ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় ভাঙা অংশে তিন স্তরে ইট বিছানোর কাজ চলছে। তবে সড়কের মাঝখানে ইট ও বালুর স্তূপ ফেলে রাখায় উল্টো যানজট আরও বেড়েছে, সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জনদুর্ভোগ।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সকালে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের দুরবস্থা পরিদর্শনে যান। কিন্তু দুরবস্থা দেখতে গিয়েই তিনি নিজেই ঘণ্টাব্যাপী যানজটে আটকে পড়েন।
উপদেষ্টা সকালে আন্তনগর ট্রেন মহানগর প্রভাতী যোগে ঢাকা থেকে ভৈরব এসে সড়কপথে সরাইলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আশুগঞ্জের সোহাগপুর এলাকায় ঘণ্টায় মাত্র ১০ থেকে ২০ মিটার করে অগ্রসর হতে দেখা যায় তার গাড়িবহরকে। স্থানীয়রা বলেন, উপদেষ্টা নিজে এখন বুঝতে পারছেন, এই সড়কে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে। তার সফর ঘিরে হঠাৎ করেই তৎপর হয়ে ওঠে স্থানীয় সওজ কার্যালয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপদেষ্টাকে দেখানোর জন্যই তড়িঘড়ি করে রাস্তার সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, পরিদর্শন শেষে এসব ইট আবার তুলে ফেলা হবে, ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ঘটবে।
তবে সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এটি কোনো অস্থায়ী সংস্কার নয়, বরং স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবেই কাজটি করা হচ্ছে।
সওজের কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সরকারের নির্দেশ আসে—৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এরপরই বিকেল থেকে কাজ শুরু হয়। গোলচত্বর এলাকায় ১২ মিটার প্রস্থ ও ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের অংশে এবং সিলেটমুখী সরাইল কুট্টাপাড়া মাঠ পর্যন্ত প্রায় ১৯০ মিটার এলাকায় তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানো হচ্ছে। প্রকৌশলীরা জানান, এ কাজে প্রায় চার লাখ ইট ব্যবহার করা হবে, যা আনা হচ্ছে ঢাকা, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বয়ংক্রিয় ইটভাটা থেকে।
জেলা প্রশাসন ও সওজ সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় আট বছর আগে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তবে প্রকল্পের অগ্রগতি শুরু থেকেই ধীরগতির। সরকার পরিবর্তনের পর কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং ভারতীয় কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। প্রায় তিন মাস পর তারা ফিরে এলেও তখন অনেক নির্মাণসামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। গত ৫ আগস্টের পর থেকে কাজের গতি আরও মন্থর হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের দাবিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে সম্প্রতি সরকার ১৬৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা অনেক আগেই প্রস্তুত ছিলাম। তবে নির্দেশনা ছাড়া বড় কাজ হাতে নিলে প্রশ্ন উঠত। এখন নির্দেশনা পাওয়ার পরই দ্রুত কাজ শুরু করা হয়েছে।