বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি পালিত হয় ১৮ জুলাই।
‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ এই কর্মসূচি দেওয়া হয়। আগের দিন রাত আটটার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)।
আসিফ মাহমুদ সেই ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ শুধু হাসপাতাল, গণমাধ্যম ও অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে ১৮ জুলাই ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেলও।
১৭ জুলাই পুলিশি অভিযান ও হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ফাঁকা হয়ে পড়ায় আন্দোলন স্তিমিত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক প্রতিরোধে বিপরীত চিত্র তৈরি হয়। বিক্ষোভ দমাতে এদিন বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুত ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সশস্ত্র অবস্থানে।
সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে ১৮ জুলাই ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেলও।
ঢাকার উত্তরা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, নীলক্ষেত, তেজগাঁও, শান্তিনগর, মহাখালী, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় এদিন ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা হয়। মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের কার্যালয়সহ কয়েকটি পুলিশ বক্স এবং বনানীর সেতু ভবনের সামনে থাকা বেশ কিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সারা দেশে সংঘর্ষে এদিন ২৭ জন (ঢাকায় ১৯, বাইরে ৮) শহীদ হন। আহত হন প্রায় দেড় হাজার। সেদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগে ১৭ জুলাই রাতে মুঠোফোন ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ১৮ জুলাই দেশ পুরোপুরি ইন্টারনেটবিহীন হয়ে পড়ে।
ঢাকার উত্তরা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, নীলক্ষেত, তেজগাঁও, শান্তিনগর, মহাখালী, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় এদিন ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা হয়।
১৮ জুলাই দিবাগত রাত ১২টায় সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক খুদে বার্তায় আসিফ মাহমুদ জানান, ১৯ জুলাইও সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। জুলাই অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু নামে একটি বই লিখেছেন আসিফ মাহমুদ। গত মার্চে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ওই বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের অবস্থান ছিল, এতগুলো মানুষ মারা যাওয়ার পর আন্দোলনটা শুধু কোটায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।’
১৮ জুলাই আন্দোলনে ব্যাপক শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদন: বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত বিক্ষোভের সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহার’-এও উঠে এসেছে।
সারা দেশে সংঘর্ষে এদিন ২৭ জন (ঢাকায় ১৯, বাইরে ৮) শহীদ হন। আহত হন প্রায় দেড় হাজার। সেদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগে ১৭ জুলাই রাতে মুঠোফোন ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ১৮ জুলাই দেশ পুরোপুরি ইন্টারনেটবিহীন হয়ে পড়ে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ‘কোর কমিটির’ সভায় নির্বিচার গ্রেপ্তার অভিযানের (যার মধ্যে ব্লক রেইডও অন্তর্ভুক্ত ছিল) বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছিল। মন্ত্রীর নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন গোপন করা, নির্বিচার গ্রেপ্তার করা এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বাধা দেওয়ার জন্য কাজ করা হয়েছিল।