রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট দেওয়ার পর আঙুলে দেওয়া কালি উঠে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভোটার। এ বিষয়ে প্রথম অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবন কেন্দ্রের ভোটাররা।
ওই কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর শিক্ষার্থী আবু আল হেলাল বলেন, ‘ঘষা দিলে কালি উঠে যাচ্ছে। পানি দিয়ে ঘষা দিলেই উঠে যাবে।’
ভোট দিয়ে বেরিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরান বলেন, ‘কালিটা উঠে যাচ্ছে। এটা পার্মানেন্ট হলে ভালো হতো। যদিও ভোট জালিয়াতির সুযোগ কম, তারপরও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার ছিল। সবচেয়ে ভালো কালি আনা দরকার ছিল। আমরা জেনেছি, কালিটি আমদানি করা হয়েছে।’ তবে নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য, বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভোট দিতে হচ্ছে। তাই জালিয়াতির সুযোগ নেই।
একই কেন্দ্রে ভোট দেন ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা। তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী অমোচনীয় কালির ব্যাপারে অভিযোগ করছেন। এটা মুছে যাচ্ছে। এটা মুছে যাওয়ার কথা ছিল না। আমরা এ ব্যাপারে কমিশনকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবনের শহীদ জিয়াউর হলের কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা ভেরিফাই (যাচাই) করব। কালি উঠে যায় কি না, চেক করা হয়নি। এটা আমাদের দায়িত্ব না।’
এ বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি তা ধরেননি। তবে শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবন পরিদর্শনে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি লেভেলে চেক করা হচ্ছে। কালি হচ্ছে শেষ ধাপ।’ বিষয়টি তিনি নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, কালি শুকানোর আগেই ঘষা দিলে তা উঠে যেতে পারে। শুকানোর জন্য সময় দিলে আর উঠবে না। এটা পরীক্ষা করে দেখেছি, অন্তত এক-দুই মিনিট সময় দেওয়া হলে এই সমস্যা আর হবে না। এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে সিনেট ভবনে নির্বাচন কমিশন সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে অমোচনীয় কালির প্রসঙ্গ ওঠে। নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ তখন জানান, তাঁরা শুধু অমোচনীয় কালির ওপর নির্ভর করছেন না। তাঁরা থ্রিডি লেভেলের (ত্রিমাত্রিক পর্যায়) নিরাপত্তাব্যবস্থা রেখেছেন। যে শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র নিয়ে আসবেন, প্রথমে সেটির অথেনটিসিটি (সত্যতা) যাচাই করা হবে। প্রতি ভোটারের জন্য একটি ইউনিক আইডি দেওয়া হয়েছে, সেটিও যাচাই করা হবে। এরপর তাঁর ছবিযুক্ত ভোটার আইডি আছে। সেটি তাঁরা মিলিয়ে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করবেন। এ বিষয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ তৈরি হলে একটি বিশেষ গোপনীয় কিউআর কোডও আছে।
অমোচনীয় কালির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘আমরা আপনাদের এটুকু বলি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের মেজার নিয়েছে। আমরা অতি উন্নত মানের যে পার্মানেন্ট ইংক (অমোচনীয় কালি) যেটি আছে, সেটি আমরা আমদানি করেছি রাবি নির্বাচনকে সফল করার জন্য, যেন কোনো ধরনের প্রশ্ন না উঠতে পারে।’