিয়া? মুক্ত নাগরিক জীবনের অবসান ঘটাবে? সুদূর কল্পনাতেও হয়তো ছিল না ইউক্রেনীয় মা ও তার সন্তানের। নিজ জন্মভূমিতে আগ্রাসী শক্তির হানায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া স্বপ্ন ছেড়ে পোল্যান্ডের কর্কজোয়ার সীমান্ত তল্লাশি চৌকির কাছের মসজানি গ্রামে তারা পৌঁছেছেন একটি বাসে করে। মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়ার এই হাহাকার এখন লাখ লাখ ইউক্রেনীয়র।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে পারমাণবিক এবং ধ্বংসাত্মক, হুঁশিয়ারি রাশিয়ার
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ‘যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহলে এতে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে এবং সেটি হবে ধ্বংসাত্মক।’ এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে রুশ সামরিক বাহিনী; যার জেরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে উপর্যুপরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলার সময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপারে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
লাভরভ বলেছেন, কিয়েভ পারমাণবিক অস্ত্রধারী হয়ে উঠলে তা রাশিয়াকে ‘প্রকৃত বিপদের’ সম্মুখীন করবে। যে কারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তি দেন যে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের শাস্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের একমাত্র বিকল্প তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা। ওয়াশিংটন এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞার পর এই মন্তব্য করেন তিনি।
খারসন শহর দখলে কেন মরিয়া রাশিয়া
ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর এক সপ্তাহ পর রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ শহর খারসনের দখল নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ইউক্রেনজুড়ে তীব্র সংঘর্ষের মাঝে বুধবার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে মস্কো।
এদিকে, খারসনের মেয়র ইগোর কলিখায়েভ বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী শহর দখলের চেষ্টা করছে। তবে শহরে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে রুশ সৈন্যরা। ইউক্রেনের অন্যতম বড় এই শহর রাশিয়ার সৈন্যদের দখলের দাবির ব্যাপারে মিশ্র তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এর আগে, মস্কো এই শহরটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে। কিন্তু আঞ্চলিক গভর্নর বলেছেন, খারসন চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। মেয়র ইগোর কলিখায়েভ বলেছেন, আমরা এখনও ইউক্রেন। এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, প্রায় ৩ লাখ মানুষের এই শহর যদি রাশিয়ার সৈন্যরা দখলে নেয়, তাহলে সেটি হবে তাদের জন্য বড় ধরনের এক বিজয়। রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে পতন হওয়া সবচেয়ে বড় শহর হবে এটি। সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিও হবে। এই শহর থেকে উপকূল বরাবর আরও ভেতরে এবং পশ্চিমের আরেক বৃহৎ বন্দরনগরী ওডেসার সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং একটি শিল্পকেন্দ্র খারসন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে, কিছু কিছু শহরে রুশ সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে।
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে দুই ফুটবলার নিহত
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলছেই। এবার তার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ল ফুটবলাঙ্গনেও। রাশিয়ার হামলায় এবার মৃত্যুবরণ করলেন দুই ইউক্রেনীয় ফুটবলার। বুধবার রাতে ২১ বছর বয়সী ফুটবলার ভিতালি সাপিলো ও ২৫ বছর বয়সী দিমিত্রো মার্টিনেঙ্কোর মৃত্যুর এই খবর জানিয়েছে পেশাদার ফুটবলারদের বৈশ্বিক সংগঠন ফিফপ্রো।
নিজেদের আকাশসীমায় রুশ বিমান নিষিদ্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও কানাডার পর এবার যুক্তরাষ্ট্রও নিজেদের আকাশসীমায় রুশ উড়োজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে, নিজেদের আকাশসীমায় রুশ উড়োজাহাজ চলাচলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় রুশ বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলো।’
‘ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করা ও মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ৩ কোটি ব্যারেল পেট্রোলিয়াম দেবে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের পর থেকে অস্থির জ্বালানি তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে জরুরি ভিত্তিতে ৬ কোটি ব্যারেল পেট্রোলিাম সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।
এই সরবরাহের অর্ধেক, অর্থাৎ ৩ কোটি ব্যারেল পেট্রোলিয়াম আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মঙ্গলবার আইইজের বৈঠকে এই ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেন, ‘আজ আমি আইইএর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছি; সংস্থাটির বাকি ৩০ সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে আমাদের সবার রিজার্ভ থেকে তেল সরবরাহ করা হবে।’
‘বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিগগিরই আন্তর্জাতিক বাজারে ৬ কোটি ব্যারেল পেট্রোলিয়াম সরবরাহ করা হবে। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দেবে অর্ধেক, অর্থাৎ ৩ কোটি ব্যারেল।’
বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, আরও পেট্রোলিয়াম সরবরাহে প্রস্তুত আছে যুক্তরাষ্ট্র।’
রাশিয়া জিতলেও চড়া মূল্য দিতে হবে পুতিনকে: বাইডেন
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে শেষপর্যন্ত জয়ী হলেও এজন্য দীর্ঘমেয়াদে চড়া মূল্য দিতে হবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। বুধবার এই মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে হয়তো তিনি জয়ী হবেন, যে উদ্দেশ্যে এই অভিযানের নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, তা হয়তো সফল হবে— কিন্তু এজন্য দীর্ঘমেয়াদে চড়া মূল্য দিতে হবে তাকে।’
ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া উচিত মনে করছেন হিলারি ক্লিনটন
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের হামলার সঙ্গে তুলনা করেছেন মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক যোদ্ধা উভয়কেই অস্ত্র সরবরাহ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) রুশ সংবাদ মাধ্যম আরটি জানায়, মার্কিন টেলিভিশন এমএসএনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিলারি ক্লিনটন এ মন্তব্য করেছেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের হামলার সময় আমেরিকা যেভাবে অস্ত্র দিয়ে আফগানিস্তানের মুজাহিদিন যোদ্ধাদের সহায়তা করেছিল, সেভাবে কিয়েভকেও সহায়তা দিলে একই ধরনের ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন হিলারি।
ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনাদের হামলার ইস্যুতে বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাজ্য। বিবিসি জানিয়েছে, এ হামলায় দেশটির ভূমিকা বিবেচনায় যুক্তরাজ্য সরকার নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটল।
যুক্তরাজ্যের ফরেন সেক্রেটারি লিজ ট্রাস বলেন, ইউক্রেনে রুশ হামলায় ভূমিকা রাখায় দেশটির ব্যক্তি ও সংস্থার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। তিনি বলেন, আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কোর সরকার কার্যকরভাবে রাশিয়ার অবৈধ হামলাকে সমর্থন দিচ্ছে। পুতিনকে সমর্থন দেওয়ার মূল্য বেলারুশকে দিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ থেকেও ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

ইইউতে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের অনুরোধ ‘বৈধ’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)সদস্য হওয়ার জন্য ইউক্রেনের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। ইইউতে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের অনুরোধ ‘বৈধ’। মঙ্গলবার (১ মার্চ) ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গারিটাস শিনাস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানান।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের আনুষ্ঠানিক অনুরোধে স্বাক্ষর করার একদিন পর এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। কবে নাগাদ ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিএনএনকে বলেন, ইউরোপীয় নেতারা যখন পরবর্তী বৈঠকে মিলিত হবেন, তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
ইউক্রেনের সঙ্গে সংহতির ‘প্রমাণ’ দিন : ইইউকে জেলেনস্কি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের ইউক্রেনের সঙ্গে সংহতির ‘প্রমাণ’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার (১ মার্চ) ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি এ আহ্বান জানান।
ভাষণে তিনি বলেন, ‘ইইউ ইউক্রেনকে সঙ্গে নিলে আমরা আরও শক্তিশালী হবে, এটা নিশ্চিত। তবে আপনাদের ছাড়া আমরা একা হয়ে পড়ব।’ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এমপিদের উদ্দেশে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘প্রমাণ করুন, সংকটের এই মুহূর্তে আপনারা ইউক্রেনের পাশে রয়েছেন। প্রমাণ করুণ, ইউক্রেনকে আপনারা ছেড়ে যাবেন না।’
মঙ্গলবার সকালে রুশ হামলা ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ চেয়ে আবেদন করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেই আবেদনে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগোষ্ঠীর প্রাথমিক সম্মতি মেলায় মঙ্গলবার রাতেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় রুশ হামলা প্রতিরোধে সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।
কিয়েভের টেলিভিশন টাওয়ারে হামলা, নিহত ৫
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কিয়েভের টেলিভিশন টাওয়ারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। দিনের আলোতেই সম্প্রচার টাওয়ারের পাশে এই বোমা হামলা চালায় রুশ সেনারা। নিহতরা সামরিক নাকি বেসামরিক তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। হামলার পর থেকে টেলিভিশনটির সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। বিবিসি জানায়, ওই হামলায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। তবে ৩৮০ মিটার (১২৫০ ফুট) উচ্চতার টিভি টাওয়ারটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে, ইউক্রেনকে ‘বেসামরিকীকরণ’ ও ‘নাৎসিদের হাত থেকে মুক্ত’ করার যে লক্ষ্য রাশিয়া নিয়েছে তা পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটিতে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু।
খারকিভের কেন্দ্রস্থল-সরকারি স্থাপনায় হামলা রুশ বাহিনীর
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী। মঙ্গলবার শহরটির কেন্দ্রস্থল ফ্রিডম স্কয়্যার ও বেশ কিছু সরকারি দফতর তছনছ হয়ে গেছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন। খারকিভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি ভিডিওচিত্র মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে টুইট করেন তিনি এবং সেখানে বলেন, ‘বর্বর রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো খারকিভের কেন্দ্রস্থল ফ্রিডম স্কয়্যাার ও সরকারি দপ্তরগুলোতে আঘাত হানছে।’
আয়তন, লোকসংখ্যা ও গুরুত্বের বিচারে ইউক্রেনে খারকিভের অবস্থান রাজধানী কিয়েভের পরেই। সাবেক সোভিয়েত আমলে ইউক্রেনের রাজধানী ছিল খারকিভ। প্রায় ১৬ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই শহরটি সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে রুশ স্বীকৃতি পাওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্কের সীমান্তের কাছেই অবস্থিত।
ইউক্রেন অভিযানে অংশ নিচ্ছে না বেলারুশ: লুকাশেঙ্কো
ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিবেশী বেলারুশ অংশ নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো। মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘বেলারুশের সেনাবাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে অংশ নিচ্ছে না এবং ভবিষ্যতে অংশ নেবে এমন কোনো পরিকল্পনাও আপাতত সরকারের নেই।’
‘তাছাড়া, রাশিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা হয়নি। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কাছে সামরিক সহযোগিতাও চায়নি; আর আমরা মনে করছি, এই অভিযানে বেলারুশের অংশ নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।’
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে উত্থান ঘটে ইউক্রেন, বেলারুশসহ ১৫টি রাষ্ট্রের। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে তিক্ততা থাকলেও বেলারুশের সঙ্গে শুরু থেকেই নিবিড় বন্ধুত্ব রয়েছে রাশিয়ার।
৩৬ দেশের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল রাশিয়া
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যরাষ্ট্রগুলোসহ ৩৬ দেশের জন্য আকাশসীমা নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া। ২৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
তবে ত্রাণসামগ্রীবাহী বিমান ও কূটনৈতিক মিশনের বিমানগুলোর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিমের দেশগুলো রুশ বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমায় নিষেধাজ্ঞা জারির পরই এই সিদ্ধান্ত নিল রাশিয়া।
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে : ব্রিটেন
টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। একসঙ্গে তিনদিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় কয়েকদিনেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বহু এলাকা। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে যেকোনো ধরনের যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনের ৫ লাখ ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা ইতোমধ্যে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ৫০ লাখ পর্যন্ত মানুষ ইউক্রেনে ঘরছাড়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা সংস্থাটির।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, ইউক্রেনে আরও ভারী কৌশল ব্যবহার করবে রাশিয়া এবং সেখানে সংঘটিত যেকোনো যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছি তার ভেতরে আমরা যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করছি।’
ইউক্রেন থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে চীন
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সর্বাত্মক হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেন থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে চীন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনের চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, চীনা নাগরিকদের একটি দল গতকালই (সোমবার) ইউক্রেন ছেড়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রথম দফায় ইউক্রেন ত্যাগ করা নাগরিকরা মূলত চীনা শিক্ষার্থী। এদিন কিয়েভ থেকে মলদোভায় যান তারা।
রুশ কামানের গোলায় ইউক্রেনের ৭০ সেনা নিহত
রাশিয়ার সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের মধ্যে কামানের গোলা দিয়ে চালানো হামলায় ইউক্রেনের ৭০ সেনা নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ওখতিরকা শহরে গত রোববার ভয়াবহ ওই হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনের সামি অঞ্চলের প্রশাসনিক প্রধান দিমিত্র ঝিভিতস্কি জানিয়েছেন, গত রোববার রুশ বাহিনীর চালানো ওই হামলায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর একটি ইউনিট পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
কিয়েভ ও খেরসন শহরে ফের হামলা শুরু
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনে ফের হামলা শুরু করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। প্রতিবেশী দেশ বেলারুশের সীমান্তে মস্কো-কিয়েভ আলোচনা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই শহর দু’টিতে রুশ হামলা শুরুর দাবি করল ইউক্রেন।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাজধানী কিয়েভে ফের হামলা শুরু করেছে রুশ সেনারা।
জেনারেল স্টাফ অব দ্য আর্মড ফোর্সেন অব ইউক্রেন এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, ‘কিয়েভের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। আক্রমণের ক্ষমতা কমে যাওয়া সত্ত্বেও শত্রুরা সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।’
অন্যদিকে রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনেও হামলা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির সরকার। ইউক্রেনের স্টেট সার্ভিস ফর স্পেশাল কমিউনিকেশন অ্যান্ডইনফরমেশন প্রোটেকশন জানিয়েছে, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রুশ সেনারা বিমানবন্দর থেকে নিকোলায়েভ মহাসড়কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং সেখানকার একটি হিমাগারের কাছে জড়ো হচ্ছে।’
রাশিয়ার জাতীয় দল ও সব ক্লাবকে নিষিদ্ধ করল ফিফা-উয়েফা
ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকেই রাশিয়ার ওপর চটেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। ফিফা-উয়েফার মতো সংস্থাগুলো অবশেষে নিষিদ্ধই ঘোষণা করল রাশিয়াকে।
শুধু রাশিয়া নয় অবশ্য, রুশ সব ক্লাবকেও সব ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করেছে সংস্থা দুটি। এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ফিফা ও উয়েফা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের আক্রান্ত মানুষজনের সঙ্গে ফুটবল পুরোপুরি একাত্মতা পোষণ করছে।’
শেষ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি সংলাপ
চলমান সংঘাতে নিরসনে বেলারুশে শান্তি সংলাপে বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল। তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে। সমাধান না আসায় দ্বিতীয় দফা বৈঠকে সম্মত দু-পক্ষই।
দ্বিতীয় দফা বৈঠকের আগে দুদেশের কর্মকর্তারা শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শের জন্য নিজ নিজ রাজধানীতে ফিরে যাচ্ছেন বলে বেলারুশের সংবাদ সংস্থা বেলটাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সোমবারের এ বৈঠকের আগে শান্তিপূর্ণ সমাধানে বড় কোনো প্রত্যাশা দু পক্ষের কারো ছিল না।
কেন ইউক্রেনে আক্রমণ, কী চান পুতিন?
আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র— তিনপথেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। রুশ সৈন্যরা এখন ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের গণতান্ত্রিক এই দেশটির রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে অবস্থান করছেন। প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা গত কয়েক মাস ধরে অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পরবর্তীতে একটি শান্তি চুক্তি ছুড়ে ফেলেছেন তিনি এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিক থেকে ইউক্রেনজুড়ে সৈন্য মোতায়েন করেছেন। নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইউরোপের শান্তি তছনছ করে দিয়েছেন। এখন সেখানে যা ঘটছে, তা পুরো ইউরোপের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের নেপথ্যের কারণ জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
খারকিভে ফের হামলা রুশ বাহিনীর, নিহত কয়েক ডজন বেসামরিক
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে ফের রকেট হামলা শুরু করেছে রুশ সেনাবাহিনী। হামলায় ইতোমধ্যে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তন হেরাশ্চেঙ্কো সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে এই তথ্য জানিয়েছেন। পোস্টে হেরাশ্চেঙ্কো বলেন, ‘খারকিভে ব্যাপকভাবে গ্র্যাড রকেট ছুড়ছে রুশ বাহিনী। ইতোমধ্যে তাদের ছোড়া রকেটে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আরও শতাধিক আহত হয়েছেন। হতাহতরা সবাই বেসামরিক।’
এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আয়তন, লোকসংখ্যা ও গুরুত্বের বিচারে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পরই খারকিভের অবস্থান। রাজধানী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরের এই শহরটিএত শহরটিতে ১ লাখ ৪০ হাজারেরও কিছু বেশি সংখ্যক মানুষ বাস করেন।
প্রস্তুত হচ্ছে রুশ পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে থাকা দল
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রোববার যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে থাকা স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর দল প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রুশ প্ররিতক্ষামন্ত্রী ও সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল সের্গেই শোইগু।
সোমবার এক বিবৃতিতে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রুশ ফেডারেশনের সুপ্রিম কমান্ডার ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশ অনুযায়ী রাশিয়ার স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর যেসব সদস্য পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে আছেন, তাদেরকে ইতোমধ্যে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
‘ইতোমধ্যে উত্তর মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের রুশ নৌবহর ও বিমানবাহিনীর দূরপাল্লার বিভাগ বরাবর রুশ প্রেসিডেন্টের নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র পরিচালনা ইউনিটের সদস্যদের যেন চলমান অভিযানের সাধারণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া যে কোনো সময় (অস্ত্র ক্ষেপণের) নির্দেশ পালনের জন্য প্রযোজনীয় প্রস্তুতির কাজও সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের।’
রোববার সের্গেই শোইগু এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে দেশের সেনা বাহিনীর পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে থাকা দলকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখার নির্দেশ দেন পুতিন।
সাইবার যুদ্ধ: রাশিয়ার ৩৫০ ওয়েবসাইট হ্যাক
মস্কোর বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হ্যাকারদের গ্রুপ অ্যানোনিমাস রাশিয়ার ৩৫০টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। এসব ওয়েবসাইট হ্যাকের পর সেখানে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনবিরোধী বার্তা জুড়ে দিয়ে রাশিয়ার জনগণকে পুতিনের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের দুই শহর, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলের দাবি রাশিয়ার
ইউক্রেনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জায়ার দুই শহর বারদিয়ানস্ক ও এনারহোডারের দখল নিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। জাপোরিজ্জায়ার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও বর্তমানে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে সোমবার রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দখল করলেও তা ধ্বংস করেনি রুশ বাহিনী। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ আগের মতোই স্বাভাবিক আছে জাপোরিজ্জায়ায়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য এই তথ্যের সত্যতা অস্বীকার করে বলেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও ইউক্রেন সরকারের দখলেই আছে।
এদিকে গতকাল রোববার ইউক্রেনের বন্দরশহর মালিতপোলে প্রবেশ করেছে রুশ বাহিনী এবং এখন পর্যন্ত সেখানে ইউক্রেন বাহিনী ও রুশ বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন সদ্য রাশিয়ার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশ দোনেতস্কের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পাবলো কিরিলেঙ্কো।
সোমবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। তবে সেখানে রুশ বাহিনীর বর্তমান অবস্থা কিংবা দুই পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কিত কোনো তথ্য ভাষণে দেননি কিরিলেঙ্কো।
রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা শুরু
প্রতিবেশী দুই দেশের চলমান সংঘাতের অবসানে বেলারুশে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে প্রিপিয়াত নদীর কাছে ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তের গোমেল অঞ্চলে এই বৈঠক শুরু হয়েছে।
এর আগে, অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতি’ এবং ইউক্রেন ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায় কিয়েভ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিনিধি জোনাহ হুল পশ্চিম ইউক্রেনের লভিভ শহরে রয়েছেন।
রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের মাঝে শেষ পর্যন্ত এই শান্তি আলোচনা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সে বিষয়ে আগাম ধারণা করা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। জোনাহ বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার আগে মস্কো তাদের মূল দাবিগুলো থেকে সরে আসবে কি-না সে বিষয়ে মস্কো কোনো ধরনের ইঙ্গিত দেয়নি।
৫ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরু এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
পোস্টে আরও বলা হয়, গত ৫ দিনের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর ১৯১ টি ট্যাংক, ২৯ টি যুদ্ধবিমান, ২৯ টি হেলিকপ্টার ও ৮১৬ টি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে ইউক্রেনের সেনা বাহিনী।
যদিও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি, তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্বাস, অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউক্রেনের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়া।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রুশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকারও করেছেন, তবে নিহত সেনাদের সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি।
বেলারুশে পৌঁছেছেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা
রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে ইউক্রেনের পাঠানো প্রতিনিধিরা ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তের গোমেল অঞ্চলে পৌঁছেছেন। ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা সেখানে পৌঁছানোয় আর কিছুক্ষণের মধ্যে বহুল-প্রত্যাশিত এই শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে বেলারুশ।
সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা বলেছেন, আলোচনায় তাদের প্রধান ইস্যু হচ্ছে যুদ্ধবিরতি এবং ইউক্রেন ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহার।
এর আগে রোববার এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, তিনি এই আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি আশা করেন না। তবে তিনি বলেছেন, ছোট হলেও এই সুযোগ তাদের ব্যবহার করা উচিত, যাতে কেউ ইউক্রেনকে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা না করার জন্য দোষারোপ করতে না পারে।
কিয়েভে কারফিউ প্রত্যাহার
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে জারি করা কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। কারফিউ জারির দুই দিনের মাথায় তা প্রত্যাহার করল দেশটি।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনে টানা পঞ্চম দিনের মতো হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরজুড়ে পঞ্চম দিনের মতো হামলা শুরু করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। গত এক ঘণ্টায় পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহরে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়। এছাড়া চেরনিহিভ শহরে রাতভর গোলাবর্ষণ করা হয়।
কিছুক্ষণ আগে টুইটে দেওয়া এক বার্তায় কিয়েভে অবস্থানরত বিবিসির সংবাদদাতা জেমস ওয়াটারহাউস হামলার কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন…
ইউক্রেনে সেনা পাঠাচ্ছে বেলারুশ
টানা পঞ্চম দিনের মতো ইউক্রেনে চলছে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান। এই কয়েকদিনে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বেশ কয়েকটি শহরের দখল নেওয়ার পাশাপাশি রাজধানী কিয়েভ দখলেরও চেষ্টা করছে রুশ সেনারা। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে বেলারুশের সেনা পাঠানোর গুঞ্জন উঠেছে।
মূলত চলমান সামরিক অভিযানে রুশ বাহিনীকে সহায়তা করতেই বেলারুশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চিন্তিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর ফলে মস্কো বিপুল পরিমাণ অর্থও আয় করে থাকে। আর এই দু’টি বিষয় থেকে ইউক্রেনে চলমান রুশ হামলা ও এতে করে সৃষ্ট সংকটকে পৃথক করা যাবে না।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সর্বশেষ রোববার মস্কোর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সংস্থাটি। এই নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লক্ষ্যবস্তু করাসহ রাশিয়ার এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য ইউরোপের আকাশ বন্ধ করা এবং ইউক্রেনের সমর্থনে অস্ত্র কেনা এবং সেগুলো দেশটিতে পাঠানোর কথা জানানো হয়।
তবে এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- রাশিয়ার অন্যতম একটি গ্যাস পাইপলাইনের অনুমোদন জার্মানি স্থগিত করা ছাড়া মস্কো থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জ্বালানি আমদানি একটুও কমায়নি।
এমনিতেই ইউরোপজুড়ে জ্বালানির দাম এখন অনেক বেশি। এখন যদি জ্বালানির সংকট শুরু হয় তাহলে মহাদেশজুড়ে এর দাম ছুটবে রকেটের গতিতে। এটা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বেশ ভালোই জানেন।
আর মূল সমস্যাটা এখানেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ব্রাসেলস এখন ভয় পাচ্ছে যে, রাশিয়া হয়তো তাদের বিরুদ্ধ পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া হয়তো ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি স্থগিত করতে পারে কিংবা কমিয়ে দিতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ : জেলেনস্কি
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে। ইউক্রেনীয় সেনাদের পাল্টা প্রতিরোধে উভয়পক্ষের লড়াইও অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন তিনি। অন্যদিকে ফোনালাপে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রুশ আগ্রাসনের মোকাবিলায় জেলেনস্কির নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
জনসন জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ও তাদের মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনে প্রতিরক্ষা সহায়তা পাঠানো নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।
পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ পুতিনের
পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ পুতিনের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ঘিরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ‘আক্রমণাত্মক বিবৃতি’ এবং মস্কোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় রোববার এই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত থমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন এই যুদ্ধকে এমনভাবে বাড়িয়ে চলেছেন যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদেরকে তার পদক্ষেপগুলো সম্ভাব্য শক্তিশালী উপায়ে আটকাতে হবে।
আলোচনায় বসতে বেলারুশ যাচ্ছে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল
চলমান সংকটের সমাধানে রুশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে বেলারুশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। রোববার শান্তি আলোচনার প্রস্তাব ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রত্যাখ্যান করার পর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
এরপরই ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা বেলারুশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন বলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক সহযোগী জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ সহযোগী ও রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান ভ্লাদিমির মেডিনস্কি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বেলারুশের স্থানীয় সংবাদ সংস্থা বেলটা নিউজ এজেন্সি বলছে, ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তের গোমেল অঞ্চলে শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, রাশিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের গোমেলে পৌঁছানোর অপেক্ষা করছে।
রাশিয়ার ৪৩০০ সৈন্য নিহত, দাবি ইউক্রেনের
তিন দিন আগে শুরু হওয়া আগ্রাসনে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে রাশিয়ার অন্তত ৪ হাজার ৩০০ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাশিয়ার সামরিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার।
তিনি বলেছেন, সংঘর্ষের প্রথম তিন দিনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রাণহানির এই সংখ্যা প্রাথমিক এবং এটি পরিবর্তন হতে পারে। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই দাবি যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। এছাড়া রাশিয়াও এখন পর্যন্ত তাদের হতাহতের কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
• ৪ হাজার ৩০০ রুশ সৈন্য নিহত
• ২৭টি বিমান
• ২৬টি হেলিকপ্টার
• ১৪৬টি ট্যাংক
• ৭০৬টি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান
• কামান ৪৯টি
• ১টি বুক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম
• ৪ গ্রাড মাল্টিপল রকেট লঞ্চ সিস্টেম
• ৩০টি যানবাহন
• ৬০টি ট্যাঙ্কার
• ২টি ড্রোন
• ২টি নৌকা
এদিকে, ইউক্রেনের সরকারের ন্যায়পাল লুডমিলা ডেনিসোভা বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ২১০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় বেসামরিক নিহত ও আরও এক হাজার ১০০ জন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে অভিনন্দন পুতিনের
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে দৃঢ় ভূমিকার জন্য রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শনিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া রুশ সেনা সদস্যদের ‘বীর’ উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ‘দোনেতস্ক ও লুহানস্কের জনগণকে রক্ষা করতে পরিচালিত এই বিশেষ অভিযানে যারা বীরের মতো লড়াই করে যাচ্ছেন, তাদেরকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন গণহত্যার শামিল: জেলেনস্কি
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রাশিয়ার ভোটদানের ক্ষমতা বাতিল করতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন গণহত্যার শামিল। রোববার এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি এসব কথা বলেছেন বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।
ইউক্রেনের তেলের গুদাম, গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করছে রুশ সেনারা
সামরিক অভিযানের চতুর্থ দিনে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের তেলের গুদাম, গ্যাস পাইপলাইন জ্বালিয়ে দিচ্ছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এদিকে এই অভিযানের শুরু থেকে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোও অবশ্য বসে নেই। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ন্যাটোর ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ থেকে ব্যবসা গোটাতে হবে রাশিয়ার প্রধান ব্যাংকগুলোকে।
তাছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রধান মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেম থেকেও বাদ পড়বে রাশিয়া। শনিবার মধ্যরাতের পর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় উপশহর ভাসিলকিভের একটি তেলের গুদাম জ্বালিয়ে দিয়েছে রুশ সেনারা।
এছাড়া রাতভর শহরের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ভাসিলকিভেল মেয়র নাতালিয়া বালাসিনোভিচ।
রাশিয়ার ট্যাংকের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিল নিরস্ত্র জনতা
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একাধিক ট্যাংক এগিয়ে আসছে। আর এই ট্যাংকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন শত শত নিরস্ত্র মানুষ। সবাই শান্ত। কারো হাতে কোনো অস্ত্র নেই। শান্তিকামী সাধারণ জনতার এগিয়ে আসা দেখে একে একে পথেই থেমে গেল সব ট্যাংক। এমন ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ার আগ্রাসনে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের চেরনিহিভ অঞ্চলের একটি শহরে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইউক্রেনের চেরনিহিভ অঞ্চলের করই করিউকিভকা শহরের রাস্তায় এগিয়ে আসছে রাশিয়ান ট্যাংক। দলবেধে এগিয়ে গিয়ে সেই ট্যাংকের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিলেন শত শত মানুষ। এ সময় রুশ সৈন্যরাও সাধারণ ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
স্থানীয় একটি গণমাধ্যম টুইটারে সেই ঘটনার ভিডিও টুইট করে লিখেছে, রাশিয়ার ফ্যাসিবাদীদের থামিয়ে দিয়েছেন লোকজন। নিজেদের শহরে তাদের ঢুকতে দেয়নি।
রাশিয়ার আলোচনার প্রস্তাবে যা বললেন জেলেনস্কি
ইউক্রেনের সাথে আলোচনার জন্য রাশিয়ার পাঠানো প্রতিনিধিদের একটি দল বেলারুশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মস্কো। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার আলোচনার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাশিয়া যদি বেলারুশ ভূখণ্ড থেকে ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করে তবে মিনস্কে আলোচনা সম্ভব হতে পারে। এছাড়া এই সংকটের সমাধানে অন্যান্য স্থানে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আপনার ভূখণ্ড থেকে যদি কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা মিনস্কে কথা বলতে পারি… অন্যান্য শহর আলোচনার স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইউক্রেনের আরও দুই শহর অবরোধ করেছে রাশিয়া
ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরুর চতুর্থ দিনে এসে বেশ ভালো সফলতার মুখ দেখেছে রাশিয়া। একদিনে দু’টি শহর দখলের পাশাপাশি ইউক্রেনের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আরও দু’টি শহর পুরোপুরি অবরোধ করার কথা জানিয়েছে দেশটি।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত খেরসন শহর এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বারদিয়ানস্ক শহর রুশ সেনারা পুরোপুরি অবরোধ করেছে বলে দাবি করেছে মস্কো।
পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে চলমান সামরিক অভিযান আরও জোরদারের ঘোষণা দেওয়ার পর এই দু’টি শহর অবরোধের খবর সামনে এলো। বেশ কয়েকটি রুশ বার্তাসংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কোনাশেঙ্কোভ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টা ধরে ইউক্রেনের খেরসন এবং বারদিয়ানস্ক শহর পুরোপুরি অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।’
এছাড়া ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরুর চতুর্থ দিনে নোভা কাখোভকা নামে দেশটির একটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। নিউ কাখোভকা নামেও পরিচিত এই শহরটি ছোট হলেও কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কাখোভকা শহরটি দিনিপার নদীর তীরে অবস্থিত এবং এই নদীটি পানি পথে সরাসরি ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
লড়াইয়ে যোগ দিতে বিদেশিদের ডাকছে ইউক্রেন
কিয়েভ বলেছে, ইউক্রেনের সমর্থনে স্বেচ্ছাসেবক হতে ইচ্ছুক বিদেশীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সৈন্যদল গঠন করা হচ্ছে। রোববার ইউক্রেনের নতুন বিদেশি সেনাবাহিনী গঠনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।
এতে তিনি বলেছেন, ‘এটি আমাদের দেশের জন্য আপনার সমর্থনের প্রধান প্রমাণ হবে।
আমরা এভাবে প্রতিরোধ করব, বিশ্বাস করেনি বিশ্ব: ইউক্রেন
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের গড়ে তোলা প্রতিরোধ বিশ্ববাসী বিশ্বাস করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকোভ। রুশ আগ্রাসনের চতুর্থ দিন তিনি এই মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সংঘাতের চতুর্থ দিনে ইউক্রেনীয় যখন জেগে উঠেছেন, তখন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউক্রেনে সহায়তা জোরদার করতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ওলেকসি রেজনিকোভ বলেছেন, দেশের ‘প্রতিরোধের ৭২ ঘণ্টা’ বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে যে, রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করা সম্ভব।
ইউক্রেনের নোভা কাখোভকা শহরও রাশিয়ার দখলে
ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরুর চতুর্থ দিনে দেশটির আরও একটি শহর দখলে নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ওই শহরটির নাম নোভা কাখোভকা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, নোভা কাখোভকা শহরটি এখন রাশিয়ার দখলে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরটি নিউ কাখোভকা নামের পরিচিত।
এই শহরটি ছোট হলেও কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কাখোভকা শহরটি দিনিপার নদীর তীরে এবং এই নদীটি সরাসরি ক্রিমিয়া উপদ্বীপে পানি সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
খারকিভ শহরে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সেনারা
ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর চারদিনের মাথায় দেশটির খারকিভ শহরে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। রুশ সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউক্রেনের এই শহরটি দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
খারকিভের ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
শহরে রুশ সেনাদের প্রবেশের তথ্য নিশ্চিত করে খারকিভ আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেগ সিনেগুবভ বলেছেন, রুশ বাহিনীর হালকা সামরিক যানগুলো শহরে প্রবেশ করেছে।
কিয়েভে গোলাগুলিতে ৬ বছরের শিশু নিহত
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। রুশ বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাল্টা প্রতিরোধও গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সেনারা। অব্যাহত এই লড়াই এবং হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে গোলাগুলিতে কিয়েভে ছয় বছর বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও বিবিসি। শনিবার মধ্যরাতে উভয়পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ওই শিশু নিহত হয়।
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ১৯
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় ১৯ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৭৩ জন। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনীর হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এদিকে দোনেতস্কের আঞ্চলিক প্রশাসনের বরাত দিয়ে রাশিয়ার হামলায় বেসামরিক মানুষের হতাহতের এই ঘটনা নিশ্চিত করেছে রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্সও।
দোনেতস্কের আঞ্চলিক সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের প্রধান পাভেল কিরিলেঙ্কোর বরাত দিয়ে ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, ‘শনিবার রাশিয়ার হামলার কারণে ১৯ জন বেসমরিক মানুষ নিহত এবং আরও ৭৩ জন আহত হয়েছেন।’
‘সুইফট’ নেটওয়ার্ক থেকে বাদ পড়ছে রাশিয়ার ব্যাংক
বিশ্বের অন্যতম পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে রাশিয়ার নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাংককে বাদ দিতে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে এ মতৈক্যে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে বিবিসি। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, যেহেতু রাশিয়ার সৈন্যরা কিয়েভসহ ইউক্রেনের অন্যান্য শহরে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে, সেহেতু আমরা রাশিয়াকে আটকাতে সংকল্পবদ্ধ। রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং আমাদের অর্থনীতি থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। রাশিয়ার নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাংককে সুইফট মেসেজিং সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়াসহ সামনের দিনগুলোতে এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটা নিশ্চিত করা হবে যে, নির্দিষ্ট ওই ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা ক্ষতির মুখোমুখি হবে।
ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র-ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে জার্মানি
ইউক্রেনকে দেড় হাজার আধুনিক অস্ত্র দিচ্ছে জার্মানি। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ওয়েপন ও ‘স্ট্রিঙ্গার’ সারফেস টু এয়ার মিসাইল। বার্লিন সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসি জানিয়েছে, চলমান রাশিয়ার হামলার মধ্যেই ইউক্রেনকে এক হাজার অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ওয়েপন ও ৫০০ ‘স্ট্রিঙ্গার’ সারফেস টু এয়ার মিসাইল দিচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে অস্ত্র রপ্তানি নিষিদ্ধের যে নীতি ছিল, তাতে পরিবর্তন এলো।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শোলৎজ বিবিসিকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে পুতিনের সৈন্যদের হামলার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
এবার রুশ সৈন্যবহরে যুক্ত হলো চেচেন বাহিনীও
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে এবার রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাশিয়ার উত্তর ককেশাস পার্বত্য এলাকার স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল চেচনিয়ার যোদ্ধারা। চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ শনিবার এক ভিডিওবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবে পরিচত রমজান কাদিরভ ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘চেচেন যোদ্ধারা ইউক্রেনে চলামান অভিযানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে যোগ দিয়েছে। তারা ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে অভিযানে অংশ নেবে এবং তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতদূর সম্ভব হত্যা এড়িয়ে চলতে। ইউক্রেন প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট (পুতিন) সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আমরা অবশ্যই যে কোনো পরিস্থিতিতে তার নির্দেশ মেনে চলব।’
ইতোমধ্যে কোনো প্রাণহানি ছাড়াই চেচেন বাহিনী ইউক্রেনের একটি সামরিক স্থাপনা দখল করেছে বলেও ভিডিওবার্তায় উল্লেখ করেন রমজান কাদিরভ। ঠিক কতজন চেচেন যোদ্ধা রুশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, ভিডিবার্তায় তা বলেননি কাদিরভ। তবে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন চ্যানেল আরটি জানিয়েছে ১২ হাজারের কিছু বেশি যোদ্ধা বর্তমানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
এবার কি চীনও সঙ্গ ছাড়ছে রাশিয়ার?
রাশিয়া থেকে শিল্পজাত পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি সীমিত করছে চীন। দেশটির বৃহত্তম দুই ব্যাংক আইসিবিসি ও ব্যাংক অব চায়না ইতোমধ্যে রুশ পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে অর্থায়ন সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। মূলত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়ন ও তাইওয়ান ইস্যুতে ইতোমধ্যে চীনের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আইসিবিসি ও ব্যাংক অব চায়নার ওপরও প্রাথমিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সূত্রের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান ইউক্রেন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই দুই ব্যাংকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় ধাপের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে— এমন আশঙ্কায় ভূগছে চীনের সরকার। যদি যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় ধাপের নিষেধাজ্ঞা জারি করে, সেক্ষেত্রে চীনের ডলারের মজুতের ওপর সরাসরি আঘাত আসবে।
তবে সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সাময়িকভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এই নীতি কার্যকর থাকবে না। চীন ও রাশিয়া উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চীন। ২০০১ সালে ২০ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব-সহযোগিতার একটি চুক্তি করেছিল এই দু’টি রাষ্ট্র এবং গত বছর ২৮ জুন এই চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ফোনে জেলেনস্কিকে যা বললেন মোদি
ইউক্রেনে শুরু হওয়া রুশ অভিযান ঠেকাতে রাজনৈতিক সহযোগিতা চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি। এক টুইটবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন জেলেনস্কি নিজেই।
শনিবার এক টুইটে জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তাকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশদভাবে অবহিত করেছি। আগ্রাসী শক্তির ১ লাখেরও বেশি সেনা বর্তমানে ইউক্রেনে অবস্থান করছে এবং লাগাতারভাবে আবাসিক এলাকাগুলোতে গোলা নিক্ষেপ করে যাচ্ছে।’
‘আমি তাকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের পক্ষে কথা বলার অনুরোধ করেছি। আরও বলেছি, আমরা একত্রে এই আগ্রাসনকারী শক্তিকে থামাতে চাই।’
পুতিন অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর কেন আবার শুরু হলো?
কিয়েভের সঙ্গে আলোচনার প্রত্যাশায় ইউক্রেনে সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু দেশটির ক্ষমতাসীনরা আলোচনায় রাজি না হওয়ায় শনিবার আবারও ইউক্রেনে সেই অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গতকাল বিকেলের দিকে ইউক্রেনের নেতার সঙ্গে আলোচনার প্রত্যাশায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর অগ্রযাত্রা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইউক্রেনীয় পক্ষ আলোচনায় অস্বীকৃতি জানানোয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, শনিবার বিকেলে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা আবারও শুরু হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ইউক্রেন বলেছে, হানাদার রুশ সৈন্যদের সাথে শুক্রবার রাত এবং শনিবারও সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
ইউক্রেনে ৬০ কোটি ডলার পাঠানোর নির্দেশ বাইডেনের
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কিকে ৬০ কোটি ডলার সহায়তা দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ বিষয়ক আইনী ধাপসমূহের দ্রুত সুরাহা করতে ব্লিনকেন বরাবর চিঠিও দিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে বাইডেন বলেন, ‘ইউক্রেনে মোট ৬০ কোটি ডলার পাঠানো হবে। তার মধ্যে ৩৫ কোটি ডলার ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ও ২৫ কোটি ডলার দেশটির বেসামরিক খাতসমূহের জন্য জন্য বরাদ্দ থাকবে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নিতে আপনাকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
আগের দিন শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের লক্ষ্য ছিল পশ্চিমকে বিভক্ত করা এবং সেই লক্ষ্যে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ন্যাটো আগে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় ছিল, এখনও তেমনই আছে।’
‘এবং ইউরোপের যেসব রাষ্ট্র ন্যাটোর নীতি ও আদর্শের সঙ্গে একাত্মবোধ করে, তাদের সবার জন্যই আমাদের জোটের দরজা খোলা।’
ইংলিশ চ্যানেলে রাশিয়ার পণ্যবাহী জাহাজ জব্দ করেছে ফ্রান্স
ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আরোপিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময় রুশ একটি কোম্পানির পণ্যবাহী জাহাজ জব্দ করেছে ফ্রান্স। শনিবার ফ্রান্সের সমুদ্রপুলিশ ওই জাহাজ জব্দ করেছে বলে দেশটির সরকারি একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের সমুদ্র পুলিশের ক্যাপ্টেন ভেরোনিক ম্যাগনিন বলেছেন, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গগামী ওই জাহাজ গাড়ি পরিবহন করছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার যেসব কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেসব কোম্পানির সঙ্গে জাহাজটি যুক্ত বলে দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের বোউলোগনে-সার-মের বন্দরের দিকে গতিপথ বদলে দেওয়া হয়। পরে কাস্টমসের কর্মকর্তারা জাহাজটিতে তল্লাশি চালিয়েছেন এবং জাহাজের ক্রুরা সহযোগিতা করেছেন।
এদিকে, ফ্রান্সে নিযুক্ত রুশ দূতাবাস জাহাজ জব্দের ঘটনায় প্যারিসের কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছে বলে রাশিয়ার সরকারি সংবাদসংস্থা আরআইএ দূতাবাসের বরাত দিয়ে জানিয়েছে।
ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিতে চায় যুক্তরাজ্যসহ ২৫ দেশ
দেশের ভেতরে সামরিক অভিযান শুরু করা রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিতে চাইছে যুক্তরাজ্যসহ ২৫টি রাষ্ট্র। শনিবার বিবিসিকে এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিয়েপ্পে।
বিবিসি রেডিও ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিয়েপ্পে বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, রুশ আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে; কিন্তু নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে যে কোনো সময় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ শুরু করতে পারে রুশ বাহিনী।’
‘এ কারণে যুক্তরাজ্য ও তার মিত্র ২৫ টি দেশ মনে করছে, অবিলম্বে ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা পাঠানো উচিত। তবে আমরা চাই, আমাদের পাঠানো অস্ত্র যেন ইউক্রেনীয়দের হাতেই পড়ে, বেহাত যেন না হয়। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে সেটি সম্ভব, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’
দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে দেশটির পূর্বাঞ্চলে সেনা অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। তার ভাষণ সম্প্রচারের পরপরই রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় এবং তড়িৎগতিতে ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী।
কিয়েভ ছেড়ে পালিয়েছেন জেলেনস্কি, দাবি রাশিয়ার
স্পিকারের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শুরু হওয়া বৃহত্তম আগ্রাসনের তৃতীয় দিনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলার মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ যখন পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, ঠিক তখনই এই শহরটি ছেড়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ অঞ্চলে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জোলেনস্কি।
শনিবার রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমার স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের লভিভে পালিয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন।
যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, আশঙ্কা ম্যাক্রোঁর
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। শনিবার ফ্রান্সের সাংবাদিকদের এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিশ্বকে প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এই দিন প্যারিসে শুরু হওয়া বার্ষিক কৃষি মেলা উদ্বোধন করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে যুদ্ধ ফিরে এসেছে। এই যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং একটি দুঃখজনক মানবিক পরিস্থিতিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
‘ইউক্রেনের জনগণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং ইউরোপ এই প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
‘এখন আপনারা যদি আমার কাছে এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করেন, সেক্ষেত্রে আমি বলব—এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং বিশ্বে এই যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তাই আমাদের উচিত হবে, এখন থেকেই আসন্ন এই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা।’
ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রতিরোধে পালাল রুশ সৈন্যরা
পশ্চিম ইউক্রেনের ব্রোডির কাছের লভিভ অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলা প্রতিহত করার দাবি জানিয়েছে ইউক্রেনের সৈন্যরা। শনিবার টেলিগ্রাম বার্তায় লভিভের মেয়রের বরাত দিয়ে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এই দাবির তথ্য জানানো হয়েছে।
লভিভের মেয়র আন্দ্রে সাদোভি বলেছেন, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে ব্রোডির কাছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার অবতরণ করেছে। এতে প্রায় ৬০ সৈন্য ছিল। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের সৈন্যরা দখলদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছি।’
এদিকে, আগ্রাসন তৃতীয় দিনে গড়ানোর সাথে সাথে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ সৈন্যরা গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন প্রান্তে রুশ সৈন্যরা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।
বিদেশি নাগরিক এবং কোম্পানির অর্থ জব্দের ঘোষণা রাশিয়ার
ইউক্রেনে হামলার জেরে বিদেশে রুশ নাগরিক ও কোম্পানির অর্থ জব্দের জবাবে রাশিয়ায় থাকা বিদেশি নাগরিক এবং কোম্পানির অর্থ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। শনিবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ্রপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ এই ঘোষণা দিয়েছেন।
আমেরিকার সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি
আমেরিকার সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের রাজধানীর রাস্তায় এখন গুলির লড়াই চলছে। ক্রমেই সাধারণ মানুষ দেশের রাজধানী ছেড়ে পালাচ্ছেন। অনেকেই আবার আটকে পড়েছেন। এরই মাঝে থেকে থেকে গর্জে উঠছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান, বোমা বর্ষণের ভয়ে কিয়েভের বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে।
এমন আবহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সেখান থেকে ‘উদ্ধার’ করার প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু মার্কিন এই ‘সাহায্য’ ফিরিয়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সাথে কথোপকথনের সময় ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘লড়াই চলছে এখানে; আমার গোলাবারুদ দরকার, আমাকে সরিয়ে নেওয়ার দরকার নেই।’
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ঘিরে ফেলেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রটেছিল। এরপর এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি দেশে আছেন। শুধু তাই নয়, তিনি দেশবাসীকে রাশিয়ার সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অনেকে তার ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তাকে ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার বেসামরিকরাও
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিয়েভ থেকে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিনিধি লিউক হার্ডিং বলেছেন, কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রের লোবানোভস্কির একটি আবাসিক ভবনে রাশিয়ার গোলা আঘাত হেনেছে।
এতে ওই ভবনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনের হাতে নিহত ৩৫০০ রুশ সেনা
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, রুশ আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও প্রায় ২০০ রুশ সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।
এছাড়া হামলায় রুশ বাহিনী এখন পর্যন্ত যে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে সেটিরও খতিয়ান তুলে ধরেছে দেশটি। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য মার্কিন সাহায্যও প্রত্যাখান করেছেন তিনি।
এদিকে রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, শনিবার এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের রাজধানী শহর কিয়েভের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- ‘এই মুহূর্তে আমাদের শহরের রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।’
বিবৃতিতে শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির জানালার কাছে বা ব্যালকনিতে না যেতে সতর্ক করা হয়েছে।
কিয়েভের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা, রাজধানীজুড়ে ব্যাপক গোলাবর্ষণ
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির রাজধানীজুড়ে ব্যাপক গোলাবর্ষণও শুরু হয়েছে। ইউক্রেনের সেনা কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষতর্শীদের বরাত দিয়ে শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তবে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রুশ বাহিনীর ওই হামলা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়াকে থামানোর যথেষ্ট শক্তি ইউরোপের আছে : জেলেনস্কি
রাশিয়ার চালানো হামলা রুখে দিতে নিজ দেশের নাগরিকদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পাশাপাশি তিনি সাহায্য চেয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোকে আরও বেশি কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
হামলা শুরুর দ্বিতীয় দিনের মাথায় অর্থাৎ শুক্রবার দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ সাহায্য চাইলেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার ট্যাংক আমাদের আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে ইউরোপের এগিয়ে আসা উচিত। তিনি আরও বলেন, দেরি না করে শিগগিরই ইউরোপ এগিয়ে আসতে পারে। রাশিয়ার আগ্রাসন থামিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তি তাদের রয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা নেওয়ার আহ্বান পুতিনের
আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে ভাষণ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেওয়া ভাষণে কিয়েভের ক্ষমতাসীন সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে পুতিন বলেছেন, আমি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক সৈন্যদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি: নব্য-নাৎসিদের মেনে নেবেন না এবং (ইউক্রেনের উগ্র জাতীয়তাবাদীদের) আপনাদের সন্তান, স্ত্রী ও প্রবীণদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে দেবেন না।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা আপনাদের নিজের হাতে নিয়ে নিন, আমাদের পক্ষে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য এটি সহজ হবে।’
১ হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত, দাবি ইউক্রেনের
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শুরু হওয়া রাশিয়ার সবচেয়ে বড় আগ্রাসনের প্রথম দুই দিনে ১ হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। শুক্রবার রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ঢুকে পড়ার পর এই দাবি করেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর কোনো সশস্ত্র সংঘাতেই রাশিয়ার এত বেশি সৈন্যের প্রাণহানি হয়নি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে রাশিয়ার প্রায় ২ হাজার ৮০০ সৈন্য নিহত ও ৮০টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালইয়ার।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। হান্না বলেছেন, রুশ সৈন্যরা আরও ৫১৬টি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, ১০টি বিমান এবং সাতটি হেলিকপ্টার হারিয়েছে।
২০০ সৈন্যকে হত্যার পর কিয়েভের বিমানবন্দর দখলে নিল রাশিয়া
আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছের প্রধান একটি বিমানবন্দর দখলে নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। প্রায় ২০০ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের দুই শতাধিক সৈন্যকে হত্যার পর ওই ঘাঁটি দখলে নেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, হোসটোমেল বিমানঘাঁটি দখল করতে ২০০টি হেলিকপ্টার এবং সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশন ব্যবহার করা হয়েছে।
হোসটোমেল বিমনবন্দর দখলে নেওয়ায় ভারী সামরিক সরঞ্জাম এবং সৈন্য পরিবহনকারী রাশিয়ার বিমান অবতরণ করতে পারবে সেখানে। বিমানবন্দরটিতে দীর্ঘ রানওয়ে থাকায় রাশিয়া থেকে সরাসরি কিয়েভের ওই বিমানবন্দরে সৈন্য পরিবহন করা যাবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকোভ বলেছেন, রাশিয়ান বিমানবাহিনী হোসটোমেল দখলে নেওয়ার জন্য ২০০টি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে। তারা ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর ২০০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে।
ইউক্রেনে বেসামরিক হতাহত নিয়ে উদ্বিগ্ন তালিবান
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সশস্ত্র শাসকগোষ্ঠী তালেবান বলেছে, ইউক্রেনে বেসামরিক হতাহতের সম্ভাবনার ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন। পূর্ব-ইউরোপের এই দেশটিতে চলমান রুশ আগ্রাসনের ব্যাপারে শুক্রবার এক বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে তালেবান।
বিবৃতিতে তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেন ইস্যুতে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি মেনে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে তালেবান। আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত পূর্ব-ইউরোপের উভয় দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, সহিংসতা তীব্র হতে পারে এমন অবস্থান গ্রহণ করা থেকে সব পক্ষকে বিরত থাকতে হবে। আমরা ইউক্রেন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আফগানিস্তানের নতুন শাসকগোষ্ঠী, বিশ্বের কোনো দেশ এখনও যাদের স্বীকৃতি দেয়নি, তারা ইউক্রেন ও রাশিয়াকে সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
অস্ত্র সমর্পণ করলেই ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা : রাশিয়া
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় মস্কো প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, নব্য-নাৎসিরা ইউক্রেন শাসন করুক মস্কো তা চায় না। শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ সৈন্যদের প্রবেশের পর এসব কথা বলেছেন তিনি।
সের্গেই লাভরভ আরও দাবি করেছেন যে, রাশিয়া চায় ইউক্রেনের জনগণ স্বাধীন হোক এবং স্বাধীনভাবে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ থাকুক। তবে প্রতিবেশী এই দেশটি নব্য-নাৎসিদের শাসনে চলুক সেটি ক্রেমলিন কখনই চায় না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে গণতান্ত্রিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছে না মস্কো।
ইউক্রেন শান্তি চায়, আলোচনায় প্রস্তুত : জেলেনস্কির উপদেষ্টা
ইউক্রেন শান্তি চায় এবং ন্যাটোর ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানসহ অন্যান্য বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এসব কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক।
খুদে বার্তায় রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘যদি তারা ন্যাটোর ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে মস্কোতে বসে আলোচনা করতে চায়, সম্ভব হলে সেটি হওয়া উচিত। আমরা এতে ভয় পাই না। আমরা এটা নিয়েও কথা বলতে পারি।’
তিনি বলেন, শান্তির জন্য অবিরাম ইচ্ছার অংশ হিসেবে সংলাপে আমরা প্রস্তুত। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অথবা ন্যাটো জোটের অংশ নয় ইউক্রেন। যদিও উভয় সংস্থায় যোগ দিতে চায় দেশটি। কিন্তু ইউক্রেনের ন্যাটো জোটে যোগদান কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি নয় মস্কো।
কিয়েভ দখলের ব্যাপারে যা বলছেন ইউক্রেনের গোয়েন্দারা
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক অ্যান্তন হেরাসচেঙ্কো বলেছেন, উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ট্যাঙ্ক বহর নিয়ে রাজধানী কিয়েভ দখলের জন্য অগ্রসর হচ্ছে রুশ সৈন্যরা। কিয়েভ নিয়ে রাশিয়ার পরিকল্পনার কথা ইউক্রেনের প্রাভদা ওয়েবসাইটকে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সূত্র। যদিও এটি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য নয়। তবে রাশিয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সেখানে যা বলা হয়েছে
• কিয়েভের প্রধান একটি বিমানবন্দর দখলের পর বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করা। এর মাধ্যমে রাশিয়ার ১০ হাজার সৈন্য কিয়েভে অবতরণ করবে। একই সময় সীমান্তে হামলা অব্যাহত রেখে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রাখবে।
• কিয়েভের বৈদ্যুতিক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নাশকতা করে আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করা।
• লোকজনকে আতঙ্কিত করে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে ঠেলে দিয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি।
• কেবিনেট, পার্লামেন্ট ভবনসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন দখল করা। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন নেতাদের আটক করে রাশিয়ার শর্তে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা।
• রুশপন্থী নেতাদের ক্ষমতায় এনে সাবেক পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মতো ইউক্রেনকে দু’ভাগে বিভক্ত করা। তবে এসব তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
‘ইউক্রেনে রাশিয়ার ৪৫০ সৈন্য নিহত’
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে শুরু হওয়া বিশেষ সামরিক অভিযানে রাশিয়ার অন্তত সাড়ে ৪০০ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্য।
শুক্রবার গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বিবিসি রেডিও ফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। একই সঙ্গে রাশিয়া প্রথম দিন ইউক্রেনে তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেনীয়দের লড়াইয়ের কারণে রাশিয়া ব্যর্থ হয়েছে। বেন ওয়ালেস বলেছেন, রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনে ৪৫০ সৈন্য হারিয়েছে। রাজধানী কিয়েভের একেবারে কাছে বিমানবন্দর দখল করতেও ব্যর্থ হয়েছে রুশ এলিট স্পেটসনাজ বাহিনী।
রুশ সৈন্যরা এখন কিয়েভে, তুমুল লড়াই
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে শুরু হওয়া আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে রাশিয়ার সৈন্যরা কিয়েভে পৌঁছেছে।
শুক্রবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক টুইট বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, রুশ সৈন্যরা এখন কিয়েভে। তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা রুশ দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শত্রুরা এখন কিয়েভের ওবোলোন জেলায় পৌঁছেছে। রাজধানী কিয়েভের সংসদ ভবন এলাকা থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ওবোলোন শহর।
আত্মসমর্পণে নারাজ, মৃত্যুকে বেছে নিল ১৩ ইউক্রেনীয় সেনা
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি জুড়ে চলছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ হামলা। এর মধ্যে বীরত্বের কারণে ইউক্রেনের ১৩ সেনাসদস্য ভাসছেন মরণোত্তর প্রশংসায়। আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় রাশিয়ার বোমা হামলায় তারা নিহত হন।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এছাড়া হামলার দ্বিতীয় দিনেও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দফায় দফায় বিস্ফোরণ হয়েছে। একটি রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবরের পাশাপাশি দেশটির একটি শহরে ব্যাপক গোলাগুলির ভিডিও সামনে এসেছে।
দ্বিতীয় দিনেও কিয়েভে দফায় দফায় বিস্ফোরণ, রুশ বিমান বিধ্বস্ত
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে। এদিনও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দফায় দফায় বিস্ফোরণের খবর শোনা যাচ্ছে। একইসঙ্গে হামলার দ্বিতীয় দিনে রাজধানী কিয়েভে একটি রুশ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দফায় দফায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া শহরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের কথা জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে রাশিয়ার একটি বিমানও ভূপাতিত করার দাবি করেছে তারা।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিয়েভের দারনিতাস্কি জেলার একটি অ্যাপার্টমেন্টে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। অ্যান্তন হেরাশচেঙ্কো নামের ওই কর্মকর্তার দাবি, বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং সেটি ৭এ কোসহিতসিয়া সড়কের একটি বাড়িতে বিধ্বস্ত হয়।
এছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভের একটি নয়তলা আবাসিক ভবনে আগুন ধরে গেছে। অবশ্য মিসাইল হামলা বা অন্য কী কারণে আগুন ধরেছে সেটি উল্লেখ করা হয়নি।
রুশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে পারে নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, তিনি তার দেশ থেকে রুশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দেশেরই করার ক্ষমতা আছে এমন কাজগুলোর একটি হলো রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার।
জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, সিদ্ধান্তটাকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। ইউক্রেনে হামলার সঙ্গে জড়িত রুশ সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ড। এর পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও স্থগিত করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ড রাশিয়ার সৈন্য ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য পণ্য রফতানিও নিষিদ্ধ করেছে।
নিউজিল্যান্ড বলেছে, ইউক্রেনের ওপর হামলা অবৈধ। জেসিন্ডা আরডার্ন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার হওয়া উচিত।
চেরনোবিল বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়ার দখলে
ইউক্রেনের ঐতিহাসিক চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রথম দিনেই ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পরমাণু স্থাপনাটি দখল করে নেয় রুশ সামরিক বাহিনী।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দফতরের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলইয়াক বলেছেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল আক্রমণের পর চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তবে সেখানকার নিরাপত্তা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণের পর চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রটির নিরাপত্তা সম্পর্কে বলাটা অসম্ভব। এটি আজ ইউরোপের জন্য অন্যতম বড় একটি হুমকি।’
অবশ্য এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন রুশ সামরিক বাহিনী চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করছে।
রুশ হামলার প্রথমদিনে ইউক্রেনে নিহত ১৩৭
টানা কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পর স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া এই হামলার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বৃষ্টির মতো।
আক্রমণের প্রথম দিনেই দেশটিতে নিহত হয়েছেন ১৩৭ জন। নিহতদের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক মানুষ রয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার হামলার প্রথম দিনে সেনা ও সাধারণ মানুষসহ ইউক্রেনে ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা আমাদের ১৩৭ জন বীর নাগরিককে হারিয়েছি। নিহতদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং বেসামরিক মানুষ রয়েছেন। এছাড়া রাশিয়ার হামলায় আরও ৩১৬ জন ইউক্রেনীয় আহত হয়েছেন।’
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দিকে ইঙ্গিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘তারা মানুষকে হত্যা করছে এবং শান্তিপূর্ণ শহরগুলোকে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এটা লজ্জাজনক এবং কখনোই ক্ষমা করা হবে না।’
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকেছে রুশ সৈন্যরা
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বৃহস্পতিবার দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তিন দিক থেকে অভিযান শুরুর পর এখন রাজধানীর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে।
ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, কিয়েভে সরকারি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে গ্র্যাড মিসাইল ছুড়ে হামলা চালাচ্ছে রুশ সৈন্যরা। রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলের আকাশে কয়েকটি হেলিকপ্টার অনেক নিচ দিয়ে উড়তে দেখেছেন বলে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন। এ সময় কিয়েভের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলার খবর পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সর্ববৃহৎ আগ্রাসন, ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি ইউক্রেনে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চেরনিহিভ, খারকিভ এবং লুহানস্ক সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রুশ সৈন্য স্থলপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। আজ এই শহরের বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙেছে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে।
বন্দুকের আওয়াজ, সাইরেনের শব্দ আর বাসিন্দাদের পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় শহরের বাইরের প্রধান মহাসড়কটি যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে, বলছে রয়টার্স।
অস্ত্র ফেলে অসহায় আত্মসমর্পণে ইউক্রেন সৈন্যরা, দাবি রাশিয়ার
রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ব্যাপকসংখ্যক সদস্য অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনের সৈন্যরা পিছু হটছে বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করেছে মস্কো।
রুশ বার্তাসংস্থা তাস বলছে, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সৈন্য এবং অন্যান্য সদস্যরা অস্ত্র ফেলে তাদের অবস্থান ত্যাগ করছেন। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর যে সদস্যরা অস্ত্র ফেলে দিয়ে পিছু হটেছেন তাদের ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি।
এদিকে, রাশিয়ার সদ্য স্বাধীনতার স্বীকৃতি পাওয়া গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্ক বলেছে, ইউক্রেনের ৫৭তম মোটরচালিত পদাতিক ব্রিগেড রুশ সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
নাগরিকদের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার আহ্বান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণায় নাগরিকদের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার এই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের জনগণকে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। এছাড়া ইউক্রেনকে রক্ষায় ইচ্ছুক কারো ওপর পূর্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়ে থাকলে এখন তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনে রুশ অভিযানকে ‘আগ্রাসন’ বলতে নারাজ চীন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযানে নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রসমূহ এই নির্দেশকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে অভিহিত করলেও চীন তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।
বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলন হয়; সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র হুয়া শুনয়িইং। সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন শুরু হওয়া রুশ ‘আগ্রাসন’ ইস্যুতে চীনের অবস্থান জানতে প্রশ্ন করেন দেশটির সংবাদিকরা।
জবাবে শুনয়িইং বলেন, ‘আপনারা যাকে ‘আগ্রাসন’ বলছেন, তা আসলে পশ্চিমা দেশ ও সেসব দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর ব্যবহৃত শব্দ এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গী। আমাদের অবস্থান সে রকম নয়।’
‘পূর্ব ইউরোপের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা শুরু থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে চীন। উপস্থিত মুহূর্তে আমরা সবপক্ষকে সংযমের অনুরোধ করছি এবং পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে বিষয়ে সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পাল্টাপাল্টি হামলায় ইউক্রেন-রাশিয়ার ১০০ সৈন্য নিহত
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার পর ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
আক্রমণ শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় ইউক্রেনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য এবং ১০ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনে বলছে, পাল্টা প্রতিরোধে রাশিয়ার অন্তত ৫০ দখলদার সৈন্য নিহত হয়েছেন।
৫০ রুশ সৈন্যকে হত্যার দাবি ইউক্রেনের
মস্কো-সমর্থিত বিদ্রোহীদের হামলা প্রতিহত করার সময় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার অন্তত ৫০ ‘দখলদার’ সৈন্যকে হত্যা করেছে বলে দাবি জানিয়েছে। মস্কোর হামলায় ৭ ইউক্রেনীয়র প্রাণহানির পর বৃহস্পতিবার রাশিয়ার এই অর্ধশত সৈন্য হত্যার দাবি করল ইউক্রেন।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, বৃহস্পতিবার পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহরের কাছের একটি সড়কে রাশিয়ার চারটি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া লুহানস্ক অঞ্চলের একটি শহরে ৫০ রুশ সৈন্যকে হত্যা এবং দেশটির পূর্বাঞ্চলের রাশিয়ার ষষ্ঠ একটি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে।
এর আগে রাশিয়ার পাঁচটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি করেছিল ইউক্রেন। তবে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি রুশ সৈন্যদের প্রাণহানির সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে।
পুরো ইউক্রেন দখলের ইচ্ছা নেই : পুতিন
সদ্য স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে কিয়েভের আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য দেশটিতে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া ইউক্রেন দখলে নেওয়ার রাশিয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, সামরিক অভিযানের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো— গত আট বছর ধরে কিয়েভ শাসকদের গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া লোকজনকে রক্ষা করা। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ এবং নাৎসিবাদমুক্ত করবে মস্কো। এছাড়া যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বহুমুখী নৃশংসতা চালিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখলে নেওয়ার কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই মস্কোর। রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডগুলো দখলের পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা কারও ওপর জোর করে কোনো কিছু আরোপ করতে যাচ্ছি না। কিয়েভের সৈন্যরা এখনও রাশিয়ার স্বাধীন ঘোষণা করা দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ করছে।
আজভ সাগরে জাহাজ চলাচল বন্ধ করল রাশিয়া
ইউক্রেনে চলমান হামলার মধ্যেই আজভ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার সামুদ্রিক ও নৌ-চলাচল বিষয়ক রাষ্ট্রীয় সংস্থার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এই তথ্য জানিয়েছে রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স।
অন্যদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আজভ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রাশিয়া। এই সাগরে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশেরই বন্দর রয়েছে এবং ইউক্রেনের বৃহৎ বন্দর ম্যারিউপল আজভ সাগরেই অবস্থিত। অবশ্য কের্চ প্রণালীর মাধ্যমে এই সাগরটি নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গম রপ্তানি করে থাকে রাশিয়া। তবে দেশটি প্রধানত কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো থেকেই সেসব শস্য শিপিং করে থাকে। অন্যদিকে আজভ সাগরের বন্দরগুলো মূলত ধারণক্ষমতায় ছোট এবং অগভীর।
এদিকে আজভ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের বিষয়ে রাশিয়ার সিদ্ধান্তের পর সেখানে জাহাজ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শস্য শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘(আজভ সাগরে) সব জাহাজ চলাচলই বন্ধ।’
ইউরোপে যুদ্ধ ফেরানোর দায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ইইউর
ইউরোপে যুদ্ধ ফিরিয়ে আনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতা দুর্বল করার জন্য ‘ব্যাপক’ নিষেধাজ্ঞার একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হবে।
তিনি বলেন, এই প্যাকেজে আমরা রাশিয়ার প্রধান প্রধান প্রযুক্তি এবং বাজারে প্রবেশ ঠেকানোর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতির কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করব। আমরা রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেব।
রাশিয়ার বোমা হামলায় ইউক্রেনে নিহত অন্তত ৭
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের বন্দরনগরী ওডেসায় রুশ সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্দরনগরী ওডেসার বাইরের পোডিলস্ক শহরে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটে রাশিয়ার বোমা হামলায় ৭ জন নিহত ও আরও সাতজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া বোমা হামলার পর থেকে পোডিলস্কে নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৯ জন। মারিউপোল শহরে বোমা হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনের পুলিশ জানিয়েছে।
রাশিয়ার পাঁচটি বিমান ও এক হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি ইউক্রেনের
বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার পাঁচটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর এসব বিমান এবং হেলিকপ্টার ইউক্রেনের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল বলে জানিয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের আর্মি জেনারেল স্টাফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যৌথ বাহিনী কমান্ডের মতে, আজ (২৪ ফেব্রুয়ারি) যৌথ বাহিনীর অভিযানের এলাকার আক্রমণকারীদের পাঁচটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টারে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে।’
এদিকে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরে মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে দেশটির সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতেও। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন।
ইউক্রেনে মাশার্ল ল জারি, বিজয়ের শপথ জেলেনস্কির
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দেশের সামরিক অবকাঠামো এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। এমন অবস্থায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দেশজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয়ের শপথও করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদমে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর ওই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে, বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে আর্টিলারি আক্রমণের কবলে পড়েছে ইউক্রেন। হামলার জবাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও গোলা ছুড়ছে।
প্রাণ বাঁচাতে কিয়েভ ছাড়ছে আতঙ্কিত বহু মানুষ
মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রতিবেশী এই দেশটিতে হামলার ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানতে শুরু করে।
হামলার মুখে রাজধানী কিয়েভে জরুরি সাইরেন বাজায় কর্তৃপক্ষ। পরে আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন বহু মানুষ। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ছবিতে মহাসড়কে পলায়নরত মানুষের গাড়ির স্রোত ও জট দেখা যায়।
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার এই আক্রমণের মুখে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক ফুঁটে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অনেকেই সেখানে জানিয়েছেন, নিরাপত্তার খোঁজে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে, এমনকি বাড়ির বেজমেন্টেও অবস্থান নিয়েছেন। টেলিভিশন ফুটেজেও মানুষকে দলবেঁধে রাস্তায় প্রার্থনা করতে দেখা যায়।
এছাড়া কিয়েভ থেকে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, রাজধানীর রাস্তায় খুব কম মানুষের দেখা মিলছে এবং বহু মানুষ টাকা তোলার মেশিনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
বেলারুশ থেকেও আক্রমণ চালাচ্ছে রুশ সেনারা
গত কয়েক সপ্তাহের টানা উত্তেজনার পর ইউক্রেনের চূড়ান্ত সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন ইউক্রেনে রুশ সৈন্যদের অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার দেশটির প্রধান প্রধান কয়েকটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এছাড়া দেশটির উত্তর উপকূলীয় সীমান্তের বেলারুশ থেকে রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনে ঢুকতে শুরু করেছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নির্দেশ দেওয়ার পর ওই সৈন্যরা বেলারুশ থেকে প্রতিবেশী এই দেশটিতে প্রবেশ করছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
কিয়েভের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বেলারুশের সৈন্যরা রাশিয়ার আক্রমণে যোগ দিতে শুরু করেছে। এর অর্থ হচ্ছে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকেও আক্রমণ চলছে। রাশিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী বেলারুশ। বিশ্লেষকরা ছোট এই দেশটিকে রাশিয়ার ‘খদ্দের রাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, উত্তরাঞ্চল থেকে হামলার মানে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল আক্রমণ করছে এবং রাশিয়ার সৈন্যরা দক্ষিণের ওডেসা অঞ্চলের দিকেও অগ্রসর হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা জেনে গেছে পুতিন : ট্রাম্প
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেনের রাজধানী ও আরও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায় রাশিয়া থেকেও।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার প্রশাসন ক্ষমতায় থাকলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তিনি আরও বলেন, পুতিন শুরু থেকেই এটা চাচ্ছিল, তা তিনি বিশ্বাস করেন না।
ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হয় পুতিন কিছু একটা করতে চাচ্ছিলেন এবং আলোচনা চাচ্ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যেতে থাকল। আর তারপর তিনি (পুতিন) বুঝে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দূর্বলতো কোথায়।
ইউক্রেনে মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া
ইউক্রেনে মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। হামলার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেও।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের অনেক অবকাঠামো এবং সীমান্তরক্ষীদের ওপর মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
যুদ্ধের দামামা, বিস্ফোরণ রাশিয়াতেও
রাশিয়াতেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। নিউজ এজেন্সি রয়টার্স একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে লিখেছে- ইউক্রেন সীমান্ত থেকে নিকটবর্তী রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলগোরোদ প্রদেশ এ বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।
তবে সেটা কী বিস্ফোরণের শব্দ সেটা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য সিএনএন রিপোর্টার ফ্রেডরিক প্লেইটজেন বলছেন, রকেট ও আর্টিলারির আওয়াজ পেয়েছেন।
এছাড়া কিছু বিমান উড়ে যাওয়ার শব্দ তিনি পেয়েছেন। বিমানগুলো ইউক্রেনের দিকে উড়ে গেছে বলে ধারণা তার।
পুতিন পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করেছেন : ইউক্রেন
ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা।
সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, ‘ইউক্রেনে মাত্রই পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।’
তিনি আরও বলেছেন, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন রুখে দাঁড়াবে এবং বিশ্বকে অবশ্যই পুতিনকে থামাতে হবে।
‘গিভ পিস অ্যা চান্স’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি শান্তির আহ্বান জানিয়ে লেখেন- ‘গিভ পিস অ্যা চান্স।’
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। কিছুক্ষণ আগে এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
পুতিনের এ ঘোষণা দেওয়ার ভাষণটি যখন টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছিল একই সময়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক চলছিল; যেখানে তাকে থামানোর আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে দেওয়া ভাষণে পুতিন ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র ফেলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। কোনো রক্তপাত হলে তার জন্য ইউক্রেন দায়ী থাকবে বলেও হুঁশিয়ার করেন পুতিন।
ইউক্রেনের রাজধানীতে দফায় দফায় বিস্ফোরণ
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দফায় দফায় বিস্ফোরণ হয়েছে। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে রাশিয়ার হামলার জোরালো আশঙ্কার মধ্যেই খোদ রাজধানীতে বিস্ফোরণের খবর সামনে এলো।
বিবিসি’র সংবাদদাতা পল অ্যাডামস ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করছেন এবং তিনি জানিয়েছেন, কিছুক্ষণ আগে সেখানে তিনি পাঁচ থেকে ছয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
এছাড়া কিয়েভ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়া মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র একটি অনুষ্ঠানেও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে।
ইউরোপে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ইউক্রেনে হামলার বিষয়ে ইতোমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। আর এর মাধ্যমে ইউরোপে বড় যুদ্ধের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন থাকা রুশ সেনাদের দিকে ইঙ্গিত করে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার সেনাদের সামনে এগোনোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তার ভাষায়, ‘অন্য দেশের ভূখণ্ডে (রুশ সেনাদের প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে মস্কো)। আর রাশিয়ার এই পদক্ষেপ ইউরোপ মহাদেশে বড় ধরনের যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।’
রাশিয়ার অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে মস্কো ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পর বুধবার রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রুশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং অর্থমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেতনিকভের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এছাড়া রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ‘ব্যাংক ভিটিবি পিএও’-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যান্ড্রে কোস্তিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সংস্থাটি।
দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর এবার দেশটির রাজধানী কিয়েভের রুশ দূতাবাস থেকে কর্মীদের ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে মস্কো।
কিয়েভের রুশ দূতাবাসের মুখপাত্র ডেনিস গোলেঙ্কো বার্তাসংস্থাকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ইতোমধ্যে দূতাবাসের রুশ কর্মকর্তারা ইউক্রেন ত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ তীব্র রূপ নেওয়ার মধ্যেই বুধবার নিজ দেশের নাগরিকদের রাশিয়া ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন। একই দিন দেশটি থেকে দূতাবাসকর্মীদের ফিরে আসার নির্দেশ দিল মস্কো।
পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানি করতে ৭ বছর আগে রাশিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, সেই প্রকল্পের কাজে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তা মিমাংসা করতে মস্কো সফরে গিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান বলেন, ‘আমাদের নর্থ-সাউথ পাইপলাইন প্রকল্পের কাজে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে কোম্পনিকে আমরা পাইপলাইন নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সেটি সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে।’
দীর্ঘ ২৩ বছর পর পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রী মস্কো সফরে গেলেন; এবং এমন এক সময়ে তিনি গেলেন, যখন ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো।
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা দুই মাসের বেশি সময় ধরে ফুঁসছে। এই সংকট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অগ্রগতির তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন সীমান্তে দেড় লাখের বেশি সৈন্য সমাবেশ করেছে রাশিয়া।
মস্কোর এমন রণসজ্জায় পশ্চিমারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে পারে। তবে ইউক্রেনে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে মস্কো বলেছে, তারা ন্যাটো জোটের মিত্রদের আগ্রাসনের জবাব দিচ্ছে। পশ্চিমাদের ওই সতর্কবার্তাকে ‘মৃগীরোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে রাশিয়া।
নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকানোর লক্ষ্যে কিয়েভের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অত্যাসন্ন আশঙ্কায় যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা। ইতোমধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ও তাদের মিত্ররা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
ইউক্রেনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আরও কিছু তথ্য
• রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিমানবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফসহ দেশটির পার্লামেন্ট ডুমার ৩৫১ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
• ইউক্রেনের ৩০ লাখ নাগরিককে অবলিম্বে রাশিয়া ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কিয়েভ।
• কিয়েভের ধারণা, মস্কো সম্ভাব্য আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
• পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বেপরোয়া প্রতিক্রিয়া দেখাতে যাচ্ছে রাশিয়া। মস্কোর এই প্রতিক্রিয়ায় বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি বাজার এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
• রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২ লাখ রিজার্ভ সৈন্যকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক বাহিনীতে ফেরানোর পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন।
জরুরি অবস্থা জারি করছে ইউক্রেন
রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কার মাঝে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন; যেখানে দেশ শান্ত রাখতে এবং অর্থনীতি রক্ষায় বিশেষ বিধি-নিষেধ আরোপ করা হতে পারে। বুধবার ইউক্রেনের জ্যেষ্ঠ এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেক্সি ড্যানিলভ এই তথ্য জানিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, জরুরি অবস্থা ৩০ দিন ধরে কার্যকর থাকবে। পরবর্তীতে আরও এক মাসের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করা হতে পারে।
তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। জরুরি অবস্থা জারি করা হলে তা কর্তৃপক্ষকে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে তা বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেবে।
জরুরি অবস্থা চলাকালীন পরিবহনে বিধি-নিষেধ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার এবং ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা হতে পারে। আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ কারফিউ এবং অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেবে বলে জানিয়েছেন ড্যানিলভ।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি অর্থহীন: তুরস্ক
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র।
কিন্তু এই জোটেরই অপর সদস্য তুরস্ক এসব নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এইসব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ সমস্যার সমাধানে কোনো কাজে আসবে না বলেও মনে করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।