সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক: :
মানুষ প্রথমে পৃথিবীতে থাকে না।
মহান আল্লাহতালা হুকুমে সে তার মা-বাবার মাধ্যমে পৃথিবীতে আসেন।
যখন সে পৃথিবীতে আসে সে অবস্থায় তার কোনো জ্ঞান থাকেনা। সে শুধু মিটমিট করে চারদিকে তাকায় আর সজোরে কেঁদে ওঠে।
জন্মের পর থেকেই অন্তত দুই থেকে তিন বছর মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠে।
আল্লাহর কি রহমত ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ ছাড়া সে পানিও পান করে না।
মোটামুটি এক বছর পর থেকে সে পৃথিবীর কিছু খাবার গ্রহণ করে।
সে জন্মের পরে কান্না হাসি ছাড়া কোন ভাষা সে জানেনা। এক বছর পর গিয়ে কিছু কিছু শব্দ তার মুখ থেকে বের হয়। পাপা,বাবা,টিক টিক,তিলিপোকা,কুক্কুর এরকম কিছু শব্দ।
এভাবে মায়ের কোল থেকে ধীরে ধীরে সে নানান শব্দ শিখে। তারপর একদিন বাক্য গঠন করে কথা বলা শেখে।
সাত মাস পড়লে প্রথমে সে বসা শিখে, আট মাসে হামাগুড়ি দেয়। এক বছর পার হলে হাটি হাটি পা পা করে হাঁটতে শুরু করে।
মানুষ একমাত্র প্রাণী যে সব থেকে দেরি করে হাঁটা শেখে। হাটা শিখার সাথে সাথে সে কথা শিখতে শুরু করে। একটু একটু বুঝতে শুরু করে। তাকে রেখে তার বাবা বা মা বাইরে কাজে গেলে সে বুঝতে পারে। সে কান্না করে সে বাইরে যেতে চায়।
এভাবে তার কেটে যায় এক থেকে তিন চার বছর। তারপর তা শুরু হয় গুটি গুটি হাতে লেখা। মিষ্টিমুখে ছড়া পড়া।
সে স্কুলে ভর্তি হয় ধীরে ধীরে পাঠ শিখে। এভাবেই শিশুকাল থেকে কৈশোর,কৈশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে মধ্যবয়স, মধ্যবয়স থেকে বৃদ্ধকাল, বৃদ্ধকাল থেকে আবার হামাগুড়ি!
এই সময়ের মাঝে মানুষ লেখাপড়া শিখে, চাকরি করে। আর যারা লেখাপড়া না শেখে তারা অনেক আগ থেকেই কৃষিকাজ বা কোনো হাতের কাজ করে জীবন যাপন শুরু করে। যারা চাকরি করে তারা চাকরি শেষে অবসরে যান। তার অবসর জীবন শুরু হয়। কিন্তু যিনি কৃষক, যিনি কোনো হাতের কাজ করেন তার কোন অবসর নেই ।সে মরার আগ পর্যন্ত শক্তি থাকাকালীন সে তার কাজ করে যায়। কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করে।
তার জীবন চলার পথে যখন বয়স হয় ; তখন সে বৈবাহিক জীবনে পদার্পণ করে। বিবাহর পরে তার সন্তানাদি হয় । সে তার সন্তানকে মানুষ করার জন্য নিজের জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দেন। সে একসময় বাবা হয়। বেচে থাকলে সে একদিন দাদা হয় কিংবা নানা হয়। মহান আল্লাহতালা আরেকটু বেশি সময় মহান আল্লাহতালা বাঁচিয়ে রাখলে সে বড় বাবা বা বড় নানা হয়। অর্থাৎ সে তার নিজের সন্তানের নাতি-নাতনি দেখে যেতে পারে। তারপর একদিন মহান আল্লাহতালার ডাকে সাড়া দিয়ে তার আত্মা দেহ থেকে পৃথিবী ত্যাগ করে। তখনই তার মৃত্যু ঘটে। একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার সমস্ত অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।
এর মাঝে জীবনের অনেক ছন্দপতন ঘটে। পাপ করে পূন্য করে। নিজেকে অপরাধী মনে হয় । নিজেকে দোষী মনে হয়। নিজেকে সুখী মনে হয়। নিজেকে মাঝে মাঝে খুব একা মনে হয় । নিজেকে মনে হয় পৃথিবীতে কেন আসলাম ? আবার পৃথিবী থেকে কোথায় যাব ?
মহান সৃষ্টিকর্তা ভাল জানেন।
স্বাভাবিকভাবে আমরা দেখতে পাই যে, মানুষ জন্ম থেকে সে বৃদ্ধ পর্যন্ত সময় অতিবাহিত করে। আবার আমরা এও দেখি এর মাঝে হঠাৎ করে মহান আল্লাহতালা কাউকে ডেকে নিয়ে যান। তখন তার মৃত্যু ঘটে। যখন আল্লাহতালা চাইবেন।
এইযে মৃত্যু হয় এ যে মানুষ মারা যান। এ মারা যাবার সময় টা পৃথিবীর কোন মানুষ জানে না।
পৃথিবীর সবকিছু থেকে মৃত্যু হচ্ছে চরম একটি সত্য জিনিস। আর এই মৃত্যুকে আমরা সবাই প্রচন্ড পরিমানে ভয় পাই। আর মৃত্যু ভয়ের কারণে অনেকে নিজের ভুলে অন্যের মৃত্যু ডেকে আনে।
মানুষ জানে সে মৃত্যুবরণ করবে কিন্তু সে কখনো এটা ধারণ করতে চায় না।
মানুষ পৃথিবীতে থাকার কোন প্রাণী না। মহান আল্লাহতালা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠান আবার সেই মানুষকে পৃথিবী থেকে নিয়ে যান।
পৃথিবীতে এই আসা যাওয়ার মাঝে মানুষকে আল্লাহ তার মনকে বিচার করার জন্য পরকালের পুরস্কারের জন্য বলে দেন। যার যার ধর্ম রয়েছে, পূন্য কাজে পূর্ণতা লাভ হবে। আর মন্দ কাজে লাভ হবে অপূন্যতা।
ভাল কাজে হবে স্বর্গবাস।মন্দ কাজে হবে অস্বর্গ।
মহান আল্লাহতালা মানুষকে দিন গণনার জন্য তৈরি করেছেন সূর্য ও চাঁদ। কিন্তু অবাক বিষয় হলো মানুষের স্মৃতিশক্তি আসার পর থেকে যেদিন সে মৃত্যুবরণ করে তার আগের দিন পর্যন্ত তার মনের দিন একটিই।
এই যে মানুষের জীবনের অল্প সময়; এই সময়টা খুব মূল্যবান। মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন শরীফে এ সময়ের কথা তিনি বারবার বলেছেন। এমনকি তিনি সময়ের কসম করেছেন তাঁর বান্দাকে বোঝানোর জন্য। এতে করে বুঝা যায় সময় অনেক মূল্যবান।
আল্লাহ তাঁর বান্দাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং তার চলার পথের পাথেয় হিসেবে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেছেন।
মানুষকে বলা হয় সৃষ্টি সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত। কিন্তু এই মানুষ মাঝে মাঝে পশু হয়ে ওঠে।
তাই তাকে কেউ গরু বলে, ছাগল বলে, ভেড়া বলে, কুকুর বলে, শুকর বলে, বাঘের সাথে তুলনা করে, সিংহের সাথে তুলনা করে, নানান রকম পশুর সাথে তুলনা করে , ইত্যাদি।
আর তখনই মানুষ পশু থেকে মানুষ হবার চেষ্টা করে। কিন্তু সে ভুলে যায় সে একজন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
মানুষ হয়ে যখন জন্ম নিয়েছেন। আপনাকে মানুষ হতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে। মানুষের জীবন যেন সহজ হয়, সে চিন্তা আপনাকে করতে হবে।
কারণ আপনিও মানুষ।