রাজধানী ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষের জীবন যাচ্ছে খুবই দূর্বিসহে। এসব হতদরিদ্র বিভিন্ন পেশার মধ্যে রাজধানীর রিকশাচালকদের অবস্থা প্রতিনিয়ত খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আয় রোজগার একইবারে নাই বললেই চলে। চরম হতশা আর উৎকণ্ঠায় জীবন পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিনের খেটে খাওয়া এসব রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকদের।
ঢাকাকে রিকশার নগরীও বলা হলেও চিরচেনা সেই নগরী সবার চোখের সামনেই কেমন যেনো বদলে যাচ্ছে তাদের নিত্যদিনের খোরাক মেটানোর যানবাহনটি। বিপাকে গোটা দেশের মানুষ, সংকটে রিকশাচালকরাও। সামর্থ্যবানরা এ সময়ে ঘরে থাকতে পারলেও কেবল দুমুঠো খেয়ে পরে বাঁচতে তীব্র ঝুঁকি নিয়েই এদের অনেকেই নামছেন সড়কে। তবে এত কিছুর পরেও যাত্রী না থাকায় জুটছে না সংসার খরচ। ক্ষুধা আর শঙ্কায় দিনাতিপাত করা মানুষগুলোকে গ্যারেজ ভিত্তিক পরিকল্পিত ত্রাণ সহায়তার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ‘রিকশা চালাইতাছি ৪০ বছর ধইরা। কখনো এইরকম অবস্থা দেখি নাই। দিনকাল ধীরে ধীরে খারাপ হইয়া যাইতাছে।’ কথা বলারও দুই ঘণ্টা আগে থেকেই রিকশাচালক আব্দুস সালামকে অনুসরণ করছিল সময় সংবাদ। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে ধানমণ্ডির নানা অলিগলি ঘুরে তখনও জোটেনি কোনো যাত্রী। ছয় সদস্যের সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলেও ছিলনা খুব একটা টানাপোড়ন। কিন্তু মহামারি করোনা স্বাবলম্বী এ মানুষটিকে করেছে অন্যের মুখাপেক্ষী।
চেনা-অপরিচিত সময়ের এ ধাক্কাটা বুঝি, অনেকটা জোরেশোরেই লাগলো খেটে খাওয়া-শ্রমজীবী মানুষের জীবনে। আছে ভয়, আছে শঙ্কা। তবুও সংসারের খরচ জোগাতে বাধ্য হয়েই নামতে হচ্ছে পথে। তবে প্রতিদিন যে পথ যোগাতো সংসারের খরচ, চিরচেনা সেই পথই আজ অচেনা। নেই কাঙ্ক্ষিত যাত্রীর দেখা।
কেউ কেউ বাইরে বেরিয়ে এলেও গ্যারেজে অলস পড়ে থাকা তিন চাকার বাহনগুলোর মতোই থমকে গেছে বেশিরভাগের ভাগ্য। জুটছে না তিন বেলা আহার। নেই বিকল্প উপার্জনের পথও। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। ছন্দহীন। বিবর্ণ। তবে পেটের দায় মেটাতে গিয়ে মানুষগুলো যাতে পরনির্ভরশীল হয়ে না পড়ে সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। সমাজতাত্ত্বিক খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, এলাকা-পাড়া ভুক্ত যেসব গ্যারেজ আছে সেইখানে গিয়ে তাদের খাদ্য পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। আর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এরা যেন সাহায্য নির্ভর না হয়ে পড়ে। রাজধানীতে রিকশা শ্রমিকের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও রিকশার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।
কখনো যত্রতত্র ছুটে বেড়িয়ে কিংবা প্রধান সড়ক আগলে রেখে ভোগান্তির কারণ যেমন হয়েছে রিকশা, তেমনি এই রিকশাই হয়েছে পথিকের অবলম্বন। তাইতো ঘরবন্দি একলা থাকার এ সময়ে কর্মহীন-ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর দায় আমাদেরই। এমনভাবে মানবিকতার সম্মিলিত শক্তিতে দুঃসময় কেটে ফিরবেই সুদিন। সূত্র : সময় টিভি