মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর কাটাছড়া ও জোরারগঞ্জ তিনটি ইউনিয়নে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর, আম, ভুট্টা, গম, ধানসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও শিলার আঘাতে ঘরবাড়ির টিন চিদ্র হয়ে তছনছ হয়ে গেছে। এছাড়াও মাটিতে নুয়ে পড়েছে কৃষকের সবুজ ফসল।
বুধবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে (১৮এপ্রিল) হঠাৎ মেঘে আচ্ছন্ন হয় আকাশ। এর কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। তার কিছু সময় পরই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে পানির পরিমাণ কম হলেও প্রচুর শিল ঝরেছে। শিলাবৃষ্টি শেষে কোথাও কোথাও শিলার স্তূপ জমে থাকতে দেখা যায়। তবে বৃষ্টির এবং বাতাসের সাথে শিলা বৃষ্টি বেশি ক্ষতি হয়েছে । বিশেষ করে শিলাগুলো আকারে অতিরিক্ত বড় হওয়ায় বসত ঘরের পুরনো টিনগুলো চিদ্র হয়ে যায়।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আর সেই শিলা বৃষ্টির ফলে ফসলি ক্ষেত ছাড়াও ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ এমন ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে ধান, আম, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি বেশি হয়েছে। এতে ধান ও আমের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।’ রিপোর্ট তৈরির জন্য সরজমিনে আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেছি। তাদের উপজেলা পরিষদ থেকে কিছু অনুদান দেওয়া হবে।
তেমুহানী গ্রামের রুহুল আমিন জানান, আমার বয়স এখন ৯০ বছর। আমার বয়সে এতো বড় শিলা আর কখনো দেখি নাই।
জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চারণ শিল্পী সিরাজ বাঙ্গালী বলেন, মড়ার উপর খড়ার ঘা। একেত অসুস্থতার কারনে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল এখন নিত্য সংগী, তার উপর গত ভোর রাতে বড় আকারের শীলাপড়ে বসত ঘরের টিন ফুটো হয়ে সারা ঘর শীলা ও বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
৭নং কাটাছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আবছার জানান, শিলা বৃষ্টির আঘাতে ৭ নং কাটাছরা ইউনিয়নের তেমুহানী গ্রাম সহ আশেপাশের এলাকার কারো ঘরের পুরনো টিনের চাল নেই,গাছের পাতা নেই,জমির কোন শস্য ফল ফলাদি নেই, এমন কি ঘরের বাহিরে থাকা প্লাস্টিকের বালতি পাত্র পর্যন্ত চু্র্ণ বিচুর্ণ হয়ে গেছে। এক একটা শিলা ৫০০/১০০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন।
৮ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুজাউল হক জানান, শিলা বৃষ্টির কারণে সব চাইতে বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৮ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড । সকাল থেকে এলাকা পরিদর্শন করে দেখলাম এখানে ৭০% টিনের ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। তার মধ্যে ২০% মানুষ একেবারে দুঃস্থ । এলাকার বিত্তবান ও সরকারি সহায়তা না পেলে এ বর্ষাকালে গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবে অসহায় শতশত পরিবার।