মহাকাশসংক্রান্ত নানা ধরনের গবেষণা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস)। এই স্টেশনে নিয়মিত বিরতিতে মহাকাশচারীরা সফর করে বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পরিচালনা করেন। মহাকাশে ভাসমান এই স্টেশনে জিনিয়া, সূর্যমুখী ও গমও চাষ করছেন নভোচারীরা। পৃথিবী থেকে পাঠানো খাবারের ওপর নির্ভরতা কমাতে মহাকাশে সবজি চাষকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সঠিক ও কার্যকরভাবে সবজি ও ফসল চাষ ভবিষ্যৎ মহাকাশ অনুসন্ধানে সহায়তা করতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ওজনহীন পরিবেশে অনেক গাছ বেশ ভালোভাবে বিকশিত হচ্ছে। বর্তমানে মহাকাশচারীরা ভ্যাকুয়াম-প্যাকড ও ফ্রিজে-শুকনা খাবারের ওপর নির্ভর করেন। এসব খাবার সতেজ থাকে না। ২০১৬ সালে নাসার নভোচারী স্কট কেলি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে একটি প্রস্ফুটিত জিনিয়ার একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেই ফুলকে মহাকাশে জন্মানো প্রথম ফুল বলে অভিহিত করা হয়। পৃথিবীর বাইরে জটিল গাছপালা জন্মানোর ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বেশ আলোচিত হয় সেই পরীক্ষা। সেই জিনিয়া চারায় ছত্রাক সংক্রমণের কারণে সংক্রমিত হয়। নাসার বিজ্ঞানীরা সেই সময় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গাছটি পুনরুদ্ধার করেন। দীর্ঘমেয়াদি মিশনের জন্য মহাকাশে খাদ্য উৎপাদনের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। নাসার ভেজি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমে লেটুস নিয়ে গবেষণা করা হয়। পরে জিনিয়া ও টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি ও ফসলকে যুক্ত করা হয়। বায়ু ও পানির পুনর্ব্যবহার করে এসব সবজি ও ফসল মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত পাঠানো যেতে পারে। আর তাই নাসার বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহে অভিযান ও গভীর মহাকাশ ভ্রমণে নভোচারীদের জন্য মহাকাশে উদ্ভিদ জন্মানোর বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০১২ সালে মহাকাশচারী ডন পেটিটের প্রথম সূর্যমুখী চাষ করেন। ১৯৯০ সালে রাশিয়ার মহাকাশচারীরা মীর মহাকাশ স্টেশনে প্রথমবারের মতো গম চাষ করেন। ১৯৮২ সালে স্যালিউট ৭ অভিযানে সোভিয়েত দল সফলভাবে অ্যারাবিডোপসিস নামের একটি ছোট ফুলের উদ্ভিদ চাষ করেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে মহাকাশে প্রস্ফুটিত ও বীজ উৎপাদনকারী প্রথম উদ্ভিদ হিসেবে স্বীকৃতি পায় সেই অভিযান।