ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গন। এই হামলার বিরুদ্ধে এবার সরব হয়েছে উত্তর কোরিয়া, তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়ে দেশটি বলেছে, ইসরায়েল এখন মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য ‘ক্যান্সারের মতো এক সত্তা’। বিশ্বের নজর যখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের দিকে, তখন পিয়ংইয়ংয়ের এমন মন্তব্য নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। খবর টিআরটি গ্লোবাল, মিন্ট
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ইরানের বেসামরিক, পারমাণবিক ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং এ হামলাকে কঠোরভাবে নিন্দা জানাচ্ছি।’
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ-তে প্রকাশিত বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়া শুধু হামলার সমালোচনাই করেনি, বরং ইসরায়েলকে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের ছত্রছায়ায় ইসরায়েল দিন দিন ‘বিশ্ব শান্তির প্রধান শত্রু’তে পরিণত হচ্ছে।
কেসিএনএর প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ইসরায়েল হচ্ছে এক ক্যান্সার-সদৃশ সত্তা, যা শান্তি ও স্থিতিশীলতার শত্রু। এর মাধ্যমে বিশ্ব বুঝে নিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিরতার মূল হোতা কারা।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক আইন, সার্বভৌমত্ব এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী। এটি এক ক্ষমাহীন মানবতাবিরোধী অপরাধ।
তিনি বলেন, ইসরায়েলি হামলায় নিরীহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যা ‘ক্ষমার অযোগ্য মানবতা-বিরোধী অপরাধ’। ইসরায়েলকে ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তেলআবিবের এই আচরণ গোটা অঞ্চলে একটি নতুন সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছে।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে সরাসরি সতর্ক করে উত্তর কোরিয়া জানায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির মদদে ইসরায়েল আজ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য এক ক্যান্সারসদৃশ অস্তিত্বে পরিণত হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংসের জন্য তারা প্রধান অপরাধী।’
ট্রাম্পের হুমকি, উত্তর কোরিয়ার জবাব
এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান নিয়ে তার ‘ধৈর্য শেষ হয়ে গেছে।’ ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যদি আগ্রাসী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণহীন ও বিপর্যয়কর পর্যায়ে চলে যাবে।”
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও সম্প্রতি ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি হস্তক্ষেপ করে, তবে তাদের জন্য তা ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বয়ে আনবে।’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন, তবে আপাতত তা কার্যকর করছেন না, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন।