প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে আমি গেছি। মিটিং করেছি। সেখানকার পুলিশ, প্রশাসন, এমনকি স্থানীয় লোকজন বলেছে, সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা নাকি একে অপরকে ‘ঘোষণা দিয়ে’ মারামারি করে!”
তিনি বলেন, “সৌদি আরবে একটি জায়গা আছে যেখানে কিছু বাংলাদেশি মাস্তান গিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের বাড়িতে ঢুকে ছিনতাই করে, এমনকি হাত কেটে ফেলার ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনা গুজব নয়, বরং বাস্তব। কিন্তু আফসোসের বিষয়, অনেকে পুলিশের কাছে যায় না, কারণ তারা জানে, পুলিশ অভিযোগ পেলে নির্দোষ ও দোষী সবারই দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে।”
আসিফ নজরুল বলেন, “এমন কাজ কয়জন করে? হয়তো মাত্র ১০ জন। কিন্তু এর খেসারত দিতে হয় হাজার হাজার নিরীহ প্রবাসীকে। একটা দেশে ১০ হাজার মানুষ ভালোভাবে কাজ করলেও, যদি ১০ জন খারাপ কিছু করে, বিদেশিরা সেই খারাপটাকেই বেশি মনে রাখে। এভাবেই দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।”
তিনি ওমরাহ পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমি যখন ওমরাহ করতে সৌদি আরব যাই, বিমানবন্দরে একজন ভিডিও করে বললেন, ‘টিকিটের দাম এত বেশি, আমরা কষ্ট করে এসেছি।’ তখন আমি দেশে ফিরে এসে নিজ উদ্যোগে টিকিটের দাম কমাতে কাজ করি। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করে, কিছু নিয়ম এনে দাম যৌক্তিক করি। কিন্তু কিছু ‘শয়তান লোক’ আবারও টিকিটের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রশাসনিক কাঠামো এত জটিল যে, ভালো কাজ করতে গেলে অনেক বাধা আসে। একজন ভালো অফিসার যতটা চেষ্টা করেন, দুর্নীতিবাজরা তার চেয়ে দশগুণ বেশি একনিষ্ঠভাবে খারাপ কাজ করে। প্রশাসনের এই অবস্থা না বদলালে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব না।”
প্রবাসী শ্রমিকদের অপরাধের প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, “বাহরাইনে এক মালিককে হত্যা করার পর থেকে সেখানকার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ দোষারোপ শুধু সরকারের ঘাড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যারা বিদেশে গিয়ে এমন অপরাধ করে, তাদের আচরণ কি দেখার বিষয় নয়?”
মালয়েশিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেখানে বলা হচ্ছে ১২ লাখ কর্মী নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হয়তো ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকই নেওয়া হবে। কিছু কর্মকর্তা আমার ছাত্র, আমি সরাসরি জেনেছি। কিন্তু দেশে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে হাইপ তোলা হয়, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।”
তিনি জানান, “মালয়েশিয়ার আগের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, তা অনুসারে রিক্রুটিং এজেন্টদের মধ্য থেকে দেশটি কর্মী বাছাই করবে। এতে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। আবার যদি আমরা তা না মেনে লোক না পাঠাই, তাহলে মানুষ বলবে আমরা কাজ করিনি। দুই অবস্থায়ই সমস্যায় পড়ি।”
সিন্ডিকেট ছাড়া প্রবাসী পাঠানোর চেষ্টায়ও সমস্যা হয় বলে তিনি জানান। “সৌদি আরবে কোনো সিন্ডিকেট নেই, কিন্তু লোকজন ৬-৭ লাখ টাকা দিয়ে যাচ্ছে। কেন? কারণ আছে ‘মধ্যসত্ত্বভোগী’। যারা শুধু টাকা কামাতে চায়। অথচ সেই টাকায় দেশে কেউ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে পারত,” বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, “বিদেশে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি অসম্মানজনক কাজ করছে, বাথরুম পরিষ্কার করছে, রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই অবস্থা এড়াতে হলে বিদেশে যেতে হলে স্কিল ও ভাষা শেখা আবশ্যক। না হলে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।”
তিনি আরও বলেন, “জাপান, কোরিয়ার দিকে আমাদের মনোযোগ বাড়ানো উচিত। সেখানে সম্মানজনক কাজের সুযোগ আছে। আমরা মিনিস্ট্রি, বায়রা, ট্রেনিং সেন্টার সবাই মিলে যদি যোগ্য ও স্কিল্ড কর্মী তৈরি করতে পারি, তাহলে কমপক্ষে ২ লাখ লোককে বিদেশে পাঠানো সম্ভব। যার প্রভাব পড়বে ১০ লাখ পরিবারের ওপর।”
আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা সম্মানজনকভাবে, দক্ষ কর্মী পাঠিয়ে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চাই। এটাই হবে আমাদের সবার জন্য শান্তির পথ।”