ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমদ বলেন- মুক্তিযুদ্ধ তখনই জন্ম নেয়, যখন অন্যায়-অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এই মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সে এটাকে নিজের সফলতা বলে মনে করে। এরমধ্য দিয়ে তখন মানুষের প্রতিরোধের আকাঙ্খাও বাড়ে। এখান থেকে জম্ম নেয় মুক্তিযুদ্ধ। এখান থেকে গণঅভ্যুত্থান।
সোমবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে ১৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জার্মান দার্শনিক হেগেল -এর উক্তি টেনে এনে তানভীর আহমদ বলেন, সংঘাতের মাধ্যমেই সভ্যতার বিকাশ ঘটে। যখন ন্যায় ও অন্যায়ের সংঘর্ষ হয়। অন্যায় পরাভূত হয়। এর মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এরকমই সংঘর্ষের নাম মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থান ও জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান।
ঢাকা জেলা প্রশাসক আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে উদ্দেশ্য যুদ্ধ করেছে, যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। সমাজটা সুন্দর হবে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে, সমস্ত অন্যায় খতম হবে, কেউ কারো প্রতি অন্যায় করবে না। সমাজে আইনের শাসন থাকবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করবে। মিলে মিশে বসবাস করবে। তাদের সে চেতনা পূরণ হয়নি। আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধকে উপলক্ষ করে আমাদের মাঝে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা বাস্তবায়নে অনেক কাজ আমাদের বাকী রয়েছে। আজ এতো বছর পরও আমাদের শুনতে হচ্ছে, দ্রব্য মূল্য কেন আকাশ ছোঁয়া। সিন্ডিকেটের হাতে কেন সব কিছু জিম্মি। আইন শৃঙ্খলা অবস্থা কেন ভালো না। রাস্তা খাটের মধ্যে কেন যানজট। এ সমস্যাগুলো দূর করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, পৃথিবীর যত পরিবর্তন, যত ইতিহাস সবকিছুতেই ছাত্ররা জড়িত। জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্ররা জেগে উঠে বিজয় এনে দিয়েছে। গুম, খুন সব কিছুই জন্য তারা লড়াই করেছে। রক্তচক্ষুর বাইরে থেকে আপনারাও যুদ্ধে নেমেছিলেন। যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, আপনারা সজাগ হন। নতুন প্রজন্মকে সামনে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেব।
সহকারী কমিশনার নুসরাত নওশীন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা. ফুয়ারা খাতুন, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। বিজয় মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. উমর ফারুক।
এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়৷ পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হয়। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা নিতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বলেন, একাত্তরে কারণে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই দিনগুলোতে যদি সাধারণ জনগণ, ছাত্র জনতা ঝাপিয়ে না পড়তেন তাহলে আমাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হয়ে যেত। স্বাধীনতা পাওয়ার ৫৩ বছরে অনেক কিছু অর্জন করেছি। আবার অনেক কিছু করতে পারেনি। তবে যা অর্জিত হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে৷ তা নাহলে যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছে তারা শান্তি পাবেনা। এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে নেওয়ার জন্য এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। এই দেশটা কলুষিত করে ফেললে আমরাই খারাপ থাকব। আমাদের অতিলোভ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লুতফা হাসিন রোজী বলেন, শুধু কয়েকজন যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা পায়নি। এই সাড়ে সাত কোটি মানুষ যোদ্ধা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে, তবে মুক্তিযুদ্ধের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। গত ৫৩ বছর ধরে কোন কোনভাবে আমরা স্বৈরাচারের শিকার হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কখনোই শেষ হয় না। যেকোন ফরম্যাটে চলতে থাকে। আমরা শোষণহীন দেশ প্রত্যাশা করছি।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আয়োজনে এবারের মেলায় ২২টি স্টল বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, দপ্তর স্টল নিয়ে বসে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের স্টল থেকে বেলা ১১টার মধ্যেই বিক্রি শুরু হয়। অন্যরাও পণ্য ও সেবার পসরা নিয়ে বসে।