কোরআনের ২০তম সুরা তাহা মক্কায় অবতীর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরা, যার আয়াতসংখ্যা ১৩৫। এটি মূলত তাওহিদ (একত্ববাদ), রিসালাত (নবুয়ত), আখিরাত এবং আল্লাহর রহমত ও দয়াকে কেন্দ্র করে গঠিত। বিশেষভাবে, এই সুরায় হজরত মুসা (আ.)-এর জীবনের ঘটনাবলি গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে।
মুসা (আ.)-এর জন্ম ও সুরক্ষা
ফেরাউন তার সাম্রাজ্যে বনি ইসরাইলের নবজাতকদের হত্যা করার আদেশ জারি করেছিল (সুরা তাহা, আয়াত: ৩৯)।
এই কঠিন সময়ে মুসা (আ.)–এর মায়ের অন্তরে ওহি আল্লাহ দেন: ‘আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তাকে (মুসাকে) একটি কৌটায় রেখে নদীতে ভাসিয়ে দাও…’ (সুরা তাহা, আয়াত: ৩৯)
এভাবে মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের ঘরেই লালনপালনের জন্য পাঠানো হয়। আল্লাহ তাঁর প্রতিপালন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেই নিয়েছিলেন: ‘আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা বর্ষণ করেছি।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ৩৯)
এখানে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহর বিশেষ পরিকল্পনায়ই মুসা (আ.)-এর বেড়ে ওঠা শত্রুর প্রাসাদে হলেও নিরাপদ ছিল। আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ
বড় হয়ে মুসা (আ.) এক মিসরীয়কে হত্যা করে ফেলেন (সুরা তাহা, আয়াত: ৪০)। ভীত হয়ে মিসর ছেড়ে মাদায়ানের দিকে চলে যান। এ সময় আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেন: ‘আমি তোমাকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিলাম এবং তুমি বহু বছর মাদায়ানে অবস্থান করেছিলে।’
মাদায়ান থেকে ফেরার পথে তুর পাহাড়ের পাদদেশে মুসা (আ.) নবুয়ত লাভ করেন। এখানে আল্লাহ সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলেন: ‘আমি আল্লাহ, তোমার প্রতিপালক। তোমার জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুওয়ায় আছ।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ১২)
এটি ইসলামে মুসা (আ.)-কে ‘কালিমুল্লাহ’ (যিনি আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন) উপাধি দেওয়ার উৎস।
ফেরাউনের কাছে দাওয়াত
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে পাঠান দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে, তোমরা উভয়ে (মুসা ও হারুন) তার কাছে যাও এবং বলো, আমরা তোমার প্রতিপালকের রাসুল।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ৪৭)
ফেরাউন অহংকার দেখায় এবং মুসা (আ.)–কে মিথ্যাবাদী বলে। তবে মুসা (আ.) আল্লাহর দেওয়া নিদর্শন (লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া, হাত উজ্জ্বল হয়ে বের হওয়া) দেখান। (সুরা তাহা, আয়াত: ১৭-২৩)