আসন্ন রোজায় বাড়তি মুনাফার লক্ষ্যে এবার জোটবদ্ধ ভোজ্যতেলের ৬ থেকে ৭টি কোম্পানি। সরকারিভাবে আরেক দফা দাম বাড়াতেই প্রতিষ্ঠানগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করছে না। বাজারে সংকট তৈরি করে ভোক্তাকে জিম্মি করে রেখেছে।
এ পরিস্থিতিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে অসাধু খুচরা বিক্রেতারা। প্রতি লিটারে ২৫ টাকা বাড়তি লাভের আশায় চলমান সংকটকে তারা আরও ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিক্রেতাদের কাছে যে পরিমাণ বোতলজাত তেল আছে, তা তারা এখন ড্রামে ভরে খুচরা হিসাবে ২০০-২১০ টাকা লিটার বিক্রি করছে। এতে এক প্রকার বাজারশূন্য হয়ে পড়ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল।
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোর দু-এক দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও প্রতি লিটার গায়ের মূল্য ১৭৫ টাকা মুছে ১৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৯৫০ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত মূল্য ৮৬০ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর জিনজিরা কাঁচাবাজার ঘুরে ৫টি খুচরা দোকানের একটিতে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। তবে গায়ে মূল্য পাওয়া যায়নি। খুচরা বিক্রেতারা নির্ধারিত গায়ের মূল্য মুছে লিটারপ্রতি ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১৯০ টাকায় বিক্রি করছেন। যার সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৭৫ টাকা।
এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৯৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক মাস আগে দাম ছিল ১৭০ টাকা। তবে এই তেলের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৫৭ টাকা। বুধবার একই বাজার ঘুরে পুষ্টি ও রূপচাঁদা কোম্পানিকে কিছুটা বোতলজাত তেল সরবরাহ করতে দেখা গেছে।
তীর কোম্পানি সরবরাহ করেছে ক্যানোলা তেল। তবে দুপুর গড়াতেই খুচরা বিক্রেতাদের প্রকাশ্যে বোতলের ঢাকনা খুলে বিক্রির উদ্দেশ্যে সয়াবিন তেল ড্রামে ভরে রাখতে দেখা গেছে। এতে দেখা গেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল একপ্রকার বাজারশূন্য।
একই চিত্র রাজধানীর নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও কাওরান বাজারে। বৃহস্পতিবার নয়াবাজারে ৬টি মুদি দোকান ঘুরে দুটি দোকানে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অবশ্য কাওরান বাজারের প্রত্যেকটি মুদি দোকানে বোতলজাত তেল মিললেও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তবে এসব বাজারে ড্রামভর্তি খোলা সয়াবিন তেলের কোনো সংকট নেই। ক্রেতারা চাহিদামতো কিনতে পারছেন। তবে দাম লিটারপ্রতি ২০০-২১০ টাকা।
এদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেল খুলে ড্রামে ভরে খুচরা হিসাবে বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে দেখা যায়, একটি মুদি দোকানের খুচরা বিক্রেতা রূপচাঁদা পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ঢাকনা খুলে ড্রামে রাখছেন। সে সময় মেঝেতেই পড়ে ছিল প্রায় ১০-১২টি খালি পাঁচ লিটারের বোতল। এতে দোকান মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে দোকান সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, দেশে সয়াবিন তেলের সংকটের কোনো কারণ নেই। মূলত দাম বাড়াতে কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে সংকট তৈরি করেছে।
এছাড়া বাজারে যে পরিমাণে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে, তাও খুচরা বিক্রেতারা বাড়তি লাভের আশায় ড্রামে ভরে বিক্রি করছেন। এসব বিষয়ে বাজার তদারকি সংস্থার গাছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। সব মিলে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তা।
এদিকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সংকটের কথা বললেও চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের এ পর্যন্ত আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস হয়েছিল ২১ লাখ ৭০ হাজার ৩ টন। এর মধ্যে ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৫২ টন সয়াবিন এবং ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫১ টন পাম অয়েল রয়েছে। চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) একই সময়ে ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে ২২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৯ টন।
এর মধ্যে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৬ টন পাম অয়েল এবং ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৩ টন সয়াবিন তেল। দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় এক লাখ টনের বেশি তেল বেশি আমদানি হয়েছে।