মাইলস্টোন কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু প্রাণহানির মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। তার আগে ফেসবুকে দেওয়া একটি রহস্যময় সতর্কবার্তা ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। তবে সাইবার বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন এক চিত্র—এই ‘ভবিষ্যদ্বাণীমূলক’ পোস্টের পেছনে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন বেটিং ও স্ক্যাম চক্র।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মাত্র একদিন আগেই, ২০ জুলাই (রোববার) ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামক একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি সতর্কমূলক পোস্ট দেওয়া হয়।
পোস্টটিতে লেখা ছিল: একটি স্কুল ভবন ধসে পড়তে যাচ্ছে, যার ফলে বহু শিশু প্রাণ হারাবে। আমরা এক ভয়াবহ বিপর্যয় এগিয়ে আসতে দেখছি।
পরদিন দুর্ঘটনা ঘটার পর পেজটি থেকে আরেকটি পোস্ট করে বলা হয়: আমরা সবসময় আগেভাগেই সতর্কবার্তা পাঠাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো গুরুত্ব পায় না। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক।
এই পোস্ট দু’টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল ভাইরাল হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, পেজটি কোনো ‘অ্যানোনিমাস’ হ্যাকার সংগঠনের অংশ কি না, বা সত্যিই তারা ভবিষ্যতের ঘটনা জানতে পারে কি না।
তবে বিষয়টি আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দ্রুত অনুসন্ধানে নামে। প্রোবফ্লাই আইটি’র ফাউন্ডার আব্দুল্লাহ আল ইমরান নিশ্চিত গণমাধ্যমকে করেছেন, ওই ফেসবুক পেজটি মূলত অনলাইন বেটিং ও স্ক্যামিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।
ইমরান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এই পেজটি চারজন ব্যক্তি পরিচালনা করছিলেন—যার মধ্যে দুইজন নাইজেরিয়ান, একজন আমেরিকান, এবং অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। পেজটি বিভিন্ন সময়ে গুজব ছড়িয়ে ও মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলে তাদের বেটিং সাইট ও স্ক্যাম প্রচারণা চালাত।
ইমরান জানান, পরিচয় ফাঁস হওয়ার পর তারা দ্রুত তাদের আইডিগুলো ডিয়েক্টিভেট করে দেয়, এবং বর্তমানে ফেসবুকে পেজটি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জনগণকে এ ধরনের গুজবে কান না দিয়ে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও অফিসিয়াল সূত্রে বিশ্বাস রাখতে অনুরোধ করেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি’র বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাক্ট-চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির বলেছেন, পেজটি কোনো আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপ ‘অ্যানোনিমাস’-এর অংশ নয়। বরং এটি একটি প্রতারণামূলক অনলাইন জুয়া প্রমোট করতে ব্যবহৃত হতো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানোর মাধ্যমে অসাধু চক্র যেমন বাণিজ্যিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে, তেমনি জনমনে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি করে। এই ধরনের তৎপরতা বন্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।