মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি হলো ঈদ-উল-আযহা। যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং ত্যাগের মহিমায় সারা দেশে এবারের ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এটি কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের আদর্শে উদ্ভাসিত করে আসছে।
শনিবার সকালে সারাদেশে মুসল্লিরা নিজ নিজ এলাকার ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদ-উল-আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। খতিবগণ খুতবায় কোরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
দেশবাসীকে ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নতমানের বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করছেন। ঈদ-উল-আযহার সঙ্গে পবিত্র হজের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হয়। এদিন সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্বের বহু দেশে শুক্রবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।
ঈদ-উল-আযহা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-এর ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে উদযাপন করা হয়। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি ছিল একটি পরীক্ষা। তিনি পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
ইসলামে বর্ণিত আছে, কোরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে চোখ বাঁধা অবস্থায় তিনি ইসমাইল (আ.)-কে জবেহ করেন। কিন্তু চোখ খুলে দেখেন, তার প্রিয় পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি হয়ে গেছে, যেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ছিল।
এই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে হযরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামে। সে অনুযায়ী সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
ঈদের পরবর্তী দু’দিন অর্থাৎ আগামী সোমবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। কোরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের মাঝে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করতে হয় এবং এক ভাগ নিজের জন্য রাখা যায়।
এদিকে ঈদ-উল-আযহার ছুটি ৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি উপভোগ করবেন।
এর আগে, গত ৬ মে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্বাহী আদেশে ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ঈদের আগে দুই শনিবার সরকারি অফিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এবারের ঈদকে ঘিরে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদের ছুটিতে দেশের সব সিএনজি স্টেশন ও ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাত্রী হয়রানি বা ভোগান্তির অভিযোগ পেলেই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।