রাজধানী ডেস্ক: রাজধানীতে দ্রুতই সুপেয় পানির ঘাটতি দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান গণমাধ্যমকে বলেন, সারা দেশেই কমবেশি পানির স্তর নিচে নামছে। আমরা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছি, ঢাকায় প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে।
পানির প্রাথমিক ও মূল্যবান উৎস ভূগর্ভস্থ পানি। অযৌক্তিক আহরণ ও মানব সৃষ্ট দূষণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকায় এ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সার্ফেস ওয়াটারের দূষণ কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির এক্সট্রাকশন কমাতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির ম্যাপিং করতে হবে এবং তার ফলাফল জনগণকে জানাতে হবে। শিল্পকারখানাগুলোকে পানি শোধনে বাধ্য করতে হবে। পুকুর-নদীসহ সব জলাশয় ফিরিয়ে আনতে হবে।
জানা গেছে, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। সুপেয় পানির চাহিদার শতকরা ৭৮ শতাংশ গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করছে ঢাকা ওয়াসা। ১৯৭০ সালে ৪৯টি গভীর নলকূপ ছিল ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে। এখন ৯০০টি নলকূপ ব্যবহার হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন উজাড়, শিল্প, কৃষি ও পশুপালন, পয়োনিষ্কাশন, তেল দূষণ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, রোগ-জীবাণু, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ এসব বিভিন্ন কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পানি দিবস ২০২২ উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। বিশ্ব পানি দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘ভূগর্ভস্থ পানি : অদৃশ্য সম্পদ, দৃশ্যমান প্রভাব।’
দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, নদীমাতৃক কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও সামগ্রিক উন্নয়নে সঠিক ও পরিকল্পিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অপরিসীম।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালন করতে যাচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশে ফসল উৎপাদন, সেচ ও গৃহস্থালি কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটির নিচে পানির আধার সুরক্ষা ও পানির গুণাগুণ বজায় রাখতে ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ পানির সমন্বিত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙন রোধ, ভূমি পুনরুদ্ধার, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে যা দেশের আপামর জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত-সহিষ্ণু ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন করেছে। প্রতি বছর এ দিবসে মিঠাপানির গুরুত্বের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এসডিজি-৬ অর্জনকে গতিশীল করার প্রয়াস নেওয়া হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই এসডিজি-৬ এর লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দুই বিলিয়ন মানুষ এখনও নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে রয়েছে, তিন দশমিক ছয় বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে আছে এবং দুই দশমিক তিন বিলিয়ন মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। যদিও ভূগর্ভস্থ পানি দৃশ্যমান নয়, কিন্তু এর প্রভাব সর্বত্র বিদ্যমান। ভূগর্ভস্থ পানি আমাদের তরল মিঠাপানির সবচেয়ে বড় উৎস। ভূগর্ভস্থ পানি আমাদের জন্য পানীয় জল সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, কৃষিকাজ, শিল্প ও বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখে।