ইকোনোমিক ডেস্কঃ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার (২৫ জুন)। দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে অর্থনৈতিক নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। এই সুবিধা পাবে পদ্মা পারের জেলা রাজবাড়ীও। যদিও ঢাকা যেতে এই জেলার মানুষ পদ্মা সেতু পার হবে না। তবুও সেতু চালু হলে এ জেলার নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
রাজবাড়ীর চারটি উপজেলা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। পাংশা, কালুখালি, রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা। দেশের অন্যতম নৌরুট দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় অবস্থিত। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহন এই দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুট পার হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে।
গুগল ম্যাপের তথ্য মতে, রাজবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে ঢাকা গাবতলীর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব ১০৮ কিলোমিটার। আর রাজবাড়ী থেকে পদ্মা সেতুর দূরুত্ব ৯৫ কিলোমিটার। এজন্য রাজবাড়ী থেকে কোনো বাস পদ্মা সেতু পারি দিয়ে ঢাকা যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। পরিবহন মালিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটি চালু হলে নানা সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হবে রাজবাড়ীর জন্য।
কৃষি প্রধান রাজবাড়ীতে ব্যক্তি উদ্যোগে মোট ছয়টি পাটকল গড়ে উঠেছে। এছাড়া তেমন কোনো শিল্প-প্রতিষ্ঠান নেই। রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরীতেও উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্প-প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়া রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা দেশের মধ্যে পোল্ট্রি খামারের জন্য বিখ্যাত। গোয়ালন্দে ২৩টি মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছে, পদ্মা সেতু চালু হলে রাজবাড়ীতে রপ্তানি যোগ্য আরও অনেক শিল্প-কারখানা স্থাপিত হবে। কারণ, তখন রাজবাড়ী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে কোনো পরিবহন ঢাকা যেতে গেলে দীর্ঘ সময় দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। সারা বছর নানা কারণে দৌলতদিয়া ঘাটে দুর্ভোগ লেগেই থাকে। ফলে ফেরি পার হতে যাত্রীবাহী বাসগুলোকে অনেক সময় সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলোকে এই অপেক্ষা অনেক সময় দুই থেকে তিন দিনও করতে হয়। ফলে ব্যবসায়ীক লোকসান শুরু এখান থেকেই। তবে সেতুটি চালু হলে এই সমস্যা থাকবে না।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছে, পদ্মা সেতু চালু হলে দৌলতদিয়া ঘাটের দুর্ভোগ কমবে। সহজে এ ঘাট দিয়ে পার হওয়া যাবে।
রাজবাড়ী আরডিএস বিডার্সের মালিক মো. সামিউল হাসান কাওসার বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের রাজবাড়ীতে অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। কারণ, আমাদের বড় সমস্যা ছিল ঘাট। দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে পারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। সেতুটি চালু হলে ঘাটের ভোগান্তি বন্ধ হবে বলে আশা করছি। একই সঙ্গে রাজবাড়ীতে তখন নতুন শিল্প-প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো হবে। তখন আমাদের জেলায় রপ্তানি যোগ্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। সব মিলিয়ে সেতুটি চালু হলে আমাদের অঞ্চলেও ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।
সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক গবেষক বাবু মল্লিক বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করছে। সেতু চালু হলে ট্রেন যোগাযোগ আরও বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীক একটা বড় পরিবর্তন আসবে এই জেলায়।
রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান বলেন, আমাদের বাস ঢাকা যেতে পদ্মা সেতু পার হবে না। কিন্তু আমাদের যে ভোগান্তি সেটি থাকবে না। কারণ, দৌলতদিয়া ঘাটের ভোগান্তি শেষ হবে পদ্মা সেতুর কারণে। এটিই আমাদের বড় পাওয়া। আবার বর্তমানে রাজবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ আর চট্টগ্রাম যাবার কোনো বাস নেই। কিন্তু এ জেলা থেকে ব্যবসায়ীক কাজে প্রতিদিন অনেক মানুষকে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম যেতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে তখন এ দুই রুটে সরাসরি বাস চালু হবে।