প্রতিদিনের অপরিহার্য মোবাইল ফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; শিক্ষা, বিনোদন এবং জরুরি তথ্য আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারও বটে। আর তাই এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
মোবাইল ফোন মূলত রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করে। এতে ব্যবহৃত হয় সেলুলার নেটওয়ার্ক, যেখানে প্রতিটি মোবাইল ফোন সিগনাল পাঠায় এবং তা গ্রহণ করে নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ার। তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন মডিউল—জিএসএম, সিডিএমএ, 3জি, 4জি, 5জি, ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই, জিপিএস ইত্যাদি।
এসব প্রযুক্তি মাইক্রোওয়েভ ও নিম্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করে। এর ফলে যেমন তৈরি হয়েছে যোগাযোগের সহজতা, ইন্টারনেট সুবিধা, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন— তেমনি তৈরি হয়েছে কিছু নতুন প্রশ্ন: মোবাইল একটি আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ?
মোবাইল ফোনের স্বাস্থ্যঝুঁকি
ছোট্ট এই গ্যাজেটটির যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু নেতিবাচক দিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে—মোবাইল ফোন কিভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়?
চোখের ক্ষতি, মাথা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা ও অবসাদ—অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে এই সমস্যাগুলি দেখা দেয়। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন, দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে—যদিও তা এখনও বিতর্কিত।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু তাই নয়—ফেসবুক, টিকটক, গেম ইত্যাদির কারণে অনেকে মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে হ্যাকিং, ডাটা চুরি, প্রতারণা ইত্যাদির পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
আন্তর্জাতিক গবেষণায় উদ্বেগ
২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের অধীনস্থ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডসকে “Class 2B – Possibly Carcinogenic to Humans” হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
অন্যদিকে, MIT ও UCL-এর একটি ভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে—দিনে সাত ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম শিশুদের নিউরোডেভেলপমেন্টে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সমাধান কী?
স্বাস্থ্যকর অলটাইম, হালিকম—সবসময় অলটাইম হেলদি লাইফ। তাহলে এর সমাধান কোথায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন আনলে তবেই কেবল এর সমাধান সম্ভব:
দিনে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মোবাইল ব্যবহার না করা
রাতে মোবাইল কম ব্যবহার করা
শিশুদের হাতে মোবাইল না দিয়ে বই, খেলাধুলা বা সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দেওয়া
ব্লুলাইট ফিল্টার ব্যবহার করা
মোবাইল থেকে ১ মিটার দূরত্বে ঘুমানো
প্রয়োজনে মোবাইল ডেটা বা ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখা
মোবাইল ফোন আধুনিক জীবনের অপরিহার্য যন্ত্র। এর সঠিক ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করে তুলছে। তবে সচেতনতা ছাড়া এই প্রযুক্তি আমাদের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রয়োজন—সঠিক দিকনির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।
শেখ ফরিদ