বাংলাদেশে ক্রিকেট মানে যেন অশেষ অক্রিকেটীয় আলোচনা। যে আলোচনার বেশির ভাগই উইকেট নিয়ে। কোথায় খেলা হবে, কেমন হবে উইকেট-এসব নিয়েই চলে বিতর্ক। সাম্প্রতিক সময়ে মিরপুর স্টেডিয়ামের কালো উইকেট নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে আলোচনায় এসেছে ‘হোভার কভার’। যে প্রযুক্তি ইংল্যান্ডে ক্রিকেটকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করেছিল, সেটি এখন মিরপুরে অবহেলার শিকার। কোটি টাকার এই যন্ত্র পড়ে আছে অযত্নে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পরিকল্পনার অভাব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতার নীরব সাক্ষী ‘হোভার কভার’।
প্রায় ১৫ বছর ধরে স্টেডিয়ামের মিডিয়া প্রান্তে অবহেলা-অযত্নে পড়ে আছে আধুনিক সেই যন্ত্র। ২০১০ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ইংল্যান্ড থেকে আনা হয় এই যন্ত্র। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় কয়েকবার পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা ছাড়া আর কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। মাঝে কয়েক দফা ভারতের কাছে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি। মিরপুর স্টেডিয়ামে এটি যেন ‘বোঝা’ হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। অবশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বোঝা সরানোর পরিকল্পনা করছে।
মিরপুরের দীর্ঘদিনের প্রধান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা কখনোই হোভার কভার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে বিশাল, বাক্সের মতো এক কাঠামো-যা দেখে অনেকেই জানতে চান, ‘ওটা কী?’ স্টেডিয়ামে দুই প্রান্তে সাইট স্ক্রিন ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিস থাকে না। অথচ এই কভার বিসিবি না পারছে ফেলতে, না পারছে ব্যবহার করতে। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার টনি হেমিং কিউরেটর হিসাবে এসেছেন। স্টেডিয়ামে ঢুকেই আধুনিক এই প্রযুক্তি দেখে তিনি প্রথমে মুগ্ধ হলেও বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটি কার্যকর হবে না।’
মিরপুরের সেই হোভার কভার/ফাইল ছবি
স্টুয়ার্ট ক্যানভাসের নকশায় তৈরি হোভার কভার ইংল্যান্ডের মাঠে বিপ্লব ঘটায়। ১৯৯৮ সালে উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি বৃষ্টির কারণে খেলার সময় নষ্ট হওয়া এবং মাঠ শুকানোর কাজ দ্রুত করতে ভূমিকা রাখে। প্রথম স্থাপন করা হয় লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। পরে এটি ব্যবহৃত হয় এজবাস্টন, ট্রেন্ট ব্রিজ, কার্ডিফ, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ও হ্যাম্পশায়ারে। অস্ট্রেলিয়ায়ও এর ব্যবহার শুরু হয় স্থানীয় আবহাওয়ার উপযোগী করে। উপমহাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি মাঠে হোভার কভার রয়েছে-ভারতের পুনে এবং বাংলাদেশের মিরপুরে। পুনেতে এটি নিয়মিত ব্যবহার করা হলেও মিরপুরে অব্যবহৃত।
বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির ব্যবস্থাপক আবদুল বাতেন জানান, ‘আমরা শুধু বিপিএলের সময় এটা সরিয়ে রাখি। এটা মূলত অতিবৃষ্টি ও শীতপ্রধান দেশের জন্য উপযোগী। আমাদের আবহাওয়ায় কভার দিলে ভেতরে তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়, যা আমাদের দেশে উলটো উইকেটের ক্ষতি করে।’
গ্রাউন্ডস কমিটির সহ-সভাপতি আদনান রহমান দীপন বলেন, ‘বড় জায়গাজুড়ে দখল করে আছে এটা। কোথাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার সরিয়ে ফেলারও কোনো পরিকল্পনা এতদিন করা হয়নি কেন, বুঝতে পারছি না। দ্রুত সরানোর চেষ্টা চলছে।’

