বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারীদের কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীশান্ত রায় নামের ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিটে তিনি ছদ্মনামে নারীদের নিয়ে নানা ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করতেন বলে সহপাঠীরা বলছেন।
নিজেদের বিভিন্ন ভাবনা, নানা কনটেন্ট শেয়ারের বাংলাদেশিদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, টিকটকই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অনেকে এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহার করেন। সে তুলনায় রেডিট সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই রেডিট কী? সেটার ব্যবহার কেমন? বাংলাদেশে কতটা জনপ্রিয়? রেডিট কী
ফেসবুকের সমসাময়িক সময়েই জন্ম রেডিটের। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৫ সালের জুন মাসে রেডিট প্রতিষ্ঠা করেন স্টিভ হাফম্যান ও অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান। এক লাখ মার্কিন ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করা রেডিটের বাজারমূল্য এখন ৩ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ।
রেডিট মূলত অনলাইন কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম। যেখানে ব্যবহারকারীরা সাবরেডিট হিসেবে বিভিন্ন গ্রুপে নানা বিষয় নিয়ে পোস্ট, আলোচনা করেন। ছবি, ভিডিও, লিংক ইত্যাদি প্রকাশ করা যায়। প্রতিটি গ্রুপে আলাদা ‘মডারেটর’ থাকেন।
ফেসবুকে যেমন লাইক দেওয়া যায়, তেমনটি রেডিটেও পছন্দ ও অপছন্দের কথা জানানোর সুযোগ আছে। অর্থাৎ কোনো পোস্ট, আলোচনা ভালো লাগলে ‘আপভোট’ এবং ভালো না লাগলে ‘ডাউনভোট’ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
রেডিটে ব্যবহারকারীরা আলাদাভাবেও নিজেদের পোস্ট শেয়ার করতে পারেন। ছবি, ভিডিও, লিংক শেয়ার করার সুযোগ থাকলেও রেডিট মূলত টেক্সটভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম।
রেডিট ব্যবহারকারীরা নাম প্রকাশ না করেই (ছদ্মনামে) ব্যবহার করতে পারেন। সেখানে খোলামেলাভাবে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
রেডিটের জনপ্রিয়তা
রেডিট মূলত তরুণদের কাছে জনপ্রিয়। রেডিট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে রেডিট জনপ্রিয়।
ব্যাক লিংক নামের একটি ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বিশ্বে রেডিটের ১১ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন, যাঁরা দৈনিক এটি ব্যবহার করেন।
২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে রেডিটের রাজস্ব আয় ছিল ৮৯ কোটি ডলার, যা প্রায় ১০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার সমান।
রেডিটের জনপ্রিয়তা বাড়ে ‘আস্ক মি অ্যানিথিং’–এর মতো কিছু সুবিধা চালুর পর। বাংলাদেশে রেডিট
বাংলাদেশে কোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জনপ্রিয়, তা জানা যায় সিমিলিয়ারওয়েব থেকে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট বলছেন, এ দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, বিগো ও থ্রেডস।
সিমিলিয়ারওয়েব আরও জানাচ্ছে, বাংলাদেশে জনপ্রিয় শীর্ষ ৫০টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে রেডিট নেই।
বাংলাদেশে রেডিট বন্ধ ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৯ সালে জুয়া ও পর্নোগ্রাফির অভিযোগে কয়েকটি ওয়েবসাইটের সঙ্গে রেডিটও বন্ধ করে দেয়।
তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, রেডিটে পর্নো কনটেন্ট (আধেয়) রয়েছে, তাই রেডিট বন্ধ করা হয়েছে। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে তখন বেশ সমালোচনাও হয়। রেডিট এখন চালু আছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, রেডিটের ব্যবহার বাংলাদেশে কম। একটা সময় এটা বন্ধও ছিল। ফলে বাংলাদেশে খুব একটা জনপ্রিয় নয়। তবে অনেক দেশে এটি বেশ প্রচলিত মাধ্যম।