এডুকেশন ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষা-২০১৮ইং অংশগ্রহনকরীদেরকে সরাসরি নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন আন্দোলনত শিক্ষকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে একত্রিত হয়ে টানা চতুর্থদিনেও অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন ৬১টি জেলা থেকে আগত হাজার হাজার মেধাবী চাকরী প্রার্থী। তাদের মূল দাবী প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষা-২০১৮ইং এ লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ এবং মৌখিক পরিক্ষায় অংশগ্রহনকরী সবাইকে যেন প্যানেল করে অবিলম্বে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করা হয়। তারা মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে এ বিষয়ে সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন- “মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবেনা।” আমরা সেই ঘোষণাটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ঘরে ঘরে চাকরী দানের যে প্রতিশ্রুতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন।
এই ৩৭ হাজার চাকুরী প্রার্থীকে প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দিলেই মমতাময়ী মায়ের সেই প্রতিশ্রুতি অনেকাংশে বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা মনেকরি। কারণ, এখানে দেশের ৬১ টি জেলার সব উপজেলার যোগ্য প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আবার আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে “শিক্ষার মূলভিত্তি” মনে করে ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন, যা ছিল শিক্ষিত জাতি ও দেশ গঠনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যার ফলশ্রæতিতে ১.৫ লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে তার আদর্শ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের জোড়ালো দাবী, তার পিতার মত যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রায় ৩৭ হাজার মৌখিক পরিক্ষায় অংশগ্রহনকারী বেকার এবং তাদের পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটাবেন বলে আমরা প্রত্যাশা রাখছি। মুজিব বর্ষের উপহার রূপ মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী সবার জন্য প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ চাই।
কারণ, একদিকে আমাদের পড়ালেখার সময় বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে চরম সেশন জট ছিল। অন্যদিকে সার্টিফিকেট পাওয়ার পর হাইকোর্ট হতে রীট জটিলতার কারণে ২০১৪-২০১৮ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের কোন বিজ্ঞপ্তি হয়নি। এমনকি ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত কোন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও হয়নি। যদিও বর্তমানে চরম শিক্ষক সংকট বিদ্যমান। অথচ আগে ৬ মাস পর পর সহকারী শি¶ক ও ২ বছর পর পর প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হতো। তাই আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।
এই সময়ের মধ্যে অনেকের সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হওয়ায় এটাই ছিল তাদের সর্বশেষ সুযোগ। এমনকি মেয়েদের জন্য এইচএসসি পাশে চাকুরীতে প্রবেশের এটা ইহল সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি, এরপর থেকে মেয়েরা স্নাতক পাশ ছাড়া আবেদন করতে পারবেন না। উক্ত নিয়োগে প্রাথমিক ভাবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অনেকে আবার অন্য চাকরীতে যোগদানের সুপারিশ পাচ্ছেন, ফলে অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করবেন না। আবার যথেষ্ঠ শূন্য পদের সংখ্যাও বিদ্যমান রয়েছে। জাতীয় সংসদের তথ্য মতে ডিসেম্বর ২০১৯ইং পর্যন্ত শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার এবং বর্তমানে তা প্রায় ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একটি নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে প্রায় দেড় থেকে ২ বছর লেগে যায় এছাড়াও পিটিআই, বিপিএড, মাতৃজনিত ছুটি, চিকিৎসা জনিত ছুটি ও বদলী জনিত কারণে সারা বছরেই প্রায় ২৫-৩০% পদ শূণ্যই থেকে যায়। ফলে তীব্র শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ৩৮তম বিসিএস, মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনএসআই সহ আরও বেশকিছু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগ পরিক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল অপে¶মান রয়েছে। এই ফলাফল গুলো হয়ে গেলে অনেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে চলে যাবেন যার কারণে আরও তীব্র শিক্ষক সংকট দেখা দিবে। তাই মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্যানেলের মাধ্যমে সবাইকে যোগদানের সু-ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা জোড়ালো হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্যানেলের মাধ্যমে শি¶ক নিয়োগ করলে নিয়োগ বাণিজ্য ও কালক্ষেপন বন্ধ হবে। এবং শূন্য পদের ভিত্তিতে সময় মতো উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াও সম্ভব হবে, যা বর্তমান সময়ের জন্য অপরিহার্য।
সর্বোপরি, আমরা শিক্ষিত বেকার, তাই এ কঠিন যন্ত্রণা ও অভিশাপ থেকে আমরা মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আপনার কাছে বেকারত্ব থেকে মুক্তি চাই।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শি¶ক নিয়োগ ২০১৮ইং এবারেই প্রথম সারাদেশ থেকে প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন তাদের মধ্য হতে ৫৫,২৯৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন যা মোট প্রার্থীর মাত্র ২.৩% ফলে তাদের যোগ্যতা নিয়ে কোন সংশয় নেই। তাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে শূন্য পদের ভিত্তিতে প্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ চাই।