আবহাওয়ার পরিবর্তন ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করবে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোর নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি দেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে। সারাদেশে ভারি বৃষ্টির সঙ্গে হালকা দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
শুধু আমাদের দেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দেখা দিয়েছে সিত্রাংয়ের প্রভাব। এরই মধ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ এর আগে এমন অনেক বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছিল। ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সহ লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যা, খরা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে আছে জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোনসহ আরও নানা দুর্যোগ। এসবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ।
দেশের ইতিহাসে কিছু প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:-
১৮৭৬: দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ
১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বরিশালের বাকেরগঞ্জে। সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল। ভয়াবহ ঐ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ।
১৯৭০ সাল: ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ
বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে। ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন। জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল প্রায় ১০-৩৩ ফুট। ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, চর বোরহানউদ্দিন, চর তজুমদ্দিন, মাইজদী ও হরিণঘাটায়। ঐ ঝড়ে প্রাণ হারায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে এক লাখই ছিলেন জেলে।
১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়
বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, যেটি ২৯ এপ্রিল ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হেনেছিল। সমুদ্রের পানির উচ্চতা পৌঁছে গিয়েছিল সাত মিটার উঁচুতে। এতে প্রাণ হারিয়েছিল উপকূলের অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।
১৮৯৭ সালে চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড়
এই ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় গ্রামাঞ্চল দিয়ে বয়ে যায় এবং প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। সে বছর দেশে কলেরা মহামারিতে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যুর পরপরই ঘূর্ণিঝড় আবারও লাখো প্রাণ কেড়ে নেয়।
২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে সিডর। শ্রীলংকান শব্দ সিডরের অর্থ চোখ। এসময়ে এর বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কি.মি. এবং ঘণ্টায় ৩০৫ কি.মি.বেগে দমকা হাওয়া বইছিল। একারণে সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী একে ক্যাটেগরি-৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আখ্যা দেওয়া হয়। রেডক্রসের হিসাবে সিডরে ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে বলা হলেও সরকারিভাবে এই হিসাব ৬ হাজার।
২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা
২০০৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা, যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর ব্যাস ছিলো প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে।আইলার প্রভাবে নিঝুম দ্বীপ এলাকার সকল পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়ে। জলোচ্ছ্বাস ও লোনা পানির প্রভাবে, গবাদি পশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ গরু ও ১ হাজার ৫০০ ছাগল মারা যায়। কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রাণ হারান ১৯৩ জন মানুষ।