ওষুধটা কি পাওয়া গেল? কুশল মেন্ডিস আর পাতুম নিশাঙ্কাকে আটকানোর ওষুধ।
শ্রীলঙ্কায় এবার বাংলাদেশের বোলাদের চরম অশান্তিতে রেখেছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। বোলারদের অশান্তি মানে দলেরও অশান্তি। ক্যান্ডির প্রথম টি–টোয়েন্টির কথাই ধরুন। বাংলাদেশের ১৫৪ রানের জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার নিশাঙ্কা ও কুশলের বেধড়ক পিটুনিতে ৪.৪ ওভারেই শ্রীলঙ্কা করে ফেলল ৭৮ রান। এরপর ১৬ বলে ৪২ করে নিশাঙ্কা ফিরে গেলেও ৫১ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে আউট হওয়ার আগেই দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান কুশল, হলেন ম্যাচসেরা।
গল টেস্টটা বাদ দিলে ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক যাচ্ছে কুশল মেন্ডিসের সময়। গলে এক ইনিংস ব্যাটিং করে করেছেন ৫ রান, কলম্বোতে ৮৪। এর পর থেকে কুশলকে আর থামানোই যাচ্ছে না। পরের ইনিংসগুলো দেখুন। তিন ওয়ানডেতে ৪৫, ৫৬ ও ১২৪। ক্যান্ডির প্রথম টি–টোয়েন্টিতে তো ওই ৫১ বলে ৭৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। টেস্টে সাতে ব্যাট করলেও সাদা বলের ক্রিকেটে কুশল ওপরেই খেলেন। অন্যদিকে নিশাঙ্কা তিন সংস্করণেই ওপেনার। গল, কলম্বো দুই টেস্টেই করেছেন দুটি সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে ভালো সময় (০, ৫, ৩৫) না কাটলেও প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ১৬ বলে ৪২ রানের ঝড়। টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য এ দুই ব্যাটসম্যানকে আটকানোর চ্যালেঞ্জটা বেশি। কারণ, এই সংস্করণে ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শুরুই করছেন তাঁরা একসঙ্গে।
টি–টোয়েন্টি সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতির ‘সিলেবাসে’ তাই গুরুত্বপূর্ণ দুটি অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ডাম্বুলার দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টির আগে মাঠের অনুশীলনের সুযোগটা শুধু কাল রাতেই মিললেও দল সূত্রে জানা গেছে, নিশাঙ্কা আর কুশলকে নিয়ে একাধিক হোমওয়ার্ক হয়েছে হোটেলের মিটিং রুমে। প্রতিপক্ষের বিশেষ কোনো ব্যাটসম্যান বা বোলার ভালো ফর্মে থাকলে সব ম্যাচের আগেই তাঁদের নিয়ে আলাদা কাজ হয় প্রতিটি দলে। এই সিরিজে যেমন বাংলাদেশের জন্য শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান পাতুম নিশাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিস।
পেসার, স্পিনারদের আলাদা করে; আবার প্রত্যেক বোলারকেও আলাদা করে দেখানো হয়েছে নিশাঙ্কা–কুশল কে কোন ধরনের বোলিং খেলতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, কার কোন ধরনের বোলিংয়ে তাঁদের অস্বস্তি। মাঠের অনুশীলনের বাইরে বাংলাদেশের বোলারদের ‘থিওরি’ ক্লাসের প্রায় পুরোটাই হয়েছে এই দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে।
পাল্লেকেলের মতো ডাম্বুলার রণগিরি স্টেডিয়ামের উইকেটও ব্যাটিংবান্ধব। আগে ব্যাটিং করলে এখানে ১৭০–১৮০ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। আর শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাটিংয়ে গেলে লক্ষ্য থাকবে তাদের ১৫০–১৬০ এর মধ্যে আটকানো।
সেটা করতে চাইলে নিশাঙ্কা–কুশলের শুরুটা যত দ্রুত মুড়ে দেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। নইলে একবার তাঁদের ব্যাটে ঝড় উঠে গেলে সেই ঝড় কোথায় গিয়ে থামবে, কে জানে!
শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষেই নন অবশ্য, টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটেই নিশাঙ্কা–কুশল জুটি শ্রীলঙ্কার অন্যতম ও নির্ভরযোগ্য শক্তি। শ্রীলঙ্কার প্রথম জুটি হিসেবে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১০০০ রান হয়ে গেছে তাঁদের। গত বছর ডিসেম্বরে মাউন্ট মঙ্গানুইতে তাঁদের ১২১ রানের জুটি টি–টোয়েন্টিতে আট বছরের মধ্যে ওপেনিংয়ে শ্রীলঙ্কার প্রথম শতরানের জুটি। সেই ধারা নিশাঙ্কা–কুশল ধরে রাখছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজেও।
ডাম্বুলায় আজ সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য তাই আবারও বড় পরীক্ষা হয়ে আসবেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ডাম্বুলার উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হলেও এখানকার একটু বড় মাঠ বোলারদের কিছুটা সাহায্য করতে পারে। তা ছাড়া মাঠের পাশের ইব্বানকাটুয়া লেক থেকে আসা বাতাসও কখনো কখনো এখানে বোলারদের জন্য বাড়তি সুবিধা উড়িয়ে আনে, বাতাসের বিপরীতে খেলা ব্যাটসম্যানদের শট অনেক সময় গতি হারায়। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের খেলায় হাওয়া–বাতাসে যদি বোলারদের জন্য কিছু থেকেও থাকে, সেটা আবার এমনি এমনি ব্যাটসম্যানদের আউট করে দেবে না। সুবিধাটা নিতে হবে বোলারদেরই। বাকিটা তো মিটিং রুমের প্রস্তুতি ক্লাসেই তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিশাঙ্কা–কুশলের ওষুধটা তাতে আবিষ্কার করা গেল কি না, তা বোঝা যাবে আজকের ম্যাচেই।