দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক যতই শীতল হোক, খেলার মাঠে অন্তত তা ভুলে গিয়ে উভয় পক্ষ সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করবে—এমনটাই কাম্য।
আগা সালমান-শাহিন আফ্রিদিরা হয়তো সেটা ভেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন সূর্যকুমার যাদব ও শিবম দুবে সৌজন্যতার খাতিরে হলেও তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাবেন। এরপর ডাগআউটে থাকা অন্যরাও করমর্দন করবেন।
কিন্তু দুবাইয়ে কাল এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতকে জেতানোর পর সূর্যকুমার ও দুবে যা করেছেন, তা ক্রিকেটীয় চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মতোই। ম্যাচ শেষে পাকিস্তানিদের সঙ্গে করমর্দন দূরে থাক, তাঁদের দিকে সূর্য ও দুবে ফিরেও তাকাননি। সোজা হাঁটা দিয়েছেন ড্রেসিংরুমের দিকে।
এরপর যা ঘটেছে, তা আরও বিস্ময়কর। সূর্য ও দুবে ড্রেসিংরুমে ঢুকতেই কেউ একজন দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন, যেন পাকিস্তানের কেউ ভারতীয়দের সঙ্গে দেখা করতে না পারেন!
ভারতীয়দের এমন আচরণের প্রতিবাদে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত না মেলানোর ব্যাখ্যায় ভারত জানিয়েছে, পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের হামলায় হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতেই এমনটা করেছে তারা। শুধু ম্যাচ শেষেই নয়, টসের সময়ও পাকিস্তান অধিনায়ক আগা সালমানের সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার। নিজের ৩৫তম জন্মদিনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারানোর পর ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে সূর্যই এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। সূর্যকুমার বলেছেন, ‘দেখুন, আমি মনে করি জীবনের কিছু বিষয় খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার চেয়েও বড়। আমাদের সরকার ও বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড)—আমরা সবাই একসঙ্গে এই সিদ্ধান্ত (পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত না মেলানো) নিয়েছিলাম। আমরা এখানে ওদের বিপক্ষে শুধু খেলতে এসেছি এবং উচিত জবাব দিয়েছি।’
সূর্যকুমার আরও বলেন, ‘আমি পুরস্কার বিতরণীতেও বলেছি যে আমরা পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় সব ভুক্তভোগীর পাশে আছি। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সংহতি আছে। আর যেমনটা বলেছি, এই জয় আমরা উৎসর্গ করছি আমাদের সাহসী সেনাদের, যাঁরা অপারেশন সিঁদুরে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণা জোগান। সুযোগ পেলে আমরাও চাই তাঁদের অনুপ্রেরণা দিতে।’
ভারতের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধান কোচ মাইক হেসন। ভারতীয়রা হাত না মেলানোর প্রতিবাদেই পাকিস্তান দল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
হেসন বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষে হাত মেলানোর জন্য আমরা সবাই প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ সেটা করেনি বলে হতাশ হয়েছি। হাত মেলানোর জন্য আমরা তাদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছিল। এভাবে খেলা শেষ হওয়া হতাশাজনক ছিল। আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতেও হতাশ হয়েছি। তবে আমরা হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল কয়েকজন বন্দুকধারী নিরীহ মানুষদের ওপর হামলা চালায়। এতে ২৫ ভারতীয়সহ ২৬ জন প্রাণ হারান, আহত হন ২০ জন। এ ঘটনায় পাকিস্তানের মদদ আছে বলে মনে করে ভারত সরকার। হত্যাকাণ্ডের দায়ও স্বীকার করে বিদ্রোহী গ্রুপ দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যাদের পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার একটি শাখা মনে করে ভারত সরকার।
এ ঘটনার জেরে গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত বেধে যায়। সেই সময় বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা আর পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে চায় না।
কদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত আবারও বড় টুর্নামেন্টে খেলতে রাজি হলেও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ এখনো গলেনি।