জানা অজানা ডেস্ক, আজনিউজ২৪: হাজার হাজার শপ, ফার্স্ট ফুড, রেস্টুরেন্ট, হোটেলসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ভ্যাটের নামে অর্থ আত্মসাৎ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। দেশের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভ্যাটের নিয়মনীতি না মেনে সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন সময় যোগ করে ভ্যাট। সরকারের বিধি-নিষেধকে তোয়াক্কা না করে চলেই যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর ভ্যাট পলিসি। যা সরকারও জানে না আসলে কি তারা সরকারী খাতে রীতিমত ভ্যাট দিচ্ছে। সম্প্রতি এমন একটি বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একজন ক্রেতা কাপড় কেনার মধ্যদিয়ে পুরোপুরি ঘটনাটি তুলে ধরা হলো আজকের জানা অজানা ডেস্কে।
গেছিলাম কাপড় কিনতে… পছন্দ করে দাম দেওয়ার সময় দেখি দামের সাথে ১৫% ভ্যাট যোগ করেছে।
সাথে সাথে ধরলাম, এই ভ্যাট কিসের?
– এটা সরকারকে দিতে হয়।
– ঠিক আছে। আপনাদের ভ্যাট নাম্বার কত?
একটা নাম্বার দেখাল লোকটা।
এবার আমি বললাম, মুসক ১১ ফর্ম অর্থাৎ ভ্যাট চালান দেন।
সেলসম্যান অবাক।
আবার বললাম, কি হল? আমি সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছি, আর সরকার আমাকে এর রিসিপ্ট দিবে না? যান, নীল রঙয়ের ভ্যাট চালানটি নিয়ে আসুন।
এরপর সে তাদের বসকে ডাকল। তিনি এসে,
– কি সমস্যা ভাই?
– সমস্যা তো আপনার। মুসক বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী আমি আপনার মাধ্যমে সরকারকে ভ্যাট দিলাম, আর আপনি আমাকে চালানের কাগজ তো দিলেন না।
– এটা তো নাই আমাদের কাছে?
– নাই মানে? তাহলে কোন আইনে আপনি আমার কাছে ভ্যাট আদায় করলেন? আপনার বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
লোকটি চুপ। পরে ১৫% ভ্যাট ছাড়াই কাপড় দিল।
শুধু এটি নয় হাজার হাজার শপ, রেস্টুরেন্ট, হোটেল ইত্যাদি এভাবে ভ্যাটের নামে অর্থ আত্মসাৎ করছে। আর সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকাচ্ছে।
নিয়ম হল, যখনি কেউ আপনার বিলে ভ্যাট হিসেবে টাকা কেটে নিবে, সাথে সাথে সে আপনাকে একটি চালানের সরকারি কাগজ (নীল রঙয়ের) দিয়ে দিবে। আপনি যে সরকারকে ভ্যাট দিলেন, আর সরকার যে বুঝিয়ে পেল সেটার প্রমাণ এটি। ভ্যাট নিবন্ধিত প্রত্যেক দোকান বা রেস্টুরেন্টে এই সরকারি কাগজ থাকে।
অনেক সময় শুধু প্রিন্ট করা বিল আমাদের দেয় যেখানে ভ্যাটের টাকার পরিমাণও উল্লেখ থাকে… কিন্তু এটি ভ্যাটের সরকারি কাগজ নয়। নীল রঙয়ের চালান কাগজটিই হল ভ্যাটের কাগজ।
কেউ যদি প্রিন্টেড বিলে ভ্যাট নিয়ে আলাদাভাবে এই চালান কাগজ না দেয়, তাহলে বুঝবেন সেই টাকা সেই প্রতিষ্ঠান নিজের পকেটে ঢুকালো, অথচ আপনি সরকারকে ঠিকই ভ্যাট দিলেন। আগোরা,স্বপ্ন,আড়ং, ইনফিনিটি ইত্যাদির ন্যায় বড় বড় প্রতিষ্ঠান ভ্যাট উল্লেখ করে প্রিন্টেড বিল দেয় যেগুলো আদৌ সরকার এর রাজস্ব ফান্ডে জমা হয় কিনা নিশ্চিত করে বলা যায় না! অথচ তারা আপনার আমার কাছ থেকে ঠিকই ভ্যাট নিচ্ছে। বড় বড় খাবার রেস্টুরেন্টগুলোতেও এই দুই নম্বরি কাজগুলো বেশি করে।
আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নাম্বারই নেই, তারাও অযথা ভ্যাটের নামে টাকা আদায় করে।
যাদের ওপর এগুলো দেখার দায়িত্ব, হয় তারা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না অথবা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত!
কেউ চালান কাগজ দিতে অস্বীকার করলে, তাকে আইনের কথা উল্লেখ করে আর ভ্যাট দিবেন না। বেশি তেড়িবেড়ি করলে এনবিআরে সরাসরি ফোন (16555) দিয়ে অভিযোগ করবেন।
আমরা কষ্টের ইনকামের টাকা থেকে প্রতিনিয়ত সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছি কিন্তু সে টাকা সরকার পর্যন্ত যাচ্ছেই না, কারণ বেশিরভাগ লোকই এটা জানে না…আর এই সুযোগে এসব দুষ্ট লোকগুলো সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে চোখের সামনে।