মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প আরও বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তিনি চীনকেও একই কাজ করতে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন। কারণ, ওয়াশিংটন মস্কোর জ্বালানি আয়ের উৎস বন্ধ করার প্রচেষ্টা জোরদার করছে।
রাশিয়ার সমুদ্রপথে তেল রপ্তানির দুটি বৃহত্তম ক্রেতা দেশ হলো—ভারত ও চীন। ইউক্রেন আক্রমণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইউরোপীয় ক্রেতারা রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দেয়। তখন রাশিয়া বাধ্য হয়ে তেল কম দামে বিক্রি করতে শুরু করে। আর তারপর এই সুযোগ নিচ্ছে ভারত ও চীন।
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন ট্রাম্প। তিনি ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা নিরুৎসাহিত করতে দেশটির যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। এর উদ্দেশ্য, মস্কোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে ইউক্রেন ইস্যুতে শান্তিচুক্তির পথে আনতে বাধ্য করা।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনছে, এতে আমি খুশি ছিলাম না। আজ মোদি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তাঁরা আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা একটি বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করতে রাজি করাব।’
মোদি সত্যিই ট্রাম্পকে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি।
গতকাল মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি জাপানের অর্থমন্ত্রী কাটসুনোবু কাতোকে জানিয়েছেন যে ট্রাম্প প্রশাসন আশা করছে, জাপানও রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করবে।
রাশিয়া বর্তমানে ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী দেশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে মস্কো প্রতিদিন প্রায় ১৬ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল তেল ভারতে রপ্তানি করেছে, যা দেশটির মোট তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে মোদি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও এই কেনা বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা এই কেনাকাটাকে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
অন্য দেশ থেকে তেল আমদানি করলে ভারতের খরচ বাড়তে পারে, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকলে সেই প্রভাব কিছুটা কমে আসবে।
ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে, তাহলে তা মস্কোর অন্যতম বড় জ্বালানি ক্রেতার নীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে দেখা হবে। এই পদক্ষেপ অন্য দেশগুলোকেও রুশ তেল কেনা পুনর্বিবেচনা করতে প্রভাবিত করতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেশটিতে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েক দিন পরেই ট্রাম্পের এ ঘোষণা এল। ওই বৈঠকে তারা প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত গোরের এই নিয়োগকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাপকভাবে দেখা হচ্ছে।