মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যে অবদানের জন্য কালি ও কলম পুরস্কার পেলেন লেখক ও গবেষক ফারজানা হক। তিনি গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘ফাড়াবাড়ি হাট গণহত্যা আদর্শ বাজার গণহত্যা’ বইয়ের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে এক অনুষ্ঠানে আইএফআইসি ব্যাংক-নিবেদিত এই পুরস্কার ফারজানা হকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এবার দুই দিনের বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেওয়া হল ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২৩’।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা প্রত্যেকে নগদ ২ লাখ টাকা, একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র, মানপত্র পেয়েছেন। কবিতা ক্যাটাগরিতে মানসম্মত বই না পাওয়ায় এ বছর পুরস্কার দেওয়া যায়নি।
এছাড়া কথাসাহিত্যে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত ‘ভাতের কেচ্ছা’ বইয়ে জন্য কামরুন্নাহার দিপা, প্রবন্ধ ও গবেষণায় কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘জনসংস্কৃতির রূপ ও রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য শারফিন শাহ, শিশু-কিশোরসাহিত্যে অক্ষরবৃত্ত থেকে প্রকাশিত ‘আলোয় রাঙা ভোর’ এর জন্য পুরস্কার পেয়েছেন রহমান বর্ণিল।
পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়, যা শুরু হয় শুক্রবার।
প্রথম দিনের আয়োজনে ছিল গল্প লেখা বিষয়ক কর্মশালা ‘গল্পের কলকব্জা’। এতে গল্প লেখার নানা করণকৌশল সম্পর্কে আলোকপাত করেন কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আহমাদ মোস্তফা কামাল, সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম ও মোজাফ্ফর হোসেন।
কবি মাহবুব সাদিক পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে বলেন, “এটা আমাদের জন্য বেদনার, এবার কবিতা বিভাগে পুরস্কার দেওয়ার মত যোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, “এবার কবিতায় কাউকে পুরস্কার দেওয়া যায়নি। আমি একজন কবি, এটা আমার জন্যও বেদনার।”
তবে লেখালেখি কেবল পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয়- এই কথাটি স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, “পুরস্কার নয়, লেখালেখি সবসময় পাঠকের জন্য। আপনার লেখা যেন পাঠককে ভাবায়, কিছু অনুভব করায়, সেই উদ্দেশ্যে কাজ করে যাবেন, এই আশা রাখছি।”
কালি ও কলম প্রকাশক আবুল খায়ের বলেন, “কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকাটি ভালো মানের বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। তাই সবারই দায়িত্ব এই পত্রিকাটি যেন মান বজায় রেখে টিকে থাকে।”
আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম সারওয়ার, “এই তরুণরা একদিন আরও মেধা দ্যুতি ছড়িয়ে যাবেন বলেই প্রত্যাশা করি।”
সভাপতির বক্তব্যে কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “পূর্বের অনেক বিজয়ী এখন দাপটের সঙ্গে সাহিত্যাঙ্গনে বিরাজ করছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এবারের বিজয়ী লেখকরাও আগামীতে অনেক ভালো কাজ করবেন। “
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কালি ও কলম সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়া। সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
পুরস্কার প্রদান পর্বের পর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আয়োজিত হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
বাংলাদেশের নবীন কবি-লেখকদের সাহিত্যচর্চা ও সাধনাকে গতিময় এবং তরুণদের সৃজনধারায় গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম ২০০৮ সাল থেকে তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রবর্তন করে।
প্রথমদিকে সাহিত্যের দুটি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হলেও ২০০৯ সালে তিনটি এবং ২০১০ সাল থেকে কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষণা ও নাটক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও সাহিত্য এবং শিশু-কিশোর সাহিত্য এই পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।