ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় ভয়াবহ খরা চলছে। এর ফলে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে শিশুরা। বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশটিতে গত বছরের জুন মাস থেকে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
নিমকো আবদি তিনি তার ছয় মাসের কন্যা শিশুকে প্লাস্টিক বেসিনের ওপর বসিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছেন। শিশুটির ওজন মাত্র ৪ কেজি। এ বয়সে শিশুটির যে ওজন থাকার কথা তা নেই, বরং প্রকৃত ওজনের তুলনায় অর্ধেক।
শিশুটির অবস্থা এতটাই জীর্ণ শীর্ণ যে তাকে বয়সের তুলনায় অনেক ছোট দেখাচ্ছে। চোখগুলো ভেতরে ঢুকে গেছে, শরীরের হাড়গুলো বাহির থেকে দেখে গণনা করা যাচ্ছে। শরীরের চামড়াগুলো কুঁচকে গেছে। এছাড়া শিশুটি শব্দ করে কান্নাও করতে পারছে না।
শিশুটির মা বলছেন, বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না। এত অসুস্থ যে ঠিক মত খাবারও খেতে পারছে না এবং দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখন শুধু দুধ ও ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
শিশুটির মা নিমকো ডাক্তার দেখানোর জন্য শিশুটিকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। এজন্য তাকে ৩১০ মাই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটির ভেতরে প্রবেশ করার পর তাকে একটি বেড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটিও অন্য মায়েদের সঙ্গে শেয়ার করে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
সোমালিয়ায় এই মায়ের মত অনেক মায়েদের চিত্র একই। এভাবেই দেশটিতে শিশুদের রক্ষা করার জন্য এক প্রকাশ যুদ্ধে নেমেছেন সেখানকার বাবা-মায়েরা।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়নক অফিস (ওকা) জানিয়েছে, যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়। তাহলে এবছর গ্রীষ্মকালে দেশটিতে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাবে।
ইতোমধ্যে দেশটিতে ৭০ শতাংশ শিশু স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত খরার কারণে অনেক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খরচের ভার সহ্য করতে না পেরে অনেক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমালিয়াতে পানির একমাত্র উৎস জুবা নদীও অনেক শুকিয়ে গেছে। হয়ত অচিরেই নদীর পানি ফুরিয়ে যাবে। দেশটিতে খরার কারণে ৪০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, খাবার এবং পানির খোঁজে দেশটিতে প্রায় ৭ লাখ মানুষ তাদের ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এদিকে খরার কারণে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণীও।
সূত্র: বিবিসি