জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট একের পর এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বুক পেতে ঠেকিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। শুধু ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেই নয়; লবণাক্ততা ও উষ্ণতা বৃদ্ধি, অচেনা রোগবালাই আর কীটপতঙ্গের আক্রমণেও দেশের এই অতন্দ্র প্রহরী এখন ক্ষতবিক্ষত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অসাধু মানুষের অত্যাচার। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের সবচেয়ে বড় রক্ষক সুন্দরবন আজ নিজেই বিপদে।
মুহূর্তে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বনের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এই অপতৎপরতার পেছনে কাজ করছে প্রভাবশালী অন্তত তিনটি গোষ্ঠী। প্রথমটি হলো বন উপকূলের একশ্রেণির মাছ ব্যবসায়ী, যাঁদের বলা হয় কোম্পানি মহাজন। তাঁরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জেলেদের প্ররোচনা দেন বিষ ছিটিয়ে দ্রুত বেশি মাছ শিকারে। আরেক গোষ্ঠী হলো অসাধু বনরক্ষী। কোম্পানি মহাজনদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তারা অভয়ারণ্যের নদী-খালে ঢুকে বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দেন। এই দুই দলের সঙ্গে সম্প্রতি আবার যুক্ত হয়েছে বনদস্যুরা। এই চক্রটিকে সহযোগিতা করছেন এক শ্রেণির সাংবাদিক।
আমরা বিভিন্ন সময় সুন্দরবনে অসাধু জেলেদের কাছ থেকে বিষের বোতল কিংবা বিষ দিয়ে ধরা মাছ আটক করেছি। দেখেছি বেশির ভাগ বিষই বিভিন্ন শাকসবজি, গাছপালার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা হয়। জেলেরা দুই ধরনের বিষ ব্যবহার করেন। একটা সাদা মাছের জন্য, আরেকটি চিংড়ির জন্য।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো
সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাবিত মাহমুদ বললেন, ‘বনের ভেতরে জেলেদের সঙ্গে দেখা হলে অনেকেই বলে, তাদের মহাজন ওমুক সাংবাদিক। কয়রা উপজেলার এক সাংবাদিকের নাম শুনলাম, সুন্দরবনে পারশে পোনার অবৈধ ব্যবসা করে তিনি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।’
এক বন কর্মকর্তা বললেন, অনেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতি মাসে ফরেস্ট স্টেশন থেকে মাসোহারা নিয়ে যান। এরকম অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের নাম তিনি জানেন, যাঁদের প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। অনেক বছর ধরে এই রেওয়াজ চলে আসছে।