ইসরাইল–গাজা যুদ্ধের মাঝেই ঘটে গেল চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিস্ময়। মৃত্যুর মাত্র ২০ মিনিটের মাথায় প্রেমিকের শুক্রাণু উদ্ধার করতে ছুটে যান ইসরাইলি চিকিৎসক ডাঃ হাদাস লেভি। দেড় বছর পর সেই মৃত প্রেমিকের মাত্র ৯টি কার্যকরী শুক্রাণু ব্যবহার করে জন্ম নিল একটি পুত্রসন্তান। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে এই নজিরবিহীন ঘটনা।
গাজায় সামরিক অভিযানে মারা যান ক্যাপ্টেন নেতানেল সিলবার্গ। খবরটি পান তাঁর হবু স্ত্রী, ইসরাইলি শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ হাদাস লেভি। শোক সামলানোর সময়টুকুও ছিল না তাঁর হাতে। কারণ পোস্টমর্টেম স্পার্ম রিট্রিভাল (PSR) পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গেলে সময় অত্যন্ত কম।
ডাঃ লেভির ভাষায়, “এই শিশুটি আমার প্রতিরোধ, আমাদের বংশ রক্ষার জবাব।” সেই দৃঢ়তা নিয়েই তিনি দৌড় শুরু করেন। দশ ঘণ্টার সংগ্রাম: মৃতদেহ থেকে বাঁচিয়ে আনা হলো মাত্র ৯টি শুক্রাণু
জেরুজালেমের Hadassah Hospital–এ মৃত ক্যাপ্টেনের শুক্রাণু উদ্ধারের কাজ ছিল অত্যন্ত কঠিন। অক্সিজেনহীন পরিবেশে মৃত্যুর পর শুক্রাণুর কার্যকারিতা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
হাসপাতালের গবেষকরা প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে শুক্রাণুগুলো পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন। শেষে পাওয়া যায় মাত্র ৯টি কার্যকরী শুক্রাণু। চিকিৎসকদের মনেও সন্দেহ ছিল, এত কম সংখ্যক কোষ দিয়ে কি আদৌ গর্ভধারণ সম্ভব?
আরও বড় প্রশ্ন ছিল আইনি ও নৈতিকতা নিয়ে। নেতানেল এবং হাদাস লেভি তখনো বিবাহিত ছিলেন না। তাই মৃত প্রেমিকের শুক্রাণু ব্যবহারের অধিকার তাঁর আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
তবু সব বাধা পেরিয়ে IVF পদ্ধতির সাহায্যে ২০২৪ সালের অক্টোবরে গর্ভবতী হন লেভি। তিনি বলেন, “এটা যেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো একটা অলৌকিক ঘটনা।”
PSR প্রযুক্তির জন্ম গত শতাব্দীর ৮০-এর দশকে। ১৯৯৯ সালে প্রথম এই পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হয়।
এ প্রযুক্তিতে—
মৃত্যুর ২৪–৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ব্রেন ডেড বা সদ্য মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়
ত্বকের ভেতর দিয়ে সূচ ঢুকিয়ে এপিডিডাইমাল অ্যাসপিরেশন পদ্ধতিতে শুক্রাণু উত্তোলন করা হয়
পরে এগুলো হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হয়, ঠিক ফার্টিলিটি ক্লিনিকের মতো
ভবিষ্যতে IVF পদ্ধতিতে ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষেক ঘটিয়ে গর্ভধারণ করানো হয়
যদিও এ পদ্ধতি প্রযুক্তিগতভাবে খুব জটিল নয়, তবু অনেক দেশে এটি ঘিরে নৈতিক ও আইনি দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে।

