জানা-অজানা ডেস্ক: বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ এখন স্বল্প দূরত্বের পথে বিমান যাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। এবং দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এক্ষেত্রে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ চলাচলের ক্ষেত্রে বিমানের পরিবর্তে দ্রুত গতির ট্রেন চালু করতে যাচ্ছে।
আর এসব দ্রুত গতির ট্রেন ব্যবহার হবে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে। কারণ হাইপার-লুপের মাধ্যমে এক সঙ্গে অধিক লোককে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে হাইপার-লুপ এক্ষেত্রে খুব সফলতা বয়ে আনবে না।
১৯৮০ সালের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার ডলার বিনিয়োগ করছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে কীভাবে রেল-খাতকে আরও দ্রুতগতি সম্পন্ন করা যায়। তবে ইতোমধ্যে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে দ্রুত গতির ট্রেন নিয়ে বেশ কাজ হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দেশ চীন এরই মধ্যে ৩৮ হাজার কিলোমিটার পথকে রেল সংযোগের আওতায় আনতে কাজ করছে। চীনের পরিকল্পনা প্রত্যেক এলাকায় রেল সংযোগ নিয়ে যাওয়া।
২০৩০ সালের মধ্যে স্পেন, জামানি, ইতালি, বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনের কাজ চলছে।
এদিকে ২০১৮ সালে আফ্রিকা সর্বপ্রথম দ্রুতগতির রেল সংযোগ চালু করেছে। মরক্কো থেকে মিশর পর্যন্ত তারা আল-বোরাক নামে একটি দ্রুত গতির রেলপথ চালু করেছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, তাইওয়ান,. রাশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র এ কাজে পা বাড়িয়েছে। এসব দেশগুলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহজে যাতায়াতের জন্য দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ করতে যাচ্ছে। যেখানে ট্রেনের গতিবেগ হবে ২৫০ কিলোমিটার ঘণ্টায়।
তবে এত কিছু আলোচনার পরও ২০২২ সালে আপনি বিশ্বের দ্রুতগতি সম্পন্ন বেশ কয়েকটি ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশি কিছু দ্রুতগতির ট্রেন সম্পর্কে।
১. সাংহাই ম্যাগলিভ
বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত গতির ট্রেন রয়েছে চীনে। জার্মানি প্রযুক্তি ম্যাগনেটিভ লিভিটেশন ব্যবহার করে তারা এই রেল পথ গড়ে তুলেছে। এ রেলের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৬০ কিলোমিটার। যেখানে ৩০ কিলোমিটার ভ্রমণে সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৭ মিনিট। চীনের টার্গেট এ ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা।
২. সিআর৪০০ ফাক্সসিং
এ ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার। চীনের এ ট্রেনটি সর্বোচ্চ গতি নিয়ে সর্বোচ্চ পথ পাড়ি দেয়। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৪২০ কিলোমিটারে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ট্রেনটি নির্মাণে প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়া হয়েছে ইউরোপ ও জাপানের কাছ থেকে।
৩. আইসিই৩
জার্মানির তৈরি এই ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৩০ কিলোমিটার। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য জার্মান এই ট্রেন ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত এ ট্রেনটির মেশিনের হর্শপাওয়ার ১১ হাজার।
৪. টিজিভি
ফ্রান্সের তৈরি এ ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার। এ ট্রেনটি পার্শ্ববর্তী দেশ জার্মানি, সুজারল্যান্ড এবং স্পেনের মধ্যে চলাচল করে।
৫. জেআর ইস্ট ই৫
জাপানের তৈরি এ টেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ থেকে ৩২০ কিলোমিটার। ১৯৬৪ সালে জাপান সর্বপ্রথম দ্রুত গতির রেল সংযোগের ধারণা নিয়ে আসে।
৬. আল বোরাক
আফ্রিকার দেশে মরক্কোকে ২০১৮ সালে এই ট্রেনটি চালু করা হয়। ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৮ থেকে ৩২০ কিলোমিটার। ট্রেনটির নামকরণ করা হয়েছে ইসলামের নবী মুহম্মদ সা. এর বোরাকে চড়ে মেরাজে যাওয়ার বাহন নিয়ে। এর মাধ্যমে ১ হাজার ৫০০ পথ পাড়ি দেওয়া হয়।
৭. এভিই এস-১০৩
১৯৯২ সালে স্পেন সর্বপ্রথম দ্রুগতির সম্পন্ন রেলপথ তৈরি করে। দেশটির এভিই এস-১০৩ মডেলের এই ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১৯৩ থেকে ৩১০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
৮. কেটিএক্স
দক্ষিণ কোরিয়া নির্মিত এই ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০ থেকে ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ২০০৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ করে।
৯. ট্রেনিটালিয়া ইটিআর১০০০
ইতালির এই ট্রেনিটির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৬ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ২০১৭ সালে ইতালি সর্বপ্রথম দ্রুতগতির রেলপথ চালু করে।
১০. হ্যারমেইন হাইস্পিড রেলওয়ে
২০১৮ সালে সৌদি আরব দ্রুতগতির রেল চালু করে। এ ট্রেনে একসঙ্গে ৪১৭ জন চলতে পারবে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৬ থেকে ৩০০ কিলোমিটার।
সূত্র: সিএনএন