ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক: প্রতিদিন একে অন্যের সঙ্গে আমাদের মিলিত হতে হয়। পেশাগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে আমাদের সমবেত হতে হয়। কিন্তু এমন কিছু কাজ আছে, যেগুলো মজলিস ও বৈঠকের জন্য ক্ষতিকর। কোরআন-হাদিসের আলোকে সেসব বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
কাউকে উঠিয়ে দিয়ে তার স্থানে বসা : মজলিস বা বৈঠকে উপবিষ্ট কাউকে তার আসন থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসা যাবে না। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি অন্য কাউকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সেখানে বসবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৬৯)
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সেখানে কেউ বসবে না। তবে তোমরা বসার জায়গা করে দাও এবং প্রশস্ত করে দাও।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৪৬৫৯)
দুজনের মধ্যখানে বসা : কোনো বৈঠকে দুই ব্যক্তি পাশাপাশি বসলে তাদের মধ্যে গিয়ে বসা সমীচীন নয়, বরং তাদের পাশে বসবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কারো জন্য এটা বৈধ নয় যে সে দুই ব্যক্তিকে পৃথক করে দেবে (তাদের মধ্যখানে বসবে) তাদের অনুমতি ছাড়াই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৫২)
কেউ কোনো প্রয়োজনে উঠে গেলে তার স্থানে বসা : মজলিসে বা সভায় বসার পরে কেউ কোনো প্রয়োজনে উঠে গেলে তার জায়গায় বসা উচিত নয়। আর যদি কেউ কারো আসনে বসে পড়ে, তাহলে ওই ব্যক্তি ফিরে এলে তার জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ তার আসন থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় ফিরে এলে সে-ই হবে তার বেশি হকদার।’ (মুসলিম, হাদিস : ২১৭৯)
তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে দুজনে কানে কানে কথা বলা : বৈঠকে বসে দুজনে কানে কানে কথা বলা বা গোপনে পরামর্শ করা শিষ্টাচারবহির্ভূত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওই কানাঘুষা শয়তানের কাজ ছাড়া আর কিছু নয়, যা মুমিনদের দুঃখ দেওয়ার জন্য করা হয়। অথচ তা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। অতএব, মুমিনদের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা।’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ১০)
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন কোথাও তোমরা তিনজন থাকো, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে কানে কানে কথা বলবে না। এতে তার মনে দুঃখ হবে। তোমরা পরস্পর মিশে গেলে, তাহলে তা করাতে দোষ নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৯০)
তবে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির অনুমতি সাপেক্ষে কানে কানে কথা বলা বা গোপনে পরামর্শ করা যাবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা তিনজন থাকো, তখন তৃতীয় ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া একজনকে বাদ দিয়ে দুজনে গোপনে পরামর্শ কোরো না। কেননা সেটি তাকে দুঃখিত করবে।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৬৩৩৮)
হাতে বা দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসা : পেছনে হাত রেখে ঠেস দিয়ে বসা বা দেয়ালে ঠেস লাগিয়ে বসা মজলিসের আদব পরিপন্থী। তাই এভাবে না বসে সোজা হয়ে বসা উচিত। শারিদ ইবনে সুওয়াইদ (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি আমার বাঁ হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার ওপর বসেছিলাম। তিনি বলেন, ‘তুমি কি তাদের মতো বসছ, যারা অভিশপ্ত?’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৪৮)
মজলিসে হাসাহাসি করা : মজলিসে বা সভায় বসে হাসাহাসি ও খেল-তামাশা করা যাবে না। এতে একদিকে বৈঠকের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, অন্যদিকে আলোচকের কথা শুনতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বেশি হাসবে না। কারণ বেশি হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৩)
অনেক মানুষ আছে, যারা অন্যের দোষ দেখে হাসে। অথচ ওই কাজ সে নিজেও করে থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ কেউ ওই কাজের জন্য হাসে, যে কাজ সে নিজেও করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৪২
গুপ্তচরবৃত্তি ও দোষত্রুটি তালাশ করা : মজলিসে বা সভায় কারো দোষত্রুটি অনুসন্ধান করার জন্য বা গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য গমন করা যাবে না। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কারো প্রতি কুধারণা পোষণ কোরো না। কেননা কুধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অন্যের ছিদ্রান্বেষণ কোরো না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিয়ো না এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ কোরো না, বরং আল্লাহর বান্দারা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)
ইসলামবিরোধী বৈঠকে যোগদান : ইসলামবিরোধী বৈঠক পরিত্যাগ করতে হবে। যে বৈঠকে কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধে কথা হয়, যেখানে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে উপহাস করা হয়, এমন বৈঠক বর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি কোরআনে তোমাদের প্রতি এই আদেশ দিয়েছেন যে যখন তোমরা মানুষের কাছ থেকে কোরআনের আয়াত নিয়ে অবিশ্বাস ও বিদ্রুপ শুনবে, তখন তাদের সঙ্গে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের সদৃশ গণ্য হবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের জাহান্নামে একত্র করবেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪০)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।