ইসলামের ইতিহাসে একজন নারী সাহাবীর ঘর থেকেই শুরু হয়েছিল মহান মিরাজের সফর। শুধু তাই নয়, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেছেন তিনি, এমনকি ৪৬টি হাদিস বর্ণনার গৌরবও রয়েছে তার ঝুলিতে। ইতিহাসে তিনি পরিচিত উম্মু হানি (রা.) নামে। নবীজীর প্রিয় এই নারী সাহাবীর জীবন-অংশের এক অনন্য বর্ণনা দিয়েছেন সৈয়দ নওশাদ।
নারী সাহাবী উম্মু হানি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা-এর আসল নাম ফাখতা (মতান্তরে হিন্দ)। তিনি ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আবু তালিব ও চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ-এর কন্যা।
তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা বা মিরাজের সফর তার ঘর থেকেই শুরু হয়। উম্মু হানি বলেন,
“মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজ আদায় করে আমার ঘরে ঘুমান। আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি। ফজরের আগে তিনি আমাদের ঘুম থেকে জাগান এবং নামাজ শেষে আমাকে মিরাজের ঘটনা শোনান। আমি তখন তাঁকে বলি, আপনি দয়া করে এ কথা কারো কাছে বলবেন না, তারা আপনাকে বিশ্বাস করবে না এবং কষ্ট দেবে। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেন না, বরং বাড়ি থেকে বের হয়ে সবাইকে মিরাজের ঘটনা জানালেন।”
মক্কা বিজয়ের সময়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার উম্মু হানির ঘরে গেলে তিনি নবীজীকে শরবত পান করান। নবীজী শরবত খেয়ে বাকি অংশ তার দিকে বাড়িয়ে দেন। উম্মু হানি সেদিন নফল রোজা রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি রোজা ভেঙে সেই শরবত পান করেন এবং বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে লাগা শরবত পান করার সুযোগ আমি কখনও হাতছাড়া করতে পারি না।”
এই মহান নারী সাহাবীর সৌভাগ্য ছিল, স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে খাবার চেয়েছেন। একদিন নবীজী বলেন, “তোমার কাছে কি কোনো খাবার আছে?”
উম্মু হানি জবাব দেন,“কিছু শুকনো রুটির টুকরো ছাড়া কিছুই নেই। সেগুলো আপনার সামনে দিতে লজ্জা পাচ্ছি।”
নবীজী বলেন, “সেগুলোই নিয়ে এসো।”
তিনি সেই রুটির টুকরোগুলো নবীজীর সামনে পরিবেশন করলে, প্রিয় নবী তাতে লবণ ও পানি মিশিয়ে তা খেতে শুরু করেন। এরপর বলেন, “কোন তরকারি আছে?”
উম্মু হানি বলেন, “সিরকা ছাড়া কিছুই নেই।”
নবীজী তা আনতে বলেন এবং সিরকা মিশিয়ে রুটি খেয়ে আল্লাহর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “সিরকা অতি উত্তম তরকারি। হে উম্মু হানি, যে ঘরে সিরকা থাকে, সে ঘর কখনো অভাবী হয় না।