আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বের উদ্বেগকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরু করেছে দখলদার ইসরাইল। শেষ খবর পর্যন্ত রাফাহ’র পূর্ব দিকে ঘিরে ফেলেছে ইসরাইলের বিশেষ প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ। সেই সঙ্গে শহরটির মধ্যাঞ্চল থেকেও, বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইসরাইলি বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, অভিযান আরও বিস্তৃত করছে চাইছে ইসরাইল।
তেল আবিব জানিয়েছে, গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল করতে হলে তাদের রাফাহতে অভিযান চালানো ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। আর হামাসও বলেছে, তারা ইসরাইলকে যুদ্ধে পরাজিত করবে। এরিমধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশরের শেষ চেষ্টাও ভেস্তে গেছে। হামাসের শেষ প্রস্তাবও মেনে নেয়নি ইসরাইল। তাদের প্রতিহত করতে এবার সর্বাত্মক লড়াইয়ে নেমেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসও।
রাফাহ শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গেলো দু’দিন ধরে রাফাহর পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে বিস্ফোরণের সঙ্গে গুলি ও ভারি গোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে হামাস। রাফাহ’র যুদ্ধে হামাসের সঙ্গ দিচ্ছে ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারাও। হামাসের দাবি,রাফাহর পূর্বাঞ্চলে একটি মসজিদের কাছে একাধিক ইসরাইলি ট্যাংক গুড়িয়ে দিয়েছে তারা।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দখল করে নিয়েছে তারা। রাফাহ থেকে শনিবার কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের দিকে রকেট ছোড়া হয়েছে। ইসরাইল ও দক্ষিণ গাজার মধ্যবর্তী ক্রসিংটি সপ্তাহের শুরুতে মারাত্মক গোলাগুলির পর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। চারটি রকেট নিক্ষেপ শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলো রাফাহ এলাকা থেকে এসেছে। একটি রকেটকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাধা দিয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী রাফাহর পূর্বাঞ্চল খালি করে তারা সেখানে ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনো বড় আকারের অভিযানের ঘোষণা না দিলেও ইসরাইল এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিরোধিতাকে অস্বীকার করে এবং ট্যাংক ও সেনা নিয়ে রাফাহতে প্রবেশ করে, মিশরীয় সীমান্তে মূল ক্রসিং দখল করে। নতুন করে রাফাহর মধ্যাঞ্চলও খালি করার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে, আইডিএফ জানিয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়াতেও হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা। ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, হামাস জাবালিয়াতে জড়ো হচ্ছে এমন গোয়েন্দা খবরেই তারা সেখানে বিমান ও গোলা হামলা চালিয়েছে। জাবালিয়াতে হামাসের ৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে। এতে কয়েকজন হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, রাফাহ শহরে তারা হামাসের বেশি কয়েকটি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে রকেট লঞ্চার উদ্ধার করে ধ্বংস করেছে। গাজা শহরের জেইতুন আশেপাশে হামাসের সাথে লড়াই চলছে। আইডিএফ বলছে, জেইতুনে মুখোমুখি যুদ্ধ হচ্ছে। বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন বন্দুকধারী নিহত হয়েছে। হামাসের অবকাঠামোর বিরুদ্ধেও হামলা চালানো হয়েছে।
শুক্রবার গাজা উপত্যকা জুড়ে ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে জেইতুনে চার ইসরাইলি সেন্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। বিস্ফোরক বোঝাই একটি ডিভাইসের বিস্ফোরণে সেনারা হতাহত হয়। এছাড়া ডিসেম্বরের পর প্রথমবার দক্ষিণের শহর বের্শেবাতে রকেট ছুড়েছে হামাস। ইসরাইলি ট্যাঙ্কগুলো শুক্রবার রাফাহ’র পূর্ব-পশ্চিমকে বিভক্ত করা একটি প্রধান সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। উপত্যকার উত্তরে ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে।
রাফাহ হল গাজা উপত্যকার সবচেয়ে দক্ষিণে ৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি শহর এবং রাফাহ ক্রসিং হলো মিশর আর গাজা ভূখণ্ডের মধ্যে একমাত্র সীমান্ত পারাপারের পথ। যেটা মিসরের সিনাই মরুভূমি ঘেঁষে অবস্থিত। মিশরীয় কর্তৃপক্ষ রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজাবাসীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
রাফাহ ক্রসিং ছাড়াও স্থলপথে গাজার আরও দুটি ক্রসিং রয়েছে। একটি রাফাহ ক্রসিং থেকে কিছুটা পূর্বে এগিয়ে গেলে ইসরায়েলের সাথে সীমান্ত পথ কেরেম শালম ক্রসিং। আরেকটি ক্রসিং হল একদম উত্তরের বেইত হানুন ক্রসিং। এছাড়া গাজার সাথে ইসরাইলের আরও চারটি ক্রসিং থাকলেও সেগুলো বন্ধ রয়েছে।
হামাস ইসরাইলে হামলা চালানোর সময় থেকেই ইসরাইলের সাথে গাজার দুটি ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা থাকে শুধুমাত্র রাফাহ ক্রসিং। উপকূলও ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সমুদ্রপথে এই অঞ্চল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব না। গাজার বিমানবন্দরও দুই যুগ আগে ধ্বংস করে দেয় ইসরাইল।