আখতার-উজ-জামান, ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: মহামারি কোভিড-১৯ মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবে এবার এক হাজারের কম সৌদি আরবের মুসলমানরা হজ্ব করতে পারবেন বলে জানিয়েছে দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয়।। যারা ইতোমধ্যে দেশটিতে অবস্থান করছেন শুধু এমন মানুষরাই এবারের হজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির প্রতিবেদনে দেশটির হজ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, ‘এই বছরও হজের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সৌদিতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা সীমিত সংখ্যায় এবারের হজে অংশ নেওয়ার সুুযোগ পাবেন।’
মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, ‘বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, এখনো কোনো ভ্যাকসিন তৈরি না হওয়া এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিশালসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় এই সমাবেশে সামাজিক দূরত্ববিধি পালনের সুযোগ না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সৌদি প্রেস এজেন্সি গতকাল সোমবার জানিয়েছে, খুবই কম সংখ্যক মানুষ নিয়ে হজ আয়োজন হবে এবার। যারা আগে থেকেই সৌদি আরবে রয়েছেন, তাঁরাই কেবল অংশ নিতে পারবেন এবারের হজে।
চলমান করোনভাইরাস মহামারির হুমকির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৮ জুলাই থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। হজ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনের অভাবে এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণের কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে বহু মানুষ এলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না বলেই এমন সিদ্ধান্ত।
প্রতি বছর অন্তত ২০ লাখ মানুষ হজে অংশ নেয়। ২০১৯ সালে হজপালন করেছেন ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪০৬ জন। তাঁদের মধ্যে সৌদি আরবের নাগরিক ছিলেন দুই লাখ ১১ হাজার তিনজন আর সৌদি আরবে কর্মরত বিভিন্ন দেশের চার লাখ ২৩ হাজার ৩৭৬ জন নাগরিক হজ পালন করেছেন।
হজ ইস্যুতে ১৯৩২ সালে ক্ষমতায় আসীনের পর বড় চাপের মুখে সৌদি রাজতন্ত্র। প্রতি বছর হজ পালনে দেশটিতে জড়ো হন, প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান। তবে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে, বিভিন্ন দেশ থেকে হাজিরা গেলে, তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। এমন যুক্তিতে এবার শুধু সৌদিতে বসবাসরতদের নিয়ে সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশটির দ্য কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার।
সোমবার সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি জানায়, বিভিন্ন দেশের যে সব মুসলিম সৌদিতে আছেন, তারাই কেবল এবার হজ পালনের সুযোগ পাবেন।এবার বাংলাদেশ থেকে ৬৪ হাজার ৫৯৪ জন হজে যেতে আগ্রহী ছিলেন। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তায় তারা। অবশ্য, হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব বলছে, এ বছর নিবন্ধনকারীরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে আগামী বছর হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এর আগে সার্চ ও ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হাজিদের সুরক্ষায় নানা ব্যবস্থা নেয় সৌদি আরব। যদিও সেসময়ে স্বাভাবিকভাবেই হজে যোগ দেন মুসলমানরা।
মহামারী প্লেগের কারণে ১৮১৪ ও ১৮৩১ সালে দুবার হজ স্থগিত করা হয়। এছাড়া, প্লেগ ও কলেরার কারণে ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে ৭ বছর বন্ধ ছিল হজ পালন।
যুদ্ধবিগ্রহ দ্বন্দ্বেও হজ বাতিলের নজির আছে। ৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয় আমলে, ঈসমাইল বিন ইউসুফের মক্কা আক্রমণকালে প্রথম হজ বাতিল হয়, এরপরে ৯৩০ সালে কট্টর শিয়াদের হামলায় ৩০ হাজার হাজির মৃত্যুতে হজ স্থগিত হয়। ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফত ও মিসর ভিত্তিক ফাতেমীয় খিলাফতের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে, ৯৮৩ থেকে ৯৯০ সালে হজ বন্ধ ছিল।