ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনায় ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। এই পরিস্থিতিতে অঞ্চলটিতে একের পর এক যুদ্ধজাহাজ, পারমাণবিক রণতরী এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বাড়ানো হচ্ছে সামরিক ঘাঁটির কার্যক্রম ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র কি এই সংঘাতে সরাসরি জড়াতে চলেছে?
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের নির্দেশে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী যুদ্ধজাহাজ মোতায়ন করা হয়েছে। ইউএসএস সুলিভান্স বর্তমানে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সক্রিয় প্রতিরক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে, অন্যদিকে ইউএসএস আর্লেবার্গ নামের একটি ডেস্ট্রয়ার অঞ্চল ত্যাগ করেছে।
এছাড়া, ইউএসএস কার্ল ভিনসন এবং ইউএসএস নিমিতজ নামক দুটি পারমাণবিক চালিত বিমানবাহী রণতরী আরব সাগর ও মালাকা প্রণালীতে অবস্থান করছে। ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড ইউরোপীয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
মার্কিন বিমানবাহিনী ইতিমধ্যেই ইতালি থেকে ১২টি এফ-৬ যুদ্ধবিমান সৌদি আরবে সরিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি এফ-১৫ এবং এফ-২২ র্যাপ্টর যুদ্ধবিমানও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে মোতায়ন করা হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি ও গ্রিসে অতিরিক্ত ২১টি জ্বালানি ট্যাঙ্কার ও যুদ্ধবিমান পাঠানো হয়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা এই প্রস্তুতিকে “অস্বাভাবিক সামরিক তৎপরতা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে মার্কিন ডেস্ট্রয়ারগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারে প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেমের থার্ড ব্যাটারি মোতায়ন করেছে। এই ইউনিট উচ্চ উচ্চতায় শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে সক্ষম। ২০২৩ সালেই এই ইউনিট ইসরায়েলে প্রায় ১০০ সেনাসহ মোতায়ন করা হয়েছিল।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৯টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি অস্থায়ী ও ৮টি স্থায়ী। এসব ঘাঁটি রয়েছে জর্ডান, ইরাক, সিরিয়া, মিশর, সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর মধ্যে রয়েছে—কাতারের আল উদায় এয়ারবেজ, বাহরাইনের নৌঘাঁটি এবং কুয়েত ও আমিরাতে অবস্থিত মার্কিন স্থায়ী ঘাঁটি।
এসব ঘাঁটি বিমান ও নৌ অভিযান, গোয়েন্দা নজরদারি ও আঞ্চলিক সরবরাহ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়ন*
২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার সেনা মোতায়ন থাকবে। কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সবচেয়ে বেশি সেনা অবস্থান করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সামরিক প্রস্তুতি শুধু প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে নয়, বরং সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আগাম কৌশলগত অবস্থানও তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এখনো কোনো যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি, তবে এমন প্রস্তুতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে দ্রুতই সরাসরি সংঘাতে জড়াতে পারে।
তবে অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতা ইরানের উপর কৌশলগত চাপ সৃষ্টির একটি অংশ। ট্রাম্প প্রশাসন কিংবা ভবিষ্যতের যেকোনো সরকার চাইছে, ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করতে। ফলে এটিকে কেবল শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং সামরিক কৌশল ও কূটনৈতিক চাপের সংমিশ্রণ হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।