ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা যুদ্ধের এক বছর আজ। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ইতিহাসের স্মরণকালের হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় ১২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
ওই হামলার পর ইসরায়েলের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি এবং নিরাপত্তা বলয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন ওঠে। তড়িগড়ি করে নিজেদের আত্মরক্ষা এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে হামাসের ওপর সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তেল আবিব। হামাসকে নির্মূল করতে গত এক বছর ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহতের সংখ্যা এক লাখের বেশি। কিন্তু এ অবস্থার মধ্যে হামাসকে ইসরায়েল পুরোপুরি নির্মূলও করতে পারেনি। এছাড়া হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফলপ্রসূ কিছু অর্জন করেছেন তাও নয়। বরং তিনি তার দেশের নাগরিকদের কাছে সমর্থন হারিয়েছেন।
এই যখন অবস্থা তখন হামাসের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, এ যুদ্ধে হামাসকে যদি নিমূর্ল করাও হয় তাহলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলা ৭৫ বছরের সংকট শেষ হবে না। গতকাল রোববার (৬ অক্টোবর) আল আরাবিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি একথা বলেন।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান বাসেম নাঈম বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা ছিল ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি প্রতিরক্ষা আইন। কারণ ইসরায়েল সব সময়ই কূটনৈতিক সমাধানকে পাত্তা দেয়নি। ফলে হামাসের যুদ্ধে জড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প পথ ছিল না।
চলমান গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ইসরায়েলে হামলার প্রতিবাদেই তারা গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করেছে। এটা শুধু হামাসের বিরুদ্ধে হামলা নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, হামাসকে যদি ইসরায়েল পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে সমর্থ হয়, তাহলে ফিলিস্তিনের নতুন একটি প্রজন্ম আবারও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। সেটা আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই হবে। কারণ আমরা এমন প্রজন্ম তৈরি করেছি যে তারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করবে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান নিয়ে হাতাশা প্রকাশ করেন নাঈম। তিনি বলেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতাকে ব্যাপক সমালোচনা করে।
নাঈম বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলিদের জিম্মি করে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য দিল তাদের কারাগারে বন্দি হাজার হাজার নিরাপরাধ ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে আনা। এ বিষয়ে আমরা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি মাধ্যমে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে ইসরায়েলকে প্রস্তাবে দিয়েছি। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করেছে।
জিম্মিদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলার ফলে সাধারণ মানুষ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদেরও সেই অবস্থা হয়েছে।