ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, আজনিউজ২৪: রমযানের ত্রিশ দিনের শেষ দশদিন অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। রমযানের একটি বিশেষ আমল হচ্ছে সুন্নত ইতিকাফ। আর তা আদায় করার সময় এটি। রমযানের খায়র-বরকত লাভে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর লাভ করার সম্ভাবনাও বেশি। তাই নবীজী রমযানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করায় বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এজন্য রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ। সুতরাং আগে থেকে পরিকল্পনা করে আমরা ইতিকাফ করার চেষ্টা করব। তেমনি মহল্লার মসজিদে যেন ইতিকাফ হয় সে বিষয়ে আগে থেকে আলোচনা করব এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করব।
নবীজী সর্বদা রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন
নবীজী প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتّى تَوَفّاهُ اللهُ عَزّ وَجَلّ، ثُمّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। নবীজীর পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭২; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬
হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন
كَانَ يَعْرِضُ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ القُرْآنَ كُلّ عَامٍ مَرّةً، فَعَرَضَ عَلَيْهِ مَرّتَيْنِ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ، وَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلّ عَامٍ عَشْرًا، فَاعْتَكَفَ عِشْرِينَ فِي العَامِ الّذِي قُبِضَ فِيهِ.
জিবরীল প্রতি বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার কুরআন শোনাতেন। কিন্তু যে বছর তাঁর ওফাত হয় সে বছর দুই বার শোনান।নবীজী প্রতি বছর দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৯৯৮, ২০৪৪
লাইলাতুল কদর প্রাপ্তিতে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম
পূর্বে যেমনটি উল্লেখ হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন। কদরের খায়র ও বরকত লাভ করার ক্ষেত্রে রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফের গুরুত্ব অনেক। ইতিকাফকারী অন্যান্য আমল করতে না পারলেও শুধু মসজিদে অবস্থান করাটাই একটা বড় আমল। সে যতক্ষণ মসজিদে থাকবে ততক্ষণ তার সওয়াব লেখা হতে থাকবে। আর অন্যান্য আমলের জন্য তো ভিন্ন সওয়াব আছেই। তাই শুধু মসজিদে অবস্থান করার মাধ্যমেই সে সহজে কদরের ফযীলত লাভ করতে পারছে।
সুন্নত ইতিকাফ সম্ভব না হলে দু-এক দিনের জন্য তো ইতিকাফ করা যায়
কর্ম-ব্যস্ততা কিংবা হিম্মতের কমতি বা অন্য কোনো ওযর থাকতে পারে। সুন্নত ইতিকাফ করা যাচ্ছে না। তাই বলে যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকুও করব না এমনটি নয়। পূর্ণ দশ দিন সুন্নত ইতিকাফ করতে না পারলে নফল হিসাবে যে যতটুকু পারি ততটুকুই আল্লাহর ঘরে অবস্থান করি। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন। তাতেও অনেক ফায়দা। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে ফারেগ হয়ে কমপক্ষে বেজোড় রাতগুলোতে নফল ইতিকাফের নিয়তে যদি মসজিদে অবস্থান করা হয় তবুও তো কদরের রহমত-বরকত লাভ করার আশা করা যায়। তাই পুরো সময় না পারলেও যে যতটুকু পারি ততটুকু সময় ইতিকাফ করি।
নারীরাও ঘরে ইতিকাফ করতে পারেন
যেসকল বোনের ইতিকাফের জন্য ফারেগ হওয়ার সুযোগ রয়েছে তারাও ইতিকাফ করতে পারেন। স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি নিয়ে ইতিকাফে বসুন। বাড়িতে নামায-ঘর থাকলে সেখানে বসতে পারেন। নামাযের জন্য নির্ধারিত কোনো জায়গা না থাকলে কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে সেখানে ইতিকাফের জন্য বসতে পারেন। এভাবে মা-বোনরাও ইতিকাফ ও কদরের ফযীলত লাভ করতে পারেন।
আয়েশা রা. বলেন
أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتّى تَوَفّاهُ اللهُ عَزّ وَجَلّ، ثُمّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।নবীজীর পর তাঁর স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭২; সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৬
শেষ ১০ দিনের আরেক মহামূল্যবান আমল হলো ‘ইতিকাফ’ তথা ইবাদত-বন্দেগির নিমিত্তে নিয়ত করে মসজিদে অবস্থান নেয়া। কুরআন যে ইবাদতের কথা উদ্ধৃত করেছে। এটি এমন গুরুত্বপূর্ণ আমল যে আল্লাহর রাসূল সা. হজরত উমর রা.-কে জাহিলি যুগের ইতিকাফের মানত ইসলাম গ্রহণের পর পূরণ করতে বলেছিলেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা রা.-এর বর্ণনায় এসেছে, নবী সা. ইন্তেকাল অবধি প্রতি বছরই ইতিকাফ থেকেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সহধর্মিণীরাও ইতিকাফ পালন করতেন। (বুখারি, হাদিস-২০২৬; মুসলিম, হাদিস-১১৭২)
আসুন, গোটা রমজান সবিশেষ শেষ দশকের প্রতিটি দিন সিয়ামে আর রজনীগুলো কিয়াম তথা তাহাজ্জুদ, জিকির-আজকার দিয়ে কাটাই, যাতে আল্লাহর মাগফিরাতসহ সন্তুষ্টি অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হয়ে জান্নাত লাভ করতে পারি। আমিন।
লেখক : মুফতি আবু উবাইদা জামি, বায়তুন নূর জামে মসজিদ, পূর্ব নাখালপাড়া, তেজগাঁও